আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও সম্মানী দেওয়া যাবে কিনা?

প্রশ্নঃ ২৭৯৮৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, , শেখ আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সাঃ সাহাবায়ে কেরাম রঃ বড় বড় ইমাম উনাকে মাদ্রাসায় শিক্ষা দান ও ইমামতি রাষ্ট্র পরিচালনা করে হাদিয়া তওফা নিতেন না?,

৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

ঢাকা ১২০৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইমামতি করে, মাদরাসায় পড়িয়ে ভাতা বা সম্মানি গ্রহণ করা যাবে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তিনটি শরীয়তের তিনটি মূলনীতি জানা আবশ্যক।

১. মূলনীতি:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনিমত থেকে প্রাপ্ত খুমুস তথা পঞ্চমাংশ থেকে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন।

حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَوْسِ بْنِ الْحَدَثَانِ، قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، يَقُولُ كَانَتْ أَمْوَالُ بَنِي النَّضِيرِ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِمَّا لَمْ يُوجِفِ الْمُسْلِمُونَ عَلَيْهِ بِخَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ وَكَانَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَالِصًا وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَعْزِلُ نَفَقَةَ أَهْلِهِ سَنَةً ثُمَّ يَجْعَلُ مَا بَقِيَ فِي الْكُرَاعِ وَالسِّلاَحِ عُدَّةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَرَوَى سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ مَعْمَرٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ .

১৭২৫। ইবনে আবু ‘উমর (রাহঃ) ... মালিক ইবনে আওস ইবনে হাদছান (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, বনু নাযির থেকে হস্তগত সম্পদ হল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে যে, ‘‘ফায়” প্রদান করেছেন, যার জন্য মুসলিমরা ঘোড়া বা উটে আরোহণ পূর্বক যুদ্ধ করেনি অর্থাৎ বিনা যুদ্ধে যে সম্পদ মুসলিমদের হস্তগত হয়েছিল। এ ছিল বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য। এ থেকে তিনি তাঁর পরিবারের বছরের খোরাক আলাদা করে নিতেন। আর বাদবাকী তিনি ঘোড়া ও অস্ত্র ইত্যাদি আল্লাহর পথে জিহাদের উপকরণ সংগ্রহের জন্য ব্যয় করতেন।
—জামে' তিরমিযী, হাদীস নং ১৭১৯ (আন্তর্জাতিক নং ১৭১৯)
বর্ণনাকারী: উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (মৃত্যু ২৩ হিজরী)

২. মূলনীতি:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদীন বাইতুল মাল থেকে ভাতা গ্রহণ করতেন।

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ لَمَّا اسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ قَالَ لَقَدْ عَلِمَ قَوْمِي أَنَّ حِرْفَتِي لَمْ تَكُنْ تَعْجِزُ عَنْ مَئُونَةِ أَهْلِي، وَشُغِلْتُ بِأَمْرِ الْمُسْلِمِينَ، فَسَيَأْكُلُ آلُ أَبِي بَكْرٍ مِنْ هَذَا الْمَالِ وَيَحْتَرِفُ لِلْمُسْلِمِينَ فِيهِ.

১৯৪০. ইসমাঈল ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ)-কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বললেন, আমার কওম জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ-পোষণে অপর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমি জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবু বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আবু বকর (রাযিঃ) মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবে।

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪০ (আন্তর্জাতিক নং ২০৭০)
বর্ণনাকারী: উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (রাঃ) (মৃত্যু ৫৭/৫৮ হিজরী)

৩. মূলনীতি:
কুরআনুল কারীম শিক্ষা দানে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত ক্বারীদের জন্য খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে বাইতুল মাল থেকে সম্মানজনক ভাতা ধার্য হতো।

عن الوضين بن عطاء أنه قال: (كان بالمدينة ثلاثة معلمين يعلمون الصبيان، فكان عمر بن الخطاب رضي الله عنه يرزق كل واحد منهم خمسة عشر كل شهر)

ابن حزم، المحلى، ج9، ص15.
ابن أبي شيبة، المصنف، ج4، ص346، ك: البيوع والأقضية، ب: في أجر المعلم برقم 20828.

ওয়াযীন ইবনে আতা বর্ণনা করেন; মদিনা তাইয়্যিবাতে ৩০ জন মুআল্লিম (শিক্ষক) ছিলেন, যারা শিশুদেরকে পাঠদান করতেন। হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের প্রত্যেককেই প্রতিমাসে ১৫ দিরহাম করে ভাতা প্রদান করতেন।
—আল মুহাল্লা খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৫,
মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৪/৩৪৬,

উপরোক্ত তিনটি শরঈ মূলনীতির আলোকে প্রমাণ হয় যে, ইমাম ও কুরআনের শিক্ষকদের ভাতা বা সম্মানী শরীয়ত সম্মত।

উল্লেখ্য, যেসব হাদীসে কুরআনের শিক্ষকরা ছাত্রের কাছ থেকে হাদীয়া গ্রহণ করায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে সেগুলো ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
একটি ব্যাখ্যা হল; বাইতুল মাল থেকে শিক্ষকদের জন্য ভাতা ধার্য করার পরেও তারা যদি ছাত্রদের কাছ থেকে হাদিয়ার নামে কিছু নিয়ে থাকে তাহলে সেটি একই কাজের দুইবার পারিশ্রমিক নেওয়ার মতো হয়ে যায়। বিধায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ; কোন স্কুলের শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে যদি বকশিস গ্রহণ করে, প্রধান শিক্ষক এটা শুনলে এটার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলবেন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপনাকে বেতন দেওয়ার পরেও ছাত্রদের কাছ থেকে কেন ঘুষ নিচ্ছেন?

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৪৪৭

কবরস্থানে গিয়েই কি কবর যিয়ারত করতে হবে?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৬৯৪২৮

সন্দেহযুক্ত/ হারাম টাকায় নির্মিত মসজিদে নামাযের বিধান কি?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৮১৬৪

প্রাইভেট মাদরাসায় জুমার জামাত


৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯১৩৮৬

প্রজেক্টর বা ডিজিটাল পর্দার মাধ্যমে বক্তাকে দেখা মহিলাদের কতটুকু শরীয়তসম্মত?


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নওগাঁ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ আল কাউসার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy