আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সুন্নি মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আকিদাসমূহ

প্রশ্নঃ ১০৪৯১৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম, মুফতী সাহেব, সুন্নি মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারি আলোচনা করলে ভালো হয়। এবং তাদের কিছু আকিদা সম্পর্কে আলোচনা করলে সঠিক বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে।,

২৯ জুন, ২০২৫

ঢাকা ১২০৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইসলাম এক পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যার আকীদা ও আমল নির্ভর করে কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের বুঝ ও কর্মপন্থার ওপর। এই নিখাদ দ্বীনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচয় হলো—আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আত, যাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীদের পথ অনুসরণে অবিচল ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আজকের সময়ের অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী “সুন্নি” বা “আহলে সুন্নত” এর সম্মানজনক নাম ধারণ করে, অথচ তাদের আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি এবং চিন্তা-চেতনা সুন্নিয়তের মৌলিক ভিত্তির সাথেই সাংঘর্ষিক। এরা নিজেরা নিজেদের 'সুন্নি', 'হানাফি', এমনকি 'আশিকে রাসূল' বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা এক নতুন চিন্তার ধারক—যা মূল সুন্নি মতবাদের কাঠামোকে ধ্বংস করে একধরনের আবেগনির্ভর বিদ‘আত ও গুলতানিতে পরিপূর্ণ পথ নির্মাণ করেছে।
এই শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ও প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী হলো বেরলভী ফেরকা। এরা নবী ﷺ-এর মহব্বতের নামে এমন সব বিশ্বাস ও কর্ম প্রচার করে থাকে, যা ইসলাম ও সাহাবায়ে কেরামের সরলতম আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মাজারপূজা, জীবিত বা মৃত ব্যক্তিকে গায়েবানা জ্ঞানী ও সাহায্যকারী মনে করা, মীলাদ, কিয়াম, ওরস, গাউস-আযমের আহ্বানসহ বহু বিদ‘আতি প্রথা তারা ‘ইসলামি ভালোবাসা’ নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়। এর ফলে সাধারণ মুসলমানেরা বিভ্রান্ত হয়, এবং সুন্নি নামে বিভ্রান্তিকর পথকে ইসলাম ভেবে গ্রহণ করে নেয়।

❖ এই উপমহাদেশে “বেরলভী সুন্নি” কারা? তাদের উৎপত্তী ও ক্রমবিকাশ
বেরলভী ফেরকার সূচনা ঘটে উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে, যখন আহমদ রেজা খান বেরলভী (১৮৫৬–১৯২১) “নবী ﷺ-এর ভালোবাসা” এর নামে এক নতুন ধর্মীয় আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন।
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ— এই উপমহাদেশে "বেরলভী সুন্নি" বা "বেরলভী মক্তবে ফিকর" এমন একটি দল, যারা নিজেদেরকে “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত” বলে দাবি করে। কিন্তু তাদের বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের বহু দিক ইসলামের মূল তাওহীদের আকীদা এবং ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীনের পথনির্দেশনা থেকে স্পষ্ট বিচ্যুতি বহন করে।
এই মতবাদ মূলত আহমদ রেজা খান বেরলভী (১৮৫৬–১৯২১) এর অনুসারী হওয়ার কারণে “ব্রেলভী” নামে পরিচিত। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের ব্রেলি শহরের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি "রসুলপ্রেম" বা "নবীজীর মহব্বত" নামে বহু নতুন নতুন বিষয় ধর্মে সংযোজন করেন,
তিনি ফিকহে হানাফি ও সুফিবাদের কাদরিয়া তরিকার অনুসারী ছিলেন, আর কালামশাস্ত্রে আশ‘আরী-মাতুরিদি মত অনুসরণ করতেন।
তাঁর বিখ্যাত ফতোয়ার সংকলন “ফতাওয়া রজভিয়া” (৩০ খণ্ড) এ তার নিজস্ব মতবাদ এবং তার বিরোধীদের প্রতি কড়া ভাষা ব্যবহৃত করেছেন।
যেগুলোকে ইসলামি বিদ্বানগণ বিদআত, (غلوّ) বাড়াবাড়ি এবং শিরকের কাছাকাছি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

❖ বেরলভী দল কাদের বলা হয়?
এরা সেইসব মানুষ: যারা আহমদ রেজা খান বেরলভীকে“ইমাম আহলে সুন্নাত”, “মুজাদ্দিদে যমান”, এমনকি কখনো কখনো “গাউসে আযম ছানী” পর্যন্ত মনে করে।
যারা মাজার, ওলী, ও পীরপূজারতাকে দ্বীনের অংশ মনে করে।
যারা মিলাদ, ওরস, গিয়ারোই শরীফ, কাওয়ালি, নজর-নিয়াজ, ও নাত খানি ইত্যাদিকে ইবাদতের মর্যাদা দেয়।
যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে ‘আলিমুল গাইব’, ‘নূরের মূর্ত প্রতীক’, ‘হাযির-নাযির’ ও ‘মুখতার-এ-কুল’ (সব কিছুর মালিক) মনে করে।

❖ বেরলভী মতবাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
ভারতীয় উপমহাদেশে “বেরলভীধারা” ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সুফি খানকাহ, দরবার, নাত মাহফিল এবং মিলাদ প্রথার মাধ্যমে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পীরদের দখল ও গদিনশিনদের প্রভাব সমাজে এদের বিস্তার ঘটায়। ধর্মীয় আবেগ উস্কে দিয়ে তারা প্রতিপক্ষদের—“ওহাবী”, “নবীর দুশমন”, ‘‘আহলে বাইতের দুশমন’’, “কাফের” বলে অভিহিত করে থাকেন।

❖বেরলভীদের সংক্ষেপে কিছু ভ্রান্ত আকীদা ও বিশ্বাস:
১. নবী ﷺ "হাযির ও নাযির”
২. নবী ﷺ "গায়েবের জ্ঞান রাখেন”
৩. নবী ﷺ "সত্তাগত নূর"
৪. গাউস, কুতুব, ওলিয়াদের কাছে সাহায্য চাওয়া
৫. মাজারে সিজদা, নজর-নিয়াজ, চাদর চড়ানো
৬. ওরস, গিয়ারোই, চেহলাম, মিলাদ
৭. আহমদ রেজা খানকে অতিমাত্রায় সম্মান
৮. নবী ﷺ-কে “মুখতার-ই-কুল” (সব কিছুর মালিক ও কর্তৃত্বসম্পন্ন) মনে করা
৯. নবী ﷺ-কে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মনে করা
১০. তাওয়াসসুলে (মধ্যস্থতায়) বাড়াবাড়ি
১১. অলী-আউলিয়াকে মৃত বা জীবিত অবস্থায় সাহায্যদাতা ও সমস্যার সমাধানকারী মনে করা
১২. কবরপূজা ও কবরের অতি-সম্মান তাদের প্রচলিত কাজ
১৩. প্রচলীত মিলাদুন্নবী (ঈদে মিলাদ) কে ফরজ মনে করা
১৪. সুফিবাদ ও “ওয়াহদাতুল উজুদ” এর বিশ্বাস
১৫. পীর-পূজা ও শরীয়তবিরোধী অন্ধ অনুসরণ
১৬. ফতাওয়া রজভিয়ার মধ্যে কুফরিপূর্ণ ও চরমপন্থী বক্তব্য
১৭. নবী ﷺ-এর সৃষ্টির পূর্বত্ব (خلقِ محمدی) নবী ﷺ হলেন আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, এবং তাঁকে আল্লাহ নিজের নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন।
এসকল ভ্রান্ত আকিদার খণ্ডনসহ বিস্তারিত জানুন:
https://muslimbangla.com/article/893

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৫৩৭৩

আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেন?


২২ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৪০৭১

কাদের কারণে আল্লাহ পৃথিবী ধ্বংস করেন না?


৩১ অক্টোবর, ২০২২

WW৫V+W২৩

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২১০০৬

নামাজ না পড়লে কি সন্তানকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা যাবে?


১৮ অক্টোবর, ২০২৩

Debidwar

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৪৫২১৫

নমরূদের ঘটনা


৯ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy