আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

পরীক্ষায় অনুরোধভিত্তিক পাশ এবং ন্যায়সঙ্গত পুরস্কার গ্রহণের বিধান কি?

প্রশ্নঃ ১০১১০৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি নবম শ্রেণিতে থাকতে আমার রোল ২ ছিল। আমার অর্ধবার্ষিক পরিক্ষায় একটা সাবজেক্ট আমি আর আমার ১ রোলের বান্ধবী ভাগাভাগি করে পড়তে চেয়েছিলাম কারণ আমি একটু দূর্বল ছিলাম ঐ সাবজেক্টে আর আমার বান্ধবী ও আমাকে আস্বস্থ করেছিলো কিন্তু পরিক্ষার হলে সে আমাকে কোন রেসপন্স ই করেনি। পরে আমার পরিক্ষা যথারীতি খুবই খারাপ হয়। আমার শিক্ষা জীবনে কখনো ফেইল করিনি আর আমার আব্বুর পরিচিতি ভালো থাকায় আমি লজ্জায় আমার ওই সাবজেক্টের শিক্ষক কে অনুরোধ করেছিলাম যাতে আমাকে স্যার পাশ করিয়ে দেয়। পরে স্যার আমাকে পাশ করিয়ে দেন। আমার অন্যান্য সাবজেক্ট পরিক্ষায় ভালো হওয়ায় আমার মার্কস আর আমার বান্ধবীর মার্কস প্রায় কাছাকাছি হয় তবে ওর একটু বেশি হয়।।এরপর বার্ষিক পরিক্ষায় আমি প্রতিটি সাবজেক্ট ওর চেয়ে অনেক ভালো দেই আর আমার মার্কস ওর চেয়ে বেশি হয়। দশম শ্রেণিতে আমার রোল ১ হয়। আর আমাকে স্কুল থেকে ভালো রেজাল্ট কারার জন্য টাকা দেয়।এখন প্রশ্ন হলো আমি আগের বার পাশ না করার জন্য স্যার কে রিকুয়েষ্ট করে যে পাশ করেছিলাম এবং আমার রেজাল্ট ভালো হওয়ার জন্য যে টাকা পেয়েছিলাম এটার মাধ্যমে কি আমি ওর হক নষ্ট করেছি? স্যার আমাকে খুব বেশি মার্ক ও দেন নাই। শুধু পাশ মার্ক দিয়েছিলেন। পরের বার নিজের যোগ্যতায় ই পাশ করেছি এবং ওর চেয়ে অনেক বেশিই মার্কস পেয়েছি। যদি আমি গড় ও করি তবুও আমার মার্কস সামান্য হলেও ওর চেয়ে বেশি হতো। আমার দ্বারা যদি ওর হক নষ্ট হয় তাহলে কি করতে পারি। ওর সাথে কোন যোগাযোগ ও নেই আমার। কোথায় থাকে তাও জানিনা। কি করতে পারি?,

২৯ এপ্রিল, ২০২৫

উমনপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


(ক) পরীক্ষায় অন্যের উপর নির্ভর করা:
পরীক্ষা নিজস্ব যোগ্যতার মূল্যায়ন। ইসলামে অন্যের উপর নির্ভর করে নকল বা অন্যায় সুবিধা নেওয়া হারাম (নিষিদ্ধ)। তবে আপনি বাস্তবে বান্ধবীর কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাননি, কাজেই এখানে সরাসরি কোনো গুনাহ হয়নি।

(খ) স্যারকে অনুরোধ করে পাশ করানো:
শিক্ষক যদি অযথা বাড়তি মার্ক দিতেন, তাহলে সেটা অন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রতি জুলুম (অন্যায়) হতো। তবে আপনি বললেন, শিক্ষক আপনাকে শুধু পাশের ন্যূনতম মার্ক দিয়েছেন, বেশি কিছু দেননি। এমন পরিস্থিতিতে যদি শিক্ষক বাস্তব মূল্যায়ন করেই পাশ করিয়ে থাকেন, তাহলে গুরুতর অন্যায় হয়নি।
তবে, পরীক্ষার প্রকৃত মূল্যায়ন যদি দুর্বল হতো, এবং এই কারণে অন্য কেউ বঞ্চিত হতো, তাহলে এটা অন্যের হক নষ্ট হতো।
এক্ষেত্রে আপনি পরবর্তী পরীক্ষায় (বার্ষিক) নিজের যোগ্যতায় সবার চেয়ে ভালো করেছেন, ফলে পূর্বের ছোট দুর্বলতা পরে পূরণ হয়ে গেছে।

(গ) স্কুল থেকে পুরস্কার পাওয়া:
আপনি যখন নিজের যোগ্যতায় পরবর্তী সময়ে ভালো করেছেন এবং গড় হিসাবেও বান্ধবীর চেয়ে এগিয়ে ছিলেন, তখন পুরস্কার নেওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।
যদি আপনি সম্পূর্ণ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পুরস্কার পেতেন, তখন সেটি হারাম হতো। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে নিজের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে আসার প্রমাণ রয়েছে।


প্রিয় প্রশ্নকারী বোন! উল্লেখিত প্রশ্নে বান্ধবীকে নিয়ে যে কথা বলেছেন তথা তার হক নষ্ট হয়েছে কি না? সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে তার হক নষ্ট হয়নি। তবে বাকিদের হক নষ্ট হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। এজন্য আপনি তাওবা ও ইস্তেগফার করতে পারেন। এবং এ বিষয়কে সামনে রেখে সামান্য কিছু দান-সদাকাহ ও করতে পারেন।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
আবু যর গিফারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল–বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কোন কাজে বাধ্য করা হলে, তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুনানে ইবনে মাজা'
হাদীস নং: ২০৪৩, আন্তর্জাতিক নং: ২০৪৩

আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَاَنۡ لَّیۡسَ لِلۡاِنۡسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی ۙ
আর এই যে, মানুষ নিজের প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য কোন কিছুর (বিনিময় লাভের) হকদার হয় না। সূরা নাজম, আয়াত নং ৩৯।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، . أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ " مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ " . قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي " .
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়া যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকালেন। তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো আদ্র দেখতে পান। তিনি বললেনঃ হে খাদ্যশস্যের মালিক! এটা কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসুল বললেনঃ কেন তুমি ভিজা অংশ খাদ্যশস্যের উপরে রাখনি, যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। যে ব্যক্তি ধোকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ১৮৬আন্তর্জাতিক নং: ১০২

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৯৩৮৪

টাকা দিয়ে মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো কি জায়েয?


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Narayanganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

২৮৮৭০

তাহাররী:কিবলার দিক সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হলে করণীয়


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

Fozu Miar Hat Koruna Nagar Rd

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬১৯০৫

বিয়ের সময় দ্বিতীয় বিয়ে না করার শর্ত দেওয়া!


২২ মে, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy