আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৯১৫০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নামাজের দুই এবং চার রাকাত শেষ বৈঠকে তাশাহুদের সময় আঙুলের ইশারা করার শুদ্ধ পদ্ধতি কি?,

৩ অক্টোবর, ২০২১

চট্টগ্রাম

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


وعليكم السلام و رحمة الله ،

নামাযী নামাযের মধ্যে যখন মৌখিকভাবে তাওহীদের সাক্ষ্য দেয় তখন তার আঙ্গুলও এই সাক্ষ্য দিবে। এজন্য আত্তাহিয়্যাতু পড়তে পড়তে যখন اشهد ان لا اله পর্যন্ত পৌছবে তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা গোরক বানাবে, এবং শাহাদত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে। আর কনিষ্ঠা ও অনামিকা হাতের তালুর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। “الا الله ” বলার পর শাহাদত আঙ্গুলি নিচু করবে। তবে অন্য আঙ্গুলগুলো আপন অবস্থায় নামাযের শেষ পর্যন্ত থাকবে।
ইশারা শেষ করে আঙ্গুল আর নড়াচড়া করবে না। হযরত আমের বিন আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَعَدَ يَدْعُو وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ وَوَضَعَ إِبْهَامَهُ عَلَى إِصْبَعِهِ الْوُسْطَى وَيُلْقِمُ كَفَّهُ الْيُسْرَى رُكْبَتَهُ

রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতেন,তখন ডান হাতখানা ডান উরুর উপর এবং বাঁ হাতখানা বাঁ উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন এবং বাঁ হাতের তালু [বাঁ] হাঁটুর রাখতেন। )সহীহ মুসলিম হাদীস নং-১৩৩৬,সহীহ ইবনে হিব্বান-৫/২৭০(
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا جَلَسَ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ فَدَعَا بِهَا وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى بَاسِطُهَا عَلَيْهَا

রাসূল সাঃ নামায পড়ার সময় যখন বসতেন বৈঠক করতেন] তখন হাত দুইখানা দুই হাঁটুর উপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী [শাহাদাত] আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৩৭}

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا قَعَدَ فِى التَّشَهُّدِ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَى وَعَقَدَ ثَلاَثَةً وَخَمْسِينَ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ

রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদের জন্য বসতেন, তখন বাম হাতকে রাখতেন বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাতখানা ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর [হাতের তালু ও আঙ্গুলসমূহ গুটিয়ে আরবী] তিপ্পান্ন সংখ্যার মত করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। {সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-১৩৩৮}

উল্লেখিত হাদীসমূহে শুধুমাত্র আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার কথা এসেছে। আঙ্গুল নাড়ানোর কথা আসেনি। কিন্তু আঙ্গুল নাড়বে কি না? এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অন্য হাদীসে তাও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। যেমন- হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ থেকে বর্ণিত।
عن عبد الله بن الزبير أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها

রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদ পড়তেন,তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন, কিন্তু আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না। (সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৯৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৯৮৯, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১৫৯৪)
হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মন্তব্য
১/ ইমাম আব দাউদ উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার পর কোন মন্তব্য করেননি। আর মুহাদ্দিসদের কাছে এটি প্রসিদ্ধ যে, ইমাম আবু দাউদ কোন হাদীস বর্ণনা করার পর তার ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করার মানেই হল, উক্ত হাদীসটি তার কাছে সহীহ।

২/ ইমাম নববী রহঃ বলেন- হাদীসটির সনদ সহীহ। {আলখুলাসা-১/৪২৮, আলমাজমূ-৩/৪৫৪}

৩/ মুহাদ্দিস আব্দুল হক শিবলী রহঃ বলেন- হাদীসটির সনদ সহীহ। {আলআহকামুস সুগরা-২৪৯}

৪/ ইবনে দাকীকুল ঈদ রহঃ বলেন- কতিপয় মুহাদ্দিসদের বক্তব্য অনুপাতে হাদীসটি সহীহ। {আলইলমাম ফি বিআহাদীসিল আহকাম-১/১৭৫}

৫/ আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন রহঃ বলেন- হাদীসটি সহীহ। {খুলাসাতুল বদরুল মুনীর-১/১৩৯, আলবাদরুল মুনীর-৪/১১, তুহফাতুল মুহতাজ-১/৩২৩}

৬/ শায়েখ হায়সামী রহঃ বলেন- সনদের রাবীগণ সিক্বা। {মাযমাউজ জাওয়ায়িদ-২/১৪৩}

৭/ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন- হাদীসটি হাসান। {তাখরীজে মিশকাতুল মাসাবীহ-১/৪১১)

স্বাভাবিক যুক্তিও একথা বলে যে, তাশাহুদের সময় বসে বসে আঙ্গুল নাড়াতে থাকবে না। কারণ এটি নামাযের খুশু খুজুর খেলাফ। তাছাড়া এভাবে আঙ্গুল নাড়াতে থাকলে পাশের জনের নামাযে মনযোগের মাঝে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তাই একটি সুষ্পষ্ট সহীহ হাদীসের উপর আমল ছেড়ে দিয়ে একটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য হাদীসের উপর আন্দাজের উপর আমল করে আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা কোন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৬৬৫৩৫

অন্যের ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণ


৫ জুলাই, ২০২৪

ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭০০১৩৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৪৬৭১৬

জুমার নামাজ কত রাকাত


২৪ নভেম্বর, ২০২৩

Karnataka ৫৬০০৭৬

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

৪৬৭৪৮

দাড়ি রাখার বিধান


২৪ নভেম্বর, ২০২৩

Dhaka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy