মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

প্রারম্ভিক জীবন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী ১৪০২ হিজরি সনে নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত নোয়াখালী বেগমগঞ্জের হাফিজুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসায়। সেখানে তিনি শরহু জামি জামাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তারপর শরহু বিকায়া জামাত অধ্যয়ন করেন নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী দীনী প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া আমানত পুর মাদরাসায়। সেখান থেকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দীনী ইদারা জামিয়া রাহমানিয়ায় এসে ভর্তি হন এবং জালালাইন জামাত এখানে সম্পন্ন করেন। তারপর তাঁর বাবার একান্ত ইচ্ছায় তিনি চলে যান দেশের প্রাচীনতম দীনি ইদারা দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে। সেখানে তিনি মিশকাত জামাত ও ২০০০ সালে তাকমীল (মাস্টার্স) সমাপন করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চট্রগ্রাম-এ। সেখানে তিনি কুরআনিক সায়েন্স এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ-এ তিন বছর অধ্যয়ন করেন
কর্মজীবন
২০০৪ সালে ফেনীর সুপরিচিত দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া ইসলামিয়ায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। সেখানে তিনি তিন বছর হাদিস, তাফসির, নাহব, মানতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ের জটিল কিতাবগুলো কৃতিত্বের সঙ্গে অধ্যাপনা করেন। তারপর ২০০৮ সালে ফকীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান রহ.-এর নির্দেশে তিনি সাভার আল আমীন মাদরসায় সিনিয়র মুদাররিস হিসেবে এক বছর শিক্ষকতা করেন। সেখান থেকে তিনি চলে আসেন ঢাকার সুপরিচিত দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর-এ। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত আছেন।
মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর-এ খেদমতের পাশাপাশি তিনি জামিয়া হুসাইনিয়া রূপনগর ঢাকায় সহীহ বুখারী, নুরুল উলুম পীরের বাগ ঢাকায় সহীহ মুসলিম-এর খণ্ডকালীন দারস দিয়ে থাকেন। এছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে তিনি বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মধ্য মনিপুর, মিরপুর, ঢাকায় খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
খেদমতের বিস্তৃতি
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদীর খেদমতের পরিধি এতটা ব্যাপক ও বিস্তৃত যে, যা অন্যদের জন্য বেশ প্রেরণাদায়ক। বিভিন্ন মসজিদে সাপ্তাহিক তাফসির প্রোগ্রাম, প্রশ্নোত্তর প্রোগ্রাম, বিভিন্ন মসজিদে মাসিক ইসলাহী প্রোগ্রামের পাশাপাশি নিজ মসজিদ এলাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক স্বতন্ত্র ও সুপরিকল্পিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেমন, বয়স্কদের জন্য 'বাইতুল ফালাহ নৈশ মাদরাসা'। মেয়েদের জন্য 'মাদরাসাতুল বানাত আলইসলামিয়া'। ছেলেদের জন্য 'মারকাযুল উলুম আল ইসলামিয়া'। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য 'দীনিয়াত'। বয়স্ক নারীদের জন্য 'ফরজিয়াত'।
এছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে সুপরিকল্পিত সিলেবাসভিত্তিক মকতব নির্মাণ করা তাঁর অন্যতম মিশন। এই লক্ষে এই পর্যন্ত তিনি শতাধিক মকতব ও মাদরাসা গড়ে তুলেছেন।
ইসলাহী সম্পর্ক
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী প্রথমে ইসলাহী সম্পর্ক গড়ে তুলেন শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী দা. বা.-এর সঙ্গে এবং তিনি তাঁকে তাঁর কিতাবসমূহের অনুবাদের লিখিত অনুমতিও প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি আধ্যাত্মিকতার কিংবদন্তি মাহববুল উলামা পীর জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী দা. বা.-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং ১৪৩৫ হিজরীর রমযান মাসে সুদূর আফ্রিকার জাম্বিয়ার লুসাকাতে তাঁর সোহবতে ইতেকাফের সময়গুলো অতিবাহিত করেন। পরবর্তীতে তাঁর সোহবত ও দীক্ষা নেয়ার উদ্দেশে মালেয়েশিয়া-তে একাধিক বার সফর করেন। কিন্তু পরবর্তীতে যোগাযোগ-জটিলতা দেখা দেয়ার কারণে তিনি মুহিউসসুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহ.-এর অন্যতম খলিফা আরিফ বিল্লাহ অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী দা. বা.-এর বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং তাঁর কাছে আধ্যাত্মিকতার দীক্ষা নিলে তিনি তাঁকে তরিকতের ইজাজত প্রদান করেন। এছাড়াও মুফাক্কিরে ইসলাম আবুল হাসান আলী নদবী রহ.-এর অন্যতম খলিফা মাওলানা সালমান দা. বা. বাইতুল্লাহর চত্তরে বসে তাঁকে ইজাজত প্রদান করেন এবং আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রহ.-এর অন্যতম খলিফা শাইখুল হাদীস মাওলানা আব্দুররাজ্জাক যফরী দা. বা.এর কাছ থেকেও তিনি ইজাজত লাভে ধন্য হন।
লেখালেখি
কর্মমুখর এই আলেমে দীনকে উম্মাহর কল্যাণে লেখালেখির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছেন। শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী দা. বা.-এর সর্ব মহলে অত্যন্ত সমাদৃত কিতাব ইসলাহী খুতবাতের ২৩ খণ্ড সম্পূর্ণটা তিনি অনুবাদ করেন। সিহাহ সিত্তার অন্যতম সুনানুত-তিরমযী'র ২য় খণ্ডের বাংলা ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'ফয়যুল হাদী' এবং সুনান আবু দাউদ ২য় খণ্ডের বাংলা ব্যাখ্যাগ্রন্থ 'আদদুররুলমানযুদ' তিনি রচনা করেন। এছাড়াও রয়েছে তাঁর ছোট-বড় আরো ৯ টি প্রকাশিত গ্রন্থ। প্রশ্ন-উত্তর নির্ভর জনপ্রিয় ইসলামিক ওয়েবসাইট www.quranerjyoti.com-এর প্রশ্নগুলোর লিখিত উত্তর তিনি নিজেই দিয়ে থাকেন।