আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কাবিন নামার ১৮ ও ১৯ ধারা জানা অজানা কিছু বিষয়

প্রশ্নঃ ৯৭৩৬৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি জানতে চাচ্ছি বিয়ের১৮ নং কলাম বিষয়ে যদি কোন স্বামী জানলই এটা কি বা বিয়ের দিন তাকে বলাও হয়নি এ বিষয়ে তাহলে কি করে এটা তালাকের অধিকার প্রদান করা হয় আমাকে দয়া করে এ বিষয়ে সম্পুর্ণ বিষয়টা প্লিজ বুঝিয়ে বলুন কাটন যা বিষয়ে স্বামী জানতইনা বিয়ের দিন এমন হয় বা কাবিননামায় স্বামী কে না জানিয়ে ফরম পুরন করে বিয়ের পর সাক্কর ও নেয় অথচ স্বামী জানেনা বউ তালাক এর অধিকার নিলো এটা কিভাবে তালাক এর অধিকার৷ নেওয়া হবে দয়া করে জানান,

২২ মার্চ, ২০২৫

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আসলে দেশের মানুষের মৌলিক সমস্যা হল ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা। যেকোন জরুরী বিষয় চাই সেটি দ্বীনী বিষয় হোক বা দুনিয়াবী বিষয় হোক এক্ষেত্রে একজন প্রাজ্ঞ আলেম থেকে পরামর্শ নিয়ে করা উচিত। তাহলে এসব সমস্যার সৃষ্টি হয় না।

বিয়ের সময় যদি একজন আলেমের সাথে পরামর্শ করে নিতেন কিভাবে কাবিন নামায় সাইন করা হবে। তাহলে অনেক ভাল হতো।

যেহেতু আইয়ুব খানের প্রবর্তিত নামধারী মুসলিম পারিবারিক আইনে অনৈসলামিক পদ্ধতিতে তালাক দেয়ার আইন করা হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে প্রতিটি মুসলিমেরই বিয়ের সময় প্রাজ্ঞ মুফতীর শরনাপন্ন হয়ে মাসআলাগুলো সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখা উচিত।

আপনার সাথে সাথে আপনার মত আরো অনেকের উপকার হতে পারে বলে কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও বিয়ে-কাবিন নামা এবং তালাক সম্পর্কে কয়েকটি জরুরী বিষয় নিচে উদ্ধৃত করা হল।



কাবিন নামায় সাইন করার সময় অবশ্যই ১৮ ও ১৯ নং ধারাটি পড়ে নেয়া উচিত। সেই সাথে তাতে লিখবে-
নমুনা স্বরূপ-

যদি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর উপর শারিরীক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়, বা স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, কিংবা স্ত্রীর ভরণপোষণ না দেয়, এবং এ বিষয়টি স্বামী পক্ষের তিনজন মুরুব্বী এবং স্ত্রী পক্ষের তিনজন মুরুব্বী সত্যায়ন করে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর এক তালাক পতিত করার অধিকার পাবে”।

এরকমভাবে লিখে স্ত্রীকে এক তালাকের অধিকার প্রদান করবে। তিন তালাক কখনোই নয়। কারণ তিন তালাক প্রদান ইসলামী পদ্ধতি নয়। এবং একসাথে তিন তালাক প্রদানকে রাসূল সাঃ বিদআত বলে অভিহিত করেছেন। তবে এটি নাজায়েজ হলেও তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হয়ে যায়। যেমন কাউকে হত্যা করা নাজায়েজ হলেও হত্যা করলে হত্যা হয়ে যায়।

এ কারণে তালাক স্বামী দেয়ার সময়ও এক তালাকের উর্দ্ধে দেয়া যেমন উচিত নয়, তেমনি স্ত্রীকে অধিকার দেয়ার সময়ও এক তালাকের অধিকার দেয়া উচিত নয়। আর একের অধিক তালাক দেয়ার যেমন কোন প্রয়োজন নেই, তেমনি স্ত্রীকে অধিকার দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এক তালাকের মাধ্যমেওতো স্বামী থেকে স্ত্রী পৃথক হয়ে যায়। তাহলে সেখানে অযথা দু ইবা তিন তালাক কেন দেয়া হবে? যেখানে এক আঘাতে কোন কিছু ধ্বংস করা যায়, সেখানে যেমন একাধিক আঘাত করা অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কাজ তেমনি যেখানে এক তালাকের মাধ্যইে পৃথক হয়ে যাচ্ছে, সেখানে দুই বা তিন তালাক দেয়াও অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কাজ। তাই এ ব্যাপারে স্বামী স্ত্রী উভয়েরই সতর্ক থাকা উচিত।

মূল আলোচনা
স্ত্রী তখনি নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারে, যখন স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার প্রদান করে থাকে। এছাড়া স্ত্রী ইচ্ছে করলেই নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার রাখে না।

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের আইন অনুপাতে বিয়ের সময় যে কাবিন নামা করা হয়ে থাকে, তাতে বেশ কিছু তথ্য সংযোজিত করা হয়ে থাকে। যার নিচে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে স্বাক্ষর করতে হয়।

উক্ত সরকারি কাবিননামার ১৮ ও ১৯ একটি ধারা রয়েছে। যাতে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেবার দিয়েছে কি না? দিলে কী কী শর্তে প্রদান করেছে? এ মর্মে একটি অপশন রয়েছে।

যদি উক্ত প্যারায় স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করে থাকে, তা জেনেশুনে স্বামী উক্ত কাবিন নামার নিচে সাইন করে থাকে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকারপ্রাপ্তা হয়। তখন উপরোক্ত ধারা অনুপাতে স্বামী লিখিত তালাকের শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পাবে।

যদি শর্ত না পাওয়া যায়, কিংবা স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান না করে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পায় না।

উপরোক্ত শরয়ী বিধান অনুপাতে আপনি নিজেই বের করে নিতে পারবেন, তালাক হল কি না?

رَجُلٌ اسْتَكْتَبَ مِنْ رَجُلٍ آخَرَ إلَى امْرَأَتِهِ كِتَابًا بِطَلَاقِهَا وَقَرَأَهُ عَلَى الزَّوْجِ فَأَخَذَهُ وَطَوَاهُ وَخَتَمَ وَكَتَبَ فِي عُنْوَانِهِ وَبَعَثَ بِهِ إلَى امْرَأَتِهِ فَأَتَاهَا الْكِتَابُ وَأَقَرَّ الزَّوْجُ أَنَّهُ كِتَابُهُ فَإِنَّ الطَّلَاقَ يَقَعُ عَلَيْهَا(الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى الطلاق بالكتابة-4/456، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)

وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة .

( قال لها اختاري أو أمرك بيدك ينوي ) تفويض ( الطلاق ) لأنها كناية فلا يعملان بلا نية ( أو طلقي نفسك فلها أن تطلق في مجلس علمها به ) مشافهة أو إخبارا ( وإن طال ) يوما أو أكثر ما لم يوقته ويمضي الوقت قبل علمها ( ما لم تقم ) لتبدل مجلسها حقيقة ( أو ) حكما بأن ( تعمل ما يقطعه ) مما يدل على الإعراض لأنه تمليك فيتوقف على قبول في المجلس لا توكيل ، فلم يصح رجوعه ، حتى لو خيرها ثم حلف أن لا يطلقها فطلقت لم يحنث في الأصح ( لا ) تطلق ( بعده ) أي المجلس ( إلا إذا زاد ) في قوله طلقي نفسك وأخواته ( متى شئت أو متى ما شئت أو إذا شئت أو إذا ما شئت ) فلا يتقيد بالمجلس ( ولم يصح رجوعه ) لما مر (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452


#আহলে হক মিডিয়া

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৬৩৫৮

বিয়ের আগে তালাকের বিধান


২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

কুমিল্লা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৬৭৪০৯

স্ত্রীকে মা বলে ডাকার বিধান


১৩ জুলাই, ২০২৪

ময়মনসিংহ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

২৯৭৬৭

বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হলে সন্তান কার কাছে থাকবে?


১১ মার্চ, ২০২৩

Selangor

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৩৯৬৫৫

তালাক ডিভোর্স


৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মেহেন্দিগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy