প্রবন্ধ

পাশ্চাত্য নারীবাদ বনাম ইসলামে নারীর মর্যাদা

লেখক:মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
২৮ জুলাই, ২০২৫
৩৮৭৬ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য
আজকের দুনিয়ায় ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো শুরু করেছে এক নতুন খেলা।
তাদের অভিযোগ—ইসলাম নাকি নারীর ওপর বাড়াবাড়ি রকমের নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিয়েছে! এই বলে তারা মুসলিম নারীদের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়, উসকে দেয় বিদ্রোহের আগুন।
দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের অনেক বোনই এসব প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে পড়ে। ভাবতে শুরু করে, আমাদের কি সত্যিই আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে?
বাস্তবতা হলো, ইসলাম নারীর ওপর কোনো জুলুম করেনি; বরং তাকে সম্মান আর নিরাপত্তার চাদর পরিয়ে দিয়েছে। নারীর মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান—সবচেয়ে পরিপূর্ণভাবে দিয়েছে কেবল ইসলামই।
আর যারা নারীর নামে স্বাধীনতার বুলি আওড়ায়, তারা আসলে নারীকে উপভোগ্য বস্তু বানাতে চায়।  তারা হিজাবের বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু নারীর শরীরকে বিজ্ঞাপনের পণ্য বানাতে দ্বিধা করে না। তারা ইসলামকে দোষ দেয় নারীর অধিকার কেড়ে নেওয়ার, কিন্তু নিজেরাই নারীর দেহের সৌন্দর্যকে বিক্রি করে বাজারে। তারা পর্দাকে বলে ‘পিছিয়ে পড়া’, আর অশ্লীলতাকে বলে ‘প্রগতিশীলতা’। তাদের কথায় মধুর আবরণ, কিন্তু ভেতরে লুকানো বিষ। তাদের ডাকে আছে মুক্তির সুর, কিন্তু গন্তব্য—চূড়ান্ত গোলামী।


اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِینَةُ ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَاۖ وَٱلۡبَٰقِیَٰتُ ٱلصَّـٰلِحَٰتُ خَیۡرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابࣰا وَخَیۡرٌ أَمَلࣰا
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيْمِ، وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ اْلآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ. وجَعَلَنِيْ إِيَّاكُمْ مِنَ الصَّالِحِينَ
 أَقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِيْنَ. فَاسْتَغْفِرُوْهُ، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ.اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
হামদ ও সালাতের পর!
আল্লাহ তাআলা বলেন
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
যে কেউ নেক কাজ করে—সে পুরুষ হোক কিংবা নারী—আর সে যদি মুমিন হয়, তাহলে আমি তাকে অবশ্যই একটি সুন্দর জীবন দান করব এবং তাদের কর্মফলের উত্তম প্রতিদান তাদেরকে অবশ্যই প্রদান করব, যা তারা করে গেছে। [সূরা নাহল : ৯৭] 
জাহেলি যুগে নারীর করুণ অবস্থা
ইসলামের আগে নারীদের কোনো সম্মান ছিল না। কন্যাসন্তান জন্ম নিলে লোকে লজ্জা পেত, মুখ লুকিয়ে বেড়াত। কেউ কেউ তো এতটাই পাষাণ ছিল যে, নিজের মেয়েশিশুকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলত!
মেয়েদের মানুষ মনে করা হতো না। একজন পুরুষ মারা গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পদের মতোই তার স্ত্রীকেও ছেলে বা অন্য পুরুষেরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত।
নারীর কথা তারা শুনত না। যদি কোনো নারী ভালো এবং যুক্তির কথা বলত, তাও তারা বলত, ‘নারীর কথা শুনলে নাকি পুরুষের মর্যাদা নষ্ট হয়।’
তাদের দৃষ্টিতে নারীর মূল্য ছিল একজোড়া পুরোনো জুতার থেকেও কম।
রাসূল ﷺ-এর আগমণ
সেই অন্ধকার যুগে যখন নারীর কোনো দাম ছিল না, তখন আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় রাসূল ﷺ পৃথিবীতে এলেন—মানবতার মুক্তির বার্তা নিয়ে। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বললেন, হে মানুষ! নারী তোমার লজ্জা নয়—তোমার সম্মান। সে যদি কন্যা হয়—তবে সে তোমার গর্ব। সে যদি বোন হয়—তবে সে তোমার সম্মানিত রক্ত। সে যদি স্ত্রী হয়—তবে সে তোমার জীবনের সঙ্গী। আর যদি মা হয়—তাহলে তার পায়ের নিচে আছে তোমার জান্নাত।
তিনি এমন সুসংবাদ দিলেন, যা কোনো সমাজ কখনো দিতে পারেনি
مَن عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا، جَاءَ يَوْمَ القِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ، وَضَمَّ أَصَابِعَهُ
যার ঘরে দুটি কন্যাসন্তান জন্ম নেবে, আর সে যদি তাদেরকে ভালোভাবে গড়ে তোলে, ভালো শিক্ষা দেয়, আদব-আখলাক শেখায়, তবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে—ঠিক যেমন দুটো আঙুল পাশাপাশি থাকে। [তিরমিযী : ১৯১৪]
তিনি আরও বললেন
مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ وَأَطْعَمَهُنَّ وَسَقَاهُنَّ وَكَسَاهُنَّ مِنْ جِدَتِهِ، كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে, আর সে তাদের বিষয়ে ধৈর্য ধরবে, খাওয়াবে, পান করাবে এবং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে কাপড় পরাবে—তারা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে ঢাল হবে। [ইবন মাজাহ : ৩৬৭০]
নারীও হতে পারে আল্লাহর ওলী
আল্লাহ তাআলা নিজেও কুরআন মজিদে জানিয়ে দিলেন
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً
যে কেউ নেক কাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, যদি সে মুমিন হয়, তবে আমি তাকে পবিত্র, সুন্দর জীবন দান করব। [সূরা নাহল : ৯৭] 
এই আয়াত নারীদের জন্য যেন এক শান্তির বার্তা। কেননা জাহেলি যুগ বলেছিল, নারী তুচ্ছ! কিন্তু আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিলেন— নারীও আল্লাহর প্রিয় হতে পারে। পুরুষের মতো নারীও হতে পারে আল্লাহর ওলী, জান্নাতি, প্রিয়তমা বান্দী। নারীর হৃদয়েও জ্বলে উঠতে পারে আল্লাহর প্রেমের দীপ্তি। নারীত্ব কোনো বাধা নয়; বরং ঈমান আর আমলই আসল পরিচয়।
এভাবে ইসলাম নারীদের এমন সম্মান দিয়েছে—যা কোনো সভ্যতা, কোনো দীন, কোনো সমাজ কখনো দিতে পারেনি।
প্রোপাগান্ডার ফাঁদে নারী
আজকের দুনিয়ায় ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো শুরু করেছে এক নতুন খেলা। তাদের অভিযোগ—ইসলাম নাকি নারীর ওপর বাড়াবাড়ি রকমের নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিয়েছে! এই বলে তারা মুসলিম নারীদের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়, উসকে দেয় বিদ্রোহের আগুন।
দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের অনেক বোনই এসব প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে পড়ে। ভাবতে শুরু করে, আমাদের কি সত্যিই আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে?
কিন্তু তারা বুঝে না—এই কথাগুলোর পেছনে কী ভয়ংকর ফাঁদ লুকিয়ে আছে।
বাস্তবতা হলো, ইসলাম নারীর ওপর কোনো জুলুম করেনি, বরং তাকে সম্মান আর নিরাপত্তার চাদর পরিয়ে দিয়েছে। নারীর মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান—সবচেয়ে পরিপূর্ণভাবে দিয়েছে কেবল ইসলামই।
আর যারা নারীর নামে স্বাধীনতার বুলি আওড়ায়, তারা আসলে নারীকে উপভোগ্য বস্তু বানাতে চায়।  তারা হিজাবের বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু নারীর শরীরকে বিজ্ঞাপনের পণ্য বানাতে দ্বিধা করে না। তারা ইসলামকে দোষ দেয় নারীর অধিকার কেড়ে নেওয়ার, কিন্তু নিজেরাই নারীর দেহের সৌন্দর্যকে বিক্রি করে বাজারে। তারা পর্দাকে বলে ‘পিছিয়ে পড়া’, আর অশ্লীলতাকে বলে ‘প্রগতিশীলতা’। তাদের কথায় মধুর আবরণ, কিন্তু ভেতরে লুকানো বিষ। তাদের ডাকে আছে মুক্তির সুর, কিন্তু গন্তব্য—চূড়ান্ত গোলামী।
ইসলামে পর্দার বিধান : সম্মানের নিরাপত্তা
ইসলামের বিরুদ্ধে যারা এসব প্রপাগান্ডা চালায়, তারা প্রথমেই বলে—ইসলাম নাকি নারীদের পর্দার ভেতরে বন্দি করে রেখেছে। আর তার বিপরীতে তারা দেখায়—অমুসলিম সমাজে নারীরা অবাধ স্বাধীনতা উপভোগ করে!
অথচ বিষয়টা আসলে খুবই সহজ। পর্দা মানে বন্দিত্ব নয়; বরং নিরাপত্তা। পর্দা মানে মর্যাদা রক্ষা, নিজেকে সম্মানের ঢালে ঘেরা।
নারী যখন পর্দায় থাকে, সে নিজেও নিরাপদ থাকে। তাকে কেউ ভোগের দৃষ্টিতে দেখে না, ব্যবহার করতে চায় না। পুরুষ সমাজও তখন সংযত থাকে—চোখ, মন ও প্রবৃত্তি থাকে নিয়ন্ত্রণে।
পর্দাহীনতা তাদের কোথায় নিয়ে গেছে?
আসুন, একবার পাশ্চাত্যের দিকে তাকাই— যেখানে নারীদের ‘স্বাধীনতা’র নামে সাজিয়ে-গুছিয়ে বাজারে নামানো হয়েছে পণ্যের মতো। পর্দাহীনতার এই পথ তাদের কোথায় নিয়ে গেছে?
 বিবাহের প্রতি ঘৃণা, পরিবার ভাঙনের মহামারী, ধর্ষণ, অশ্লীলতা, লিভ-ইন সম্পর্ক, আত্মহত্যা আর বিষণ্নতার ঢেউ—এটাই সেই স্বাধীনতার পরিণতি, যা তারা দিয়েছে পর্দাহীনতার নামে।
সুইডেনে পর্দাহীনতার পরিণতি
সুইডেন—ইউরোপের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রগুলোর একটি। বৃটেনের ঠিক পাশেই এর অবস্থান। এই দেশটি এতটাই স্বনির্ভর যে, সেখানে বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়—লাভ কিভাবে বাড়বে, ব্যয় কোথায় কমবে। আমাদের মতো নয়—যেখানে মানুষ ভাবে, টাকা আসবে কোথা থেকে? ওরা ভাবে, এই বাড়তি টাকা খরচ করবো কোন খাতে? তাদের ধনসম্পদ এত বেশি যে, সমগ্র জাতি যদি ছয় বছর কিছু না করে—শুধু খায়, ঘুরে বেড়ায়, আনন্দ করে—তবুও কোনো টানাপোড়েন হবে না। বেকার হলে সরকার নিজেই মাসিক ভাতা দেয়। বাসা না থাকলে সরকার ঘর বানিয়ে দেয়। অসুস্থ হলে সরকার লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করে। অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা—সব কিছু নিশ্চিত।
বাকি থাকল শুধু জৈবিক চাহিদা। সেখানে তারা আরও স্বাধীন! দেশটি পরিচিত সেক্স-ফ্রি কান্ট্রি হিসেবে। যখন-যার সঙ্গে-যেভাবে ইচ্ছা, নারী-পুরুষ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে— না আছে লজ্জা, না আছে বাধা।
তাহলে তাদের কোনো চিন্তা থাকার কথা নয়, তাই না?
কিন্তু বাস্তবতা বড়ই ভয়াবহ। এই ‘স্বাধীন’ সমাজের চেহারায় ফুটে ওঠে দুটি গভীর বিপর্যয়—
১. সুইডেনে শতকরা সত্তরেরও বেশি দাম্পত্য জীবন ভেঙে যায়। ১০০ পরিবারের মধ্যে ৭০টির বেশি পরিবার তালাকের শিকার। বাচ্চারা বড় হয় টুকরো ভালোবাসার ভেতরে—সম্পূর্ণ পরিবারের ছায়া পায় না।
২. সুইডেন পৃথিবীর আত্মহত্যায় শীর্ষস্থানে থাকা দেশগুলোর একটি। অভাব নেই, সুযোগের কমতি নেই— তবুও তারা বেঁচে থেকেও জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না।
পর্দা ব্যবস্থার চমৎকার প্রভাব
ইসলাম আমাদের যে একটি বড় নেয়ামত দিয়েছে, তা হলো—পর্দা ব্যবস্থার নির্দেশনা। যার সুফল আমরা নিজেরাই প্রতিদিন ভোগ করছি, অথচ অনেকেই তা বুঝে উঠতে পারি না।
আমাদের দেশে হ্যাঁ, খাদ্যসংকট আছে, বাসস্থানের সংকটও আছে, তবুও শতকরা প্রায় ৯৯%  শতাংশ পরিবার এখনো টিকে আছে! ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী বংলাদেশে তালাকের হার মাত্র ১.১% মাত্র।
প্রশ্ন আসে, এমন শান্তির জীবন আমরা কোথা থেকে পেলাম? এই পরিবার-ভিত্তিক সমাজ কাঠামো কিভাবে রক্ষা পেল?
উত্তর একটাই— আমাদের সমাজে এখনো কিছুটা হলেও ইসলামের পর্দা, শালীনতা, সম্পর্কের পবিত্রতা টিকে আছে। নারী এখনো অনেকাংশে নিজেকে সম্মানিত মনে করে, পুরুষ এখনো অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্ববান। সন্তানরা এখনো মা-বাবার ছায়ায় বড় হয়, একটি পূর্ণ পরিবারে হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠে।
এটাই সেই কল্যাণ, যা ইসলামের বিধান মেনে চলার মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি।
ইউরোপে নারীদের দূরাবস্থা
আমাদের সমাজের কিছু মুসলিম নারী আজ একটা মারাত্মক ভুল ধারণার শিকার। তারা ভাবে,  ইউরোপ-আমেরিকার নারীরা পর্দাহীন, তাই নাকি তারা স্বাধীন। আমাদের নারী সমাজ পর্দায় আবদ্ধ, তাই আমরা পিছিয়ে আছি।
অথচ এ ভাবনা একেবারে ভুল। কারণ প্রকৃত বিষয় মোটেও এমন নয়। বাস্তবতা হল, তথাকথিত স্বাধীনতার নামে নারীদেরকে অন্তহীন শ্রম ও উপার্জনের যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। তাদের দেখা হয় ‘ও কাজ পারে কিনা’, ‘ও ডেলিভারি দিতে পারবে কিনা’, আর সুযোগ পেলে অনেক সময় হয়—উপভোগের এক বস্তু।  
রেস্টুরেন্ট ও হোটেল-সার্ভিসে নারী ওয়েটারদের ছোট পোশাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় কেবল ‘আকর্ষণ’ বাড়াতে। 
ইউরোপের বড় বড় দেশে—যেমন জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড—সেখানে NLC (National Logistics Companies)-এর অধীনে বিশাল বিশাল ট্রাক ও ট্রলার চালায় মেয়েরাও। তারা দিনের পর দিন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গাড়ি চালায়। পুরুষ চালক যেমন পথের মাঝে থামে, গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চা খায়, রাত হলে রাস্তার পাশের হোটেলে ঘুমিয়ে নেয়, নারী চালকেরাও আজ সেই একই কাজ করছে।
তুমি নিজেই ভাবো—এটা কি নারীর প্রকৃত সম্মান? এসব মেয়েরা সম্মান লাভ করেছে নাকি লাঞ্চিত হচ্ছে?
নারী-স্বাধীনতার নামে ধোঁকা
একবার তাবলিগ জামাতের একটি দল স্কটল্যান্ডের এডিনবারা শহরে গিয়েছিল। সন্ধ্যার মাগরিবের নামাজ শেষ হয়েছে। মসজিদের দোয়া-দরুদ শেষ করে সবাই যে যার মতো বের হচ্ছিল। এমন সময় এক বিদেশিনী তরুণী এগিয়ে এসে জামাতের এক যুবক-সাথীর কাছে জানতে চাইল, ‘ডু ইউ স্পিক ইংলিশ?’
যুবক বিনয়ের সঙ্গে বললো, হ্যাঁ, বলতে পারি।
মেয়েটি প্রশ্ন করল, তোমরা এখানে কী করছো?
যুবক বলল, আমরা আল্লাহর ইবাদত করেছি।
মেয়েটি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, আজ তো সানডে (রবিবার) নয়! আবার কিসের ইবাদত?
যুবক বললো, আমরা সপ্তাহের কোনো একদিন নয়— প্রতিদিন, দিনে পাঁচবার আমাদের রবের ডাকে সাড়া দিই। জীবনের সব কিছু তাঁরই দান। তাই পাঁচবার দেখা করি।
এ কথা শুনে মেয়েটি কিছুক্ষণ নীরব। তারপর এগিয়ে এসে হাত বাড়াল হ্যান্ডশেকের জন্য।
যুবকটি মাথা নীচু করে নম্রভাবে বললো, দুঃখিত, আমি আপনার সঙ্গে হাত মেলাতে পারব না।
মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, কেন?
জবাবে সে বললো, এই হাত আমি আমার স্ত্রী ছাড়া আর কাউকে স্পর্শ করি না। এই হাত আমার স্ত্রীর আমানত। অন্য কোনো নারীর সঙ্গে এ স্পর্শ হতে পারে না।
মেয়েটি হঠাৎ কেঁদে ফেলল। মাটিতে বসে হুহু করে বিলাপ করতে লাগল। বলতে লাগল, তোমার স্ত্রী কতটা সৌভাগ্যবতী! ইশ! আমাদের ইউরোপের পুরুষরা যদি এমন হতো!
এটা ছিল শুধু একজন তরুণীর কান্না নয়; বরং পুরো পাশ্চাত্যের নারীদের অশ্রু, যারা স্বাধীনতার নামে ধোঁকা খেয়ে ভালোবাসা আর নিরাপত্তাহীনতায় ক্লান্ত।
ঘরেরও নয়, বাইরেরও নয়—এই কেমন স্বাধীনতা?
শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী কত সুন্দর করে বলেন,  এই যুগে একটা ভয়ানক ভুল চিন্তা মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, নারী যদি ঘরে থেকে স্বামী-সন্তান, মা-বাবা আর ভাই-বোনের জন্য রান্না-বান্না করে, ঘর গুছিয়ে রাখে, তাহলে এটা নাকি অপমান আর বন্দিত্ব!
কিন্তু সে নারী যদি পরপুরুষের খাবার রান্না করে, হোটেল বা উড়োজাহাজে তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকে, দোকানে মিষ্টি হাসি দিয়ে গ্রাহককে আকৃষ্ট করে, অফিস-আদালতে বসদের মনোরঞ্জনে লিপ্ত হয়, তাহলে সেটাই হয়ে যায় ‘মর্যাদা’ ও ‘স্বাধীনতা’!  ইন্নালিল্লাহি ...
আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, এই তথাকথিত আধুনিক নারী বাইরে আট ঘণ্টা চাকরি করে আর ঘরে ফিরে আগের মতোই রান্না, ধোয়া-মোছার দায়িত্ব পালন করে। এই কি স্বাধীনতা? নাকি দ্বিগুণ পরিশ্রমের বন্দিত্ব?
ইউরোপ-আমেরিকার বহু নারী আজ এই দমবন্ধকরা চক্রে পিষ্ট হচ্ছে।
অর্ধেক জনশক্তি—এই যুক্তির প্রতারণা
তিনি আরো বলেন, আরেকটি যুক্তি বারবার শোনা যায়, জাতীয় উন্নতির যুগে নারীদের ঘরে বসিয়ে রাখা চলে না। আমরা কি দেশের অর্ধেক জনশক্তিকে কর্মহীন রাখব?
এই কথা এমনভাবে বলা হয়, যেন দেশের সকল পুরুষের কর্মসংস্থান ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে! যেন চাকরির বাজারে আর কোনো প্রতিযোগিতা নেই!
কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেখানে একটি ক্লিনার কিংবা পিয়নের পদ খালি হলে দশ-দশটি মাস্টার্সধারী যুবক দরখাস্ত জমা দেয়, সেখানে নারীদেরকে কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
প্রথমে তো পুরুষদের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব পালন করুন, তারপর না হয় ‘অবশিষ্ট অর্ধেক’ জনশক্তির কথা ভাববেন।
ইসলাম নারীদের ঘরের রাণী বানিয়েছে
ইসলাম কখনো নারীদের কাঁধে উপার্জনের দায়িত্ব দেয়নি। মেয়ে হলে—তার খরচ চালাবে বাবা। বোন হলে—দেখভাল করবে ভাই। স্ত্রী হলে—সব খরচের দায়িত্ব স্বামীর। আর মা হলে—তার খরচ চালাবে সন্তান।
মানে, মেয়েটা জীবনের কোনো সময়েই নিজের আয় দিয়ে চলার কষ্ট পাবে না। সব সময়ই কোনো না কোনো আপন পুরুষ তার দায়িত্ব নেবে।
ইসলাম বলে, নারীরা ঘরের রাণী। পুরুষরা ঘাম ঝরিয়ে কামাই করে তাদেরকে দিবে। নারীরা শুধু সন্তানদের লালন-পালন করবে। ঘরকন্নার কাজ সামলাবে। আপনারা নিজেরাই বিচার করুন, নারীদেরকে প্রকৃত মর্যাদা কে দিয়েছে? ইসলাম নাকি পাশ্চাত্য সমাজ?
নারীদের প্রতি ইসলামের কোমল দৃষ্টি কেন?
যদি আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করেন, দেখবেন, ইসলাম নারীদের প্রতি বিশেষ কোমলতা আর মমতা দেখিয়েছে। কেন? এর কারণ দুটো—
প্রথমত, শারীরিকভাবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় একটু দুর্বল আর নরম। এটা আল্লাহ তাআলা তাদের এমন করেই বানিয়েছেন। এতে দোষের কিছু নেই। বরং এই কোমলতা দিয়েই তারা সন্তানকে আগলে রাখে, সংসার গড়ে তোলে।
দ্বিতীয়ত, নারীদের মন খুব কোমল। তারা সহজেই কেঁদে ফেলে, ভালোবাসে, মায়া-মমতা দেয়। এই আবেগ ও কোমলতাই নারীদের আসল সৌন্দর্য। এটা কোনো ত্রুটি নয়। বরং এটাই নারীর বড় গুণ।
শারীরিক ও মানসিক কাঠামোর এই স্বাভাবিক পার্থক্যের কারণেই আল্লাহ তাআলা দায়িত্ব-বণ্টনেও ভারসাম্য রেখেছেন। পুরুষের উপর অর্পণ করেছেন তার শক্তি-সাহস অনুযায়ী দায়িত্ব। আর নারীর উপর দিয়েছেন তার কোমলতা ও সক্ষমতার উপযোগী দায়িত্ব।
এই ভারসাম্যই আল্লাহর বানানো পৃথিবীর সৌন্দর্য।
আল্লাহর সুপারিশ
আমাদের শায়খ ও মুরশিদ মাহবুবুল ওলামা পীর জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী দা বা বলেন, আল্লাহ তাআলা নিজেও পুরুষদের কাছে নারীদের পক্ষে সুপারিশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
তোমরা নারীদের সঙ্গে উত্তমভাবে জীবন যাপন করো। [সূরা আন-নিসা :১৯]
তিনি বলেন, দুনিয়াতে কারো বোন সুপারিশ করে, কারো মা সুপারিশ করে, কারো স্ত্রী বা ফুফু, খালা সুপারিশ করে—এভাবেই আপনজনরা একে অপরের হয়ে সুপারিশ করে। কিন্তু মহান আল্লাহ নিজেই নারীদের সম্মান ও অধিকারের পক্ষে সুপারিশ করেছেন। এটাই আল্লাহর বিশেষ রহমত যে, তিনি নারীদের মর্যাদা রক্ষার জন্য সরাসরি আদেশ দিয়েছেন।
নারী-জীবনের বিভিন্ন ধাপে প্রতিদান ও সম্মান
ইসলাম নারীর প্রতি কতটা স্নেহশীল, তা বুঝতে হলে নারী-জীবনের বিভিন্ন ধাপে আল্লাহর দেওয়া সওয়াব ও পুরস্কারের কথা জানা জরুরি।
ইসলাম তাকে সম্মান দিয়েছে কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে, এমনকি বৃদ্ধা হিসেবেও।
কন্যাশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া : এক অপার রহমত
ইসলাম এমন এক ধর্ম, যেখানে কন্যা শিশুর জন্মকে অভিশাপ নয়; বরং রহমত ও জান্নাতের সুসংবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের শিখিয়েছেন
مَنْ كَانَ لَهُ ثَلاَثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَى لَوَائِهِنَّ وَضَرَائِهِنَّ وَسَرَائِهِنَّ أَدْخَلَهُ اللّهُ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِهِنَّ
যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সে ধৈর্যের সাথে তাদের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন ও সুখ-দুঃখ সহ্য করে লালন-পালন করবে, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে তাদের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
নবীজির পবিত্র যবান থেকে এ কথা শুনে এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন وَاثْنَتَانِ يَا رَسُولَ اللّهِ؟ হে আল্লাহর রাসূল, যদি দুইটি হয়?
রাসূল ﷺ বললেন وَاثْنَتَانِ অর্থাৎ, দুইটিও হলে আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে তাদের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আরেকজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন يَا رَسُولَ اللّهِ: وَوَاحِدَةٌ؟ আর যদি একটি হয়?
রাসূল ﷺ বললেন وَوَاحِدَةٌ একটিও হলে।  [মুসতাদরাক হাকিম : ৪/১৭৬] 
নারীর মাতৃত্বের মর্যাদা
বিয়ে-শাদির পর যখন এক মেয়ে স্বামীর ঘরে গিয়ে সংসার শুরু করে, তখন ধীরে ধীরে সে স্বামীর সাথে আনন্দঘন জীবন যাপন করতে থাকে। সংসারের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে। একসময় আল্লাহ তাআলা তাকে মা হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। এই অবস্থায় ইসলামে সেই নারীর জন্য রয়েছে এক বিরাট সুসংবাদ। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন
أَفَمَا تَرْضَى إِحْدَاكُنَّ أَنَّهَا إِذَا كَانَتْ حَامِلًا مِنْ زَوْجِهَا ، وَهُوَ عَنْهَا رَاضٍ أَنَّ لَهَا مِثْلَ أَجْرِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
তোমাদের কারো জন্য কি এই সম্মান যথেষ্ট নয় যে, যখন সে স্বামীর সন্তান ধারণ করে এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, তখন আল্লাহ তাআলা তার জন্য সেই সময়টাতে সিয়াম পালনকারী ও আল্লাহর রাস্তায় রাত্রি জেগে নামায আদায়কারীর সমান সওয়াব লিখে দেন। [শু'আবুল ঈমান : ৮২৮৮, আলমু’জাম, তাবরানী : ৬৯০৮]
ব্যথা, আর তার বিনিময়ে সাওয়াব
যখন কোনো নারী মা হওয়ার পথে থাকে, সন্তানের জন্ম যত কাছাকাছি আসে, তার কষ্টও ততই বেড়ে যায়। এক সময় সেই প্রসব যন্ত্রণায় কঠিন মুহূর্ত পার করে। 
গবেষণায় দেখা গেছে,  এই ব্যথার মাত্রা প্রায় ৫৭ ডেল! যেখানে মানুষ সাধারণত ৪৫ ডেলের বেশি ব্যথা সহ্যই করতে পারে না। তুলনা করে বলা যায়, একসাথে ২০টা হাড় ভেঙে গেলেও এর চেয়ে কম কষ্ট হয়। এই ব্যথার প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি নিঃশ্বাস—আল্লাহর কাছে অমূল্য। এমনকি সেই সময় জান্নাতের দরজাও নারীর জন্য খুলে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন
إِذَا أَصَابَهَا الطَّلْقُ لَمْ يَعْلَمْ أَهْلُ السَّمَاءِ وَأَهْلُ الأَرْضِ مَا أُخْفِيَ لَهَا مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ
যখন একজন নারীর প্রসব বেদনা শুরু হয়, তখন আসমান-জমিনের কেউ জানে না—আল্লাহ তার জন্য কী অপার আনন্দ, শান্তি ও চোখের শীতলতা লুকিয়ে রেখেছেন। [মাজমাউজজাওয়াইদ : ৪/৩০৫]
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী নারী ‘শহীদ’
যে নারী সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদের মর্যাদা পায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন
وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيدَةٌ
যে নারী গর্ভকালীন অবস্থায় বা সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ। [আবু দাউদ : ৩১১১] 
মায়ের দুধের প্রতিটি ফোঁটায় সওয়াব
একজন মা যখন সন্তান জন্ম দেয়, তখন তার কষ্টের কোনো তুলনা হয় না। আর যখন সে সন্তানের মুখে দুধ তুলে দেয়, তখনও তার জন্য আল্লাহর দরবারে জমা হতে থাকে অসংখ্য নেকি। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন
فَإِذَا وَضَعَتْ لَمْ يَخْرُجْ مِنْهَا جُرْعَةٌ مِنْ لَبَنِهَا ، وَلَمْ يَمُصَّ مَصَّةً إِلا كَانَ لَهَا بِكُلِّ جُرْعَةٍ وَبِكُلِّ مَصَّةٍ حَسَنَةٌ
যখন কোনো মা সন্তান প্রসব করে, তারপর তার বুকের দুধের একটি ফোঁটাও সন্তান পান করলে এবং শিশুটি যখন একবার চুষে নেয়, তখন প্রতিটি ফোঁটা ও প্রতিটি চুষার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি করে নেকি লিখে দেন। [শু‘আবুল ঈমান : ৮২৮৮] 
এভাবেই মা শুধু সন্তানকে লালন-পালন করেন না; বরং প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর দরবারে সওয়াবের খাতায় নিজের নাম লিখিয়ে চলেন।
মায়ের নিদ্রাহীন রাতের পুরস্কার
যে মা সন্তান জন্ম দেয়, সে শুধু তখনই সওয়াবের হকদার নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
فَإِنْ أَسْهَرَها لَيْلَةً كَانَ لَهَا مِثْلُ أَجْرِ سَبْعِينَ رَقَبَةً تُعْتِقُهُنَّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
যদি সেই সন্তান কোনো রাতে অসুস্থ হয়, কান্না করে বা অন্য কোনো কারণে মাকে জাগিয়ে রাখে, আর মা ধৈর্য ধরে তাকে আদর-যত্ন করে তাহলে আল্লাহ তাআলা সেই মায়ের জন্য এমন সওয়াব লিখে দেন, যেন সে আল্লাহর রাস্তায় নিখুঁত সত্তরজন গোলাম আযাদ করেছে। [আবু নুআইম : ৭০৮৯, মাজমাউজজাওয়াইদ : ৪/৩০৫]
আল্লাহু আকবর! কী মহান পুরস্কার! 
সন্তানকে কুরআন শেখানোর ফজিলত 
একজন মা যখন তার সন্তানকে কুরআন শেখানোর জন্য পাঠায়, তার হিফজ, তিলাওয়াত শেখায়— তখন সে শুধু দুনিয়ার নয়; বরং আখিরাতের জন্যও অসংখ্য সওয়াব অর্জন করে। কারণ, হাদিসে এসেছে 
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَعَمِلَ بِمَا فِيهِ أُلْبِسَ وَالِدَاهُ تَاجًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضَوْءُهُ أَحْسَنُ مِنْ ضَوْءِ الشَّمْسِ
যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং তার ওপর আমল করে, কিয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে এমন একটি মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও সুন্দর। [আবু দাউদ : ১৪৫৩]
সংসারের কাজেও নারীর জন্য সওয়াব
প্রিয় বোনেরা! আমাদের সমাজে সব নারী-ই সংসারের কাজ করেন। ঘর ঝাড়ু দেন, কাপড় পরিষ্কার করেন, রান্না-বান্না করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটানা ঘরের কাজ সামলান। অনেকেই ভাবেন, এগুলো বুঝি শুধু দুনিয়ার কাজ। অথচ ইসলামে এসব কাজও ইবাদত, যদি নিয়ত থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, যে মহিলা স্বামীর ঘরের অগোছালো জিনিস গুছিয়ে রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে নেকি দান করবেন, তার গুনাহ মাফ করবেন।
এবার চিন্তা করুন, নারীরা প্রতিদিন কত শত কাজ করেন! রান্নাঘরেই কত কিছু গুছিয়ে রাখেন। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের মা-বোনেরা এই কাজগুলো মানুষকে দেখানোর জন্য করেন। যেন কেউ নোংরা না বলে, কেউ সমালোচনা না করে। এই নিয়ত করলে কোনো সওয়াব নেই।
নিয়ত শুদ্ধ করুন
এজন্য আসল কাজ হলো, নিয়ত শুদ্ধ করা। নিয়ত শুদ্ধ হলে, ঘরদোর ঝাড়ু দিতেও সওয়াব, রান্না করতেও সওয়াব, কাপড় ইস্ত্রি করতেও সওয়াব। যেমন, এক মহিলা তরকারি রান্না করছে। রান্নার সময় একটু পানি বেশি দিল। এই নিয়ত করলো, যদি মেহমান আসে, তাকে যেন খাওয়াতে পারি, কিংবা প্রতিবেশীকে দিতে পারি। এই নিয়ত করার কারণে আল্লাহ তার জন্য সেই খাওয়ানোর সওয়াব লিখে দেবেন।
দীন শিখা ফরজ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَمُسْلِمَةٍ
‘প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য দীনের ইলম শিক্ষা করা ফরজ।’
এখনকার নারীরা দীন শেখে না। গোসলের মাসআলাও জানে না। অথচ এসব না জানলে সওয়াব পাওয়ার সুযোগ মিস হয়ে যায়।
ঘর পরিষ্কারের আসল নিয়ত কী হওয়া উচিত?
অনেকে শুধু এই ভয়ে পরিষ্কার করেন যে, লোকজন কি বলবে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কারীদের এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। [সূরা বাকারা : ২২২]
আর রাসূল ﷺ বলেছেন
الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ
পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। [সহীহ মুসলিম : ২২৩]
তাই করণীয় হল, ঘর পরিষ্কার করার সময় এই নিয়ত করুন— আল্লাহ পরিচ্ছন্নতাকে ভালোবাসেন। রাসূল ﷺ বলেছেন পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরিষ্কার করছি।
ফার্নিচার পরিষ্কার করা, জামাকাপড় ইস্ত্রি করা, রান্না করা— সব কাজেই এই নিয়ত করলে প্রতিটি কাজের বদলে আল্লাহ আপনাকে সওয়াব দেবেন। কারণ তখন আপনার কাজ শুধু দুনিয়ার কাজ থাকবে না; হয়ে যাবে ইবাদত।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়ত বিশুদ্ধ করার তাওফিক দিন—আমীন।
শিশুদের সঠিক শিক্ষা না হওয়ার মূল কারণ
আজকাল মেয়েরা মা হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু কীভাবে সন্তানের তারবিয়াত দিতে হয়, কীভাবে তাকে সঠিক মানুষ গড়ে তুলতে হয়— সে শিক্ষা তাদের নেই। কারণ, নিজেরাও তো সঠিকভাবে দীনী তারবিয়াত পায়নি। এরা কীভাবে সন্তানকে শিখাবে!
এটাই আজকের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই কারণেই আমাদের ঘরে ঘরে সন্তানরা সঠিক শিক্ষা, আদব-আখলাক আর ইসলামী চেতনাতে বড় হচ্ছে না।
এক সময় ছিল, মায়েরা সন্তানদের মানুষ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতেন। সন্তানের অন্তরে ঈমান, আল্লাহভীতি, সত্যবাদিতা, দয়া আর আদর্শ জীবনের বীজ বপন করতেন। 
আমি আপনাদের সামনে একটা ঘটনা শুনাবো। যার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন, পূর্বের নেককার মায়েরা কীভাবে সন্তানদের দীক্ষা দিতেন, কীভাবে তাদের আদর্শ মানুষ বানাতেন।
চলুন সেই শিক্ষামূলক ঘটনাটি শুনে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য নতুন করে ভাবতে শিখি।
ঈমান শিক্ষা দেওয়ার এক অনুপম ঘটনা
দিল্লিতে একজন বড় বুযুর্গ ছিলেন— হযরত খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী রহ.। তাঁকে মোঘল বাদশাহরাও পীর মানতেন। তাঁর কবর কুতুব মিনারের একদম কাছেই। সেই মিনারের নামও তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
শৈশবে তাঁর জীবনে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে, যা সত্যিই শিক্ষা দেয় কীভাবে ঈমানের বীজ শিশুর হৃদয়ে রোপণ করতে হয়।
তখন তিনি সদ্য মাদরাসায় যাওয়া শুরু করেছেন। তাঁর মা-বাবা চিন্তা করলেন, প্রথম কাজ হবে এই শিশুর অন্তরে আল্লাহর উপর নির্ভরতা, তাওয়াককুল শেখানো। যাতে সে মাখলুকের দিকে না তাকিয়ে, সব চাওয়া-পাওয়া আল্লাহর কাছেই করে।
মা এক কৌশল নিলেন। পর দিন মাদরাসা থেকে আসার আগেই খাবার রান্না করে লুকিয়ে রাখলেন।
বখতিয়ার কাকী বাড়ি ফিরে বলল, মা, খুব ক্ষুধা পেয়েছে। খাবার দাও।
মা বললেন, বাবা! খাবার তো আল্লাহর কাছে চাইতে হয়। তুমি আল্লাহর কাছে দোয়া করো। তিনি খাবার দেবেন।
শিশুটি জিজ্ঞেস করল, কীভাবে চাইব?
মা বললেন, জায়নামায বিছিয়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করো।
ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চা জায়নামায বিছিয়ে দোয়া করতে লাগল, ‘আল্লাহ! আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে। আপনি আমাকে খাবার দিন।’
মা বললেন, দোয়া করেছ তো? এবার ঘরের মধ্যে খুঁজে দেখো, আল্লাহ নিশ্চয়ই খাবার পাঠিয়েছেন।
ছেলেটা সারল্য ভরে ঘরের কোণায় কোণায় খুঁজে বেড়াল। হঠাৎ এক জায়গায় খাবার পেয়ে মহাখুশিতে খেয়ে নিল।
এভাবে প্রতিদিন। মা রান্না করে রেখে দিতেন, ছেলে মাদরাসা থেকে ফিরে আল্লাহর কাছে দোয়া করত। খাবার খুঁজে পেত। এই অভ্যাসেই তার অন্তরে গেঁথে গেল আল্লাহর উপর নির্ভরতা।
একদিন মা বাড়িতে ছিলেন না। আত্মীয় বাড়ি গিয়ে ভুলে গেলেন খাবার লুকিয়ে রাখতে। হঠাৎ মনে পড়তেই আঁতকে উঠলেন। ভাবলেন, ‘ওগো আল্লাহ! আজ তো খাবার রেখে আসিনি। আমার সন্তান এখনো হয়তো তোমার কাছে দোয়া করছে। তুমি আমার মুখ রক্ষা করো। আজ তাকেই তুমি খাবার পাঠিয়ে দাও।’
মা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে ছুটলেন। বাড়ি এসে দেখলেন, বখতিয়ার কাকী দিব্যি ঘুমাচ্ছে।
মনে মনে ভাবলেন, ক্ষুধার জ্বালায় হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি রান্না করে খাবার লুকিয়ে রাখলেন।
এদিকে ছেলে ঘুম থেকে উঠে বলল, আম্মা! আজকের খাবার এত মজার ছিল যে, এমন সুস্বাদু খাবার কখনো খাইনি।
মা বিস্ময়ে বললেন, কোথায় পেলি?
ছেলে বলল, মাদরাসা থেকে ফিরে এসে দোয়া করলাম, ‘আল্লাহ! আমার ক্ষুধা পেয়েছে, আজ আমার মা নেই। আপনি দয়া করে ভালো খাবার দিন।’ দোয়া করে দেখি, বিছানার ওপর খাবার রাখা। আমি খেলাম।
মা-ই সন্তানের প্রথম মাদরাসা
প্রিয় বোনেরা! এক সময় ছিল, যখন আমাদের মায়েরা সন্তানের ছোটবেলা থেকেই ঈমানের আলো জ্বেলে দিতেন। শিখিয়ে দিতেন—বাবা, সব কিছু আল্লাহর কাছেই চাইতে হয়। তিনিই রিজিক দেন, তিনিই বিপদ দূর করেন।
আজকের দিনে এমন কোনো মা আছে কি, যে গর্ব করে বলতে পারে, আমি আমার সন্তানের অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস গেঁথে দিয়েছি?
কোনো মা কি সকালে বা রাতে খাবার খাওয়ানোর সময় বলে, বাবা, সবসময় সত্য কথা বলবে। মিথ্যা বলা হারাম। আল্লাহ মিথ্যাবাদীকে পছন্দ করেন না।
না— আজ এসব নিয়ে আমাদের কোনো মনোযোগ নেই। অথচ এগুলোই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার মূল বুনিয়াদ।
মায়েরা ভাবে, বাচ্চা বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মনে রাখুন, শৈশবের অভ্যাস সত্তর বছরেও বদলায় না।
আজ কেন সন্তানরা বড় হয়ে বাবা-মাকে অবহেলা করে? কারণ ছোটবেলায় আমরা তাদের অন্তরে আল্লাহভীতি, ভালোবাসা আর নৈতিক শিক্ষা দেইনি।
একটা সময় ছিল, মায়েরা ফজরের পর সন্তানকে কোলে নিয়ে সূরা ইয়াসিন পড়তেন। সন্ধ্যায় সূরা ওয়াকিয়া। রাতে ঘুমানোর আগে সূরা মুলক।
আর আজ? সকালেও মা ঘুমায়। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মা টিভি, নাটক, সিনেমা আর সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোলে থাকা শিশু দুধ পান করে, মা তখন পর-পুরুষ দেখে সিনেমার দৃশ্যে।
হে মা! বলো, এভাবে রেখে তোমার সন্তান জোনায়েদ বাগদাদী হবে কীভাবে? কিভাবে হবে আব্দুল কাদের জিলানী?
মা-ই সন্তানের প্রথম মাদরাসা। এই দায়িত্ব ভুলে গেলে ঘরে দীন আসমান থেকে নেমে আসবে না। তুমি যা শিখাবে, সন্তান তাই শিখবে।
সংসারে বরকতের রহস্য
এমন সময়ও ছিল, যখন স্বামীরা ব্যবসার জন্য ঘর থেকে বের হতেন। তখন স্ত্রীরা জায়নামায বিছিয়ে ইশরাক কিংবা চাশতের নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন, হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন— হে আল্লাহ! আমার স্বামী হালাল রিজিকের জন্য বের হয়েছে। তার কাজে বরকত দাও, তার রিজিকে বরকত দাও।
ঘরে বসে স্ত্রীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন। আর আল্লাহ তাআলা তাদের স্বামীদের জন্য কাজের রাস্তাগুলো খুলে দিতেন, ব্যবসাকে সাফল্যময় করে দিতেন এবং রিজিকে বরকত দান করতেন।
সারকথা
মুসলিম সমাজে নারী মানেই ঘরের রাণী। একটা ঘরের ভালো-মন্দ, শান্তি-অশান্তি—সব কিছুই অনেকটা নির্ভর করে নারীর চরিত্র আর দীনদারির উপর। যদি মা দীনদার হয়, ভালো গুণের অধিকারী হয়, তাহলে তার সন্তানরাও দীনদার, ভালো চরিত্রের মানুষ হয়ে বড় হবে। তাদের ভেতরেই গড়ে উঠবে আল্লাহভীরুতা ও নবীর ﷺ প্রেম।
তাই মুসলিম নারীদের দীনের শিক্ষা দেওয়া, আদর্শ নারী হিসেবে গড়ে তোলা—এই সময়ের সবচেয়ে জরুরি কাজ। জনৈক ব্যক্তি চমৎকার বলেছেন
مرد پڑھا فرد پڑھا
عورت پڑھی خاندان پڑھا
পুরুষ শিক্ষিত হলে একজন মানুষ শিক্ষিত হয়।
আর নারী শিক্ষিত হলে পুরো পরিবার শিক্ষিত হয়।
সুতরাং যদি চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দীনের আলোয় উজ্জ্বল হোক; তবে আমাদের মায়েদেরই আগে দীনের আলোয় গড়ে তুলতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন—আমীন।

وَآخِرُ دَعْوَانَا اَنِ الْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

عورت کی حکمرانی کی شرعی حیثیت

...

মুফতী হাবীবুর রহমান খাইরাবাদী
৮ নভেম্বর, ২০২৪
৪৫২৪ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

বিবিধ

মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ দাঃ

শাইখ মুহাম্মাদ আওয়ামা

মাওলানা ইমদাদুল হক

আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.

মাওলানা মুহাম্মদ গিয়াসুদ্দীন হুসামী

আল্লামা মনযুর নোমানী রহঃ

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

মাওলানা মাহমুদ বিন ইমরান

আল্লামা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম দাঃ

মাওলানা ইনআমুল হাসান রহ.

মাওলানা যাইনুল আবিদীন

আবদুল্লাহ আল মাসউদ

শাইখুল ইসলাম আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.

মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

আল্লামা ইকবাল

হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী

শাইখ আলী তানতাভী

মাওলানা আতাউল কারীম মাকসুদ