নমরূদের ঘটনা
প্রশ্নঃ ৪৫২১৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুসলিম বাংলার হাদিস অংশে সার্চ দিলে নমরূদ ইবনে কিনআন এর নাম আসে। এই কি ইব্রাহিম(আঃ) এর সময়ের নমরূদ? কুরআন ও হাদীসে কি নমরূদ নামটি আছে? নমরূদের ঘটনাটির(টাওয়ার বানানো, আল্লাহর দিকে তীর নিক্ষেপ, মাছের রক্তে দিয়ে তীর ফেরত পাঠানো, চিংড়ি মাছের রক্ত না থাকা, মশা দ্বারা নমরূদকে শাস্তি প্রদান) দলিল সহ কোথায় পাওয়া যাবে? বা এগুলোর সত্যতা আছে কী?,
৯ নভেম্বর, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুহতারাম, আপনি মুসলিম বাংলার যেখানে সার্চ করে নমরূদের নাম পেয়েছেন, সেটি সরাসরি নবীজীর হাদীস হিসেবে উল্লেখিত হয়নি। বরং সেটি একটি মাকতু' তথা তাবেঈর বর্ণনা হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে।
কুরআনে ও হাদীসের কিতাবাদিতে নমরূদের নাম সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায় না। তবে ইসরাঈলী বর্ণনা, ইতিহাসের কিতাবাদি ও অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে হযরত ইবরাহীমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া কাফের বাদশাহের নাম ছিল নমরূদ ইবনে কিনআন। সে ইরাকের বাদশাহ ও খোদা দাবিকারী ছিল।
ইবনে জাওযী রহঃ লিখেন, নমরূদ নামে প্রসিদ্ধ ছয়জন বাদশাহর মধ্যে এই নমরূদ ইবনে কিনআন ছিল সবচে প্রসিদ্ধ ও খোদাদ্রোহী যালিম।
নমরূদ ও তার পরিণতির কথা কুরআন থেকে:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آَتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
তুমি কি ঐ ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইবরাহীমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইবরাহীম বলল, তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবনও দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বলল, আচ্ছা, আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত কর তো! এ কথায় সে কাফের নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ এরূপ যালিমদের হেদায়াত করেন না। (বাকারা ২ : ২৫৮)
তাফসিরে মুফতী তাকী উসমানীঃ
এখানে বাবেলের বাদশাহ নমরূদের কথা বলা হচ্ছে। সে নিজেকে খোদা বলে দাবী করত। তার দাবী ‘আমি জীবন ও মৃত্যু দান করি’-এর অর্থ ছিল, আমি বাদশাহ হওয়ার কারণে যাকে ইচ্ছা করি তার প্রাণনাশ করতে পারি এবং যাকে ইচ্ছা করি মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে ক্ষমা করে দেই ও তাকে মুক্তি দান করি। আর এভাবে আমি তার জীবন দান করি। বলাবাহুল্য, তার এ জবাব মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কেননা আলোচনা জীবন ও মৃত্যুর উপকরণ সম্পর্কে নয়, বরং তার সৃষ্টি সম্পর্কে হচ্ছিল। কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দেখলেন, সে মৃত্যু ও জীবনের সৃষ্টি কাকে বলে সেটাই বুঝতে পারছে না অথবা সে কূটতর্কে লিপ্ত হয়েছে। অগত্যা তিনি এমন একটা কথা বললেন, যার কোনও উত্তর নমরূদের কাছে ছিল না। কিন্তু লা জওয়াব হয়ে যে সত্য কবুল করে নেবে তা নয়; বরং উল্টো সে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে প্রথমে বন্দী করল, তারপর তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিল, যা সূরা আম্বিয়া (২১ : ৬৮-৭১), সূরা আনকাবূত (২৯ : ২৪) ও সূরা সাফফাত (৩৭ : ৯৭)- এ বর্ণিত হয়েছে।
তার ঘটনাবলী যেহেতু সরাসরি হাদীস শরীফে আসেনি এবং তার সবটুকুই ইতিহাস নির্ভর, তাই তার সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত ঘটনাবলীর সবটা প্রমাণিত নয়।
তার ঘটনাবলীর মধ্যে তাফসীর ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের কিতাবাদির বরাতে এটুকু বর্ণনাযোগ্য যে, পৃথিবীতে প্রথম ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী ছিল নমরূদ। সে-ই আল্লাহকে চ্যালেন্জ করে আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ করেছিল। আল্লাহ তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটি মশা পাঠান। সেটি তার নাকে প্রবেশ করে। মশার জ্বালা থেকে বাঁচার জন্য তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হত। তার রাজত্ব ছিল চারশত বছর। সে যেমন দীর্ঘ সময় পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল তেমনি আল্লাহ তাকে দীর্ঘ সময় এই অপমানকর আযাবে নিমজ্জিত রাখেন। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৮৭৮)।
নমরূদের ঘটনার বিবরণে কেবল উপরোল্লেখিত অংশটুকু বর্ণনার অবকাশ আছে। আর এটাও মুফাসসিরগন কেবলমাত্র আল্লাহর সাথে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন ও যালিমের ভয়ানক পরিণতি বুঝানো ও তা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্যই উল্লেখ করেছেন। সাধারণভাবে তা বর্ণনা করেননি।
পক্ষান্তরে "আল্লাহর দিকে তীর নিক্ষেপ, মাছের রক্তে দিয়ে তীর ফেরত পাঠানো, চিংড়ি মাছের রক্ত না থাকা" ইত্যাদী কোনটিই প্রমাণিত নয়, এগুলো বর্ণনা করা যাবে না।
সূত্রঃ
أولا :
النمروذ ، هُوَ كما ذكره أهل التاريخ والتفسير : نمروذ بن كنعان بن ريب بن نمروذ بن كوشى بن نوح ، وَهُوَ أول من ملك الأرض كلها وَهُوَ الَّذِي بنى الصرح ببابل ، وهو الذي حاج إبراهيم عليه السلام في ربه جل وعلا .
فعَنْ مُجَاهِدٍ في قوله تعالى : أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ البقرة:/258، قَالَ : " هُوَ نَمْرُوذُ بْنُ كَنْعَانَ " انتهى من "تفسير مجاهد" (ص: 243).
وعن قتادة قال : " كنا نحدث أنه ملك يقال له نمروذ ، وهو أول ملك تجبر في الأرض ، وهو صاحب الصرح ببابل " انتهى.
وعن الربيع قال : " ذكر لنا أن الذي حاج إبراهيم في ربه كان ملكا يقال له نمروذ ، وهو أول جبار تجبر في الأرض ، وهو صاحب الصرح ببابل " انتهى .
وينظر : "تفسير الطبري" (5/ 431).
ثانيا:
وأما قصة دخول البعوضة في منخره حتى ضُرب بالمطارق ، فقد أخرجها الطبري في "جامع البيان" (14/ 204)، وفي "تاريخ الرسل والملوك" (1/ 287) :
قال : " حدثنا الحسن بن يحيى ، قال : أخبرنا عبد الرزاق ، قال : أخبرنا معمر ، عن زيد بن أسلم : " إن أول جبار كان في الأرض نمرود ، فبعث الله عليه بعوضة فدخلت في منخره ، فمكث أربعمائة سنة يضرب رأسه بالمطارق ، أرحم الناس به من جمع يديه فضرب رأسه بهما ، وكان جبارا أربع مائة سنة ، فعذبه الله أربع مائة سنة كملكه ، ثم أماته الله ، وهو الذي كان بنى صرحًا إلى السماء ، وهو الذي قال الله : ( فأتى الله بنيانهم من القواعد ، فخر عليهم السقف من فوقهم ) [النحل: 26]..." انتهى.
وهو خبر مرسل لا يصح ، وزيد بن أسلم كان في حفظه شيء ، وكان يرسل ويدلس ، مع كونه كان إمامًا صالحًا .
قال حماد بن زيد ، عن عبيد الله بن عمر : " لا أعلم به بأسا ، إلا أنه يفسر برأيه القرآن و يكثر منه " انتهى.
وقال ابن عيينة : " كان زيد بن أسلم رجلا صالحا ، و كان في حفظه شيء " انتهى .
وذكر ابن عبد البر في مقدمة " التمهيد " ما يدل على أنه كان يدلس.
وينظر : "تهذيب التهذيب" (3 /396).
وعليه: فهذا الخبر أقرب للإسرائيليات ، ولم يصح مثل هذا الخبر ولا نحوه عن النبي صلى الله عليه وسلم .
وقد ضعفه الشيخ : محمد صبحي بن حسن حلاق - رحمه الله - في "صحيح وضعيف الطبري" (6/ 204).
ومع هذا فقد تناقل هذا الخبر عامة المفسرين والمؤرخين في كتبهم ، ولعل ذلك كان من باب العبرة بنهاية الظالمين والطغاة ، وأن الظالم مهما طغى وتكبر وتجبر ؛ فإن الله تعالى قادر على هلاكه بأضعف مخلوقاته .
ومثل هذه القصص ، ونحوها من الإسرائيليات: لا حرج في نقلها من باب العبرة والعظة؛ على ألا ينسب إلى رسول الله عليه وسلم إلا ما علم مخرجه، وثبت إسناده .
فعن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ رواه البخاري في صحيحه (3461) .
وينظر جواب السؤال رقم : (221139)، ورقم : (290591) .
والله أعلم
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
১৯৭৬২
২৫ জুন, ২০২২
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
১৯৯৪৩
৩ জুলাই, ২০২২
West Bengal ৭১৩১৪৬

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
১৭৫৩১
২৬ এপ্রিল, ২০২২
ঢাকা ১২১২

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
১৮১৭৪
৮ মে, ২০২২
ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭০০০০৪

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে