প্রবন্ধ
ইস্তেগফার : সকল সমস্যার সমাধান
লেখক:মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
২১ জুন, ২০২৫
২৪৫১৩ বার দেখা হয়েছে
০ মন্তব্য
নিজের জীবনেও বহুবার আমি দেখেছি। কোনো বিপদে পড়লে বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েছি, আল্লাহ তাআলা এমনভাবে রাস্তা খুলে দিয়েছেন, যা কল্পনাও করতে পারিনি। কোনো আশা মনে জাগলে বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েছি, আল্লাহ সেই আশা পূরণ করে দিয়েছেন।
তাই বলি, যারা কোনো বিপদে আছেন, কোনো সমস্যায় আছেন, বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি, কিছুদিন পড়ুন, দেখবেন বিপদের রং বদলাতে শুরু করবে।
আর যদি কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। দেখবেন, সেই আশার আলো আরো উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইস্তেগফার করার তাওফিক দিন—আমীন।
তাই বলি, যারা কোনো বিপদে আছেন, কোনো সমস্যায় আছেন, বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি, কিছুদিন পড়ুন, দেখবেন বিপদের রং বদলাতে শুরু করবে।
আর যদি কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। দেখবেন, সেই আশার আলো আরো উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইস্তেগফার করার তাওফিক দিন—আমীন।
اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا.
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيْمِ، وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ اْلآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ. وجَعَلَنِيْ إِيَّاكُمْ مِنَ الصَّالِحِينَ.
أَقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِيْنَ. فَاسْتَغْفِرُوْهُ، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ.اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ.
হামদ ও সালাতের পর!
আল্লাহ তাআলা কুরআন মজিদে বলেছেন
আল্লাহ তাআলা কুরআন মজিদে বলেছেন
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا.
আমি বললাম, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তেগফার করো। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নহরসমূহ। [সূরা নূহ : ১০-১২]ইস্তেগফার ও তাওবা : মুমিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য আমল
সমস্যা এবং সমাধান, সুখ এবং দুঃখ, আনন্দ এবং নিরানন্দ— এই দুটি জিনিস আমাদের জীবনের একটি অংশ। প্রত্যেকের জীবনে এ দুটি জিনিস একসাথে হাত ধরাধরি করে চলে। এই দুনিয়ায় কেবল সুখী মানুষ কিংবা কেবল দুঃখী মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষ।
তাই যখন দুঃখের পরিস্থিতিতে পড়ব, পেরেশানিতে পড়ব— সেই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত শক্তিশালী, দ্রুত কার্যকর ও বরকতময় একটি আমল হলো ইস্তেগফার এবং তাওবা।
ইস্তেগফারের ফজিলতমুহতারাম হাজিরীন! ইস্তেগফার এবং তাওবা মুমিন জীবনের একটি অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য আমল হওয়া উচিত।
কেন? কারণ মানুষ হিসেবে আমরা সকলেই কোনো না কোনো সংকটে থাকি। কারো রিযিকের পেরেশানি, কারো বা পারিবারিক সংকট, কেউ চাকরি খুঁজছে, কেউ আবার বেকারত্বের যন্ত্রণায় দিশেহারা।সমস্যা এবং সমাধান, সুখ এবং দুঃখ, আনন্দ এবং নিরানন্দ— এই দুটি জিনিস আমাদের জীবনের একটি অংশ। প্রত্যেকের জীবনে এ দুটি জিনিস একসাথে হাত ধরাধরি করে চলে। এই দুনিয়ায় কেবল সুখী মানুষ কিংবা কেবল দুঃখী মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষ।
তাই যখন দুঃখের পরিস্থিতিতে পড়ব, পেরেশানিতে পড়ব— সেই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত শক্তিশালী, দ্রুত কার্যকর ও বরকতময় একটি আমল হলো ইস্তেগফার এবং তাওবা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন
مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
যে ব্যক্তি বেশি করে ইস্তেগফার করবে, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ এই যিকিরকে যে ব্যক্তি নিয়মিত করবে, তার সকল সংকট থেকে বের হওয়ার রাস্তা আল্লাহ তাআলা দিয়ে দিবেন। আর সকল পেরেশানি থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন। এবং এমন জায়গা থেকে রিযিক দান করবেন, যেখান থেকে সে কল্পনাও করতে পারবে না। [আবু দাউদ : ১৫১৮]
সকল সংকটের উত্তম সমাধান ইস্তেগফারসুতরাং বলা যায়, সকল সমস্যার সমাধান ইস্তেগফার। বলা যায়, সকল দুঃখ দূরকারী, সকল বেদনা মোচনকারী একটি আমল হলো ইস্তেগফার।
ইস্তেগফার এমন একটি আমল, যা অন্ধকার জীবনে আলো, সংকটের মাঝে মুক্তির রাস্তা।
এটাই সেই আমল, যা অজানা বিপদ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
এটাই সেই আমল, যা আল্লাহ তাআলার রহমতের দরজা খুলে দেয়।
ইস্তেগফার : উম্মতের নিরাপত্তার ঢালইস্তেগফার এমন একটি আমল, যা অন্ধকার জীবনে আলো, সংকটের মাঝে মুক্তির রাস্তা।
এটাই সেই আমল, যা অজানা বিপদ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
এটাই সেই আমল, যা আল্লাহ তাআলার রহমতের দরজা খুলে দেয়।
একারণে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযি. বলেন, আল্লাহ তাআলা কুরআন মজিদে বলেছেন
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
আর আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন আর তিনি তাদের আযাব দিবেন। আর আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ইস্তেগফার করবে আর তিনি তাদের আযাব দিবেন। [সূরা আনফাল : ৩৩]
এরপর তিনি বলেনكَانَ فِيهِمْ أَمَانَانِ: النَّبِيُّ ﷺ وَالِاسْتِغْفَارُ، فَذَهَبَ النَّبِيُّ ﷺ وَبَقِيَ الاسْتِغْفَارُ۔
এই আয়াত নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ এই উম্মতকে দুটি নিরাপত্তা দিয়েছিলেন। একটি হলো, নবীজি ﷺ । আর দ্বিতীয়টি ইস্তেগফার। নবীজি ﷺ তো দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। তবে ইস্তেগফার এখনো রয়ে গেছে। [তাফসীরে ইবন কাসীর : সংশ্লিষ্ট আয়াত]
নবীজি ﷺ যখন ছিলেন, তখন উম্মত রক্ষা পেতেন তাঁর সত্তার বরকতে। আর এখন উম্মত রক্ষা পাচ্ছে বা পাবে ইস্তেগফারের বরকতে।
ইস্তেগফার করছে এমন কাউকে আল্লাহ আযাব দিবেন নাহযরত হাসান বসরী রহ. বলেন
لا أظنُّ أنَّ اللهَ يُعذِّبُ عبدًا وهو يستغفرُ
ইস্তেগফার করছে এমন কাউকে আল্লাহ আযাব দিবেন বলে আমি মনে করি না।কেউ জিজ্ঞেস করলেন, এর কারণ কী?
তিনি বললেন
إذا أراد اللهُ أن يعذِّبَ عبدًا، لم يُلْهِمْهُ الاستغفارَ
আল্লাহ যদি কাউকে আযাব দিতে চান, তাহলে তাঁর মনে ইস্তেগফারের প্রেরণা দিতেন না! কারণ ইস্তেগফার তো রহমতের দরজা। আর আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন
وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ইস্তেগফার করবে আর তিনি তাদের শাস্তি দেবেন। [সূরা আনফাল : ৩৩]
আসুন, আমরা এই বরকতময় আমলকে আপন করে নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইস্তেগফার করার তাওফিক দিন আমীন।
এবিষয়ে সালাফ থেকে দু’-একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। চমৎকার অভিজ্ঞতা।
সালাফে সালেহীনের বাস্তব অভিজ্ঞতাসালাফে সালেহীন তথা পূর্ববর্তী নেককার, পরহেজগার বুজুর্গগণ নিজেদের জীবনে ইস্তেগফারের এমন উপকারী প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন, যা শুনলে একজন মুমিনের হৃদয় আনন্দে ভরে যাবে। সাহস পাবে। আশাবাদী হবে। আল্লাহর রহমতের আশা আর ভালোবাসা অন্তরে জেগে উঠবে।
তাদের বাস্তব জীবনে ইস্তেগফারের এমন এমন ঘটনা রয়েছে, যা থেকে আমরা শিখতে পারি, ইস্তেগফার শুধু গুনাহ মোচনের মাধ্যম নয়; বরং ইহকাল ও পরকালের সকল সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি।
হাসান বসরী রহ.-এর চমৎকার ঘটনাতাফসীরে কুরতুবীতে হযরত হাসান বসরী রহ.-এর একটি চমৎকার ঘটনা এসেছে।
তিনি একদিন বসে ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তার কাছে এল। এসে বলল, হযরত! আমি অনেক গুনাহ করে ফেলেছি। কী করব?
তিনি বললেন, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ো।
এরপর আরেক ব্যক্তি এল। বলল, হযরত! আমি রিযিকের সংকটে আছি। বেকারত্বের সমস্যা। কী করব?
তিনি বললেন, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ো।
এরপর কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি এল। বলল, আমার সন্তান-সন্ততি হচ্ছে না। বিয়ে-শাদী করেছি বহু বছর হয়ে গেছে। কী করব?
তিনি বললেন, তুমি এবং তোমার স্ত্রী দু’জনেই বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ো।
এরপর আরেক লোক এল। বলল, হযরত! খুব সমস্যায় আছি। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। কী করব?
তিনি বললেন, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ো।
এরপর কিছু লোক এল। তারা বলল, আমরা এলাকা থেকে এসেছি। বড় সংকট। বহুদিন বৃষ্টি হয় না। খরার কারণে জমিন শুকিয়ে গেছে। কী করব?
তিনি বললেন, তোমরা বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ো।”
লোকগুলো চলে গেল।
উপস্থিত এক ব্যক্তি পুরো বিষয়টি দীর্ঘক্ষণ লক্ষ্য করছিলেন। তিনি তখন হযরত হাসান বসরী রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলেন, হযরত! আপনি যে-ই আসছে, তাকেই একই কথা বলছেন। সকল সমস্যার সমাধান কি তাহলে একটাই? আস্তাগফিরুল্লাহ ছাড়া আর কিছু নেই?
তখন হযরত হাসান বসরী রহ. বললেন, আমি আমার থেকে বলিনি। বরং এ কথা স্বয়ং আল্লাহই বলেছেন। কুরআনে এর ঘোষণা রয়েছে।
বোঝা গেল, সত্যিই সকল সমস্যার সমাধান ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। ইস্তেগফার একাধারে দুনিয়ার কল্যাণ, আখিরাতের মুক্তি, রিযিকের বৃদ্ধি, সন্তান-সন্ততির অফুরন্ত নেয়ামত, মনোবাঞ্ছা পূরণ এবং রহমতের বৃষ্টি নামানোর মাধ্যম।
ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ. এবং রুটি বিক্রেতা
সালাফে সালেহীনদের জীবনে ইস্তেগফারের কী অসাধারণ প্রভাব ছিল, তা আরেকটি বাস্তব কাহিনির মাধ্যমে শুনুন।
ইমাম আহম ইবনু হাম্বল রহ. মুসলিম উম্মাহর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বড় বড় আলেমগণ তাঁর জ্ঞান, তাকওয়া ও ইখলাসের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
একবার বৃদ্ধ বয়সে তিনি হাদিস সংগ্রহের সফরে বের হলেন। অচেনা এক শহরে রাত হয়ে এলো। কিন্তু তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন না। কারণ, তিনি জানতেন, নাম বললে মানুষ সেবা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। অথচ তিনি ছিলেন সাদাসিধা স্বভাবের মানুষ। তাই একজন সাধারণ আগন্তুক হিসেবেই সেই শহরের এক মসজিদে রাত্রিযাপন করতে চাইলেন।
এশার নামাজের পর মসজিদের খাদেম তাঁকে চিনতে পারল না।
তখনকার যুগ তো মিডিয়ার যুগ ছিল না। সবাই নাম জানলেও চেহারা চিনত না।
মসজিদের খাদেম একপ্রকার টেনে-হিঁচড়ে তাঁকে মসজিদ থেকে বের করে দিল।
একজন রুটি বিক্রেতা বা বেকারির মালিক দৃশ্যটি দেখলেন। এভাবে একজন বয়স্ক মানুষকে অপমানিত হতে দেখে রুটি বিক্রেতার মনে দয়া হল।
রুটি বিক্রেতা লোকটি ইমাম আহমদের মেহমানদারি করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ইমাম আহমদ রুটি বানানো লোকটির সাথে গিয়ে তার ঘরে উঠলেন। ঘরে গিয়ে ইমাম আহমদ রহ. লক্ষ করলেন— লোকটি কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু একটা পড়ছে।
তিনি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই, আপনি কাজের ফাঁকেও কী যেন পড়ছেন। কী পড়ছেন বলতে পারেন?
লোকটি বলল, তেমন কিছু না জনাব, আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ বলছি।
ইমাম আহমদ বললেন, আচ্ছা, এই আমলের কোনো বিশেষ প্রতিদান বা বরকত কি পেয়েছেন?
লোকটি উত্তরে বলল, জ্বী জনাব। আলহামদুলিল্লাহ। আমার মনে হয় এই ইস্তেগফারের কল্যাণেই মহান আল্লাহ এখন পর্যন্ত আমার যাবতীয় দোয়া কবুল করেছেন; শুধু একটি দোয়া ছাড়া।
ইমাম আহমদ আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলেন, ভাই, আপনার কোন দোয়াটি এখনো কবুল হয় নি?
লোকটি বলল, জনাব! আমি যখনই কোনো বিপদে পড়েছি, বেশি বেশি ইস্তেগফার করেছি। আল্লাহ সব দূর করে দিয়েছেন। যখন কোনো আশা অন্তরে জেগেছে, বেশি ইস্তেগফার করেছি— আল্লাহ তাও পূরণ করেছেন।
তারপর লোকটি বলল, আমার দীর্ঘদিনের একটা আশা আছে। তা হলো, এই যুগের সবচেয়ে বড় ইমামকে, সবচেয়ে বড় আলেমকে একবার আমার গরিব বাড়িতে এনে আতিথেয়তা করা। কিন্তু মনে হয়, এত বড় আলেম আমার মতো গরিবের ঘরে কেন আসবেন? তবুও আমি নিরাশ হইনি। কারণ আমি জানি, এই আস্তাগফিরুল্লাহ তো বহু অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এই আশা পূরণও হবে।
তখন ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ. বললেন, সেই পবিত্র স্বত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! আপনার এই ইস্তেগফার আল্লাহ পাক শুধু কবুল-ই করেন নি; বরং আমাকে এই দূর দেশে, অচেনা শহরে, মধ্য রাতে আপনার দরজায় নিয়ে এসেছেন। কারণ, আমিই সেই আহমদ ইবনু হাম্বল। [সংক্ষেপিত, আল জুমুয়া ম্যাগাজিন; ভলিউম : ১৯ ইস্যু : ৭]
এ ঘটনা থেকেও বুঝা গেল, ইস্তেগফার এমন এক বরকতময় আমল, যার দ্বারা অসম্ভবকেও আল্লাহ সম্ভব করে দেয়। দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ কেটে যায়। বড় বড় আশা পূরণ হয়ে যায়। আর তা এমনভাবে হয়, যা বান্দা কল্পনাও করতে পারে না।
ইস্তেগফারের বরকত : আমার নিজের দেখা একটি ঘটনা
মুহতারাম ভাইয়েরা! ইস্তেগফার এমন এক বরকতময় আমল, যার উপকারিতা নিয়ে শুধু সালাফে সালেহীনের কাহিনি না, আমাদের নিজেদের জীবনেও এর প্রভাব আছে, অভিজ্ঞতা আছে।
আমি একটা নিজের ঘটনা শেয়ার করি।
একদিন দুপুর বেলা খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। তখনো ভালো করে ঘুমটা জমে উঠেনি। এমন সময় কেউ একজন এসে কলিং বেল চাপলো। সত্যি বলতে একটু বিরক্তই হলাম। তবুও উঠে দরজা খুলে দিলাম।
দেখি, একজন লোক দাঁড়িয়ে। সালাম দিল। আমি সালামের জবাব দিলাম। লোকটিকে চেনা মনে হলো না।
সে নিজেই বলল, হুজুর, আপনি আমাকে চেনার কথা না। আমি এসেছি অনেক দূর থেকে — সেই সুদূর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। আসার কারণ হলো, একটা বিষয় আপনাকে জানানো।
সে বলল, আপনার মনে থাকার কথা না। কয়েক মাস আগে আমি এই এলাকায় এসেছিলাম। আপনার পেছনে জুমার নামাজ পড়েছিলাম। নামাজের পর আপনার সাথে সালাম বিনিময় হয়। কিছু কথা বলি। তখন আমি অনেক সমস্যায় ছিলাম। চাকরি চলে গেছে। বেকার। স্ত্রীকেও শ্বশুর তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে এই বলে যে, ‘বেকার জামাইয়ের ঘরে মেয়েকে দিব না’। আমি তখন ভেঙে পড়েছিলাম। আপনার কাছে এসেছিলাম। আপনার কাছে দোয়ার অনুরোধ করেছিলাম। আর কিছু আমল চেয়েছিলাম।
আমি বললাম, ভাই, আমার মনে নেই।
সে বলল, আপনি আমাকে তখন বলেছিলেন, বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কতবার করব? আপনি বলেছিলেন, প্রত্যেক নামাজের পর ১০০ বার করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে।
সে বলতে লাগল, আমি সেইদিন থেকেই শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ! কিছুদিন না যেতেই আমার জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। নতুন চাকরি পেলাম। বেতন আগের চাইতে অনেক বেশি। আমার স্ত্রীকেও আমার শ্বশুর নিজে এসে আবার আমার বাসায় দিয়ে গেলেন। তারপর আমার জীবনে যেসব সমস্যা ছিল— একে একে আল্লাহ সব ঠিক করে দিলেন।
হুজুর! ইস্তেগফারের বরকতে আমি এই ফলগুলো পেয়েছি। প্রথম স্যালারিটা হাতে পেয়ে মনে করলাম, যাঁর মুখে এই আমলের কথা শুনে ছিলাম, তাঁর সাথে গিয়ে দেখা করি। কিছু হাদিয়া নিয়ে এসেছি। সেই জন্য আজ অনেক দূর থেকে চলে এসেছি।
এই ছিল তার কথা।
বিপদের রং বদলাতে শুরু করবে
ভাইয়েরা! নিজের জীবনেও বহুবার আমি দেখেছি। কোনো বিপদে পড়লে বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েছি, আল্লাহ তাআলা এমনভাবে রাস্তা খুলে দিয়েছেন, যা কল্পনাও করতে পারিনি।
কোনো আশা মনে জাগলে বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েছি, আল্লাহ সেই আশা পূরণ করে দিয়েছেন।
তাই বলি, যারা কোনো বিপদে আছেন, কোনো সমস্যায় আছেন, বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি, কিছুদিন পড়ুন, দেখবেন বিপদের রং বদলাতে শুরু করবে।
আর যদি কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। দেখবেন, সেই আশার আলো আরো উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইস্তেগফার করার তাওফিক দিন—আমীন।
ইস্তেগফারের সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া
১. সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ইস্তেগফার
২. আরেকটি সংক্ষিপ্ত ইস্তেগফার
৩. আরও একটি
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর দিকে তাওবা করি।
আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইসতেগফারের এই দোয়া সবচেয়ে বেশি পড়তেন। [সহিহ বুখারী : ৬৩০৭, সহিহ মুসলিম : ২৭০২]
বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইস্তেগফার
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
সাহাবিদের জিজ্ঞাসায় রাসূল ﷺ-এর শেখানো ইস্তেগফার
এক সাহাবি রাসূল ﷺ-কে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে ইস্তেগফার করব?
তখন রাসূল ﷺ সরাসরি এই ছোট্ট অথচ ব্যাপক অর্থবোধক দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন। [মুসনাদ আহমদ : ২২৭৬২]
রাসূল ﷺ-এর মজলিসে পড়া ইস্তেগফার
আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাযি. বলেন, আমরা গণনা করে দেখেছি যে, এক বৈঠকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এটি একশতবার পর্যন্ত বলেছেন। [আবু দাউদ : ১২৯৫]
ইস্তেগফারের সেরা দোয়া : সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার
রাসূল ﷺ বলেছেন
উপসংহার
এই দোয়াগুলো মুখস্থ করুন। বিপদ-আপদে, আশা-আকাঙ্ক্ষায়, জীবনের প্রতিটি বাঁকে এগুলো পড়ুন। কারণ ইস্তেগফার শুধু গুনাহ মাফই নয়, বরং রিযিক বৃদ্ধি, বিপদ থেকে রক্ষা এবং আশা পূরণের মাধ্যম।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন—আমীন। [সহিহ বুখারী : ৬৩০৬]
এরপর আরেক লোক এল। বলল, হযরত! খুব সমস্যায় আছি। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। কী করব?
তিনি বললেন, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ো।
এরপর কিছু লোক এল। তারা বলল, আমরা এলাকা থেকে এসেছি। বড় সংকট। বহুদিন বৃষ্টি হয় না। খরার কারণে জমিন শুকিয়ে গেছে। কী করব?
তিনি বললেন, তোমরা বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ো।”
লোকগুলো চলে গেল।
উপস্থিত এক ব্যক্তি পুরো বিষয়টি দীর্ঘক্ষণ লক্ষ্য করছিলেন। তিনি তখন হযরত হাসান বসরী রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলেন, হযরত! আপনি যে-ই আসছে, তাকেই একই কথা বলছেন। সকল সমস্যার সমাধান কি তাহলে একটাই? আস্তাগফিরুল্লাহ ছাড়া আর কিছু নেই?
তখন হযরত হাসান বসরী রহ. বললেন, আমি আমার থেকে বলিনি। বরং এ কথা স্বয়ং আল্লাহই বলেছেন। কুরআনে এর ঘোষণা রয়েছে।
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا
আমি বললাম, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তেগফার করো। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নহরসমূহ। [সূরা নূহ : ১০-১২]বোঝা গেল, সত্যিই সকল সমস্যার সমাধান ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। ইস্তেগফার একাধারে দুনিয়ার কল্যাণ, আখিরাতের মুক্তি, রিযিকের বৃদ্ধি, সন্তান-সন্ততির অফুরন্ত নেয়ামত, মনোবাঞ্ছা পূরণ এবং রহমতের বৃষ্টি নামানোর মাধ্যম।
ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ. এবং রুটি বিক্রেতা
সালাফে সালেহীনদের জীবনে ইস্তেগফারের কী অসাধারণ প্রভাব ছিল, তা আরেকটি বাস্তব কাহিনির মাধ্যমে শুনুন।
ইমাম আহম ইবনু হাম্বল রহ. মুসলিম উম্মাহর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বড় বড় আলেমগণ তাঁর জ্ঞান, তাকওয়া ও ইখলাসের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
একবার বৃদ্ধ বয়সে তিনি হাদিস সংগ্রহের সফরে বের হলেন। অচেনা এক শহরে রাত হয়ে এলো। কিন্তু তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন না। কারণ, তিনি জানতেন, নাম বললে মানুষ সেবা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। অথচ তিনি ছিলেন সাদাসিধা স্বভাবের মানুষ। তাই একজন সাধারণ আগন্তুক হিসেবেই সেই শহরের এক মসজিদে রাত্রিযাপন করতে চাইলেন।
এশার নামাজের পর মসজিদের খাদেম তাঁকে চিনতে পারল না।
তখনকার যুগ তো মিডিয়ার যুগ ছিল না। সবাই নাম জানলেও চেহারা চিনত না।
মসজিদের খাদেম একপ্রকার টেনে-হিঁচড়ে তাঁকে মসজিদ থেকে বের করে দিল।
একজন রুটি বিক্রেতা বা বেকারির মালিক দৃশ্যটি দেখলেন। এভাবে একজন বয়স্ক মানুষকে অপমানিত হতে দেখে রুটি বিক্রেতার মনে দয়া হল।
রুটি বিক্রেতা লোকটি ইমাম আহমদের মেহমানদারি করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ইমাম আহমদ রুটি বানানো লোকটির সাথে গিয়ে তার ঘরে উঠলেন। ঘরে গিয়ে ইমাম আহমদ রহ. লক্ষ করলেন— লোকটি কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু একটা পড়ছে।
তিনি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই, আপনি কাজের ফাঁকেও কী যেন পড়ছেন। কী পড়ছেন বলতে পারেন?
লোকটি বলল, তেমন কিছু না জনাব, আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ বলছি।
ইমাম আহমদ বললেন, আচ্ছা, এই আমলের কোনো বিশেষ প্রতিদান বা বরকত কি পেয়েছেন?
লোকটি উত্তরে বলল, জ্বী জনাব। আলহামদুলিল্লাহ। আমার মনে হয় এই ইস্তেগফারের কল্যাণেই মহান আল্লাহ এখন পর্যন্ত আমার যাবতীয় দোয়া কবুল করেছেন; শুধু একটি দোয়া ছাড়া।
ইমাম আহমদ আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলেন, ভাই, আপনার কোন দোয়াটি এখনো কবুল হয় নি?
লোকটি বলল, জনাব! আমি যখনই কোনো বিপদে পড়েছি, বেশি বেশি ইস্তেগফার করেছি। আল্লাহ সব দূর করে দিয়েছেন। যখন কোনো আশা অন্তরে জেগেছে, বেশি ইস্তেগফার করেছি— আল্লাহ তাও পূরণ করেছেন।
তারপর লোকটি বলল, আমার দীর্ঘদিনের একটা আশা আছে। তা হলো, এই যুগের সবচেয়ে বড় ইমামকে, সবচেয়ে বড় আলেমকে একবার আমার গরিব বাড়িতে এনে আতিথেয়তা করা। কিন্তু মনে হয়, এত বড় আলেম আমার মতো গরিবের ঘরে কেন আসবেন? তবুও আমি নিরাশ হইনি। কারণ আমি জানি, এই আস্তাগফিরুল্লাহ তো বহু অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এই আশা পূরণও হবে।
তখন ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ. বললেন, সেই পবিত্র স্বত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! আপনার এই ইস্তেগফার আল্লাহ পাক শুধু কবুল-ই করেন নি; বরং আমাকে এই দূর দেশে, অচেনা শহরে, মধ্য রাতে আপনার দরজায় নিয়ে এসেছেন। কারণ, আমিই সেই আহমদ ইবনু হাম্বল। [সংক্ষেপিত, আল জুমুয়া ম্যাগাজিন; ভলিউম : ১৯ ইস্যু : ৭]
এ ঘটনা থেকেও বুঝা গেল, ইস্তেগফার এমন এক বরকতময় আমল, যার দ্বারা অসম্ভবকেও আল্লাহ সম্ভব করে দেয়। দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ কেটে যায়। বড় বড় আশা পূরণ হয়ে যায়। আর তা এমনভাবে হয়, যা বান্দা কল্পনাও করতে পারে না।
ইস্তেগফারের বরকত : আমার নিজের দেখা একটি ঘটনা
মুহতারাম ভাইয়েরা! ইস্তেগফার এমন এক বরকতময় আমল, যার উপকারিতা নিয়ে শুধু সালাফে সালেহীনের কাহিনি না, আমাদের নিজেদের জীবনেও এর প্রভাব আছে, অভিজ্ঞতা আছে।
আমি একটা নিজের ঘটনা শেয়ার করি।
একদিন দুপুর বেলা খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। তখনো ভালো করে ঘুমটা জমে উঠেনি। এমন সময় কেউ একজন এসে কলিং বেল চাপলো। সত্যি বলতে একটু বিরক্তই হলাম। তবুও উঠে দরজা খুলে দিলাম।
দেখি, একজন লোক দাঁড়িয়ে। সালাম দিল। আমি সালামের জবাব দিলাম। লোকটিকে চেনা মনে হলো না।
সে নিজেই বলল, হুজুর, আপনি আমাকে চেনার কথা না। আমি এসেছি অনেক দূর থেকে — সেই সুদূর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। আসার কারণ হলো, একটা বিষয় আপনাকে জানানো।
সে বলল, আপনার মনে থাকার কথা না। কয়েক মাস আগে আমি এই এলাকায় এসেছিলাম। আপনার পেছনে জুমার নামাজ পড়েছিলাম। নামাজের পর আপনার সাথে সালাম বিনিময় হয়। কিছু কথা বলি। তখন আমি অনেক সমস্যায় ছিলাম। চাকরি চলে গেছে। বেকার। স্ত্রীকেও শ্বশুর তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে এই বলে যে, ‘বেকার জামাইয়ের ঘরে মেয়েকে দিব না’। আমি তখন ভেঙে পড়েছিলাম। আপনার কাছে এসেছিলাম। আপনার কাছে দোয়ার অনুরোধ করেছিলাম। আর কিছু আমল চেয়েছিলাম।
আমি বললাম, ভাই, আমার মনে নেই।
সে বলল, আপনি আমাকে তখন বলেছিলেন, বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কতবার করব? আপনি বলেছিলেন, প্রত্যেক নামাজের পর ১০০ বার করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে।
সে বলতে লাগল, আমি সেইদিন থেকেই শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ! কিছুদিন না যেতেই আমার জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। নতুন চাকরি পেলাম। বেতন আগের চাইতে অনেক বেশি। আমার স্ত্রীকেও আমার শ্বশুর নিজে এসে আবার আমার বাসায় দিয়ে গেলেন। তারপর আমার জীবনে যেসব সমস্যা ছিল— একে একে আল্লাহ সব ঠিক করে দিলেন।
হুজুর! ইস্তেগফারের বরকতে আমি এই ফলগুলো পেয়েছি। প্রথম স্যালারিটা হাতে পেয়ে মনে করলাম, যাঁর মুখে এই আমলের কথা শুনে ছিলাম, তাঁর সাথে গিয়ে দেখা করি। কিছু হাদিয়া নিয়ে এসেছি। সেই জন্য আজ অনেক দূর থেকে চলে এসেছি।
এই ছিল তার কথা।
বিপদের রং বদলাতে শুরু করবে
ভাইয়েরা! নিজের জীবনেও বহুবার আমি দেখেছি। কোনো বিপদে পড়লে বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েছি, আল্লাহ তাআলা এমনভাবে রাস্তা খুলে দিয়েছেন, যা কল্পনাও করতে পারিনি।
কোনো আশা মনে জাগলে বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েছি, আল্লাহ সেই আশা পূরণ করে দিয়েছেন।
তাই বলি, যারা কোনো বিপদে আছেন, কোনো সমস্যায় আছেন, বেশি করে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি, কিছুদিন পড়ুন, দেখবেন বিপদের রং বদলাতে শুরু করবে।
আর যদি কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে, বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ুন। দেখবেন, সেই আশার আলো আরো উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইস্তেগফার করার তাওফিক দিন—আমীন।
ইস্তেগফারের সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া
১. সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ইস্তেগফার
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।২. আরেকটি সংক্ষিপ্ত ইস্তেগফার
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ العَظِيْمَ
অর্থ: আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।৩. আরও একটি
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহিঅর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর দিকে তাওবা করি।
আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইসতেগফারের এই দোয়া সবচেয়ে বেশি পড়তেন। [সহিহ বুখারী : ৬৩০৭, সহিহ মুসলিম : ২৭০২]
বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইস্তেগফার
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
অর্থ: আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যাঁর ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক ও সংরক্ষণকারী। আমি তাঁরই দিকে তওবা করি।রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
مَنۡ قَالَ: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ غُفِرَ لَهُ، وَإِنْ كَانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ
যে এই দোয়া পড়বে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে থাকে। [আবু দাউদ: ১৫১৭, তিরমিযি: ৩৫৭৭]সাহাবিদের জিজ্ঞাসায় রাসূল ﷺ-এর শেখানো ইস্তেগফার
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَنَا، وَارْحَمْنَا، وَتُبْ عَلَيْنَا، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করুন, দয়া করুন, এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।এক সাহাবি রাসূল ﷺ-কে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে ইস্তেগফার করব?
তখন রাসূল ﷺ সরাসরি এই ছোট্ট অথচ ব্যাপক অর্থবোধক দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন। [মুসনাদ আহমদ : ২২৭৬২]
রাসূল ﷺ-এর মজলিসে পড়া ইস্তেগফার
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অর্থ: হে আমার রব! আমাকে মাফ করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাযি. বলেন, আমরা গণনা করে দেখেছি যে, এক বৈঠকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এটি একশতবার পর্যন্ত বলেছেন। [আবু দাউদ : ১২৯৫]
ইস্তেগফারের সেরা দোয়া : সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার
اللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوْءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِيْ، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার রব। আপনার ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি যতটুকু পারি, আপনার অঙ্গীকার ও ওয়াদা পালনের চেষ্টা করছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার নেয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।রাসূল ﷺ বলেছেন
مَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ،
وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ
যে ব্যক্তি এই দোয়া দিবসে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, তারপর সেই দিন সন্ধ্যার আগে মারা যাবে— সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, তারপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে— সেও জান্নাতি হবে। উপসংহার
এই দোয়াগুলো মুখস্থ করুন। বিপদ-আপদে, আশা-আকাঙ্ক্ষায়, জীবনের প্রতিটি বাঁকে এগুলো পড়ুন। কারণ ইস্তেগফার শুধু গুনাহ মাফই নয়, বরং রিযিক বৃদ্ধি, বিপদ থেকে রক্ষা এবং আশা পূরণের মাধ্যম।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন—আমীন। [সহিহ বুখারী : ৬৩০৬]
وَاخِرُ دَعْوَانَا أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِين
—ইসলাহী বয়ান অবলম্বনে
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
শরীয়তের উপর অবিচলতা
...
আল্লামা মনযুর নোমানী রহঃ
৮ নভেম্বর, ২০২৪
১৯০২ বার দেখা হয়েছে
আল্লাহওয়ালাদের তাযকেরায় দিল তাযা হয়
...
আল্লামা ইসহাক ওবায়দী রহঃ
৯ নভেম্বর, ২০২৪
১৩৯১ বার দেখা হয়েছে
আলোকময় কুরআন
আজ জুমু'আর দিন। এ দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এটা পনের পারায় শুরু হয়ে ষোল পারায় শে...
প্রফেসর হামিদুর রহমান (রহ:)
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৪৯৩০ বার দেখা হয়েছে
‘এ দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীনের তলব পয়দা করা’
...
আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.
১০ নভেম্বর, ২০২৪
২৫৩৪ বার দেখা হয়েছে