প্রবন্ধ

বরকতময় জীবন লাভের উপায়

লেখক:মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
২৬ জুন, ২০২৪
১৬৮২৩ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে আমাদের ভাইদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিশ্বাবাসীকে দেখিয়ে দিচ্ছেন ইসলামী ইমারতের বরকত। যেখানে নেই কোনো ধর্ষণ, ব্যভিচার, চুরি, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচার। যে ফসল একসময় তাদের দেশে হতো না, সেটাও এখন তাদের দেশে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে!  জাফরান হচ্ছে। আনার উৎপাদন হচ্ছে। হীরা-মোতি-পান্নার খনি জমিনের নিচে পাওয়া যাচ্ছে। জমিন তার বরকত ফেরত দেওয়া শুরু করেছে। তাদের মুদ্রা ডলারের চেয়ে বেশি পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নতুন করে ভাবা শুরু করেছে যে, দেশে দেশে ইসলামী খেলাফতের ডিমান্ড তীব্রতর হওয়া শুরু হবে এবং ইনশাআল্লাহ আগামী শতাব্দী ইসলামেরই হবে! মূলত এটাই ইসলামের বরকত। আল্লাহর দীনের বরকত।


اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوْاْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَٰتٍ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ

 بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيْمِ، وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ اْلآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ. وجعلني وإياكم مِنَ الصَّالِحِينَ. أَقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِيْنَ. فَاسْتَغْفِرُوْهُ، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ .اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ.

আল্লাহ তাআলা আজকেও আমাদেরকেও আল্লাহর জন্য কিছু সময় বের করে বসার তাওফীক দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। 

আমাদের ভুল চিন্তা

বর্তমানে আমাদের জীবনে একটা জিনিসের খুব অভাব। বলা যায়, এর দুর্ভিক্ষ চলছে। তা হলো বারাকাহ। যেটিকে আমরা বলি ‘বরকত’।

আমাদের চিন্তা বস্তুর আধিক্যতাকে ঘিরে। যেমন আমরা মনে করি টাকা-পয়সার আধিক্যের মাঝেই আছে সমস্যার সমাধান, প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা, অসুস্থতার চিকিৎসা, ভালোভাবে থাকার ব্যবস্থা, আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা ইত্যাদি। মূলত এই চিন্তা ভুল। 

মনে করুন, একজন লোক কুড়েঘরে থাকে, কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে পেট ভরে খানা খায়, ঘুমের সময় হলে দিব্যি আরামে ঘুমায়, হাই প্রেসার নেই, ডায়বেটিস নেই, কোনো ধরণের টেনশন নেই।

বিপরীতে আরেকজন লোক। যার টাকা-পয়সার অভাব নেই, ভালো খাবার খায়, দামী ফ্ল্যাটে বসবাস করে, কিন্তু রাতে ঘুম হয় না, শরীরে রোগের অভাব নেই, টেনশনের অন্ত নেই।

বলুন, এই দুই জনের মধ্যে আপনি কাকে সুখী বলবেন? কার জীবনটা বরকতময় বলবেন? 

সম্পদের আধিক্যের নাম বরকত নয়

এই জন্য সম্পদের আধিক্যের নাম বরকত নয়; বরং বরকত ভিন্ন জিনিস। বরকতের সম্পর্ক ধনী ব্যক্তির বাংলোর সঙ্গে নয় কিংবা গরিবের গরিবখানার সঙ্গেও নয়। 

আমি একথা বলছি না যে, গরিবখানার মধ্যেই সুখ-শান্তি; দামী গাড়ি-বাড়ির মধ্যে কেবলই ডিপ্রেশন-মুসিবত। আবার এটাও বলছি না যে, দামী গাড়ি-বাড়ির মধ্যেই সুখ-শান্তি; গরিববখানার মধ্যে শুধু ডিপ্রেশন-মুসিবত। 

আমি বলতে চাচ্ছি, সুখ-শান্তি গাড়ি-বাড়ির মাঝেও থাকতে পারে; গরিবখানার মধ্যেও থাকতে পারে। অনুরূপভাবে ডিপ্রেশন-মুসিবত গরিবখানার মাঝেও থাকতে পারে; গাড়ি-বাড়ির মধ্যেও থাকতে পারে।

মূল বিষয় হল, বারাকাহ বা বরকত। যেখানে এর উপস্থিতি থাকবে, সেখানেই সুখ-শান্তি থাকবে। আর যেখানে এটি থাকবে না, সেখানে সুখ-শান্তিও থাকবে না। 

তাহলে প্রশ্ন হল, বারাকাহ বা বরকত কাকে বলে এবং এটি লাভ করার উপায় কী? 

বরকত কাকে বলে? 

ثبوت الخير ودوامه واستقراره

কল্যাণের উপস্থিতি, তার স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতাকে বলা হয় বারাকাহ বা বরকত।

ইমাম রাগিব ইস্পাহানি রহ.-এর মতে 

البركة هي ثبوت الخير الإِلهي في الشيء

বারাকাহ বা বরকত বলা হয় ওই জিনিসকে যাতে মহান আল্লাহর কল্যাণ নিহিত থাকে।

(মুফরাদাতু আলফাযিল কুরআন : ১/৮৩)

যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে

 وَ هٰذَا کِتٰبٌ اَنزَلنٰهُ مُبٰرَک

আর এটি একটি কিতাব, আমি তা নাযিল করেছি, বরকতময়।

(সূরা আনআম : ৯২) 

এ আয়াতে ‘বরকতময় কিতাব’ মানে কল্যাণময় কিতাব।

বরকতের কিছু দৃষ্টান্ত 

যেমন টাকা-পয়সার বরকত হওয়ার অর্থ, টাকা-পয়সা মঙ্গল ও কল্যাণের পথে ব্যবহৃত হওয়া। যে কাজে টাকা-পয়সা খরচ হবে সে কাজ আমার জীবনের জন্য স্থায়ীভাবে কল্যাণময় হওয়া। 

টাকা-পয়সায় বরকত হওয়ার অর্থ পরিমাণে টাকা-পয়সা বেড়ে যাওয়া নয়। তবে কখনও সেভাবেও বরকত সাধিত হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও স্থায়ী কল্যাণ অবশ্যই থাকবে। খাদ্য-খাবারে বরকত হওয়ার অর্থ খাদ্য-খাবার দ্বারা কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ অর্জিত হওয়া এবং সেই কল্যাণ স্থায়িত্ব লাভ করা। 

জীবনের বয়সে বরকত হওয়ার অর্থ মঙ্গলময় ও কল্যাণময় কাজে জীবনের সময় ব্যবহৃত হওয়া এবং অল্প সময়ে অনেক ভাল কাজ করতে পারা।

বরকতহীনতার কিছু দৃষ্টান্ত 

যেমন আল্লাহ তাআলা দুধের মধ্যে ভিটামিন রেখেছেন। এখন যদি কারো এই দুধ পান করার পর পেট খারাপ হয়ে যায়। এর অর্থ হল, দুধ তার জন্য বরকতময় ছিল না।  

বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য, নিজেকে পাপাচার ও ব্যভিচার হতে মুক্ত রাখা। কেউ যদি বিয়ে করার পরেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এর অর্থ হল, বিয়ের বরকত তাকে স্পর্শ করেনি।

দাম্পত্যজীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য, প্রশান্তি লাভ করা। আল্লাহ বলেন 

لِّتَسْكُنُوٓاْ إِلَيْهَا 

যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। 

(সূরা রুম : ২১)

কারো যদি এমন হয় যে, স্ত্রী দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ওই দিন এক ভাই বলছিলেন, বাইরে সকলের সঙ্গে ভালো থাকি। কিন্তু বাসায় ঢুকলে বউটাকে দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আরেক লোক নিজে আমাকে বলেছেন, হুযুর! একই ছাদের নিচে থাকি, কিন্তু আমি এবং আমার স্ত্রী বছরের পর বছর থেকে দুইজন দুই জগতের বাসিন্দা! এর অর্থ হল, এরা স্ত্রীর বরকত থেকে বঞ্চিত।

আল্লাহ সন্তান দান করেন, যেন তাদেরকে দেখলে চোখ শীতল হয়, কলিজা ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু সেই সন্তান যদি অশান্তি ও অসম্মানের কারণ হয়ে যায়, সন্তানকে যদি রিহ্যাব সেন্টারে রেখে আসতে হয়। মা যদি সন্তানের ব্যাপারে বলেন, এমন সন্তান কেন যে পেটে ধরলাম! এর অর্থ হল, সন্তান তো আছে, কিন্তু বরকত নেই। 

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বরকতের প্রয়োজনীয়তা

মূলত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বরকতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা, যার জীবনে বরকত ও কল্যাণ নেই সেই সারা দুনিয়ার সম্পদের মালিক হলেও সুখ পাবে না। নিশ্চিন্তে এক মুহূর্ত থাকতে পারবে না। জীবনটা তখন দুনিয়ার জাহান্নামে পরিণত হবে। 

মানসিক সুখ-শান্তি আল্লাহর নেয়ামত। যাদের জীবন মহান আল্লাহ কল্যাণ ও বরকতে ভরপুর করেন, তারাই তা অনুভব করতে পারে। বরকতময় জীবন শান্তিময় হয়, সুখ-শান্তিতে ভরপুর থাকে। সে হায়াতে, সময়ে, সম্পদে বরকত পায়। পক্ষান্তরে জীবনের কোনো কাজে বরকত পায় না। অর্থাৎ হায়াতে, সময়ে ও সম্পদে বরকত পায় না।

এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন, কিন্তু সে জীবনে ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতে কোনো বরকত নেই। আবার অনেকে পরিশ্রম করেন কিন্তু প্রাপ্তি সেভাবে আসে না। এর অর্থ হলো কাজে কোনো বরকত নেই। পক্ষান্তরে এমন অনেক লোক আছেন, যারা কম হায়াত পেয়েছেন কিন্তু ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি, ইবাদত-আমলে বরকত লাভ করেছেন। অনেকে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করেন কিংবা অল্প বেতনে কাজ করেন, কিন্তু তাতে বরকত আছে। তাই প্রত্যেকটা কাজে বরকত খুব জরুরি।

সুখ আছে বরকতের মাঝে

যার বেতন বিশ হাজার টাকা, সে চিন্তা করে আমার বেতন ত্রিশ হাজার হলে সমস্যার সমাধান হয়ে হয়ে যাবে, ত্রিশ হাজার টাকার লোক চিন্তা করে পঞ্চাশ হাজার হলে কোনো সমস্যা আমার জীবনে থাকবে না, পঞ্চাশ হাজার টাকার লোক চিন্তা করে এক লাখ হলে আমার জীবনে আর কোনো পেরেশানি থাকবে না। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, সমস্যা একটা যায় তো এর চেয়ে বড়টা সামনে আসে। 

সুতরাং বোঝা গেল, সম্পদ অধিক হওয়া সমস্যা কিংবা পেরেশানির সমাধান নয়। সমাধান আছে,বরকতের মাঝে। 

বরকত আল্লাহ তাআলার এক গোপন সৈনিক

একবার এক নেককার বান্দা দোয়া করছেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার রিজিকে বরকত দান করুন।

তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি কেন এভাবে দোয়া করছেন কেন? বরং আপনি বলুন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিজিক দান করুন।

নেককার বান্দা তখন বললেন, আল্লাহ তাআলা তার প্রত্যেক সৃষ্টির রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু আমি চাই, রিজিকে বরকত। কারণ বরকত হল, আল্লাহ তাআলার একটি গোপন সৈনিক; যার কাছে ইচ্ছা তিনি তা প্রেরণ করেন। এরপর

১. এই ‘বরকত’ যদি সম্পদে প্রবেশ করে; তাহলে তা সম্পদ বৃদ্ধি করে দেয়।

২. এই ‘বরকত’ যদি সন্তান-সন্ততির মধ্যে প্রবেশ করে; তাহলে তাদেরকে সংশোধন করে দেয়।

৩. এই ‘বরকত’ যদি শরীরে প্রবেশ করে; তাহলে তা শরীরকে শক্তিশালী করে দেয়।

৪. এই ‘বরকত’ যদি সময়ে প্রবেশ করে; তাহলে সময়কে সমৃদ্ধ করে দেয়।

৫. আর এই ‘বরকত’ যদি হৃদয়ে প্রবেশ করে; তাহলে তাতে এনে দেয় সুখ ও শান্তির ছেঁায়া।’

সুতরাং হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যা কিছু দিয়েছেন তাতে ‘বরকত’ দান করুন।

বরকত দুইভাবে হয়

মূলত বরকত দুইভাবে হয়, পরিমাণগত দিক থেকে কোনো কিছু বেড়ে যাওয়া। এটাও বরকত, আবার বস্তুর যে উদ্দেশ্য তা ভালোভাবে পূর্ণ হওয়া, এটাও বরকত। একজনের অর্থ বৃদ্ধি পেল। 

যদি তা হালাল পন্থায় হয় তাহলে তা বরকত। এটা দৃষ্টিগ্রাহ্য বরকত। দেখা যায়, গণনা করা যায়। আরেকজনের অর্থ হয় তো সংখ্যায় ও পরিমাণে বৃদ্ধি পেল না তবে অর্থের যে উদ্দেশ্য তা পুরা হয়ে গেল। 

অল্প অর্থে সকল প্রয়োজন পুরা হল। বিপদ-আপদের শিকার হল না। বড় বড় চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় হল না। মামলা-মুকাদ্দমায় পয়সা খরচ হল না। যতটুকু হালাল উপার্জন তা দিয়েই জীবন সুন্দরভাবে কেটে গেল। 

এটাও বরকত। তবে তা আগেরটির মত প্রত্যক্ষ নয়। এটা উপলব্ধির বিষয়। ঈমানদার যখন চিন্তা করেন তখন এ বরকতের উপস্থিতি বুঝতে পারেন।

নবীগণ আল্লাহর কাছে বরকত কামনা করতেন

এ জন্য নবীগণ আল্লাহর কাছে বরকত কামনা করতেন এবং বরকত লাভের দোয়া করতেন। যেমন

হযরত ইবরাহীম আ.

সহীহ বুখারীর এক দীর্ঘ হাদীসে এসেছে, হাজেরার মৃত্যুর পর ইবরাহীম যখন ইসমাঈল আ.-কে দেখতে যান, তখন তার স্ত্রীকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা খুব অভাবে ও কষ্টের মধ্যে আছি। 

জবাবে তিনি বলেন, তোমার স্বামী এলে তাকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে যে, তিনি যেন দরজার চৌকাঠ পাল্টে ফেলেন। 

পরে ইসমাঈল বাড়ি ফিরলে ঘটনা শুনে বলেন, উনি আমার আব্বা এবং তিনি তোমাকে তালাক দিতে বলেছেন। ফলে ইসমাঈল স্ত্রীকে তালাক দেন ও অন্য স্ত্রী গ্রহণ করেন।

পরে একদিন পিতা ইবরাহীম আ. এসে একই প্রশ্ন করলে ইসমাঈল আ.-এর স্ত্রী বলেন, আমরা ভালো ও সচ্ছলতার মধ্যে আছি এবং তিনি আল্লাহর প্রশংসাও করলেন। ইনি ছিলেন ইসমাঈল আ.-এর দ্বিতীয় স্ত্রী।

ইবরাহীম আ. তখন জিজ্ঞেস করেছিলেন, বউ মা! তোমরা খাবার-দাবার কী কর? ইসমাঈল আ.-এর স্ত্রী উত্তর দিলেন, গোশত আর পানি।

তখন ইবরাহীম তাদের সংসারে বরকতের জন্য আল্লাহর নিকট এই বলে দোয়া করলেন

 اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِي لَحْمِهِمْ وَمَائِهِمْ 

হে আল্লাহ! তাদের গোশতও পানিতে বরকত দিন।

তারপর যাওয়ার সময় তাকে বলে গেলেন, তোমার স্বামী ফিরলে তাকে বলো যেন দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখেন ও মযবূত করেন। 

ইসমাঈল ফিরে এলে ঘটনা শুনে তার ব্যাখ্যা দেন এবং বলেন, উনি আমার পিতা। তোমাকে স্ত্রীত্বে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। 

(বুখারী : ৩৩৬৪)

এ দোয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত মক্কাতে খাবারের অভাব নেই। ইবরাহীম আ. মক্কার জন্য বরকতের আরও দোয়া করেছিলেন, যার বিবরণ কুরআন মজীদেও আছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন

بركة دعوة إبراهيم

এটা ইবরাহীম আ.-এর দোয়ার বরকত।

হযরত আইয়ূব আ.

সহীহ বুখারীতে আছে, একদিন আইয়ূব আ. জামা-কাপড় খুলে গোসল করছিলেন। তখন তাঁর ওপর পঙ্গপলের মত ছোট্ট ছোট্ট সোনার টুকরো এসে পড়ছিল এবং তিনি সেগুলো কুড়িয়ে কাপড়ে নিচ্ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ডেকে বললেন, আইয়ূব! তুমি যা দেখেছ আমি কি তা থেকে তোমাকে অমুখাপেক্ষী করিনি?

তিনি বললেন, আপনার সম্মানের কসম! অবশ্যই করেছেন।

وَلَكِنْ لاَ غِنَى بِى عَنْ بَرَكَتِكَ 

কিন্তু আপনার বরকত থেকে তো আমি অমুখাপেক্ষী নই!

(বুখারী : ২৭৯)

হযরত মুহাম্মদ ﷺ

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সামনে মৌসুমি-ফল পেশ করা হলে, তিনি ওই ফলের জন্য বরকতের দোয়া করতেন এবং ওই ফল যে এলাকায় হয়েছে, তার জন্যও বরকতের দোয়া করতেন। এমনকি ওই ফল যেটা দিয়ে ওজন করা হত, ওই দাঁড়িপাল্লার জন্যও বরকতের দোয়া করতেন। কেননা মৌসুমি-ফল সাধারণত সকলে খায়। সুতরাং এর মধ্যে যদি বরকত না থাকে তাহলে এটা খাওয়ার পর তো উপকারের পরিবর্তে মানুষের মধ্যে রোগ-বালাই দেখা দিবে, এমনকি এলাকায় মহামারীও দেখা দিতে পারে। যেমন হাদীসে আছে, সাহাবায়ে কেরাম যখন কোনো নতুন ফল দেখতেন তখন তাঁরা তা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর খেদমতে পেশ করতেন। আর তিনি তা গ্রহণ করে এ মর্মে  দোয়া করতেন 

 اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا في ثَمَرِنَا، وَبَارِكْ لَنَا في مَدِينَتِنَا، وَبَارِكْ لَنَا في صَاعِنَا، وَبَارِكْ لَنَا في مُدِّنَا 

হে আল্লাহ! আমাদের ফলসমূহে আমাদের জন্য বরকত দান করুন, আমাদের শহরে আমাদের জন্য বরকত দান করুন, আমাদের জন্য আমাদের ’সা’ এবং আমাদের ’মুদ্দ’ তথা পরিমাপ যন্ত্রে বরকত দান করুন। 

(মুসলিম ১৩৭৩)

‘সা’ এবং ‘মুদ্দে’ বরকত দান করার অর্থ, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে, আমাদের লেনদেনে বরকত দান করুন।

হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ ﷺ দোয়া করতেন

اللهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي ، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِي

হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দিন, আমার ঘরে প্রশস্ততা দান করুন এবং আমার রিযিকে বরকত দান করুন।

(মুসনাদে আহমদ : ৪/৬৩)

নামাযের মধ্যে নবীজি ﷺ-এর জন্য বরকতের দোয়া

আমরা নামাযের মধ্যে দরূদে ইবরাহিমিতে বলে থাকি, আল্লাহুমা বারিক আ’লা মুহাম্মাদ। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ﷺ-কে বরকত দান করুন। বরকত কতটা জরুরি হলে, নামাযের মত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের জন্য এই দোয়া করার নিয়ম করে দেয়া হয়েছে! 

আর মুহাম্মদ ও তাঁর আহালকে আল্লাহ এমন সমৃদ্ধি ও স্থায়ী বরকত দান করছেন যে, পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম তাঁর প্রতি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তাদের সালাম ও দরূদে দোয়া করে যাচ্ছে, যার ধারাবাহিকতা চলছে এবং চলবে। ‘এই যে চলছে চলবে’ এর নামই বরকত। এই বরকতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা।

উরওয়াহ বারিকী রাযি.

উরওয়াহ বারিকী রাযি. বলেন, একবার  রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি ছাগল কিনে দেয়ার জন্য তাকে একটি দিনার দিয়েছিলেন। তিনি ওই দিনার দিয়ে কিনলেন দুটি ছাগল। তারপর এক দিনার মূল্যে একটি ছাগল বিক্রি করে দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর খেদমতে একটি  ছাগল ও এক দিনার নিয়ে উপস্থিত হলেন। তা দেখে তিনি তার ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত হবার জন্য দোয়া করে দিলেন। তারপর তার অবস্থা এমন হল যে, ব্যবসার জন্য যদি মাটিও তিনি কিনতেন তাতেও তিনি লাভবান হতেন।

(বুখারী : ৩৬৪২)

কেয়ামতের আগে জমিনের বরকত ফিরে আসবে

হাদীসে এসেছে, কেয়ামতের আগে ঈসা আ. যখন আসবেন, তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। আর ইয়াজুজ-মাজুজের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে। ফলে তারাও সবাই মরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এমনকি এক বিঘত জায়গাও এমন পাওয়া যাবে না, যেখানে তাদের পচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। এরপর আল্লাহ তাআলা এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যে, গোটা পৃথিবী বিধৌত হয়ে উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত হবে। 

এরপর একপর্যায়ে ঈসা আ. সারা দুনিয়ায় খেলাফত কায়েম করবেন। ফলে সারা দুনিয়ায় ইনসাফ কায়েম হবে। সে সময়ে আল্লাহ জমিনকে নির্দেশ দিবেন 

 أَنْبِتي ثَمَرَتَكِ، وَرُدِّي بَرَكَتَكِ

হে জমিন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন করো এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও।

ফলে জমিনে বরকতের এত ছড়াছড়ি হবে যে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন 

فَيَومَئذٍ تَأْكُلُ العِصَابَةُ مِنَ الرُّمَّانَةِ، وَيَسْتَظِلُّونَ بقِحْفِهَا

সেদিন একটি ডালিম খাবে একদল লোক এবং ডালিমের বাকলের নিচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। 

وَيُبَارَكُ في الرِّسْلِ، حتَّى أنَّ اللِّقْحَةَ مِنَ الإبِلِ لَتَكْفِي الفِئَامَ مِنَ النَّاسِ

দুধের মধ্যে বরকত হবে। ফলে দুগ্ধবতী একটি উটই বড় একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে।

وَاللِّقْحَةَ مِنَ البَقَرِ لَتَكْفِي القَبِيلَةَ مِنَ النَّاسِ

একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে।

একটি দুগ্ধবতী ছাগী দাদার সন্তানদের জন্য অর্থাৎ কয়েকটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে।

(মুসলিম : ২৯৩৭)

চিন্তা করে দেখুন, সেদিন পৃথিবীর বুকে ইসলামী খেলাফত কায়েমের মাধ্যমে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে গোটা পৃথিবী কী পরিমাণ বরকতময় হয়ে উঠবে!

খেলাফত প্রতিষ্ঠার বরকত 

একটা সময় ছিল, যখন পৃথিবীর বুকে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত ছিল, চারিদিকে ইনসাফ ছিল। তখন জমিন বরকতয় ছিল। 

ইমাম আবু দাউদ রহ. বলেন, আমি মিসরের একটি শসা মেপেছি তের বিঘত অর্থাৎ সাড়ে ছয় হাত লম্বা এবং একটি তরমুজ বা লেবু দেখেছি, যা দুই টুকরা করে একটি উটের উপর দুটি বোঝার মত সমান ভারী অবস্থায় ছিল।

(আবু দাউদ : ১৫৯৯)

একটু কল্পনা করুন

ক্ষণিকের জন্য একটু কল্পনা করুন, যে সমাজে কোথাও অশান্তি নেই, অরাজকতা নেই, গুম-খুনের ঘটনা নেই, ছিনতাই নেই, ধর্ষণ নেই, চুরি-দুর্নীতি-ডাকাতি নেই, বাজারে সিন্ডিকেট নেই, খাদ্যে বিষাক্ত ফর্মালিন নেই। 

না-জানি ওই সমাজ কত সুন্দর হবে, না—জানি ওই জমিন কত বরকতময় হবে, ওই জমিনের বাতাস কত নির্মল হবে, ওই জমিন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসল কত বরকতময়-সুস্বাদু-সাস্থ্যের জন্য উপকারী ও শিশুদের জন্য পুষ্টিকর হবে, ওই জমিনের সকাল বেলার দৃশ্য না-জানি কত পবিত্র হবে—যেখানে প্রতিটি ঘর থেকে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ ভেসে আসবে। 

ওই জমিনের যুবকেরা না-জানি কত বিনয়ী ও বীর-বাহাদুর হবে, অফিস-আদালত কত নীতিবান হবে, বিচার ও প্রশাসন কত সৎ ও সুচারু হবে, মা-বোনেরা কত রমনীয় ও নিরাপদ হবে! মসজিদগুলো কানায় কানায় ভরপুর হবে!

আমাদের কীসের অভাব? 

বলুন তো এমন পবিত্র একটি সমাজ, বরকতময় মানচিত্র কী আমাদের ছিল না? কীসের অভাবে আজ আমরা সে-ই সর্বাঙ্গসুন্দর সমাজ থেকে বঞ্চিত? কোন জিনিসের অভাবে আজ আমরা দেউলিয়া জাতিতে পরিণত হয়েছি? 

যে দিন থেকে আমরা ইসলাম নামক শান্তির রাজপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে মানুষের বানানো মতবাদের চোরা গলিতে পথচলা শুরু করেছি, সে দিন থেকে আমরা প্রতিনিয়ত ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হচ্ছি, ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি! আফসোস! এরপরেও আমাদের হুঁশ ফিরে আসছে না!

আমাদের কাছে ’ইসলাম’ আছে

এখনও আমাদের জন্য সে সুখ ও সমৃদ্ধি অপেক্ষা করছে। কেননা আমাদের কাছে নির্মল, নিষ্কলঙ্ক শক্তিশালী ’ইসলাম’ আছে, যা জগতের কারো কাছে নেই। 

আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, যদি আমরা জীবনের সর্ব অঙ্গনে ইসলামকে আপন করে নিতে পারি, তাহলে জমিন তার বরকত ফিরিয়ে দিবে, আমাদের চারিপাশ ফের বরকতময় হয়ে উঠবে।

ইমারতে ইসলামিয়ার বরকত

ইসলাম কায়েম হলে ওই সমাজ কত বরকতময় হয়, এতদিন পর্যন্ত আমরা কেবল এর গল্প শুনেছি, দু-চার বছর আগেও পৃথিবীবাসীর সামনে এর কোনো নমুনা ছিল না।

আলহামদুলিল্লাহ ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে আমাদের ভাইদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিশ্বাবাসীকে দেখিয়ে দিচ্ছেন ইসলামী খেলাফতের বরকত। যেখানে নেই কোনো ধর্ষণ, ব্যভিচার, চুরি, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচার। 

যে ফসল একসময় তাদের দেশে হতো না, সেটাও এখন তাদের দেশে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে!  জাফরান হচ্ছে। আনার উৎপাদন হচ্ছে। 

হীরা-মোতি-পান্নার খনি জমিনের নিচে পাওয়া যাচ্ছে। জমিন তার বরকত ফেরত দেওয়া শুরু করেছে। 

তাদের মুদ্রা ডলারের চেয়ে বেশি পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নতুন করে ভাবা শুরু করেছে যে, দেশে দেশে ইসলামী খেলাফতের ডিমান্ড তীব্রতর হওয়া শুরু হবে এবং ইনশাআল্লাহ, আগামী শতাব্দী ইসলামেরই হবে! মূলত এটাই ইসলামের বরকত। আল্লাহর দীনের বরকত। 

যদি জীবনে বরকত চলে আসে

মূলত যদি জীবনে বরকত চলে আসে, তাহলে আপনি আগুনের বিছানায়ও আরামের ঘুম দিতে পারবেন। পক্ষান্তরে যদি জীবন থেকে বরকত হারিয়ে যায়, তাহলে ফুলশয্যাও আপনার কাছে জাহান্নাম হবে।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলতেন

ما يصنَعُ أعدائي بي؟

আমার শত্রুরা আমার কী আর করবে?

 إنّ جَنَّتي وبُستاني في صَدْري

আমার জান্নাত এবং আমার আনন্দ-উদ্যান আমার বুকের ভেতরেই আছে।

 إنْ رُحْتُ فهي معي، لا تفارِقُني

আমি যেখানে যাই আমার সাথেই থাকে। আমাকে ছেড়ে যায় না।

 إنَّ حَبْسي خَلْوةٌ

তারা আমাকে বন্দী করবে? এটি আমার রবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার নির্জনতা।

 وقَتلي شَهادةٌ

আমাকে হত্যা করবে? সেটি আমার কাঙ্খিত শাহাদাত।

 وإخراجي مِن بَلَدي سِياحةٌ

আমাকে দেশ থেকে বের করে দেবে? এটি আমার জন্য আনন্দ ভ্রমন।

(ইবনুল কাইয়িম; আলওয়াবিল আসসাইয়িব : ৪৮)

বরকতময় জীবন লাভের উপায়সমূহ

এক. তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল

যত বেশি তাকওয়া তথা আল্লাহ তাআলার ভয় এবং তাওয়াক্কুল তথা তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ ভরসা আপনার অন্তরে আনতে পারবেন, আল্লাহ তাআলা আপনার জীবনটাকে তত সুখময় ও বরকতময় করে দিবেন। 

আল্লাহ বলেন 

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوْاْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَٰتٍ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ

জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দ্বারসমূহ খুলে দিতাম। 

(সূরা আরাফ : ৯৬)

ঈমানের পোশাক ও সামষ্টিক রূপ

তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল ছাড়া একজন মুমিনের জীবনে কখনও বরকত আসে না। ওয়াহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ. বলেন

الإِيمانُ عُريانٌ ، ولِباسُهُ التَّقوى

ঈমান বিবস্ত্র বস্তু। তাকওয়া হচ্ছে তার পোশাক। 

(ইবনু আসাকির; তারিখু দামিশক : ৬৩/৩৮৯)

 সাঈদ ইবনু জুবায়ের রহ. বলেন

التَّوَكُّلُ عَلَى اللَّهِ جِمَاعُ الْإِيمَانِ

আল্লাহর উপর ভরসা ঈমানের সামষ্টিক রূপ।

(মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বা : ৭/২০২)

তাকওয়ার ব্যাপারে মৌলিক দুটি কথা

এক. তাকওয়ার মূল হল, আল্লাহর ভয়ে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। নেক আমল করা এটা আল্লাহ তাআলার প্রতি মহব্বতের আলামত। আর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার আলামত। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি নামায পড়ে, পাঞ্জাবী টুপি পরে চলাফেরা করে, কিন্তু গোনাহও করে তাহলে সে নামাযী কিংবা সুন্নাতী পোশাকধারী হয়ত হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত মুত্তাকী এখনও হতে পারেনি।  

আলী রাযি. বলতেন

المُتّقي مَنْ اتّقى الذُّنوب

যে ব্যক্তি গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে, সেই মুত্তাকী।

(মীযানুল হিকমাহ : ৪/৩৬৩৮)


দুই. মুত্তাকীদের তাকওয়া কখন প্রকাশ পায়? আলী রাযি. বলতেন

عِنْدَ حُضُورِ الشَّهَوَاتِ وَاللَّذَّاتِ يَتَبَيَّنُ وَرَعُ الْأتقياءِ

শাহওয়াত এবং লায্যাত তথা যৌন-কামনা ও মজার তাড়না সামনে আসলে মুত্তাকীদের প্রকৃত তাকওয়া প্রকাশ পায়।

(মুসতাদরাকুল ওসায়িল : ১১/৩৬৪)

যেমন ফেসবুকে একটি নোংরা ছবি এসে পড়েছে, সে সঙ্গে সঙ্গে এটা স্ক্রল করে নিয়েছে, ইউটিউবে নোংরা ভিডিও এসে পড়েছে, সে ক্লিক করে তা সরিয়ে দিয়েছে, রাস্তায় একটা মেয়ে চোখের সামনে পড়ে গিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি নামিয়ে নিয়েছে, তাহলে এটা তাকওয়া। হঁ্যা, এর চেয়ে বড় তাকওয়া তো হল, ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহারই না করা।

আল্লাহ তাওফীক দান করুন আমীন।

অনুরূপভাবে একজনের সামনে সুদ ঘুষ বা অন্যান্য হারাম থেকে মজা লুটে নেয়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু সে আল্লাহর ভয়ে হাত বাড়ায়নি, তাহলে এটাও তাকওয়া। 

তাকওয়া জীবনে সুখ-শান্তি নিয়ে আসে  

তাকওয়া আপনার জীবনে চলে আসলে, তাকওয়াভিত্তিক পরিবার আপনি তৈরি করতে পারলে বাড়ি গাড়ি কিংবা কাড়ি কাড়ি টাকা আপনার হয়ে যাবে; এই নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিচ্ছি না। তবে বাড়ি গাড়ি আর টাকা-পয়সার উদ্দেশ্য তো হল, সুখ ও শান্তি লাভ করা। সেই ঠিকানায় আপনি বসবাস করবেন; এই নিশ্চয়তা আপনাকে দিচ্ছি। 

তাছাড়া দুনিয়া মানেই সুখ-দুঃখ এই জগতে হাত ধরাধরি করে চলে। সাইকেলের দুই চাকার মত, একটি থাকলে আরেকটিও থাকে। এই জগতে শুধু সুখ নেই, বিপরীতে শুধু দুঃখ নেই। দুটাই একসঙ্গে বসবাস করে। 

তাকওয়ার জীবন গঠন করলে কোনো দুঃখই আপনার মনকে অশান্ত করতে পারবে না। বরং দুখের মধ্যেই একপ্রকার সুখ-শান্তি আপনি অনুভব করবেন এবং আল্লাহ তাআলার সাহায্য পদে পদে অনুভব করবেন।  

কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا  وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ  وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনো না কোনো পথ তৈরি করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।

(সূরা আত-তালাক : ২, ৩)

যে আমলে সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল 

আমাদের মাশায়েখ পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার সঙ্গে একটি কথা বলেন, মনে করুন, গোনাহের সুযোগ আপনার হাতে ছিল, পরিবেশও ছিল; কিন্তু আপনি আল্লাহর ভয়ে গোনাহটি করেননি। ওই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে আপনি যে দোয়াই করবেন, সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়ে যাবে। 

যেমন আপনার মনে চেয়েছে, এখন ইউটিউবে ঢুকবেন। নাটক-সিনেমা দেখবেন। কিন্তু পরক্ষণেই আল্লাহর ভয় আপনার অন্তরে চলে আসল, তাই আপনি গোনাহটি আর করলেন না। এবার আল্লাহর কাছে আপনার মন মত একটি দোয়া করুন, আল্লাহ তাআলা সঙ্গে সঙ্গে কবুল করে নিবেন। এটাকে বলা হয়, ঝোপ বুঝে কোপ মারা।  

ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর যুগের একটি ঘটনা

ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর যুগের এক বিচারকের ঘটনা। বিচারক একদিন বাসায় ঢুকে দেখেন তাঁর স্ত্রী একা। তাই একটু রোমান্টিকভাবে ডাক দিয়ে বললেন, একটু কাছে আসো।

স্ত্রীরা এরকম সময়ে সাধারণত একটু ন্যকামি করে। তাই স্ত্রী তার আহ্বানে সাড়া দিল না। স্বামী যখন বার বার আহ্বান করছিলো, এক পর্যায়ে স্ত্রী ন্যকামি করে বলে বসলো, আমি জাহান্নামীর কাছে যাব না। 

এতে বিচারকের গোস্বা উঠে গেল এবং বলে ফেলল, যদি আমি জাহান্নামী হই তাহলে তুই তিন তালাক। পরে যখন গোস্বা পড়ে গেল, তখন চিন্তা হল, আমি এ কী করলাম! এখন আমার কী হবে? 

ফতওয়া আনার জন্য মুফতী সাহেবদের নিকট গেলেন। মুফতী সাহেবরা বললেন, যেহেতু আমরা জানি না, আপনি জান্নাতী না জাহান্নামী, তাই আপনার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে কিনা; আমাদের জানা নেই। এক কাজ করুন, আপনার স্ত্রীকে আপাতত তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। স্পষ্ট ফতওয়া আসার আগ পর্যন্ত তিনি নিজের বাবার বাড়িতেই থাকুক।

ঘটনাটা কোনোভাবে পৌঁছে গেল ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর দরবারে। তখন তিনি তাঁর ছাত্রদের সামনে মন্তব্য করলেন, আমি বিচারকের সঙ্গে কথা বলতে পারলে হয়ত এর একটা সমাধান বের করে দিতে পারবো!

ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর এই মন্তব্য আবার পৌঁছে গেল বিচারকের কানে। তাই তিনি দৌড়ে আসলেন ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর কাছে এবং তাঁর কাছে এর সমাধান কামনা করলেন। 

ইমাম শাফেয়ী রহ. উত্তর দিলেন, তবে তো আপনার সঙ্গে একাকী কথা বলতে হবে। বিচারক তখন তাঁর সঙ্গে আসা লোকজনকে সরিয়ে দিলেন। ইমাম শাফেয়ী রহ. তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, বলুন তো, আপনার জীবনে এমন কোনো ঘটনা আছে কি যে, একটি গোনাহ করার সুযোগ পেয়েছিলেন, পরিবেশও অনুকূলে ছিল; কিন্তু আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে গোনাহটি থেকে তৎক্ষণাৎ ফিরে এসেছিলেন?

বিচারপতি উত্তর দিলেন হঁ্যা, আমার জীবনে এমন একটি ঘটনা আছে। যা এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। আমার স্ত্রীও জানে না। এমনকি যার সঙ্গে এই ঘটনা সে মেয়েটিও জানে না। 

ঘটনাটি ছিল এই যে, একদিন আমি বাসায় ঢুকলাম। ওইদিন বাসায় কেউ ছিল না। আমার স্ত্রীও না। সে কোথাও বেড়াতে গিয়েছিল। বাসায় ছিল একটি কাজের মেয়ে। মেয়েটি দেখতে সুন্দরী ছিল। বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির প্রতি আমার কুদৃষ্টি পড়ল। 

মেয়েটি তখন আনমনে তার কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি আমার কুমতলব চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে দরজার সিটকিনি আটকে দিলাম। অতি সতর্কভাবে ধীরে ধীরে মেয়েটির প্রতি অগ্রসর হতে লাগলাম। তখন আমার অন্তরে ঝড় চলছিল। একবার মনে আসলো, যদি মেয়েটি রাজি না হয়!  যদি ধরা খেয়ে যাই! আবার নিজের উত্তর নিজেই দিচ্ছিলাম, মেয়েটি তো গরিব ঘরের। 

সুতরাং টাকা-পয়সা দিলে রাজি হয়ে যাবে। আর যদি ধরা খেয়ে যাই, ঘটনা যদি প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহলে অসুবিধা নেই। কেননা আমি নিজেই তো বিচারপতি। আমার বিচার করবে কে! এভাবে নানা ভাবনার মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম এবং একেবারে মেয়েটির কাছাকাছি চলে গেলাম। এখনই পেছন দিক থেকে তার উপর হামলে পড়বো। 

মেয়েটি কিন্তু এর কিছুই জানে না। সে তখনও তার কাজই করে যাচ্ছিল। আর ঠিক তখনই কেউ একজন যেন আমার মনে বলে উঠলো, তাহলে আল্লাহ কোথায় আছেন? 

তিনি তো তোমার এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে সম্যক অবগত! এটা মনে হতেই আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বের হয়ে পড়লাম। 

ইমাম শাফেয়ী রহ. বিস্তারিত শোনার পর বললেন আপনি আপনার স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসুন। কেননা আলহামদুলিল্লাহ, আপনার স্ত্রী তালাক হয়নি।

বিচারপতি বললেন আপনি যা বলেছেন তার প্রমাণ কী?

ইমাম শাফেয়ী রহ. বললেন এর প্রমাণ হলো কুরআন মজিদের আয়াত। আল্লাহ তাআলা বলেন 

وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الهوى فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى

আর যে লোক তার প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করেছিল এবং নিজেকে কামনা বাসনা থেকে নিবৃত্ত রেখেছিল, জান্নাতই হবে তার বাসস্থান। 

(সূরা আন-নাযিআত : ৪০,  ৪১)

উক্ত ঘটনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, কোনো ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকলে সংকট যত বড়ই হোক না কেন, আল্লাহ তাআলা উত্তরণের উপায় তার জন্য তৈরি করে দেন।

দুই. অধিকহারে ইস্তেগফার করা 

জীবনে বরকত লাভের অন্যতম আমল হল বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। এর কোনো হিসাব বা সংখ্যা বা সময় নির্ধারণ করে করা যাবে না। বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই ইস্তেগফার করতে হবে। অন্তত এটুকু বলা উচিৎ أستغفر الله أستغفر الله

ইস্তেগফার করছে এমন কাউকে আল্লাহ আযাব দিবেন না

হাসান বসরী রহ. বলেন

ইস্তেগফার করছে এমন কাউকে আল্লাহ আযাব দিবেন বলে আমি মনে করি না। এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন

তাকে শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে কীভাবে আল্লাহ তাআলা তার মনে ইস্তেগফারের প্রেরণা দিতে পারেন?

আল্লাহ তাআলা বলেন

وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

আল্লাহ এমন নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। 

(সূরা আনফাল : ৩৩)

সকল সমস্যার এক সমাধান

একবার হাসান বসরী রহ.-এর কাছে এক ব্যক্তি জানাল, আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে আমল দিন। হাসান বসরী তাকে বললেন, ইস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল, আমি গরীব আমাকে রিজিকের আমল দিন। হাসান বসরী রহ. তাকেও বললেন, ইস্তেগফার করো। এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হওয়ার আমল চাইলে তিনি বললেন, ইস্তেগফার করো।

তখন আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সবাইকে এক পরামর্শই দিলেন যে! হাসান বসরী রহ. উত্তরে বললেন

ما قلت من عندي شيئا ; إن الله تعالى يقول في سورة  نوح 

আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলিনি। এটা বরং আল্লাহ তাআলা তার কুরআনে শিখিয়েছেন। তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন।

(তাফসীরে কুরতুবী : ১৮/৩০৩)

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا

আর বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তেগফার করো। (ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজ¯্র বারিধারা বর্ষণ করবেন। 

তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।

(সূরা নূহ : ১০—১২)

তিন. সময়ের সদ্ব্যবহার করা  

সময়ের সদ্ব্যবহার করে কাজ করলে তাতে বরকত হয়। অনুরূপভাবে সময়কে কাজে লাগিয়ে যে যত বেশি নেক আমল করবে, তার জীবন তত বেশি বরকতময় হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন

لا يزيدُ في العمرِ إلَّا البرُّ 

নেককাজ ব্যতীত অন্য কিছু বয়সকে বাড়াতে পারে না। 

(তিরমিযী : ২১৩৯)

হযরত জুরজানির সময়ের মূল্য

একবার হযরত সিররি সাকতি রহ. দেখলেন হযরত জুরজানি রহ. ছাতু চূর্ণ করছেন। তিনি বললেন, ‘হযরত, কষ্ট করে ছাতু করার কী প্রয়োজন? রুটি বানালেই তো হয়?

হযরত জুরজানি রহ. বললেন, ‘আমি হিসাব করে দেখেছি রুটি পাকাতে বেশি সময় ব্যয় হয়। ওই সময়ে ৭০ বার সুবহানাল্লাহ পড়া যায়। তাই ৪০ বছর যাবত আমি রুটির বদলে ছাতু খেয়ে আসছি।’ সুবহানাল্লাহ।

এভাবেই সালফে সালেহীন সময়ের মূল্য দিয়েছেন এবং জীবনকে বরকতময় করেছেন।

চার. দিনের শুরুতে না ঘুমানো 

আল্লাহ তাআলা দিনের শুরুতে বরকত রেখেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি বরকতের সময় জাগ্রত থাকবে আল্লাহ তার অলসতা, উদাসীনতা ও আড়ষ্টতা সব দূর করবেন এবং পুরো দিনের সব কাজে বরকত দান করবেন। কেননা দিনের শুরুভাগের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ বরকতের দোয়া করেছেন।

সখর গামেদি রাযি. সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ দোয়া করেছেন

اللَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا

হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।

আর সখর রাযি. ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তাঁর ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। 

(আবু দাউদ : ২৬০৬)

যারা ওই সময়টাতে ঘুমিয়ে থাকে, তারা সার্বিক সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। রিজিকে বরকতের ছেঁায়া পায় না। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. তার এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন

 أتنام في الساعة التي تُقسَّم فيها الأرزاق؟

ওঠো! তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?

(যাদুল মাআদ : ৪/২৪১)

পাঁচ. বাবা-মায়ের খেদমত করা

যারা পিতা-মাতার খেদমত করে তাদের বয়সেও আল্লাহ তাআলা বরকত  দান করেন। 

কিতাবে একটি ঘটনা এসেছে, এক লোকের চার ছেলে ছিল। লোকটি ছিল নেককার। যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হলেন, তখন তার ছোট ছেলে অপর তিন ভাইকে বলল, তোমরা বাবার খেদমত করবে না আমি করব? যদি তোমরা বাবাকে নাও, তাহলে বেশি সম্পদ আমি নিব। আর যদি তোমরা আমাকে খেদমতের জন্য বাবাকে দাও, তাহলে বিনিময়ে তোমরা বেশি সম্পদ নিবে।

অন্যান্য ভাইয়ের জন্য এটা ছিল সুযোগ। কারণ খেদমত না করেই বাবার সম্পদ পেয়ে যাবে। উপরন্তু তাদের ছোট ভাই পিতার সম্পদ থেকে খেদমতের বিনিময়ে কোনো কিছু নিবে না। তাই তারা বলল, তুমিই তোমার ভাগে বাবাকে নিয়ে নাও। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

তারপর ছোট ভাই নিজের ভাগে সম্পদের পরিবর্তে বাবাকে নিয়ে গেল এবং খেদমত করতে থাকল। লোকটি খুশি হয়ে একদিন আল্লাহর কাছে হাত তুলে ছোট ছেলের জন্য দোয়া করে বললেন, হে আল্লাহ! আমার ছেলের সম্পদে বরকত দিয়ো। 

আল্লাহর হুকুমে লোকটি একদিন মারা গেল। কথা মতো ছোট ভাই বাবার সম্পদ কম নিলো। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে বাবার খেদমতের পুরস্কার এভাবে দিলেন যে, এক রাতে সে স্বপ্নে দেখে, কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক জায়গায় যাও সেখানে তুমি একশ’ দীনার পাবে। 

সে বলল, এতে কি বরকত আছে? 

বলা হল, না, বরকত নেই।

সকালে সে তার স্ত্রীকে স্বপ্নের কথা বলল। স্ত্রী বলল, যাও একশ’ দীনার নিয়ে আসো, তা দিয়ে আমরা সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারব। 

কিন্তু সে অস্বীকার করল।

পরের রাতে আবার সে স্বপ্ন দেখল। কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক জায়গায় যাও তুমি সেখানে দশ দীনার পাবে। 

সে বলল, এতে কি বরকত আছে? 

এবারও তাকে বলা হল, না, বরকত নেই।

সকালে সে তার স্ত্রীকে স্বপ্নের কথা বলল। তার স্ত্রী তাকে জোর দিয়ে বলল, এবার অন্তত যাও। কিন্তু সে অস্বীকার করল। কেননা এতে বরকত নেই।

কিছুদিন পর সে আবার স্বপ্নে দেখল, কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক স্থানে যাও, সেখানে তুমি এক দীনার পাবে। 

সে বলল, এতে কি বরকত আছে? 

এবার তাকে বলা হল, হঁ্যা আছে।

সে সকালে সেখানে গেল এবং সত্যিই এক দীনার পেল। ফিরে আসার সময় সে বাজার থেকে এক দীনারে দুটি মাছ কিনে আনল। মাছ দুটি কেটে-কুটে পরিস্কার করার সময় তাদের পেটে একটি করে মোট দুটি হীরা পেল। সে হীরা দুটি অনেক দামে বিক্রি করল। 

ওই অর্থ দিয়ে সে ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বাবলম্বী হল। এভাবে সে তার পিতার খেদমতের পুরস্কার পেয়ে গেল। বাবার খেদমতের বিনিময়ে আল্লাহ তার জীবনে এভাবে বরকত দান করেছিলেন।

ছয়. আত্মীয়-স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা

আত্মীয়-স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার দ্বারা হায়াতে এবং রিজিকে বরকত আসে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন

 مَن أَحَبَّ أن يُبْسَطَ له في رزقِه ، وأن يُنْسَأَ له في أَثَرِهِ ، فَلْيَصِلْ رَحِمَه

যে-ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে।

(বুখারী : ২০৬৭)

সাত. কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা

কুরআনের সঙ্গে আমরা আমাদের সম্পর্ক যত বাড়াব তত বরকত লাভ করতে পারব। যে ঘরে কুরআন তেলাওয়াত হবে, কুরআনের চর্চা হবে, সে ঘরে নেমে আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও বরকত। আল্লাহ তাআলা বলেন

وَ هٰذَا کِتٰبٌ اَنزَلنٰهُ مُبٰرَک 

এটি এমন একটি কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব বরকতময়।

(সূরা আনআম : ১৫৫)

উসমান গাজী রহ.-এর কুরআনের প্রতি আদব

উসমানী সালতানাতের মূল ব্যক্তি উসমান গাজী রহ. উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছিলেন, কুরআন মাজীদের প্রতি আদব ও ইহতেরামের কারণে। 

তিনি তার সময়ের অত্যন্ত দানবীর ছিলেন। অতিথি-মুসাফির ও অসহায়দের জন্য উদার মনে হাত খুলে খরচ করতেন। গ্রামবাসীর কাছে বিষয়টি কঠিন মনে হলে তারা তার খঁুত ধরতে তৎপর থাকতো। তাই তিনি হাজী বাকতাশ বা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে নিজ মহল্লাবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগের জন্য গেলেন। 

পথিমধ্যে জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে যাত্রবিরতি করলেন। তিনি ওই ব্যক্তির কামরায় ঝুলন্ত কুরআন দেখতে পেয়ে জানতে চাইলেন, এটা কী? 

বাড়ির লোকজন বললো, এটা আল্লাহ তাআলার কালাম। 

তিনি বললেন, আমি কুরআন মাজীদ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বসাকে আদবের খেলাফ মনে করি। 

এ বলে তিনি কুরআনের দিকে ফিরে সকাল পর্যন্ত পায়ের উপর দাঁড়িয়ে রইলেন। সকাল হলে নিজ গন্তব্যের দিকে হাঁটতে লাগলেন। 

পথিমধ্যে জনৈক লোক সামনে এসে বলতে লাগলো, আমি তোমার খেঁাজে আছি। তোমার জন্য সুসংবাদ যে, কুরআন মাজীদকে তাযীমের বদৌলতে আল্লাহ তাআলা তোমাকে মর্যাদা দিয়েছেন এবং তোমাকে ও তোমার সন্তানদেরকে রাজত্ব দান করেছেন। তুমি গাছ থেকে একটি ডাল কেটে তার মাথায় রুমাল বেঁধে দাও। এটাই তোমার ঝাণ্ডা হবে। 

এরপর লোকেরা তার কাছে সমবেত হওয়া শুরু করলো। আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর গায়েবী সাহায্য দান করলেন। পরবর্তীতে তিনি দেশের বাদশা হয়েছিলেন।

(তাফসীরে রুহুল বয়ান : ৫/৩৭৫)

এই হলো কুরআনের প্রতি ইহতেরামের ফয়েয ও বরকত।

আট. প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা 

খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হলে শয়তান ওই খাবারে অংশ নিতে পারে না। যেটুকু খাবার আছে তা পরিমাণে কম হলেও তার জন্য বরকত বয়ে আনে। অনুরূপভাবে কেউ যদি ঘরে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ বলে তখনও শয়তান তার সঙ্গে বাসায় ঢুকতে পারে না। এভাবে বান্দা যখন সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে, তখন শয়তান সব কিছু থেকে মাহরূম হয়। আর আল্লাহ তাআলা সব কাজেই বরকত দান করেন। 

ওলামায়ে কেরাম লিখেছেন, রাত-দিন মোট ২৪ ঘণ্টা। পাঁচ ঘণ্টার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায আর অবশিষ্ট ১৯ ঘণ্টার জন্য ১৯টি হরফ দান করা হয়েছে। যেন ১৯ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্ত, কাজ ও ব্যস্ততা ১৯টি হরফের বরকতে ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়। অর্থাৎ

 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

এর বরকতে ১৯ ঘণ্টাও ইবাদতরূপে বিবেচিত হয়। 

(তাফসীরে আজীজী : ১/১৬)

নয়. দান-সাদকা করা

দান-সাদকার মাধ্যমেও বরকত লাভ হয়। তাই আমাদের বেশি বেশি দান করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন

يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ

সুদকে আল্লাহ মোচন করে দেন আর দান-সদকাকে বৃদ্ধি করে দেন।

(সূরা বাকারা : ২৭৬)

হাদীসে কুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন

 قَالَ اللَّهُ أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ

আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি খরচ করো, আমিও তোমার জন্য খরচ করব। 

(বুখারী : ৫৩৫২)

দশ. পড়ে যাওয়া খাবার উঠিয়ে খাওয়া

আনাস রাযি.। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর খাবার খাওয়ার সময়ের অবস্থা তুলে ধরে বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খাওয়ার পর তাঁর তিনটি আঙুল চাটতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কারো খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে সে যেন তার ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ফেলে রেখো না। আর তিনি থালাও চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন

فإنَّكُمْ لا تَدْرُونَ في أَيِّ طَعَامِكُمُ البَرَكَةُ

তোমাদের খাদ্যের কোনো অংশে বরকত রয়েছে তা তোমাদের জানা নেই। 

(তিরমিযী : ১৮০৩)

এগারো. বেচা-কেনায় সততা অবলম্বন

ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত হয় সততার দ্বারা। একজন ব্যবসায়ী মিথ্যা বলে অচল মাল চালিয়ে দিলে সাময়িকভাবে বেশি লাভ করতে সক্ষম হলেও সততা বর্জনের কারণে সে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। এটাই হল তার বরকত মোচন। ক্রেতাও অসততার ফলে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।

 فإنْ صَدَقا وبَيَّنا بُورِكَ لهما في بَيْعِهِما، وإنْ كَتَما وكَذَبا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِما

যদি ক্রেতা-বিক্রেতা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে; আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।

 (বুখারী : ২০৭৯)

সততার অনন্য উদাহরণ

এক ব্যক্তি একজন লোকের কাছে জমি বিক্রি করল। জমিটির খরিদ্দার যখন তাতে খোঁড়াখুঁড়ি করছিল তখন ঘটনাক্রমে সেখানে স্বর্ণমুদ্রায় ভর্তি একটি কলসি বেরিয়ে আসল।

কলসিটি নিয়ে লোকটি জমি বিক্রেতার কাছে এসে বলল, ‘ভাই, তোমার জমিতে এ স্বর্ণমুদ্রাগুলো পেলাম। তাই এগুলো তোমার। কারণ আমি তো তোমার কাছ থেকে শুধু জমি কিনেছি, স্বর্ণ কিনিনি।’ উত্তরে জমি-বিক্রেতা বলল, ‘এটা আমি নেব না। কেননা, আমি যখন জমি বিক্রি করেছি, তখন তার মধ্যে যা ছিল সেটাও তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছি।’ 

এবার দু’জনের মাঝে উল্টো ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। একজন বলে, নাও। অন্যজন বলে, নেব না। এমনকি বিষয়টি একপর্যায়ে কাজীর দরবার পর্যন্ত চলে গেল এবং পুরো ঘটনা তাকে জানানো হল। 

সবকিছু শুনে কাজী সাহেব ফায়সালা করলেন যে, ‘তোমাদের দু’জনের কোনো ছেলে-মেয়ে আছে?’ 

সৌভাগ্যক্রমে দেখা গেল, একজনের একটি ছেলে আছে। আর অন্যজনের একটি মেয়ে আছে। 

কাজী সাহেব তখন বললেন, ‘তোমার ছেলের কাছে তোমার মেয়েকে বিয়ে দাও। আর এ স্বর্ণগুলো তাদের মাঝে বণ্টন করো।’ এভাবেই এ ঝগড়ার অবসান হয়।

(বুখারী : ৩৪৭২)

বারো. অপচয় না করা 

ইবনু আববাস রাযি. বলেন

من أنفق درهما في غير حقه فهو سرف

যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে এক দিরহামও খরচ করল সেটাই অপচয়। 

(তাফসীরে কুরতুবী : ১৩/৭৩)

বিশেষ করে অপচয় না করলে বিবাহ-শাদীতে অনেক বরকত হয়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন 

 إِنَّ أَعْظَمَ النِّكَاحِ بَرَكَةً أَيْسَرُهُ مُؤْنَةً

নিশ্চয় সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সেটি, যেখানে খরচ কম হয়ে থাকে।

(মুসতাদরাকে হাকিম : ২৭৩২) 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে বিয়ে মানেই অপচয়। সেই সাথে গান-বাদ্য, ভিডিও ও পর্দাহীনতা আছেই। 

এসব কারণে বিবাহ—শাদীর বরকত নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি না পাওয়ার অন্যতম কারণ এই বরকতহীনতা। 

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন আমীন।

তেরো. লোভ পরিত্যাগ করা

হাদীসে এসেছে, হাকিম ইবনু হিযাম রাযি. বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল ﷺ-এর কাছে কিছু চাইলাম। 

তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে আবার দিলেন, তৃতীয়বার চাইলাম, বরাবরের মতো এবারও তিনি আমাকে দিলেন। তারপর বললেন, হে হাকিম! 

 إنَّ هذا المَالَ خَضِرٌ حُلْوٌ، فمَن أَخَذَهُ بسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُورِكَ له فِيهِ، ومَن أَخَذَهُ بإشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ له فِيهِ، وكانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ ولَا يَشْبَعُ 

এ সম্পদ তো সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। সুতরাং যে তা নিজের প্রয়োজন মত গ্রহণ করবে, তাকে তাতে বরকত দান করা হবে। পক্ষান্তরে যে মনে লোভ রেখে তা গ্রহণ করবে, তাকে তাতে বরকত দেওয়া হবে না। তার অবস্থা হবে সেই ব্যক্তির মত, যে খাবে অথচ তৃপ্ত হবে না। 

(বুখারী : ১৪৭২)

চৌদ্দ. হজ-ওমরাহ পালন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন

تابِعوا بينَ الحجِّ و العُمْرةِ؛ فإنَّ مُتابَعةً بيْنهما تَنْفي الفَقرَ والذُّنوبَ، كما يَنْفي الكِيرُ خَبَثَ الحديدِ

তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাকো। কারণ এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গোনাহ দূরীভূত হয়; যেমনভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়।

 (তিরমিযী : ৮১০)

মুহাম্মদ ইবন মুনকাদির রহ. 

মুহাম্মদ ইবন মুনকাদির নামে একজন তাবেয়ী ছিলেন। তাঁকে বলা হতো তাঁর যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম। তিনি প্রতিবছর হজে যেতেন। এমনকি ঋণগ্রস্ত থাকাবস্থায়ও। লোকজন বলতো, আপনি ঋণগ্রস্ত অবস্থায়ও হজে যান কেন?

তিনি বলতেন, হজই ঋণ আদায়ের সব থেকে বড় মাধ্যম ও সাহায্যকারী!

তিনি একা হজে যেতেন না, পরিবারের নারী-শিশু সবাইকে নিয়ে।

মানুষ বলতো, সবাইকে নিয়ে হজে যান কেন?

তিনি বলতেন, আমি তাদেরকে আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করি।

(সিয়ারুস সাহাব : ১৪/২২৬)

পনেরো. জিহাদে অংশ নেওয়া 

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন

الْـخَيْلُ مَعْقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الْـخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

আল্লাহ তাআলা কেয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটে কল্যাণ বেঁধে রেখেছেন।

(নাসায়ী : ৩৫৬২)

ষোলো. বরকতের জন্য দোয়া করা

জীবনে বরকত লাভের বড় উপায় হলো দোয়া করা। কারণ নবী, রাসূলসহ সবাই বরকতের জন্য দোয়া করেছেন।

দোয়া করি, আল্লাহ আমাদের জীবনকে বরকতময় করুন আমীন।

وَآخِرُ دَعْوَانَا اَنِ الْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ


ইসলাহী বয়ান অবলম্বনে।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

মূর্তি ও ভাস্কর্য : যুগে যুগে শিরকের সর্ববৃহৎ প্রণোদনা

...

আল্লামা উবায়দুর রহমান খান নদভী
৮ নভেম্বর, ২০২৪
৪৩২৩ বার দেখা হয়েছে

ইসলামই পৃথিবীর ভবিষ্যত

...

আল্লামা উবায়দুর রহমান খান নদভী
১০ নভেম্বর, ২০২৪
২৩৯৪ বার দেখা হয়েছে

ঝাড়ফুঁক-তাবীয : একটি দালীলিক বিশ্লেষণ (৩য় পর্ব)

...

মাওলানা ইমদাদুল হক
৯ নভেম্বর, ২০২৪
১৮০২ বার দেখা হয়েছে

স্রষ্টা ও তাঁর অস্তিত্ব

...

আল্লামা মনযুর নোমানী রহঃ
৯ নভেম্বর, ২০২৪
১২৪৬ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী

শাইখুল ইসলাম আল্লামা যাহেদ কাউছারী রহঃ

মুফতী আব্দুল হান্নান হাবীব

মুফতী সালমান মানসুরপুরী

শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস দাঃ

আল্লামা আহমাদ মায়মূন

মাওলানা আতাউল্লাহ আব্দুল জলীল

আল্লামা রফী উসমানী রহঃ

মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানভী রহ.

মাওলানা নূর আলম খলীল আমিনী

হযরত মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী রহঃ

হযরতজী মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি রহঃ

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন

মাওলানা শাহাদাত সাকিব

আল্লামা ইসহাক ওবায়দী রহঃ

মাওলানা ওমর পালনপুরী

মুফতী আবুল কাসেম নোমানী

হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ)

আল্লামা মানাযির আহসান গিলানী রহঃ