আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৬৩১৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কি কি কারনে স্ত্রী তালাক দেওয়া যায়,

২৮ মে, ২০২১

West Bengal ৭২১৬০৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

স্ত্রীর মধ্যে দ্বীনি, আখলাকী অথবা সাংসারিক কোন অসুবিধে থাকলে সংশোধনের চেষ্টা করুন। তালাক দেয়া ভালো কিছু নয়। কোনভাবেই সংশোধনের পথ খুঁজে না পাওয়া গেলে সর্বশেষ চূড়ান্ত অপারেশন হিসেবে অনন্যোপায় হয়ে তালাক দেওয়া।

وَیَسۡتَفۡتُوۡنَکَ فِی النِّسَآءِ ؕ قُلِ اللّٰہُ یُفۡتِیۡکُمۡ فِیۡہِنَّ ۙ وَمَا یُتۡلٰی عَلَیۡکُمۡ فِی الۡکِتٰبِ فِیۡ یَتٰمَی النِّسَآءِ الّٰتِیۡ لَاتُؤۡ تُوۡنَہُنَّ مَا کُتِبَ لَہُنَّ وَتَرۡغَبُوۡنَ اَنۡ تَنۡکِحُوۡہُنَّ وَالۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الۡوِلۡدَانِ ۙ وَاَنۡ تَقُوۡمُوۡا لِلۡیَتٰمٰی بِالۡقِسۡطِ ؕ وَمَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَاِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِہٖ عَلِیۡمًا

এবং (হে নবী! ) লোকে তোমার কাছে নারীদের সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জিজ্ঞেস করে। ৮৭ বলে দাও, আল্লাহ্ তাদের সম্পর্কে তোমাদেরকে বিধান জানাচ্ছেন এবং এই কিতাব (অর্থাৎ কুরআন)-এর যে সব আয়াত তোমাদেরকে পড়ে শোনানো হচ্ছে, তাও (তোমদেরকে শরীয়তের বিধান জানায়) সেই ইয়াতীম নারীদের সম্পর্কে, যাদেরকে তোমরা তাদের নির্ধারিত অধিকার প্রদান কর না, অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহও করতে চাও ৮৮ এবং অসহায় শিশুদের সম্পর্কেও (বিধান জানায়) এবং (তোমাদেরকে জোর নির্দেশ দেয়) যেন ইয়াতীমদের ব্যাপারে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। তোমরা যা-কিছু সৎকাজ করবে, আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত।
—আন নিসা - ১২৭

তাফসীরঃ
৮৭. ইসলামের আগে নারীদেরকে সমাজের এক নিকৃষ্ট জীব মনে করা হত। তাদের সামাজিক ও জৈবিক কোনও অধিকার ছিল না। যখন ইসলাম নারীদের হক আদায়ের জোর নির্দেশ দিল এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে তাদেরকেও অংশ দিল, তখন আরবদের কাছে এটা এমনই এক অভাবিত বিষয় ছিল যে, তাদের কেউ কেউ মনে করছিল এটা হয়ত এক সাময়িক নির্দেশ, যা কিছুকাল পর রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে যখন রহিত হতে দেখা গেল না, তখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়। এতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, এটা সাময়িক কোনও বিধান নয়। বরং স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। আল্লাহ তাআলাই এ বিধান দিয়েছেন। কুরআন মাজীদে এর আগে যেসব আয়াত নাযিল হয়েছে, তাতেও এ জাতীয় বহু বিধান রয়েছে। এ আয়াতে সেই সঙ্গে নর-নারীর পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে আরও কিছু বিধান বর্ণিত হয়েছে।
৮৮. এর দ্বারা সূরা নিসার ৩নং আয়াতের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বুখারী শরীফের এক হাদীসে হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে কখনও ইয়াতীম মেয়ে তার চাচাত ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে থাকত। সে হয়ত রূপসী হত এবং পিতার রেখে যাওয়া বিপুল সম্পত্তিরও মালিক হত। এ অবস্থায় চাচাত ভাই চাইত, সে সাবালিকা হলে নিজেই তাকে বিবাহ করবে, যাতে তার সম্পদ নিজ দখলেই থেকে যায়। কিন্তু সে বিবাহে তাকে তার মত মেয়ের যে মোহর হওয়া উচিত তা দিত না। অপর দিকে মেয়েটি রূপসী না হলে সম্পত্তির লোভে তাকে বিবাহ করত ঠিকই, কিন্তু একদিকে তাকে মোহরও দিত অতি সামান্য, অন্যদিকে তার সাথে আচার-আচরণও প্রিয় ভার্যা-সুলভ করত না।


وَاِنِ امۡرَاَۃٌ خَافَتۡ مِنۡۢ بَعۡلِہَا نُشُوۡزًا اَوۡ اِعۡرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡہِمَاۤ اَنۡ یُّصۡلِحَا بَیۡنَہُمَا صُلۡحًا ؕ وَالصُّلۡحُ خَیۡرٌ ؕ وَاُحۡضِرَتِ الۡاَنۡفُسُ الشُّحَّ ؕ وَاِنۡ تُحۡسِنُوۡا وَتَتَّقُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا

কোনও নারী যদি তার স্বামীর পক্ষ হতে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তাদের জন্য এতে কোন অসুবিধা নেই যে, তারা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কোনও রকমের আপোস-নিষ্পত্তি করবে। ৮৯ আর আপোস-নিষ্পত্তিই উত্তম। মানুষের অন্তরে (কিছু না কিছু) লালসার প্রবণতা হয়েছে তাকওয়া তো নিহিত রাখাই হয়েছে। ৯০ তোমরা যদি ইহসান ও অবলম্বন কর, তবে তোমরা যা-কিছুই করবে, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছেন।
—আন নিসা - ১২৮

তাফসীরঃ
৮৯. কখনও এমনও হত যে, কোনও স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর দিল লাগছে না। তাই সে তার প্রতি অবহেলা করে এবং তাকে তালাক দিতে চায়। এ অবস্থায় স্ত্রী যদি তালাকে সম্মত না থাকে, তবে তার কিছু অধিকার ত্যাগ করে স্বামীর সাথে আপোস করতে পারে। অর্থাৎ বলতে পারে, আমি আমার অমুক অধিকার দাবী করব না, তবুও আমাকে নিজ বিবাহাধীন রেখে দাও। এরূপ ক্ষেত্রে স্বামীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সে যেন আপোস করতে রাজি হয়ে যায় এবং তালাক দেওয়ার জন্য গোঁ না ধরে। কেননা আপোস-মীমাংসার পন্থাই উত্তম। পরের বাক্যে ইহসান করার উপদেশ দিয়ে স্বামীকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, মনের মিল না হওয়া সত্ত্বে সে যেন স্ত্রীর সাথে মিটমাট করার চেষ্টা করে এবং অন্তরে আল্লাহর ভয় রেখে তার অধিকারসমূহ আদায় করতে থাকে। তা হলে সেটা তার দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে।
৯০. বাহ্যত এর অর্থ হচ্ছে, পার্থিব লাভের প্রতি সব মানুষেরই স্বভাবগতভাবে কিছু না কিছু লোভ আছে। কাজেই স্ত্রী যদি তার পার্থিব কিছু স্বার্থ ত্যাগ করে তবে স্বামীর চিন্তা করা উচিত, হয়ত তালাক দিলে তার কোন কঠিন কষ্ট-ক্লেশ বা অন্য কোন জটিল সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, আর সে কারণেই সে তার পার্থিব স্বার্থ ত্যাগে রাজি হয়েছে। এরূপ অবস্থায় আপোস মীমাংসা করে নেওয়াই ভালো। অপর দিকে স্ত্রীর চিন্তা করা উচিত, স্বামী পার্থিব কিছু উপকার লাভের উদ্দেশ্যেই বিবাহ করেছিল। এখন সে দেখছে আমার দ্বারা তার সে উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না, যে কারণে আমার স্থানে অন্য কাউকে বিবাহ করতে চাচ্ছে, যাতে তার সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়। এ অবস্থায় আমি যদি আমার কিছু হক ছেড়ে দেই এবং এভাবে তার অন্য রকম উপকার সাধন করি, তবে সে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা থেকে নিবৃত্ত হতে পারে।

ব্যাখ্যাঃ
কোন স্ত্রী স্বামী তরফ থেকে উপেক্ষার আশংকায় শর্ত সাপেক্ষে তার অধিকার হতে কিছু ছেড়ে দিয়ে স্বামীকে খুশি করার চেষ্টা করতে পারে । এটা সম্পূর্ণ জায়েজ । (মাঃ কোঃ, মুঃ কোঃ )


وَلَنۡ تَسۡتَطِیۡعُوۡۤا اَنۡ تَعۡدِلُوۡا بَیۡنَ النِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡ فَلَا تَمِیۡلُوۡا کُلَّ الۡمَیۡلِ فَتَذَرُوۡہَا کَالۡمُعَلَّقَۃِ ؕ وَاِنۡ تُصۡلِحُوۡا وَتَتَّقُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের মধ্যে সমান "আচরণ করতে সক্ষম হবে না। ৯১ তবে (কোনও একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে অন্যজনকে মাঝখানে ঝুলন্ত বস্তুর মত ফেলে রাখবে। তোমরা যদি সংশোধন কর ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল, তবে (জেনে রেখ), আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
—আন নিসা - ১২৯

তাফসীরঃ
৯১. অর্থাৎ মহব্বত ও ভালোবাসায় স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা মানুষের সাধ্যাতীত বিষয়। কেননা মনের উপর কোনও মানুষের হাত থাকে না। কাজেই এক স্ত্রী অপেক্ষা অন্য স্ত্রীর উপর যদি ভালোবাসা বেশি হয়, সে কারণে আল্লাহ তাআলা ধরবেন না। কিন্তু বাহ্যিক আচার-আচরণে সমতা রক্ষা করা জরুরী। অর্থাৎ একজনের কাছে যত রাত থাকবে, অন্যজনের কাছেও তত রাতই থাকতে হবে। একজনকে যে পরিমাণ খরচ দেবে অন্যজনকেও তাই দিতে হবে। এমনিভাবে একজনের প্রতি আচরণ এমন করবে না, যদ্দরুণ অন্যজনের মনে আঘাত লাগতে পারে এবং সে ধারণা করতে পারে, তাকে বুঝি মাঝখানে লটকে রাখা হয়েছে।

ব্যাখ্যাঃ
অপরকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখার অর্থ হল, যে স্ত্রীর প্রতি মনের আকর্ষণ কম থাকে তার দাবী পূর্ন করে দেয়া হয় না এবং পরিত্যাগও করা হয় না । (মাঃ কোঃ )

وَاِنۡ یَّتَفَرَّقَا یُغۡنِ اللّٰہُ کُلًّا مِّنۡ سَعَتِہٖ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ وَاسِعًا حَکِیۡمًا

আর যদি উভয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ নিজের (কুদরত ও রহমতের) প্রাচুর্য দ্বারা তাদের প্রত্যেককে (অপরের প্রয়োজন থেকে) বেনিয়ায করে দেবেন। ৯২ আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রভৃত হিকমতের অধিকারী।
—আন নিসা - ১৩০

তাফসীরঃ
৯২. মীমাংসার সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও এমন একটা পর্যায় আসতে পারে, যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক রাখা হলে উভয়ের জীবন বিষাদময় ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার আশংকা থাকে। এরূপ অবস্থায় তালাক ও বিচ্ছেদের পন্থা অবলম্বন করাও জায়েয। এ আয়াত আশ্বস্ত করছে যে, বিচ্ছিন্নতার ব্যাপারটা যদি সৌজন্যমূলকভাবে সম্পন্ন করা হয়, তবে আল্লাহ তাআলা উভয়ের জন্য আরও উত্তম ব্যবস্থা করবেন, যার ফলে তাদের দু'জনই দুজন থেকে বেনিয়ায হয়ে যাবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯৭৩৬৫

কাবিন নামার ১৮ ও ১৯ ধারা জানা অজানা কিছু বিষয়


২২ মার্চ, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৪৬০৭২

পানিতে লিখে তালাক দিলে তার বিধান কি؟


১৭ নভেম্বর, ২০২৩

ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭৪৩৪৪৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২৯৭৬৭

বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হলে সন্তান কার কাছে থাকবে?


১১ মার্চ, ২০২৩

Selangor

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

২৬২৭৬

তালাক কি লিখিতভাবে দেয়া যায়?


৭ ডিসেম্বর, ২০২২

Khulna

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy