প্রবন্ধ
সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে ইসলামের নির্দেশনা
মূলত অমুসলিমদের অন্তরে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ তৈরির পথ চারিত্রিক ও সামাজিক আমল। যেগুলো ইসলাম প্রবেশের জানালা। অমুসলিমদের মাঝে ইসলাম এগুলোর মাধ্যমেই প্রবেশ করে। অর্থাৎ সুন্দর আচরণ দেখাবেন, মার্জিতভাবে কথা বলবেন, ওয়াদা খেলাফ করবেন না, মিথ্যা বলবেন না, ধোঁকা দিবেন না ইত্যাদি এমন আমল— যা দেখে অমুসলিমরা ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। এ জন্য এগুলোকে বলতে পারেন, সাইলেন্ট দাওয়াত এবং অমুসলিমদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার শক্তিশালী মাধ্যম।
দাওয়াত দানের রয়েছে অনেক মাধ্যম, অনেক পদ্ধতি। যার মৌলিক পদ্ধতি দুটি—একটি সাউন্ড অপরটি সাইলেন্ট। সাউন্ড হল মুখের কথায় যে দাওয়াত। অপরদিকে সাইলেন্ট দাওয়াত হলো, আমল-আখলাক ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে দাওয়াত।
মুখের কথায় যে দাওয়াত না দেয়া যায়, চরিত্র ও মানবতা দিয়ে তারচেয়ে বেশি দেয়া যায়। মুসলিমদের চরিত্র ও আচরণ দেখেই অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيْمِ، وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ اْلآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ. وجعلني وإياكم مِنَ الصَّالِحِينَ. أَقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِيْنَ. فَاسْتَغْفِرُوْهُ، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ .اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ.
মানুষ একাকী বাস করতে পারে না
মানুষ সামাজিক জীব। সে একাকী বাস করতে পারে না। এককভাবে কোনো মানুষই তার সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে পারে না। সমাজে বাস করতে হলে, প্রতিদিন কারো না কারো মুখাপেক্ষী হতে হয়, সহযোগিতা নিতে হয়। অন্যের সঙ্গে কথা বলতে হয়, চলাফেরা ও ওঠাবসা করতে হয়। আবার যাদের সঙ্গে চলাফেরা করতে হয়, তাদের মধ্যে কত রকম মানুষ থাকে। দীনদার ও ভালো মানুষ থাকে। বিপরীতে ফাসেক থাকে, দুষ্টু লোক থাকে; এমনকি অমুসলিমও থাকে।
সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে মৌলিক নীতিমালা
প্রশ্ন হল, এ সকল মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, চলাফেরা ও ওঠাবসার ক্ষেত্রে ইসলামের মৌলিক কোনো নীতিমালা আছে কি?
এর উত্তর হল, ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, তাই জীবনের পরতে পরতে ইসলাম অবশ্যই আছে। আছে ইসলামের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও শক্তিশালী নীতিমালা।
এক্ষেত্রে শাখা-প্রশাখাগত দিকনির্দেশনা তো অনেক। তবে মৌলিক নীতিমালা তিনটি। সমাজের যাবতীয় বিশৃঙ্খলা ইসলামের এই মৌলিক নীতিমালা মেনে না চলার কারণেই হয়।
সুতরাং অন্তত আমরা যারা এখানে ই’তেকাফে আছি, নিজেদের সংশোধন করার নিয়তে এসেছি, প্রত্যেকে নিয়ত করে নেই যে, ইনশাআল্লাহ আজীবন এই নীতিমালার প্রতি যত্ন নিবো।
মুসলমানের ছয়টি হক
এই তিনটি নীতিমালা যে-কোনো মানুষের সঙ্গে চলাফেরা ও কথাবার্তার সময় মেনে চলতে হয়। চাই সে ভালো হোক কিংবা মন্দ। এমনকি একজন অমুসলিমের সঙ্গেও এই তিন আচরণ দেখাতে হয়। অন্যথায় একজন মুসলিমের হক তো আরও বেশি। কেননা একজন মুসলিম তো আল্লাহর কাছে এই গোটা দুনিয়া ও তার মাঝে যা কিছু আছে, তার চেয়ে বেশি দামী। তাই এই তিন আচরণের বাইরেও তারা আরও অনেক হক পায়। যেমন এক হাদীসে বলা হয়েছে, এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছ
إذا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عليه، وإذا دَعاكَ فأجِبْهُ، وإذا اسْتَنْصَحَكَ فانْصَحْ له، وإذا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشَمِّتْهُ، وإذا مَرِضَ فَعُدْهُ وإذا ماتَ فاتَّبِعْهُ
১. একজন মুসলিমের সঙ্গে দেখা হলে সালাম দেবে; ২. দাওয়াত করলে তা কবুল করবে; ৩. পরামর্শ চাইলে সৎ পরামর্শ দেবে; ৪. হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ পড়লে তার জবাব দেবে অর্থাৎ ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে; ৫. অসুস্থ হলে তার কাছে গিয়ে খবরাখবর নেবে; ৬. ইন্তেকাল করলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করবে। (মুসলিম : ২১৬২)
প্রথম মূলনীতি : হাসিমুখ থাকা
যাই হোক, ভালো কিংবা মন্দ, মুসলিম কিংবা অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, চলাফেরা ও ওঠা-বসার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রথম নীতিমালা এই যে, যখন কারো সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে, তখন তোমার গাল বাঁকা করো না। গাল ফুলিয়ে রেখো না। কপাল কুঁচকিয়ে ভাব নিয়ে থেকো না। বরং যার সঙ্গেই দেখা হবে, কথা হবে; হাসিমুখে দেখা করবেন, কথা বলবেন। Don't be angry. রাগত ভাব নিয়ে থাকবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ
মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না। (সূরা লুকমান : ১৮)
চেহারা মনের আয়না
ইংরেজিতে একটা প্রবচন আছে face is the index of the mind. অর্থাৎ চেহারা মনের আয়না। আপনার চেহারার expressions বা অভিব্যক্তি বলে দিবে মানুষ হিসেবে আপনি কেমন—ভদ্র না অভদ্র! এ জন্যই তো আমরা যার সঙ্গে দেখা হয়, তার ব্যাপারে অনেক সময় এভাবে মন্তব্য করি—চেহারা দেখেই বুঝে গিয়েছি লোকটা কেমন।
ফেসবুকে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেওয়া
যুগের হাওয়া পাল্টেছে। আমরা এখন নতুন করে এই কথাটাকে ঘুরিয়ে Face এর সাথে Book যোগ করেও বলতে পারি Facebook is the index of mind. এর সহজ বাংলা হতে পারে ফেসবুকেই আপনাকে চিনবে মানুষ। কারণ অনেক সময় আমাদের মনের expressions বিভিন্ন ইমোজি ব্যবহার করে ফেসবুকের মাধ্যমেও আমরা প্রকাশ করি। এমনকি ফেসবুকে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি ও খুনোখুনি পর্যন্ত হয়। যদি কারো কথা অযৌক্তিক হয় তাহলে সম্ভব হলে মার্জিত ও যুক্তিনির্ভর ভাষায় আপনি তার খণ্ডন করুন। সেটি যদি সম্ভব না হয়, আপনি এড়িয়ে যান; কিন্তু তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে আপনি নিজে গোনাহগার হচ্ছেন। তিনি হয়তো একটি ভুল করেছেন; কিন্তু আপনি আরেকটি ভুল করলেন, যা তার ভুলের থেকেও বড় ভুল।
হাসিমুখে কথা বলা সুন্নাত
সুতরাং আপনার অভিব্যক্তি যেন সুন্দর হয়। কে-ই বা এটা পছন্দ করে, তার সাথে কেউ গোমরা মুখে কথা বলুক? কেউই না। আমি নিজে যেমন পছন্দ করি না—আমার সাথে কেউ গোমরা মুখে কথা বলুক, তেমনি আমারও উচিত অন্যের সাথে হাসিমুখে কথা বলা। এটা সুন্নাত। কেননা নবী ﷺ-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মুচকি হাসি। তিনি সর্বদা মুচকি হাসতেন। আপন-পর, বন্ধু-শত্রু সবার সাথে তিনি হাসিমুখে কথা বলতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনে জাযয়ি রাযি. বলেন
ما رأيتُ أحدًا أكثرَ تبسُّمًا من رسولِ اللهِ
আল্লাহর রাসূল ﷺ থেকে বেশি মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি। (তিরমিযী : ৩৬৪১)
জারীর রাযি. বলেন
ولا رآني إلَّا تبسَّمَ
রাসূল ﷺ যখনই আমার চেহারার দিকে তাকাতেন, মুচকি হাসতেন। (তিরমিযী : ৩৮২১)
রাসূলুল্লাহ ﷺ জাবির রাযি.-কে বিশেষভাবে নসিহত করেন যে
وَأَنْ تُكَلِّمَ أخَاكَ وَأنْتَ مُنْبَسِطٌ إِلَيْهِ وَجْهُكَ، إنَّ ذَلِكَ مِنَ المَعْرُوفِ
তুমি তোমার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলবে। এটাও নেকীর কাজ। (আবু দাউদ : ৪০৮৪)
তিনি ছিলেন চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর
রাসূলুল্লাহ ﷺ এমনিতে অতুলনীয় সুন্দর ছিলেন, উপরন্তু যখন মুচকি হাসতেন, না-জানি কত স্নিগ্ধতা ছড়াতেন! তাঁর এই হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে কত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল!
হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাযি. বলেন, এক জোছনা রাতে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে তাকিয়ে দেখলাম, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর দিকে এবং চাঁদের দিকে তাকাতে লাগলাম। فَإِذَا هُوَ عِنْدِي أَحْسَنُ مِنَ القَمَرِ তাঁকেই আমার কাছে চাঁদের চাইতে অধিক সুন্দর মনে হল। (তিরমিযী : ২৮১১)
چاند سے تشبیہ دینا یہ بھی کوئی انصاف ھے
چاند کے چھرے پر چھائیاں مدنی کا چھرا صاف ھے
চাঁদের সঙ্গে তুলনা করা; এ কেমন ইনসাফ!
চাঁদের মাঝে দাগ আছে, মাদানীর চেহারায় নেই দাগ।
মানব-হৃদয়ে প্রবেশের চাবি
বড়রা বলে থাকেন, এই অন্তরের একটা তালা আছে। ওই তালা খোলার একটা চাবি আছে। যে চাবির নাম হল মুচকি হাসি। আপনি এই চাবি যত ব্যবহার করতে পারবেন, মানুষের হৃদয়ে তত বেশি পৌঁছতে পারবেন। যত বেশি মুচকি হাসবেন, মানুষের হৃদয় তত বেশি জয় করতে পারবেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
إِنَّكُمْ لا تَسَعُونَ النَّاسَ بِأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَسَعُهُمْ مِنْكُمْ بَسْطُ الْوَجْهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ
ধন-সম্পদ দিয়ে তোমরা ব্যাপকভাবে লোকেদের সম্ভষ্ট করতে সক্ষম হবে না, কিন্তু মুখমণ্ডলের প্রসন্নতা ও প্রফুল্লতা এবং চরিত্র মাধুর্য দ্বারা ব্যাপকভাবে তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। (বুলুগুল মারাম : ১৫৩৪)
সহজ সাদকা
দশ টাকা বার বার সাদকা করা অনেক সময় কষ্টের। কিন্তু আপনি জানেন কি একটি সহজ সাদকা আছে? তা হলো মুচকি হাসি। যতবার অপর মুসলমানের সঙ্গে মুচকি হেসে কথা বলবেন, ততবার সাদকার সাওয়াব পবেন। যদি অন্যের সঙ্গে কথা বলার সময় কিংবা সাক্ষাতের সময়, সব সময় হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ধরে রাখেন তাহলে সব সময় সাদকার সাওয়াব পাবেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন
تبسُّمُكَ في وجْهِ أخيكَ لَكَ صدقةٌ
তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলা তোমার জন্য সাদকা। (তিরমিযী : ১৯৫৬)
একটি মুচকি হাসি
A smile is something nice to see it does not cast cent.
A smile is something all you own it never can be spent.
A smile of welcome every everywhere, it does away with frowns.
A smile good for everyone to ease life's up and down.
একটি মুচকি হাসি দেখতে চমৎকার, এতে পয়সা খরচ হয় না।
একটি মুচকি হাসি যা আপনার নিজের, যা আপনিই ব্যয় করতে পারেন।
সর্বত্র স্বাগত জানানোর মুচকি হাসি, এটি মনোমালিন্য দূর করে।
জীবনকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য একটি মুচকি হাসি অনেক উত্তম।
মুচকি হেসে কথা বলা এবং না হেসে কথা বলার মধ্যে পার্থক্য
কোনো কথা আপনি মুচকি হেসে বলে দেখুন আর না হেসে বলে দেখুন, দেখবেন পার্থক্য অনেক। উভয়টির প্রভাব একরকম হবে না। যদি ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে, শিক্ষক ছাত্রের সঙ্গে, ছাত্র শিক্ষকের সঙ্গে, মালিক শ্রমিকের সঙ্গে, অফিসার কর্মচারীর সঙ্গে, বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে, সন্তান বাবা-মায়ের সঙ্গে, স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে, স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে, ভাই ভাইয়ের সঙ্গে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীর সঙ্গে, শাশুড়ি বউমার সঙ্গে, বউমা শাশুড়ির সঙ্গে মুচকি হেসে কথা বলে, তাহলে সবাই পার্থক্যটা ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবে।
যদি অসুস্থতা, ব্যস্ততা কিংবা পেরেশানির কারণে মুচকি হাসির ভাব না আসে তাহলে কৃত্রিমভাবে হলেও চেষ্টা করুন। এতে মুচকি হাসির ভাব ধরে রাখাটা এক সময় অভ্যাসে পরিণত হবে। তখন যে কারো সঙ্গে এমনকি শত্রুর সঙ্গেও কথা কথা বললে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুচকি হাসি চলে আসবে।
দ্বিতীয় মূলনীতি : নম্রভাবে কথা বলা
মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও চলাফেরার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মূলনীতি হল, যখন মানুষের সাথে কথা বলবে, নম্রভাবে হাসিমুখে ও খোলামনে বলবে। আল্লাহ তাআলা বলেন
وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْناً
আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে। (সূরা বাকারা : ৮৩)
লক্ষণীয় বিষয় হল, আয়াতটিতে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। ইসলামে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে যুদ্ধের বিধান রয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, যে সকল সাধারণ অমুসলিম যুদ্ধে লিপ্ত নয়, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে। বরং ইসলাম বলে, সাধারণ অমুসলিমদের সাথে সৌজন্য বজায় রেখে উত্তম আচরণ করতে হবে। এমন কোনো আচরণ তাদের সঙ্গে করা যাবে না; যার দ্বারা তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।
সুন্দর কথার কোনো বিকল্প নেই
কথা দুই রকম হয়—সুন্দর ও অসুন্দর। ভালো অথবা মন্দ কথা। ভালো কথার অর্থ ভালো সুন্দর ও কল্যাণকর হয়ে থাকে। মন্দ কথার অর্থ খারাপ ও অকল্যাণকর হয়ে থাকে। একজন মানুষের কথাবার্তা থেকে বোঝা যায়, তার চরিত্র কেমন— ভালো না মন্দ। পৃথিবীতে যত আদর্শ প্রচারিত হয়েছে তা সুন্দর কথা দিয়ে। অসুন্দর কথা দিয়ে কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। মানুষের মন জয় করতে হলে সুন্দর কথার কোনো বিকল্প নেই।
সুন্দর কথা বলার ফায়দা
কেউ হয়তো দরিদ্র হতে পারে। চাইলে দান-সাদকা করতে পারেন না। কিন্তু মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলে ও উত্তম আচরণ করে সওয়াব অর্জন করতে পারে। এতে তিনি দান-সাদকার সওয়াব লাভ করবেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
كُلُّ سُلامَى مِنَ النَّاسِ عليه صَدَقَةٌ، كُلَّ يَومٍ تَطْلُعُ فيه الشَّمْسُ، يَعْدِلُ بيْنَ الِاثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وتُعِينُ الرَّجُلَ في دابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ عليها أوْ تَرْفَعُ له عليها مَتاعَهُ صَدَقَةٌ، قالَ: والْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وكُلُّ خُطْوَةٍ تَمْشِيها إلى الصَّلاةِ صَدَقَةٌ، وَتُمِيْطُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ صَدَقَةٌ
সূর্য উদিত হওয়া প্রতিটি দিনেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর সাদকা দেওয়া আবশ্যক। কাউকে বাহনে উঠতে কিংবা কোনো সামগ্রী বাহনে তুলে দিতে সাহায্য করা সাদকাস্বরূপ। সুন্দর কথা বলা সাদকাস্বরূপ। নামাযে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সাদকাস্বরূপ। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সাদকাস্বরূপ। (মুসলিম : ১০০৯)
মন্দ কথা অনেক অনিষ্টের মূল
মন্দ কথা বা অসুন্দর কথা হচ্ছে কড়া কথা, গালি, অভিশাপ, কটাক্ষ, বিদ্রুপ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অপবাদ, বকাবকি, ধমকানি, চোটপাট ইত্যাদি।
মন্দ কথা অনেক অনিষ্টের মূল। মন্দ কথা পরিবার ও সমাজে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন
ليس المُؤمِنُ بالطَّعَّانِ ولا اللَّعَّانِ ولا الفاحشِ ولا البَذيءِ
মুমিন কখনও দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটূভাষীও হয় না। (তিরমিযী : ১৯৭৭)
সুতরাং নিজেদের কল্যাণের জন্য সুন্দর কথা বলতে হবে।
সবার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত
বিরোধীদের সাথেও আল্লাহ নম্রভাষায় কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। মুফতী শফী রহ. বলতেন, আল্লাহ তাআলা যখন মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালাম-কে নবুওয়ত দান করে ফেরাউনের প্রতি পাঠিয়েছিলেন, তখন এ নির্দেশ দিয়েছিলেন فَقُولَا لَهۥ قَولا لَّيِّنا তোমরা উভয়েই ফেরাউনকে নরম কথা বলবে। আজ যারা অন্যের সাথে কথা বলে, তারা মূসা আলাইহিস সালাম-এর চাইতে উত্তম নয় এবং যার সাথে কথা বলে, সেও ফেরাউন অপেক্ষা বেশি মন্দ বা পাপিষ্ঠ নয়। সুতরাং সবার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত।
অমুসলিমকে মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দেওয়া
অনেকের মধ্যে এই প্রবণতাটা দেখা যায়। বিশেষ করে কোনো হিন্দুর সঙ্গে কোনো কারণে বিবাদে জড়ালে তখন তাকে মালাউন বা মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দেওয়ার অভ্যাস অনেকের আছে। এটা নিশ্চয় গোনাহ। অমুসলিমদের অনুসরণ এবং তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যেমন গোনাহ, অনুরূপভাবে তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করাও গোনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা মুমতাহিনা : ৮)
পাপকে ঘৃণা কর; পাপীকে নয়
আবুদ্দারদা রাযি. একদল লোকের নিকট দিয়ে পথ চলতে চলতে দেখলেন যে, তারা একজন ব্যক্তিকে মারধর করছে ও গালি দিচ্ছে। তিনি তাদের বললেন, ‘ঘটনা কী?’ তারা বলল, ‘সে বড় ধরনের অপরাধ করেছে।’ তিনি বললেন, ‘যদি সে কোনো কূপে পড়ে যেত, তাহলে তোমরা কি তাকে সেখান থেকে তুলতে না?’
তারা বলল, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমরা তাকে গালি দিও না ও মেরো না। বরং তাকে উপদেশ দাও, বুঝাও। আর সেই আল্লাহর প্রশংসা করো, যিনি তোমাদেরকে তার মতো অপরাধে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।’
তারা বলল, ‘আপনি কি তাকে ঘৃণা করবেন না?’ তিনি বললেন, ‘আমি তার কাজকে ঘৃণা করি। সে যখন তা ছেড়ে দিবে, তখন সে আমার ভাই।’ এতে প্রশ্নকারী লোকটি বিলাপ করে কাঁদতে লাগল এবং তাওবা করতে লাগল। (কিতাবু মাওসূআতিল আখলাক ওয়ায যুহুদ ওয়ার রাকায়েক : ১/৩৮৬)
সিধেসাদা মানুষ দেখলে হয়-ঠাট্টা করা
আমাদের আরেকটি অন্যায়-আচরণ হল, সিধেসাদা ও সরল প্রকৃতির মানুষ দেখলে তার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করা। সিধেসাদা কিছু মানুষ সকল সমাজেই থাকে। আমরা মনে করি, এই সরল সোজা মানুষেরাই যেন একটা কৌতুক এবং হাসি তামাশার বিষয়বস্তু।
কৌতুক যদি এই পরিমাণে সীমাবদ্ধ হয় যাতে সে খুশি থাকে তাহলে তা আপত্তিকর নয়। কিন্তু এই হাসি তামাশা ও কৌতুক যদি তাকে অতিষ্ট করে তোলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সে যদি বিব্রতবোধ করে, লজ্জিত হয়, বিরক্তবোধ করে, যা তার অন্তরে কষ্ট দেয়, তার খারাপ লাগে, তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কৌতুক নিঃসন্দেহে কবিরা গোনাহ।
পিতার বয়সী রিকশাওয়ালাকে তুই-তোকারি করা
অনুরূপভাবে অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ব্যাপার ইদানীং খুব দেখা যায়। তা হলো কাজের মানুষের সঙ্গে, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা ও রিকশাওয়ালার সঙ্গে অনেক মানুষ অমানুষের মতো আচরণ করে।
প্রায়ই দেখা যায় রিকশা-ভাড়া নিয়ে অনেক ভদ্রলোকও বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরাও পিতার বয়সী রিকশাওয়ালাকে তুই-তোকারি পর্যন্ত করে বসে। এমন দৃশ্য প্রায়শ আমরা দেখি। অথচ এটাও মারত্মক গোনাহ।
শাহ ইসমাঈল শহীদ রহ.
অন্যের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও দুর্ব্যবহার করা তো দূরের কথা, আমাদের বড়রা তো গালির জবাবেও সুন্দর কথা বলতেন। কেউ তাঁদেরকে গালি দিলে প্রতিউত্তর করতেন না।
শাহ ইসমাঈল শহীদ রহ. ছিলেন শাহী খান্দানের লোক। তিনি একদিন দিল্লির শাহী জামে মসজিদে ওয়াজ করছিলেন। হঠাৎ ভর মজলিসে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেল এবং বললো, আমি শুনেছি আপনি জারজ সন্তান।
জগৎখ্যাত এই আলেমেদীন ছিলেন তাকওয়ার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার ব্যাপারে এজাতীয় বিশ্রী ও জঘন্য মন্তব্য! আমরা তো এমন মন্তব্যে রাগে ফেটে পড়তাম। হয়ত ওই লোকের মাথা ফাটিয়ে দিতাম।
কিন্তু তিনি ছিলেন, নবীদের সত্যিকারের উত্তরসূরী। তাই একেবারে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন
আপনি ভুল তথ্য পেয়েছেন। কেননা আমার আম্মাজানের বিয়ের সাক্ষী দিল্লিতে বর্তমানে আছেন এবং এই মসজিদেই আছেন।
দেখুন গালির পরিবর্তে গালি না দিয়ে কত স্নিগ্ধ ভাষায় নিজের কথাটা বলে দিলেন!
ডা. আব্দুল হাই আরেফী রহ.
শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী দা. বা. তাঁর শায়খ ও মুরশিদ ডা. আব্দুল হাই আরেফী রহ.-এর ঘটনা শোনান। একবার তিনি বন্ধু-বান্ধব ও মুরিদদের সঙ্গে নিজের বাসায় অবস্থান করছিলেন। ইত্যবসরে এক লোক এলো। সম্পূর্ণ ক্লিন সেভ করা।
লোকটি ছিল হযরতের আত্মীয়। সে গালি দিতে দিতে ভিতরে ঢুকলো। তার প্রতিটি শব্দ ছিল চরম বেয়াদবিপূর্ণ। লোকটিকে দেখে হযরত নিজেই উঠে গেলেন এবং তার কথা ভালো করে শোনার আগেই বলতে লাগলেন ভাই! আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দাও। ইনশাআল্লাহ আমি তোমার ক্ষতি পুষিয়ে দিব। তোমার পায়ে ধরি, মাফ করে দাও।
এভাবে লোকটির সামনে হযরত কাকুতি-মিনতি করতে লাগলেন। তার গোস্বা ঠাণ্ডা হাওয়া পর্যন্ত তার কাছে ক্ষমা চেয়ে গেলেন। একটা পর্যায়ে তার গোস্বা থামলো এবং সে চলে গেল।
চলে যাওয়ার পরে হযরত বললেন, আল্লাহর এই বান্দা আমার ব্যাপারে কোনো ভুল তথ্য জেনে এসেছে। তাই রেগে আগুন হয়ে এখানে এসে পড়েছে। আমি চাইলে উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু সে আমার আত্মীয়। এ জন্য তার রাগ থামালাম। তার সঙ্গে বিবাদে জড়ালাম না।
কেননা আত্মীয়ের হক আছে। তারা দুর্ব্যবহার করলে প্রতিশোধ নেওয়া তার হক নয়; বরং সুন্দর আচরণ করা তার হক। এ জন্যই তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করেছি।
বস্তুত তো একেই বলে হাদীসের জীবন্ত নমুনা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
اعْفُ عمَّنْ ظَلَمَكَ ، وصِلْ مَنْ قَطَعَكَ ، وأحسنْ إلى مَنْ أساءَ إليكَ
যে তোমার প্রতি অবিচার করে, তাকে ক্ষমা করো। যে তোমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে, তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়। যে তোমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তুমি তার সঙ্গে সদাচারণ কর। (সহীহ আত-তারগীব : ২৪৬৭)
মাওলানা রফীউদ্দীন রহ.
মাওলানা রফীউদ্দীন রহ. ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম। পদটি তো এমন পদ, বলা যায় জগৎ শ্রেষ্ঠ পদমর্যাদাগুলোর একটি। অথচ তিনি এতটাই সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন যে, নিজে একটি গাভী পালতেন। গাভীটিকে চরানোর জন্য মাঝে মাঝে তিনি নিজেই রাস্তায় বের হতেন।
এক দিনের ঘটনা। গাভীটি চরনোর উদ্দেশ্যে তিনি বের হলেন, এমন সময় মাদরাসা থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এলো। হাতে সময় ছিল কম। তাই তিনি আর বাড়িতে গেলেন না।
গাভীটি হাতে করে চলে এলেন মাদরাসায়। মাদরাসার মাঠে একটি গাছের সঙ্গে গাভীটাকে বেঁধে রেখে অফিসে চলে গেলেন। এমন সময় এক লোক এলো। লোকটি ছিল দেওবন্দের স্থানীয়। এসেই শুরু করল চেঁচামেচি। জোর গলায় বলে উঠল গাভীটা কার? কে এখানে বেঁধে রেখেছে?
একজন জানালো, এক মুহতামিম সাহেবের গাভী।
এবার লোকটি চেঁচিয়ে উঠে বলল আচ্ছা! মাদরাসা তো দেখি মুহতামিম সাহেবের গোয়ালঘর হয়ে গেছে। মাদরাসার মাঠ গরু রাখার জায়গা নাকি! লোকটির চিল্লাচিল্লিতে অনেক লোক জমা হয়ে গেল। হযরতের কানেও শোরগোলের আওয়াজ গেল। বিষয়টা কী দেখার জন্য তিনি অফিস থেকে বের হলেন।
তখন লোকজন বিষয়টা হযরতের কাছে জানালো। হযরত শুনে উত্তর দিলেন, লোকটি তো ঠিকই বলেছে। আসলেই তো মাদরাসা আমার নয়। মাদরাসা তো আল্লাহ তাআলার। আমিতো আল্লাহর গোলাম, এখানের নগণ্য খাদেম। মাদরাসার মাঠ আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাটা ঠিক হয়নি।
গাভীটাকে এখানে বেঁধে রেখে আমি ভুল করেছি। কারণ গাভীটা আমার, মাঠ মাদরাসার। আমার ভুলের জন্য আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাচ্ছি। তারপর তিনি লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন, আমার মন চাচ্ছে গাভীটা আপনি নিয়ে যান। লোকটি ছিল এক আজব মানুষ। সে সত্যিই গাভীটা নিয়ে চলে গেল।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এমন একজন মহান ব্যক্তিকে শাসাচ্ছে অতি সাধারণ একজন মানুষ। তিনি ইটের জবাব পাটকেল দিয়ে দেননি। ইচ্ছা করলে দিতে পারতেন। ইশারা দিলেই তাঁর শত-সহস্র ছাত্র লোকটিকে তুলোধুনো করে ফেলতো। কিন্তু তিনি তা করলেন না। বরং সুন্দর আচরণ দেখালেন। সুন্দর কথা বলে তাকে বিদায় দিলেন। উপরন্তু নিজের শখের গাভীটাও লোকটাকে দিয়ে দিলেন। উত্তম চরিত্র তো একেই বলে। বস্তুত তাঁরা ছিলেন নবীজী ﷺ-এর চরিত্রের জীবন্ত নমুনা।
তৃতীয় মূলনীতি : কাউকে কষ্ট না দেয়া
মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও চলাফেরার ক্ষেত্রে তৃতীয় মূলনীতি হল, কাউকে কষ্ট না দেয়া। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া। কেননা অনেক সময় বাবা সন্তানকে, শিক্ষক ছাত্রকে প্রয়োজনে শাসন করেন। বিচারক অপরাধীকে সাজা দেন। এগুলো অন্যায় নয় কিংবা মূলনীতি-বহিভূর্ত নয়।
সুতরাং এগুলো নিষেধ নয়। নিষেধ হচ্ছে কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া। সুতরাং মানসিকভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন যে, আজ থেকে কথাবার্তা, লেনদেন, চলাফেরা ও ওঠাবসা এমনভাবে করবো, যেন আমার দ্বারা কেউ কষ্ট না পায়।
ট্রাফিক আইন মেনে চলুন
যেমন ট্রাফিক আইন তৈরি করা হয়েছে যেন মানুষের জান-মালের ক্ষতি না হয়। এখন আপনি যদি ট্রাফিক আইন না মানেন, নো পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি পার্ক করেন, সিগন্যালের তোয়াক্কা না করেন তাহলে তা অন্যের কষ্টের কারণ হবে। জ্যাম লেগে যেতে পারে, এক্সিডেন্ট ঘটতে পারে, আরেক জনের জান-মালের ক্ষতি হতে পারে। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিন যে, আজ থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলবো।
বাসা-বাড়িতে কাউকে কষ্ট দিবেন না
বাসা-বাড়িতে কিছু জিনিস এমন থাকে যে, যেগুলো রাখার নির্দিষ্ট স্থান আছে। যেমন তোয়ালে বা গামছা। এখন আপনি তোয়ালে ব্যবহার করলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেননি। তাহলে এটাও আরেকজনের কষ্টের কারণ হয়। সুতরাং এমনটি করবেন না। বাসা-বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়ি ননদ-ভাবীর মাঝে সাধারণত এসব খুঁটিনাটি কারণে বড় বড় ঝগড়াও ঘটতে দেখা যায়। এসব ঝগড়ার মূল কারণ একটাই—অন্যকে কষ্ট দেয়া।
পরিবারে ‘সবসময়’ শব্দটির বিশ্রী ব্যবহার
পরিবারে ‘সবসময়’ শব্দটির বিশ্রী ব্যবহারে হয়। যেমন একদিন তরকারিতে লবণ কম কিংবা বেশি হয়েছে। স্ত্রী তো ইচ্ছা করে এমনটি করেনি! কিন্তু স্বামী চটে গেল।
বলে বসলো, তুমি ‘সবসময়’ তরকারিতে লবণ ঠিক মত দাও না। এবার স্ত্রীও বলে বসলো, তুমি সবসময় এভাবেই কথা বল। তারপর শুরু হয় বাকযুদ্ধ। সুতরাং শব্দটির অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
আদব বা শিষ্টাচার কাকে বলে?
একবার এক মজলিসে ডা. আব্দুল হাই আরেফী রহ. উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, আদব বা শিষ্টাচার কাকে বলে, কে বলতে পারবেন? মজলিসের লোকেরা চুপ করে বসে থাকলেন, কেউ কোনো উত্তর দিলেন না। এরপর তিনি বললেন, অনেকে মনে করেন, বড়দের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে রাখা আদব। কিছু লোকের ধারণা হল, বড়দের সামনে কথা জোরে না বলা আদব। মূলত এগুলো আদব নয়। আদব হল এমন কাজ করা যা দ্বারা অন্যের কোনো কষ্ট না হয়। অন্যের কাছে তা বিরক্তিকর না হয়। কোনো কাজের মাধ্যমে কেউ কষ্ট পেলে কিংবা বিরক্ত হলে তা বেআদবি বা অভদ্রতা।
মানুষকে কষ্ট না দেয়ার ফজিলত
যাই হোক, মানুষকে কষ্ট না দেয়ার ফজিলত কী?
অনেকে জানের বদলে জান সাদকা করার মান্নত করে থাকেন। এরপর আমাদের নিকট এসে বলেন, হুযুর! মুরগি সাদকা করলে হবে কি? মুরগিও তো একটি জান বা প্রাণ? বস্তুত এ জাতীয় মান্নত করলে মুরগি সাদকা করলে মান্নত আদায় হয় না। বরং এক্ষেত্রে কমপক্ষে কুরবানির উপযুক্ত ছাগল সাদকা করতে হয়। তবে একটি আমল আছে, এর মাধ্যমে জানের সাদকার মান্নত পূরণ হয় না, তবে জানের সাদকার সাওয়াব পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন
تَدَعُ النَّاسَ مِنَ الشَّرِّ؛ فإنَّهَا صَدَقَةٌ تَصَدَّقُ بهَا علَى نَفْسِكَ
মানুষকে তোমার অনিষ্টতা হতে মুক্ত রাখবে। বস্তুত এটা তোমার নিজের জন্য তোমার প্রাণের সাদকা। (বুখারী : ২৫১৮)
প্রকৃত মুসলিম
অপর হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছে
المُسْلِمُ مَن سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِن لِسانِهِ ويَدِهِ
যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম। (বুখারী : ১০)
জিহ্বাকে হাতের আগে উল্লেখ করার কারণ
উক্ত হাদীসে জিহ্বাকে হাতের আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হল
১. হাতের তুলনায় জিহ্বা দ্বারা মানুষকে কষ্ট বেশি দেয়া যায়।
২. হাত দ্বারা কাউকে আঘাত করতে হলে ততটুকু করা যায়, যে পর্যন্ত হাত যায়। পক্ষান্তরে আপনি জিহ্বা দিয়ে কয়েক হাজার মাইলের দূরত্বে অবস্থান করা লোকটিকেও আঘাত করতে পারবেন।
৩. হাত দ্বারা কষ্ট দিতে হলে শক্তির প্রয়োজন হয়। এ জন্য আপনার চেয়ে শক্তিমান লোককে হাত দ্বারা কষ্ট দিতে পারবেন না। পক্ষান্তরে জিহ্বা দ্বারা কষ্ট দিতে হলে যেহেতু কোনো শক্তির প্রয়োজন হয় না, তাই দুর্বল ব্যক্তিও তার চেয়ে শক্তিশালী লোককে কষ্ট দিতে পারে।
৪. ঝগড়া-বিবাদের বেশির ভাগ জিহ্বার কারণেই হয়ে থাকে। এই তুলনায় হাতের কারণে ঝগড়া কম সৃষ্টি হয়।
তোমার মুসলিম ভাই তোমার থেকে নিরাপদ নয়!
সুফিয়ান ইবনে হুসাইন রহ. বলেন, আমি ইয়াস ইবনু মুআবিয়া রহ.-এর নিকট কোনো এক লোকের বদনাম করলাম।
তিনি আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কি রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছ? আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, ভারতবর্ষ, তুর্কী, সিন্ধু প্রদেশের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছ? আমি বললাম, জী না।
তিনি বললেন, তোমার থেকে রোমান, সিন্ধু, তুর্কী, ভারতীয়রা নিরাপদে রইল, অথচ তোমার মুসলিম ভাই তোমার থেকে নিরাপদ নয়! তিনি বলেন, এরপর থেকে আর কখনও আমি এরূপ করিনি। (আলবিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ : ১৩/১২১)
সৃষ্টির সেবা ছাড়া আল্লাহকে পাওয়া যায় না
আমরা তো মনে করি, ইসলাম শুধু নামায রোজা তাসবীহ-তাহলীলের নাম। এ ধারণা ভুল। মূলত এগুলোও ইসলাম। মাওলানা রূমী রহ. চমৎকার করে বলেন
به تسبیح و سجاده و دلق نیست
طریقت بجز خدمت خلق نیست
তাসবীহ জায়নামায আর আলখেল্লা দিয়ে আল্লাহকে পাওয়া যায় না, সৃষ্টির সেবা ছাড়া আল্লাহকে পাওয়া যায় না।
ডা. আব্দুল হাই আরেফী রহ. বলতেন, কোনো বান্দা যখন আল্লাহকে ভালোবাসে, আল্লাহও তখন তাকে ভালোবাসেন। আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে সৃষ্টির মহব্বত ঢেলে দেন। ফলে মুত্তাকীদের প্রতি, মানবজাতির প্রতি এমনকি জীবজন্তুর প্রতিও তার অন্তরে মহব্বত সৃষ্টি হয়, যার কল্পনাও আমরা করতে পারি না।
সাইলেন্ট দাওয়াত
একটা বিষয় মনে রাখবেন, আমাদের নামায রোজা হজ দেখে অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি খুব একটা আকৃষ্ট হয় না। এসব ইবাদত করতে হয় নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য এবং জান্নাত লাভ করার জন্য।
অমুসলিমদের মাঝে ইসলাম প্রবেশের জানালা এগুলো নয়। মূলত অমুসলিমদের অন্তরে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ তৈরির পথ চারিত্রিক ও সামাজিক আমল। যেগুলো ইসলাম প্রবেশের জানালা। অমুসলিমদের মাঝে ইসলাম এগুলোর মাধ্যমেই প্রবেশ করে। অর্থাৎ সুন্দর আচরণ দেখাবেন, মার্জিতভাবে কথা বলবেন, ওয়াদা খেলাফ করবেন না, মিথ্যা বলবেন না, ধোঁকা দিবেন না ইত্যাদি এমন আমল যা দেখে অমুসলিমরা ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। এ জন্য এগুলোকে বলতে পারেন, সাইলেন্ট দাওয়াত এবং অমুসলিমদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার শক্তিশালী মাধ্যম।
দাওয়াত দানের রয়েছে অনেক মাধ্যম, অনেক পদ্ধতি। যার মৌলিক পদ্ধতি দুটিÑ একটি সাউন্ড অপরটি সাইলেন্ট। সাউন্ড হল মুখের কথায় দাওয়াত। অপরদিকে সাইলেন্ট দাওয়াত হলো, আমল-আখলাক ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে দাওয়াত।
মুখের কথায় যে দাওয়াত না দেয়া যায়, চরিত্র ও মানবতা দিয়ে তারচেয়ে বেশি দেয়া যায়। মুসলিমদের চরিত্র ও আচরণ দেখেই অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
কর্ম দ্বারা উপদেশ দাও
এ কারণেই হাসান বসরী রহ. বলেন
عِظِ النَّاسَ بِفِعْلِكَ وَلاَ تَعِظْهُمْ بِقَوْلِكَ
মানুষকে তোমার কর্ম দ্বারা উপদেশ দাও। কেবল তোমার কথার মাধ্যমে উপদেশ দিয়ো না। (আয-যুহ্দ : ২২২)
সৃষ্টির সেবায় যায়নুল আবিদীন আলী ইবনুল হুসাইন রহ.
যায়নুল আবিদীন আলী ইবনুল হুসাইন রহ. রাতের আঁধারেধ আটা পিঠে করে গরিব-মিসকিনদের তালাশ করে ফিরতেন। তিনি বলতেন, রাতের অঁাধারের দান প্রভুর রাগ স্তিমিত করে। মদীনা শহরে এমন অনেক লোক ছিল, যাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা কোথা থেকে হত তারা তা জানত না। আলী ইবনুল হুসাইন মারা গেলে ওই লোকগুলোর রাতের পাওয়া খাদ্য-খানা বন্ধ হয়ে গেল, তখন তারা বুঝতে পারল কোথা থেকে এগুলো আসত। তিনি এভাবে একশ’ পরিবারের ব্যয় বহন করতেন। মারা যাওয়ার পর লোকেরা আলী ইবনুল হুসাইন রহ.-এর পিঠে কড়া পড়ার চিহ্ন দেখতে পায়। রাতে রুটির আটা বহন করতে করতে তাঁর পিঠে কড়া পড়ে গিয়েছিল। (তারীখু দিমাশক : ৪১/৩৮৩-৩৮৪)
বুড়িমা-র খেদমত
পাকিস্তানের প্রধান মুফতী ফকীহুল ইসলাম রফী উসমানী দা. বা.। শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী দা. বা.-এর বড় ভাই। তাঁদের আব্বা মুফতী শফী রহ. ছিলেন হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা।
মুফতী রফী উসমানী বলেন, আমাদের আম্মাজান আমাদেরকে ছোট বেলায় সদাইপাতি আনার জন্য মাঝে মধ্যে বাজারে পাঠাতেন। অনেক সময় আমরা যেতে চাইতাম না। এক ভাই আরেক ভাইয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। তখন একদিন আব্বাজান আমাদেরকে বললেন, আজ আমি তোমাদেরকে আমার একটি গল্প বলবো, যেটা আমার আর আল্লাহর মাঝে গোপন ছিল। গোপন এই বিষয়টি তোমাদের তারবিয়তের জন্য আজ বলে দিচ্ছি।
এরপর আব্বাজান রহ. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগের একটি ঘটনা আমাদেরকে শোনালেন। তিনি বলেন, একদিন আমি ফজরের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলাম। পথিমধ্যে ছিল হিন্দুদের একটি বাড়ি। কিছু দূর যাওয়ার পর একটি কূপের পাশে এক বুড়িকে দেখতে পেলাম। তিনি কূপ থেকে পানি উঠিয়ে বহু কষ্ট করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একটু পরপর কলসিটি মাটিতে রেখে হাঁপাচ্ছিলেন। আমার খুব মায়া হল। তাই কাছে গিয়ে বললাম মা! আমার কাছে কলসিটা দেন। এই বলে কলসিটি হাতে নিলাম। দেখলাম বেশ ওজন। বুড়িমাকে বললাম, আপনি আগে আগে থাকেন, আমাকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যান। এভাবে বুড়ি-মা বেশ কিছু পথ অতিক্রম করার পর তার জীর্ণশীর্ণ বাড়িতে আমাকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন বাবা! এখানে রেখে দাও।
আমি যখন চলে আসছিলাম তখন শুনতে পাচ্ছিলাম তিনি দুই হাত তুলে আমার জন্য দোয়া করছিলেন। ভাবলাম সামান্য কষ্টের বিনিময়ে কত দোয়া পাওয়া যায়! তাই পরের দিন ফজরের নামাযের কিছুটা আগে আমি বের হলাম। আজ তাকে ওই কূপের পাড়ে পেয়ে গেলাম। দেখলাম তিনি কূপের মাঝে বালতি ফেলে পানি উঠাচ্ছিলেন। তাই তাকে সরিয়ে দিয়ে আমি নিজেই পানি উঠালাম এবং গতকালের মতো আজও তার বাড়িতে পানি পৌঁছে দিলাম।
বুড়িমা এর জন্য আমাকে আজও অনেক দোয়া করে দিলেন। পরবর্তীতে কাজটিকে আমি নিজের রুটিন বানিয়ে ফেললাম। প্রতিদিন ফজরের আগে ওই বুড়ি মায়ের বাড়িতে পানি পৌঁছে দিতাম। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন ততদিন আমি নিয়মিত এ কাজটি করেছি। যেহেতু কাজটি করতাম দিনের আলো দেখা দেওয়ার আগে, তাই আমাকে কেউ দেখত না।
এভাবে আমি, ওই বুড়িমা আর আল্লাহ তাআলা ছাড়া এটা আর কেউ জানতো না।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দীনের বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ বুঝ দান করুন। আজকের আলোচ্য তিন নীতিমালার ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে আমল করার তাওফীক দান করুন। নবীজি ﷺ-এর সুন্নত আমাদের নিকট প্রিয় বানিয়ে দিন এবং এর মধ্যে বরকত দান করুন আমীন।
وَآخِرُ دَعْوَانَا اَنِ الْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
ইসলাহী বয়ান অবলম্বনে।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
অসৎ আলেম ও পীর
সূরা আরাফের শেষ ভাগে আল্লাহ পাক উল্লেখ করিয়াছেন যে, সৃষ্টির আদিতেই সমস্ত মানবজাতিকে তিনি সতর্ক করিয়া...
আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী
[প্রদত্ত বয়ান থেকে সংগৃহীত] হামদ ও সালাতের পর... আদর্শ শিক্ষকের পরিচয় হলো- যে শিক্ষক তার নিবিড় অধ...
নবীজীর ভালোবাসা ও সুন্নাতী যিন্দেগী
হযরত সালমান মনসুরপুরী রহ. বলেন, নবীজীর মুহাব্বত হৃদয়ের শক্তি, রূহের খোরাক, চোখের শীতলতা, দেহের সজীবত...
চারটি মহৎ গুণ
...