ইমাম আবু হানীফা : একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস
প্রশ্নঃ ২২৭৮২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আহলে হাদীসের এক দল এসব ফেৎনা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমার কাছে এসব কিতাব নেই, তাই দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন এসব হাওয়ালা কি সঠিক.?ইমাম আবূ হানিফা’র যঈফ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা!১. মুহাদ্দীস আব্দুল্লাহ ইবনু নুমাইর (মৃ: ১৯৯ হি:)আব্দুল্লাহ ইবনু নুমাইর রহিমাহুল্লাহ বলেন:أدركت الناس ما يكتبون الحديث عن أبي حنيفة فكيف الرأيআমি লোকদের পেয়েছি তারা আবূ হানিফার হাদীস লিখতো না। তার রায় কিভাবে (লেখা সম্ভব)?[আয যুআফা লিল উক্বায়লি ৪/২৮৩, সনদ সহীহ]২. ইমাম বুখারী (মৃ: ২৫৬ হি:):ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ বলেন:كَانَ مُرجِئًا، سَكَتُوا عنه، وعَنْ رَأيِهِ، وعَنْ حديثهআবূ হানিফা মুরজিয়া ছিলেন। তার রায় এবং হাদীস সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম পরিত্যাগ করেছেন।[আত-তারিখুল কাবির ৮/৮১]হাফিয ইরাকী বলেন: ইমাম বুখারীর “সাকাতু আনহু” বলার অর্থ সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম তাকে পরিত্যাগ করেছে। [আর-রফেউত তাকমীল লি আব্দুল হাঈ লাক্ষ্ণৌভী হানাফী পৃ: ১৮২-১৮৩]৩. ইমাম ইবনে হিব্বান (মৃ: ৩৫৪ হি:):ইমাম ইবনে হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন:كَانَ رجلا جدلا ظَاهر الْوَرع لم يكن الحَدِيث صناعته حدث بِمِائَة وَثَلَاثِينَ حَدِيثا مسانيد مَا لَهُ حَدِيث فِي الدُّنْيَا غَيره أَخطَأ مِنْهَا فِي مائَة وَعشْرين حَدِيثا إِمَّا أَن يكون أقلب إِسْنَاده أَو غير مَتنه من حَيْثُ لَا يعلم فَلَمَّا غلب خَطؤُهُ على صَوَابه اسْتحق ترك الِاحْتِجَاج بِهِ فِي الْأَخْبَار وَمن جِهَة أُخْرَى لَا يجوز الِاحْتِجَاج بِهِ لِأَنَّهُ كَانَ دَاعيا إِلَى الإرجاء والداعية إِلَى الْبدع لَا يجوز أَن يحْتَج بِهِ عِنْد أَئِمَّتنَا قاطبة لَا أعلم بَينهم فِيهِ خلافًا على أَن أَئِمَّة الْمُسلمين وَأهل الْوَرع فِي الدَّين فِي جَمِيع الْأَمْصَار وَسَائِر الأقطار جرحوه وأطلقوا عَلَيْهِ الْقدح إِلَّا الْوَاحِد بعد الْوَاحِدআবূ হানিফা ছিলেন একজন তার্কিক, বাহ্যিকতায় তার পরহেযগারিতা ছিল। হাদীছ তার কাজের মধ্যে ছিল না। তিনি ১৩০টি মুসনাদ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। সেগুলো ব্যতীত তার আর কোন হাদীছ দুনিয়াতে নেই। যার মধ্যে ১২০টি হাদীছেই তিনি ভুল করেছেন। হয় সানাদ উল্টিয়ে ফেলেছেন কিংবা না জেনেই মাতন (হাদীছের ভাষ্য) পরিবর্তন করে ফেলেছেন। সুতরাং, যখন তার সঠিকের থেকে ভুলগুলোই বেশী, তখন হাদীছের ক্ষেত্রে তাকে গ্রহণ করার থেকে তাকে পরিত্যাগ করাই উপযোগী। অন্য আরেকটি কারণে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয নেই। কারণ তিনি মুরজিয়া মতের দিকে দাওয়াত দিতেন এবং তিনি বিদ’আতের দিকে দাওয়াত দিতেন। তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করা ঐক্যমতে নাজায়িয। এ ব্যাপারে আমাদের ইমামগণের মধ্যে কোন ইখতিলাফ নেই। এমনকি মুসলিম ইমামগণ ও দ্বীনদ্বারগণ প্রত্যেক দেশে তার প্রতি জারাহ করেছেন।[ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন, ২/৪০৬, রাবী নং ১১২৫]৪. ইমাম ইবনুল জাওযী (মৃ: ৫৯৭ হি:):وبعد هَذَا فاتفق الكل عَلَى الطعن فِيهِএতদসত্ত্বেও প্রত্যেক (মুহাদ্দীস) আবূ হানিফার উপর তিরষ্কার করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।[আল-মুনতাযাম ফী তারিখ ১৩/১৩১।]৫. ইমাম ইবনে আব্দিল বার্র রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৪৬৩ হি:)ইমাম ইবনে আব্দিল বার্র রহ: বলেন:وهو سئ الحفظ عن أهل الحديثমুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট আবূ হানিফা দুর্বল স্মৃতি শক্তির অধিকারী ছিলেন।[তামহীদ লি ইবনে আব্দিল বার্র ১১/৪৮],
৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
২FJP+WV৭
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুহতারাম, আপনি মোট পাঁচটি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
প্রথমে, আবু হানীফা রহঃ একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস ছিলেন এ বিষয়ক আলোচনা করে প্রশ্নের উত্তরে যাবো ইনশাআল্লাহ। দুটি কথাঃ
এক. ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাদীসেরও ‘হাফিয’ ছিলেন।
এটি একটি বাস্তবতা, যার অনেক দলীল আছে। এখানে শুধু একটি বিষয় নিবেদন করছি। তা এই যে, মুসলিম উম্মাহর হাফিযুল হাদীসগণের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার অধিকাংশই এখন মুদ্রিত ও প্রকাশিত। এগুলোর কোনো একটি গ্রন্থ আপনি হাতে নিন। তাতে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর আলোচনা পাবেন। যেমন :
১. তাযকিরাতুল হুফফায, শামসুদ্দীন আযযাহাবী (৭৪৮হি.)
যাহাবী রাহ. এই কিতাবের শুরুতে লিখেছেন-
هذه تذكرة بأسماء مُعَدلي حملة العلم النبوي، ومن يرجَع إلى اجتهادهم في التوثيق والتضعيف والتصحيح والتزييف.
অর্থাৎ এ গ্রন্থে ইলমে নবুওয়াতের ঐ বিশ্বস্ত ধারক-বাহকগণের আলোচনা রয়েছে, যাদের সিদ্ধান্ত ও গবেষণার শরণাপন্ন হতে হয় ছিকা ও যয়ীফ রাবী নির্ণয় এবং সহীহ ও যয়ীফ হাদীস চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে।’
এরপর যাহাবী রাহ. এ গ্রন্থের খন্ড ১ পৃষ্ঠা ১৬৮-এ ইমাম আবু হানীফা রাহ-এর আলোচনা লিখেছেন। আলোচনার শিরোনাম-‘আবু হানীফা আল-ইমামুল আযম’
(أبو حنيفة الإمام الأعظم)
২. আল মুখতাসার ফী তবাকাতি উলামাইল হাদীস, শামসুদ্দীন ইবনু আব্দিল হাদী (৭৪৪হি.)
এর কিছু অংশ মুদ্রিত। এর হস্তলিখিত পান্ডুলিপি জামেয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারায় সংরক্ষিত আছে।
৩. আত তিবয়ান লিবাদীআতিল বায়ান আন মাওতিল আ’য়ান, শামসুদ্দীন ইবনু নাসিরুদ্দীন (৮৪২হি.)
এ গ্রন্থের পান্ডুলিপি মদীনা মুনাওয়ারার ঐতিহাসিক কুতুবখানা মাকতাবা আরিফ হিকমত-এ সংরক্ষিত আছে।
৪. তবাকাতুল হুফফায, জামালুদ্দীন ইবনুল মিবরাদ (৯০৯হি.)
এ কিতাব থেকে মুহাদ্দিস আবদুল লতীফ সিদ্দিকী রাহ. ‘‘যাববু যুবাবাতিদ দিরাসাত আনিল মাযাহিবিল আরবাআতিল মুতানাসিবাত’’ গ্রন্থে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর আলোচনা উদ্ধৃত করেছেন।
৫. ‘‘তবাকাতুল হুফফায’’, জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. (৯১১হি.)
৬. ‘‘তারাজিমুল হুফফায’’, মুহাম্মাদ ইবনে রুসতম আল হারিছি আলবাদাখশী
এ গ্রন্থের পান্ডুলিপি নদওয়াতুল উলামা লাখনৌতে রয়েছে। এই পুরো আলোচনার জন্য হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নু’মানী রাহ.-এর কিতাব ‘‘মাকানাতুল ইমামি আবী হানীফাতা ফিল হাদীস’’ (পৃ. ৫৮-৬৮) পাঠ করুন। ওখানে আরো তথ্য রয়েছে। উপরোক্ত তথ্যগুলোও ওখান থেকে নেওয়া হয়েছে ।
দুই. ইমাম আবু হানীফা ‘হাফিযুল হাদীস’ হওয়া একটি সহজ সত্য
দ্বিতীয় যে বিষয়ে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি তা এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ‘সুন্নতে মুতাওয়ারাছা’ এবং হাদীস ও আছারের হাফিয হওয়া এমন এক সহজ স্বাভাবিক বাস্তবতা, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কারণ ঐতিহাসিক সত্য এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ফিকহ ও ফতোয়ার প্রথম সংকলক। আর এ তো বলাই বাহুল্য যে, শরীয়তের এই সকল বিধান তিনি ফিকহের কিতাব থেকে সংকলন করেননি। কারণ ফিকহের প্রথম সংকলকই তো তিনি। তাহলে এই সকল বিধান তিনি কোথা থেকে সংকলন করেছেন? নিশ্চয়ই সুন্নতে মুতাওয়ারাছা, আছারে সাহাবা ও ফতওয়ায়ে তাবেয়ীন থেকে। তাহলে তাঁর উপরোক্ত সকল বিষয়ের হাফিয হওয়া দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।
এখানে ঐ ঘটনাটি উল্লেখ করা সমীচীন মনে হচ্ছে, যা মুয়াফফাক আলমক্কী রাহ. (৫৬৪ হি.) ‘মানাকিবু আবী হানীফা’’ গ্রন্থে (খন্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২) আবু ইসমা সা’দ ইবনে মুয়ায রাহ.-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি আবু সুলায়মান জুযাজানী থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. থেকে, আর তিনি ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু ইউসুফ বলেন-
كنا نكلم أبا حنيفة في باب من أبواب العلم، فإذا قال بقول واتفق عليه أصحابه درت على مشايخ الكوفة هل أجد في تقوية قوله حديثا أو أثرا؟ فربما وجدت الحديثين أو الثلاثة فآتيه بها، فمنها ما يقبله ومنها ما يرده، فيقول : هذا ليس بصحيح أوليس بمعروف، وهو موافق لقوله! فأقول له : وما علمك بذلك؟ فيقول : أنا عالم بعلم الكوفة.
‘আমরা আবু হানীফা রাহ.-এর সাথে একটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতাম। এরপর যখন তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন এবং তার সঙ্গীরাও একমত হতেন তখন আমি কুফার শায়েখগণের কাছে যেতাম তার সিদ্ধান্তের সমর্থনে আরো কোনো হাদীস বা আছর পাই কিনা। কখনো দুইটি বা তিনটি হাদীস পেতাম। তাঁর কাছে পেশ করার পর তিনি কোনোটি গ্রহণ করতেন আবার কোনোটি এই বলে বর্জন করতেন যে, এটি সহীহ নয় বা মারুফ নয়। অথচ তা তার সিদ্ধান্তের অনুকূলে। আমি বলতাম, এ সম্পর্কে আপনার ইলম কীরূপ। তিনি বলতেন, আমি কূফা নগরীর ইলমের ধারক।
এই ঘটনা বর্ণনা করার পর আবু ইসমা যা বলেছেন তার সারকথা এই যে, ‘ইমাম রাহ. সত্য বলেছেন। সত্যি তিনি ছিলেন কুফার মনীষীগণের কাছে সংরক্ষিত ইলমের ধারক। শুধু তাই নয় (হাদীস আছার এবং কুরআন-সুন্নাহর) অন্যান্য শহরের অধিকাংশ ইলমেরও তিনি ধারক ছিলেন। এর প্রমাণ পেতে চাইলে তাঁর কিতাবসমূহ দেখ, তাঁর সঙ্গীদের কাছে সংরক্ষিত তাঁর বর্ণনাসমূহ দেখ, কিতাবুস সালাত থেকে শুরু করে এক একটি অধ্যায় এবং প্রতি অধ্যায়ের এক একটি মাসআলা পাঠ করতে থাক, তাহলেই দেখতে পাবে, কীভাবে তিনি হাদীস ভিত্তিক জবাব দিয়ে চলেছেন এবং চিন্তা কর, হাদীস ও সালাফের আছারের সাথে তার জবাবসমূহ কত সামঞ্জস্যপূর্ণ।’’
আপনার প্রশ্নের উত্তরঃ
১- এ উক্তিটি ইবনে নুমাইর রহঃ এর যা উকাইলী তার যুআফা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
প্রথমতঃ আবু হানীফা কে যুআফা তে উল্লেখের কারণে উকাইলী হাদীস বিশারদদের নিকট কঠোর সমালোচিত হয়েছেন এবং আবু হানীফার ব্যাপারে তার কোন জরাহই গ্রহণযোগ্য নয় হাদীস বিশারদদের কাছে।
এজন্য হাফিয যাহাবী-ইবনে হাজার সহ অনেক আসমাউর রিজাল বিশেষজ্ঞ তাদের ছিকাহ ও হুফফাযুল হাদীস বিষয়ক কিতাবে আবু হানীফাকে হাদীসের হাফিয-ছিকাহ উল্লেখ করেছেন এবং উম্মাহকে এ বার্তা দিয়েছেন যে, আবু হানীফা মোটেও যঈফ নন বরং তিনি তো হুফফাযদের ইমাম এবং উকাইলী ও খতীবের তাআসসুব ও বাড়াবাড়ি র ব্যপারেও সতর্ক করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ কথাটি পরস্পর বিরোধী।
বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, মানুষ আবু হানীফা থেকে হাদীস নিতো না। অথচ উক্তিকারী ইবনে নুমাইর রহঃ সরাসরি ইমামের ছাত্র এবং নিজেই আবু হানীফা থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব ??
আবু হানীফা থেকে তার কিছু বর্ণনাঃ
مصنف ابن أبي شيبة (عوامة) (6/ 221)
9434- حدثنا عبد الله بن نمير ، عن أبي حنيفة ، عن حماد ، عن إبراهيم ؛ في الحائض تطهر فلا تأكل شيئا ، كراهة أن تشبه المشركين إلى الليل.
مصنف ابن أبي شيبة (عوامة) (9/ 634)
18685- حدثنا ابن نمير ، عن أبي حنيفة ، عن حماد ، عن إبراهيم ، قال : اللعان تطليقة بائنة.
مصنف ابن أبي شيبة (عوامة) (14/ 95)
27562- حدثنا ابن نمير ، عن أبي حنيفة ، عن حماد ، عن إبراهيم ، قال : أصابع اليدين والرجلين سواء.
যা থেকে বুঝে আসে,
১- সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বড় বড় মুহাদ্দিস তার থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন, স্বয়ং ইবনে নুমাইরও।
২- তিনি একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস ছিলেন এবং প্রশ্নোক্ত উক্তি সঠিক নয়।
৩- ইবনে নুমাইরের কথা স্ববিরোধী। হতে পারে, প্রথম জীবনে ইমামকে না জানার দরুন ওরকম বলেছেন কিন্ত পরে তার শিষ্যত্ব বরণ করে হাদীস বর্ণনা করে উক্ত বক্তব্যকে অসাড় প্রমাণিত করেছেন।
আল্লামা যাহিদ কাউসারী তা'নীবে সবিস্তারে লিখেছেন।
أقول: يوجد بين الرواةمن لا حظ ّ له من الفقه، و لا تمييز عنده بين الرأي المذموم و الرأي الممدوح، فيزهد في رواية
الرأي و رواية أحاديث أهل الرأي الفقهاء مطلقا، لا رغبة هؤلاء في رأيهم و حديثهم تزيدهم شيئا، و لا زهدهم في هذا
و لا ذاك ينقصهم شيئا.
فماذا على أبي حنيفة من عمل هؤلاء الرواة؟ و كفاء الذين تلقوا منه الفقه و الحديث، و قد ملأوا ما بين الخافقين
علما، حتى فماذا على أبي حنيفة من عمل هؤلاء الرواة؟ و كفاء الذين تلقوا منه الفقه و الحديث، و قد ملأوا ما بين
الخافقين علما، حتى إن ابن حجر المكي يقر في (مناقب أبي حنيفة)، بأنه لم يتفق لأحد من الأئمة ما اتفق لأبي
حنيفة من كثرة الأصحاب، و انتشار العلم في الآفاق.
راجع (تهذيب الكمال) لأبي الحجاج المزي، لتعلم من هم أصحابه الذين رووا عنه و قارن بين هؤلاء و بين هذا
القائل، لينجلي لك الفرق بينه و بينهم.
على أن ابن نمير نفسه من الراوين عنه، و المثنين عليه، حتى إن ابن أبي شيبة يروي عن ابن نمير، عن أبي حنيفة
حديثا في اللعان، و رأيا فيه و السند كالجبل.
২য় প্রশ্নের উত্তরঃ
তিনটি পর্যালোচনাঃ
🎇_______প্রথম পর্যালোচনা_________🎇
.
ইমাম বুখারী বলেছেন, মুহাদ্দিসগণ আবু হানিফা সম্পর্কে নিরব ছিলেন এবং প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ হিসাবে উল্লেখ্য করেছেন, তিনি “মুরজিয়া” ছিলেন। ইমাম বুখারী আবু হানিফার এ একটি মাত্র ত্রুটিই পেয়েছেন। এর বাহিরে আর কোন ত্রুটির কথা তিনি বলতে পারেননি। এতে বুঝা যায় এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আবু হানিফা সম্পর্কে জারহ করেছেন।
.
.
#প্রথমতঃ এই সম্পর্কে আমরা বলবো মুরজিয়া হওয়ার কারণে কোনো মুহাদ্দিস দুর্বল বা পরিত্যক্ত হন না। নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিগত সততা ও বর্ণিত হাদীসের নির্ভূলতা প্রমাণ করা মুহাদ্দিসের গ্রহণযোগ্যতার মূল ভিত্তি।
.
#দ্বিতীয়তঃ ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে অনেক মুরজিয়া, কাদারিয়া ও খারিজী মুহাদ্দিসগের হাদীস সংকলন করেছেন।
যেমন:-
১। কায়েস ইবনে মুসলিম জাদালী (মৃ. ১২০ হি.)। সে হলো মুরজিয়া। তার হাদীস ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। বুখারী শরীফ: ৪৫, ১৫৫৯, ১৫৬৫, ১৭২৪, ১৭৯৫, ২০০৫ নং হাদীসসহ আরো অনেক হাদীস। সে মুরজিয়া হওয়ার অপরাধে কেউ তাকে পরিত্যক্ত বলেননি। এমনকি ইমাম বুখারীও নয়।
👇
২। আইউব ইবনে আয়েজ হলো মুরজিয়া। স্বয়ং ইমাম বুখারী তাকে মুরজিয়া বলেছেন। আয-যুয়াফা উস-সাগীর: ১৮পৃ.। ইমাম বুখারী তাকে মুরজিয়া হওয়ার অপরাধে পরিত্যক্ত বলেননি। বরং তার হাদীস তিনি তার সহীহ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। বুখারী শরীফ: ৪৩৪৬ নং হাদীস।
👇
৩। আতা ইবনে মাইমুনা হলো কাদারিয়া। ইমাম বুখারী বলেন, সে কাদারিয়া। আয-যুয়াফা উস সাগীর: ৮৯ পৃ.।
ইমাম বুখারী তাকে কাদারিয়া হওয়ার অপরাধে পরিত্যক্ত বলেননি। রবং তার হাদীস তিনি তার সহীহ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। সহীহ বুখারী: ১৫০, ১৫১, ১৫২, ২১৭, ৫০০, ৬১৯২ নং হাদীস।
👇
৪। ইমরান ইবনে হিত্তানের ন্যায় খারিজী রবং শীর্ষ খারেজী নেতার বর্ণিত হাদীসও ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে সংকলন করেছেন।
ইমাম যাহাবী বলেন, ﻣﻦ ﺭﺅﻭﺱ ﺍﻟﺨﻮﺍﺭﺝ
ইমরান শীর্ষ খারেজীদের অন্যতম। সিয়ারু আলামিন নুবালা:৫/১২১।
.
ইমাম বুখারী এই খারেজী লিডার ইমরান ইবনে হিত্তান এর দুটি হাদীস সংলকল করেছেন। সহীহ বুখারী: ৫৮৩৫, ৫৯৫২ নং হাদীস।
.
এ ইমরান সেই, যে আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (রা:) এর ঘাতক/হত্যাকারী খারেজী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের ন্যায় বদবখতের শোকগাথা লিখেছেন। তারীখুল ইসলাম বাশার: ২/৯৮১।
.
🌻তাছাড়া ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীতে আরো বহু মুরজিয়ার হাদীস সংকলন করেছেন।
⛳ বসরার তাবিয়ী তালক ইবনে হাবীব আল-আনাযী ৯০ হি.),
⛳ কুফার তাবিয়ী যার্র ইবনে আব্দুল্লাহ মুরহাবী (১০০ হি.),
⛳ বুফার তাবিয়ী আমর ইবনে মুররা জামালী (১২৮ হি.)
⛳ হাররানের তাবিয়ী সালিম ইবনে আজলান আল-আফতাস (১৩৫ হি.)
⛳ ও কুফার তাবিয়ী উমার ইবনে র্যুর ইবনে আব্দুল্লাহ (১৫৩ হি.)।
👇
এমন বহু মুরজিয়া, কাদারিয়া বর্ণনাকারী হাদীস তিনি তার সহীহ বুখারীতে সংকলন করেছেন। এমনকি ইমাম বুখারীর অনেক উস্তাদ মুরজিয়া ছিল।
👇
মুরজিয়া হওয়ার কারণে কোন মুহাদ্দিসকে তিনি পরিত্যক্ত কলেননি। বরং বহু মুরজিয়ার হাদীসও তিনি সংকলন করেছেন। কিন্তু মুরজিয়ার কারণে ইমাম ইমাম আবু হানিফাকে তিনি পরিত্যক্ত সাব্যস্ত করেছেন।
👇
এই ক্ষেত্রে বুখারী আবু হানিফার প্রতি ইনসাফ করতে পারেননি। এতে আবু হানিফা রাহ. বিষয়ে বুখারীর রাহ. জারহ অগ্রহনযোগ্য।
🍂ইমাম বুখারী আবু হানিফাকে মুরজিয়া বলেছেন। ইমাম বুখারীর এই তথ্যও ভূল। কারণ স্বয়ং আবু হানিফা মুরজিয়াদের বিরুদ্ধে স্বীয় গ্রন্থ (আল-ফিকহুল আকবার:১/৪৫-৪৯) এর আলোচনা করেছেন।
যিনি মুরজিয়াদের বিরুদ্ধে কলম ধরেণ তার বিরুদ্ধে মুরজিয়া হওয়ার অভযিাগ কতটা হাস্যকর তা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা।
.
.
🎇______দ্বিতীয় পর্যালোচনা______🎇
ইমাম আবু হানিফার বিরুদ্ধে ‘মুরজিয়া’ কথা প্রয়োগ এর কারণ এ ছিলো যে, অনেকেই বলে থাকে যে আবু হানিফা বলেছেন, কুরআন মাখলূক। যেমন ইমাম বুখারী তার তারীখুল কাবীর গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন, হাম্মাদ ইবনে সুলাইমান বলেন, আবু হানিফা বলেন: কুরআন মাখলুক (সৃষ্ট)। বুখারীর তারীখুল কাবীর: ৪/১২৭, ২১৯৮ নং রাবীর আলোচনা।
.
কিন্তু এটি তো আবু হানিফার নামে জাল করা হয়েছে। এর সনদে দিরার ইবনে সুরাদ আবু নুয়াইম। তিনি বড় বুজুর্গ । কিন্তু মিথ্যাবাদীও বটে।
ইমাম ইবনে মাঈন বলেন,
ﺑﺎﻟﻜﻮﻓﺔ ﻛﺬﺃﺑﺎﻥ، ﺃﺑﻮ ﻧﻌﻴﻢ ﺍﻟﻨﺨﻌﻲ، ﻭﺃﺑﻮ ﻧﻌﻴﻢ ﺿﺮﺍﺭ ﺑﻦ ﺻﺮﺩ
কুফার দুজন মহা-মিথ্যাবাদী আছে: একজন আবু নু’য়াঈম আন-নাখায়ী, অন্যজন আবু নু’য়াঈম দিরার ইবনে সুরাদ। তাহযীবুল কামাল: ১৩/৩০৫।
.
উক্ত কাহিনী দিরার ইবনে সুরাদ থেকে ইমামা বুখারী বর্ণনা করেছেন।
.
ইমাম বুখারীই তাকে ﻣﺘﺮﻭﻙ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ পরিত্যক্ত হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন। তাহযীবুল কামাল: ১৩/৩০৫।
.
সুতরাং আবু হানিফা কুরআনকে মাখলূক বলেননি। বরং তিনি বলেছেন, কুরআন গাইরে মাখলূক। আবু হানিফার স্বীয় গ্রন্থ ‘আল-ফিকহুল আকবার”রে বলেন, যে বলবে কুরআন মাখলূক (সৃষ্ট) সে কাফের। কুরআন আল্লাহ তা’য়ালার কালাম।
.
আলোচনার শেষে বলেন, ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻏﻴﺮ ﻣﺨﻠﻮﻕ
কুরআন গাইরে মাখলূল (সৃষ্ট নয়)। আল-ফিকহুল আবকার: ২০-২৬ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল ফুরকান, আল ইমারাত আল আরাবিইয়াহ-প্রথম প্রকাশ ১৪১৯ হি.।
.
এমনটি যারা বলেন, ইমাম আবু হানিফা বলেছেন, কুরআন মাখলূক। তাদের এই দাবী খণ্ডন করতে গিয়ে
🌻ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, ইমাম আবু হানিফা থেকে এটি প্রমাণিত নয়- ﻟﻢ ﻳﺼﺢ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﺃﻥ ﺃﺑﺎ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ : ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻣﺨﻠﻮﻕ
আমাদের নিকটে এটি প্রমাণিত নয় যে, আবু হানিফা (আল্লাহ তার উপর রহমত করুন) বলেছেন কুরআন মাখলূক। তারীখে বাগদাদী: ১৫/৫১৭। শাইখ বাশার আওয়াদ মারুফ বলেছেন এর সনদ সহীহ।
.
🌻তাছাড়া সুফিয়ান সাওরী ও আবু হানিফা রাহ. উভয়ে বলেন, ﺍﻟﻘرﺍﻥ ﻛﻼﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﻏﻴﺮ ﻣﺨﻠﻮﻕ
(তারা উভয়ে বলেন) কুরআন আল্লাহর কালাম (কথা), মাখলূক নয়। তারীখে বাগদাদী: ১৫/৫১৬-৫১৭।
.
শাইখ বাশার আওয়াদ মারুফ বলেন, এর সনদ হাসান। তাই ইমাম আবু হানিফাকে মুরজিয়া সাব্যস্ত করা সঠিক নয়। বরং ভূল তথ্য।
.
তাছাড়া শীয়ারাও আহলুস সুন্নাহ কে ঢালাও ভাবে মুরজিয়া বলতেন। শীয়া ধর্মমতে আলী (রা:) সাহাবীগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। যেহেতু আহলুস সুন্নাত তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ না বলে চতুর্থ শ্রেষ্ঠ বলেন, অর্থাৎ তাকে আবু বকর, উমার, ও উসমান রা: এর পরে স্থান দেন সেহেতু তারা ‘মুরজিয়া’ তথা আলী রা: এর মর্যাদা বিলম্বিতকারী। আবু হানিফা হলেন আহলুস সুন্নাহ এর ইমাম। তাই তাকে তারা মুরজিয়া তথা বিলম্বিতকারী বা আলী রা: এর মর্যাদা বিলম্বিতকারী আখ্যায়িত করে থাকে।
.
🌻ইমাম শাহরস্তানী বলেন, ﻛﺎﻥ ﻳﻘﺎﻝ ﻷﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﻣﺮﺟﺌﺔ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻋﺪﻩ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻤﻘﺎﻻﺕ ﻣﻦ ﺟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻤﺮﺟﺌﺔ ﻭﻟﻌﻞ ﺍﻟﺴﺒﺐ ﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻟﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ : ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻫﻮ ﺍﻟﺘﺼﺪﻳﻖ ﺑﺎﻟﻘﻠﺐ ﻭﻫﻮ ﻻ ﻳﺰﻳﺪ ﻭﻻ ﻳﻨﻘﺺ ﻇﻨﻮﺍ ﺃﻧﻪ ﻳﺆﺧﺮ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻋﻦ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ ﻣﻊ ﺗﺠﺮﺩﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻤﻞ ( ﺗﺒﺤﺮﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻠﻢ ) ﻛﻴﻒ ﻳﻔﺘﻲ ﺑﺘﺮﻙ ﺍﻟﻌﻤﻞ . ﻭﻟﻪ ﺳﺒﺐ ﺁﺧﺮ ﻭﻫﻮ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺨﺎﻟﻒ ﺍﻟﻘﺪﺭﻳﺔ ﻭﺍﻟﻤﻌﺘﺰﻟﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻇﻬﺮﻭﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺪﺭ ﺍﻷﻭﻝ . ﻭﺍﻟﻤﻌﺘﺰﻟﺔ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻠﻘﺒﻮﻥ ﻛﻞ ﻣﻦ ﺧﺎﻟﻔﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻣﺮﺟﺌﺎ ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺍﻟﻮﻋﻴﺪﻳﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻮﺍﺭﺝ . ﻓﻼ ﻳﺒﻌﺪ ﺃﻥ ﺍﻟﻠﻘﺐ ﺇﻧﻤﺎ ﻟﺰﻣﻪ ﻣﻦ ﻓﺮﻳﻘﻲ ﺍﻟﻤﻌﺘﺰﻟﺔ ﻭﺍﻟﺨﻮﺍﺭﺝ ...
.
আবু হানিফা ও তার সাথীদেরকে সুন্নী মুরজিয়া বলা হতো। অনেক লেখক তাক মূল মুরজিয়াদের অন্তর্ভূক্ত করে উল্লেখ করেছেন। সম্ভবত এর কারণ যে, তিনি বলতেন: ইমান হলো অন্তরের বিশ্বাস এবং ইমানের হ্রাসবৃদ্ধি হয় না। এজন্য তারা ধারণা করেছেন যে, তিনি আমলকে ইমান থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। যে মানুষ এত গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, এত বেশি আমল করতেন তিনি কিভাবে আমল বর্জনের ফাতওয়া দিতে পারেন!? এর অন্য একটি কারণ রয়েছে।
.
প্রথম যুগে (তার যুগে) প্রকাশিত কাদারিয়া ও মুতাযিলীদের তিনি বিরুধীতা করতেন। আর কাদারিয়া মতের বিষয়ে যারাই মুতাযিলীদের বিরুধীতা করত তাদের সকলকেই মুরজিয়া বলত। খারিজীগণও তাই করত। এজন্য খুবই সম্ভব যে, মুরজিয়া আখ্যাটি ইমাম আবু হানিফা মুতাযিলী ও খারিজীগণ থেকেই পেয়েছেন।...।
[শাহররাসতানী, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল: ১/১৪০-‘১৪২; আর-রাফউ ওয়াত তাকমীল: ৩৫২-৩৬২।[
.
ইমাম আবু হানিফাকে মুতাযিলী, খারিজী শীয়ারা মুরজিয়া আখ্যায়িত করতেন। এ থেকে অনেকে আবু হানিফা কে মূল মুরজিয়া সাব্যস্ত করেছেন। এই বিভ্রান্তিতে ইমাম বুখারীও পতিত হয়ে তিনি আবু হানিফাকে মুরজিয়া সব্যস্ত করেছেন।
.
🍂আরবের হাইয়াতে কিবারে উলামার সম্মানিত মুরুব্বি প্রখ্যাত আলেম
🌻 শাইখ সালেহ আল-ফাওযানকে আবু হানিফা মুরজিয়া হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্ট ভাষায় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবং বলেছেন আবু হানিফা হলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমাম।
.
মুরজিয়াগণ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়। শাইখ এর বক্তব্য দেখুন:- https://www.youtube.com/watch?v=zC2qOsfFigQ
.
.
🎇_____ ৩য় পর্যালোচনা_________🎇
তাছাড়া ইমাম আবু হানিফার প্রতি ইমাম বুখারীর বিদ্ধেষও অনেকটা কাজ করেছে। যেমন: ইমাম বুখারী ইমাম আবু ইউসুফ এর আলোচনায় বলেন, ﻳﻌﻘﻮﺏ ﺑﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ، ﺃﺑﻮ ﻳﻮﺳﻒ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ . ﻭﺻﺎﺣﺒﻪ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺗﺮﻛﻮﻩ
ইয়াকুব ইবনে ইব্রাহীম আবু ইউসুফ কাযী... তার সাথী আবু হানিফাকে (মুহাদ্দিসগণ) পরিত্যগ করেছেন। তারীখুল কাবীর: ৮/৩৯৭।
.
ইমাম বুখারী ইমাম আবু হানিফার আলোচনায় আবু হানিফাকে জারহ করেছেন। এতেই তিনি তৃপ্ত হতে পারেননি। বরং এতটাই বিদ্ধেষ কাজ করেছে যে, ইমাম আবু ইউসুফের আলোচনায় তার আলোচনা বাদ দিয়ে আবু হানিফাকে আবার জারহ করে বসলেন।
.
ইমাম বুখারী জারহ করেছেন শুধু মুরজিয়া হওয়ার অপরাধে। অথচ মুরজিয়া হওয়া এটি কোন জারহ নয়।
.
কিন্তু বুখারী কোন মুরজিয়াকে মুরজিয়া হওয়ার অপরাধে প্রত্যাখ্যান করেননি। বরং বহু মুরজিয়ার হাদীস তিনি সংকলন করেছেন। কিন্তু যত সব সমস্যা আবু হানিফার মুরজিয়া হওয়া নিয়ে। আর আবু হানিফা যে মুরজিয়া নয় বরং মুরজিয়াদের বিরুধী তা আমরা পিছনে অবগত হয়েছি।
.
তাহলে ইমাম বুখারীর জারহ এর উদ্দেশ্য কী..? অবশ্যই বিভ্রান্তিরক বিদ্ধেষের বহিঃপ্রকাশ।
.
ইমাম বুখারীর দিকপাল উস্তাদ নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ এর অপপ্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে ইমাম আবু হানিফার প্রতি তিনি অত্যন্ত বিরুপ ধারণা পোষণ করতেন। তাছাড়া ইমাম বুখারীর আরেক উস্তাদ ইমাম হুমাইদী ছিলেন জাহিরি সম্প্রদায় যা আবু হানিফার বংশের বিরুধী।
.
সম্ভবত এর প্রভাবও কিছুটা কাজ করেছে। তার বক্তব্য তার মনের এ গভীর বিরক্তি ও আপত্তি প্রকাশ পেয়েছে। নিরপেক্ষ জ্ঞানবৃত্তিক বিচারে ইমাম বুখারীর কথা মোটেও ঠিক নয়। ইমাম আবু হানিফা মুরজিয়া নয়। বরং তিনি মুরজিয়া বিরুধী ছিলেন।
তাই ইমাম বুখারীর আপত্তি হাওয়ায় মিটিয়ে গেছে।
.
🎇 আর প্রায় সকল ইমাম সম্পর্কে কেউ না কেউ জারহ করেছেন।
❌ইমাম মালেককে ইবনে আবী জীব এবং
❌ইমাম শাফেয়ীকে ইবনে মাঈন জারহ করেছেন।
.
❌ইমাম তকিউদ্দীন সুবূকী-এর কাইদাতুন ফিল জারহি ওয়াত তা’দীল। ইবনে খাল্লিকান #ইমাম_মুসলিমকে জাহমিয়া বলেছেন।
.
❌ইবনে হাজম ইমাম তিরমিযীকে ﻣﺠﮭﻮﻝ অজ্ঞাত বলেছেন। মিযান: ৩/৬৭৮, ৮০৩৫ নং রাবী।
.
❌আবু হাতেম ও আবু জুরয়া ইমাম বুখারী থেকে হাদীস সংগ্রহ করা পরিত্যাগ করেছেন। আল জারহ ওয়াত তাদীল: ৭/১৯১।
❌ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম জুহালী #ইমাম_বুখারীকে মু’তাযিলা, কাফির ইত্যাদি বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং মুসলমাদের কবরস্থানে ইমাম বুখারীকে কবর দিতে নিষেধ করেছেন। তাকে পরিত্যাগযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন। সিয়ার: (বাশার আওয়াদ মারুফ তাহকীককৃত): ১২/৪৫৬, ২১৩৪ নং রাবী।
.
কিন্তু মুসলিম উম্মাহ এ সমস্ত মাতলামিপূর্ণ কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি। কেননা, এ সমস্ত বাজে কথা গ্রহণ করলে তাদের হাদীস গ্রহণ করা যেতো?
.
যাই হোক, আমরা এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উল্লেখ করব। ইমাম বুখারী বলেছেন, ইমাম আবু হানিফাকে সকল মুহাদ্দিস পরিত্যাগ করেছেন। যদিও কথাটি সঠিক নয়, কারণ সকল মুহাদ্দিস তাকে পরিত্যাগ করেননি।
.
আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস ইমাম সুফিয়ান সাওরী, ইবনে উইয়াইনাহ, ইমাম ওয়াকি, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক,ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-কাত্তান, মাক্কী বিন ইব্রাহীম, ওয়ালিদ ইবনে মুসলিম, আবু ইউসুফ সহ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস তার থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন।
.
এদের অধিকাংশ কেউ বুখারীর উস্তাদ, আবার কেউ উস্তাদের উস্তাদ আবার কেউ দাদা উস্তাদের উস্তাদ। তাহলে কে পরিত্যাগ করেছেন? কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে ইমাম বুখারীও আবু হনিফাকে পরিত্যাগ করতে পারেননি। বরং তার বর্ণনা রেওয়ায়াত করেছেন।
ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﻮﺳﻰ ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻋﻮﺍﻧﺔ ﻋﻦ ﻣﻐﻴﺮﺓ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﻨﻴﻔﺔ
(ইমাম বুখারী) তিনি মুসা থেকে, তিনি আবু আওয়ানা থেকে,তিনি মুগীরা থেকে, তিনি আবু হানিফা থেকে। বুখারীর, তারীখুল আওসাত: ১/১০৫, ৪৩৬ নং রর্ণনা।
আল্লাহ তা’য়ালা তার নিরপরাদ-মজলুম ও প্রিয় বান্দাদেরকে এভাবেই অপবাদকৃত দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত করে থাকনে। ইমাম বুখারীই যখন আবু হানিফার বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। তখন ইমাম বুখারীর ভুল তথ্য ভিক্তিক জারহ বা সমালোচনা বাতিল হয়ে গেছে।
তাছাড়া আবু হানিফা তো আগেই উল্লেখিত (মুরজিয়া হওয়ার) অভিযোগ থেকে মুক্ত প্রমাণিত হয়েছিলেন। ফালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহ তা’য়ালা যাকে ইজ্জত দান করেন, কেউ তাকে অপদস্ত করতে পরেনা। মানুষের ইনসাফে ভূল-ত্রুটি হলেও আল্লাহ তো কখনো ত্রুটি করেন না।
ড আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ বলেনঃ
হাদীস বিষয়ক অভিযোগ আলোচনায় আমরা দেখব যে, ইমাম বুখারী (রাহ) ইমাম আবূ হানীফা (রাহ)-কে ‘‘মুরজিয়া’’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। অন্যত্র তিনি বলেন:
قال لي ضرار بن صرد حدثنا سليم سمع سفيان: قال لي حماد بن أبي سليمان أبلغ أبا حنيفة المشرك أني برئ منه قال: وكان يقول: القرآن مخلوق
‘‘দিরার ইবন সুরাদ আমাকে বলেন, আমাদেরকে সালীম বলেছেন, তিনি সুফইয়ান সাওরীকে বলতে শুনেছেন, আমাকে হাম্মাদ ইবন আবী সুলাইমান বলেন, আবূ হানীফা নামক মুশরিককে আমার পক্ষ থেকে জানাও যে, তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন: আবূ হানীফা বলে: কুরআন সৃষ্ট।’’[1]
আমরা দেখব যে, ইমাম আবূ হানীফা ‘‘আল-ফিকহুল আকবার’’ গ্রন্থে কুরআনকে সৃষ্ট বলার বিরুদ্ধে অনেক কথা লিখেছেন। কুরআনকে সৃষ্ট বলার বিরুদ্ধে যিনি কলম ধরেন তাঁর নামে ‘‘কুরআন সৃষ্ট’’ বলার অভিযোগ, তাও তাঁর প্রিয়তম ও নিকটতম উস্তাদের নামে! এ কাহিনীটির একমাত্র বর্ণনাকারী আবূ নুআইম দিরার ইবন সুরাদ। তিনি কুফার একজন বড় আবিদ-বুজুর্গ ছিলেন; কিন্তু তিনি মিথ্যাবাদী ছিলেন। হক্কের পক্ষে বুজুর্গদের মিথ্যাচার সম্পর্কে ‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থে আলোচনা করেছি।[2] ইবন মায়ীন বলেন: কূফায় দুজন মহা-মিথ্যাবাদী আছে: একজন আবূ নুআইম নাখয়ী, অন্যজন আবূ নুআইম দিরার ইবন সুরাদ। ইমাম নাসায়ী বলেন: (متروك الحديث) সে পরিত্যক্ত হাদীস বর্ণনাকারী। নাসায়ীর পরিভাষায় পরিত্যক্ত অর্থ মিথ্যাবাদী। অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস একই কথা বলেছেন। ইমাম বুখারী নিজেও তাকে মাতরূক অর্থাৎ পরিত্যক্ত বা মিথ্যাবাদী বলেছেন। কেউ কেউ তাকে দুর্বল বলেছেন।[3]
সুস্পষ্টতই এটি এ ব্যক্তির বানানো একটি জাল গল্প। তারপরও ইমাম বুখারী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ গল্পটি ও এরূপ অনেক গল্প উদ্ধৃত করেছেন। তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি থেকে ইমাম আযমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা আমরা এ থেকে বুঝতে পারছি। ইমাম বুখারী তাঁর ‘আত-তারীখ আস-সগীর’ গ্রন্থে বলেন:
سمعت إسماعيل بن عرعرة يقول قال أبو حنيفة جاءت امرأة جهم إلينا ههنا فأدبت نساءنا
‘‘আমি ইসমাঈল ইবন আরআরাকে বলতে শুনেছি, আবূ হানীফা বলেন: জাহম (ইবন সাফওয়ান)-এর স্ত্রী আমাদের এখানে এসে আমাদের মহিলাদেরকে শিক্ষা দান করে।’’[4]
আমরা পরবর্তী আলোচনায় দেখব যে, জাহম ইবন সাফওয়ান (১২৮ হি) মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভিন্ন কুফরী-বিদআতী আকীদা প্রচলন করেন। এ কাহিনীতে পরোক্ষভাবে ইমাম আবূ হানীফাকে জাহমের অনুসারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তাঁকে জাহমী বলে অভিযুক্ত করে আরো অনেক বর্ণনা আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ ইবন হাম্বাল, ইবন হিববান, ইবন আদী, খতীব বাগদাদী প্রমুখ মুহাদ্দিস সংকলন করেছেন। সনদগতভাবে এ সকল বর্ণনা সবই জাল বা অত্যন্ত দুর্বল সনদে বর্ণিত। অর্থগতভাবে অভিযোগগুলো আমরা একটু পরে পর্যালোচনা করব, ইনশা আল্লাহ। এ বর্ণনার কথক ইসমাঈল ইবন আরআরা একেবারেই অপরিচিত ব্যক্তি। জারহ-তাদীল বিষয়ক বা অন্য কোনো জীবনী বা ইতিহাস গ্রন্থে তার বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতা বা অগ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে কিছু পাওয়া যায় না। ইমাম বুখারী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি তাঁর থেকে কোনো কিছু বর্ণনা করেছেন, অথবা তিনি কোনো আলিমের কাছ থেকে কিছু শিখেছেন বলেও কোথাও কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। বাহ্যত তিনি ইমাম আবূ হানীফা থেকে সরাসরি কোনো কথা শুনেন নি। আদৌ তিনি তাঁকে দেখেছেন বলে প্রমাণিত নয়। সমাজে প্রচলিত একটি কথা তিনি ইমাম বুখারীকে শুনিয়েছেন মাত্র।
[1] বুখারী, আত-তারীখ আল-কাবীর ৪/১২৭।
[2] ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি, পৃ. ১৫২-১৬১।
[3] ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ৪/৪০০।
[4] বুখারী, আত-তারীখ আস-সগীর ২/৪১।
৩য় প্রশ্নের উত্তরঃ
ইবনে হিব্বনের বক্তব্যঃ
المجروحين لابن حبان (3/ 63)
وكان رجلا جدلا ظاهر الورع لم يكن الحديث صناعته حدث بمائة وثلاثين حديثا مسانيد ما له حديث في الدنيا غيره أخطأ منها في مائة وعشرين حديثا إما أن يكون أقلب إسناده أو غير متنه من حيث لا يعلم فلما غلب خطؤه على صوابه استحق ترك الاحتجاج به في الأخبار ومن جهة أخرى لا يجوز الاحتجاج به لأنه كان داعيا إلى الإرجاء والداعية
তৃতীয় শতকের মুহাদ্দিসগণের মধ্যে বিদ্যমান ‘আবূ হানীফা’ বিরোধী প্রচারণা আরো ব্যাপকতা লাভ করে চতুর্থ শতকে। আমরা দেখি যে, এ শতক থেকে মুহাদ্দিসগণের মধ্যে মাযহাবী তাকলীদ প্রসার লাভ করে এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিসই শাফিয়ী মাযহাব অনুসরণ করতেন। তৎকালীন পরিবেশে মাযহাবী কোন্দল দ্বারা তাঁরা কমবেশি প্রভাবিত হতে লাগলেন। এর প্রভাব আমরা তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে দেখতে পাই। এর বড় উদাহরণ ইবন হিব্বান (রাহ)। তিনি ইমাম আবূ হানীফার বিষয়ে বলেন:
وكان رجلا جدلا ظاهر الورع لم يكن الحديث صناعته، حدث بمائة وثلاثين حديثا مسانيد ماله حديث في الدنيا غيرها أخطأ منها في مائة وعشرين حديثا. إما أن يكون أقلب إسناده أو غير متنه من حيث لا يعلم فلما غلب خطؤه على صوابه استحق ترك الاحتجاج به في الاخبار.
‘‘তিনি একজন ঝগড়াটে-তার্কিক লোক ছিলেন, বাহ্যিক পরহেযগার ছিলেন। হাদীস তাঁর বিদ্যার মধ্যে ছিল না। তিনি মোট ১৩০টি সনদসহ হাদীস বর্ণনা করেছেন। দুনিয়ায় তাঁর বর্ণিত আর কোনো হাদীস নেই। এগুলির মধ্যে ১২০টি হাদীসে তিনি ভুল করেছেন। না জেনে হয় সনদ উল্টে দিয়েছেন অথবা মতন পাল্টে দিয়েছেন। এভাবে নির্ভুল বর্ণনার চেয়ে ভুল বর্ণনার আধিক্যের কারণে তিনি হাদীস বর্ণনায় পরিত্যক্ত বলে গণ্য হন।’’[1]
উল্লেখ্য যে, তৎকালীন হানাফীদের সাথে শাফিয়ী ফকীহ ইমাম ইবন হিববানের অত্যন্ত কঠিন শত্রুতা ছিল। হানাফীগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়াতে তাদের অত্যাচারও বেশি ছিল। ফলে তিনি ইমাম আবূ হানীফার বিরুদ্ধে অত্যন্ত নোংরাভাবে বিষোদ্গার করেছেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে বড় বড় বই লিখেছেন এবং ‘‘মাজরূহীন’’ গ্রন্থের সবচেয়ে বড় অনুচ্ছেদটি তিনি ইমাম আবূ হানীফার কলঙ্ক বর্ণনার জন্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি নিজে যে সকল রাবীকে জালিয়াত বলেছেন, এ অনুচ্ছেদে তাদের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। কোনো মুহাদ্দিস যখন অন্য মুহাদ্দিসের ‘জারহ’ বা ত্রুটি বর্ণনা করেন এবং পারিপার্শিক প্রমাণ থেকে বুঝা যায় যে, তা আকীদা বা মাযহাবী ক্ষোভজড়িত, তাহলে সে ‘জারহ’ বাতিল বলে গণ্য হয়। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ শাফিয়ী ফকীহ ইমাম সুবকীর বক্তব্য আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি। সর্বোপরি, ইমাম ইবন হিব্বান (রাহ)-এর বিষয়ে ইলমুল হাদীসের সাথে পরিচিত সকলেই জানেন যে তাঁর বক্তব্য, সমালোচনা বা ‘‘জারহ’ সাধারণভাবে কঠিন যাচাই ছাড়া গৃহীত হয় না। ইমাম যাহাবী তার একাধিক কিতাবে বহু স্থানে ইবন হিববানের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ করেছেন। একস্থানে তিনি বলেন:
ابن حبان ربما قَصَبَ (جَرَحَ) الثقةَ حتى كأنه لا يدري ما يخرج من رأسه
‘‘ইবন হিব্বান প্রায়ই নির্ভরযোগ্যকে দুর্বল বলেন; এমনকি মনে হয়, তাঁর মাথা থেকে কি বের হচ্ছে তা তিনি নিজেই বুঝেন না।’’[2]
[1] ইবন হিব্বান, আল-মাজরূহীন ৩/৬৩।
[2] যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ১/৪৪১।
৪র্থ প্রশ্নের উত্তরঃ
ইবনুল জাওযীর দাবীঃ
المنتظم في تاريخ الملوك والأمم (8/ 131)
قَالَ مؤلف الكتاب [7] : وبعد هَذَا فاتفق الكل عَلَى الطعن فِيهِ، ثُمَّ انقسموا عَلَى ثلاثة أقسام:
فقوم طعنوا فِيهِ لما يرجع إِلَى العقائد والكلام فِي الأصول.
وقوم طعنوا فِي روايته وقلة حفظه وضبطه.
وقوم طعنوا فِيهِ لقوله بالرأي فيما يخالف الأحاديث الصحاح.
প্রথমতঃ এখানে আরবী الكل শব্দের অনুবাদ সঠিক হয়নি । লিখা হয়েছেঃ
এতদসত্ত্বেও প্রত্যেক (মুহাদ্দীস) আবূ হানিফার উপর তিরষ্কার করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
অনুবাদ হবেঃ সকলেই তার উপর অভিযোগ আরোপে একমত হয়েছেন।
এখানে সকলে মানে মুহাদ্দিস নয়, বরং এতে গ্রহণযোগ্য অগ্রহণযোগ্য আলেম জাহেল অনেকেই আছেন।
দ্বিতীয়তঃ তার দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ কোথায় ??
এমন অসংখ্য মুহাদ্দিস আছেন যাদের থেকে আবু হানীফার ব্যপারে জরাহ পাওয়া যায় না।
এই বক্তব্যের অসাড়তা তা থেকেই স্পষ্ট।
এটা তিনি মাযহাবী তাআসসুব থেকে করেছেন, আল্লাহ ওনাকে মাফ করেন।
তৃতীয়তঃ
সুবকী বড় সুন্দর কথা বলেছেনঃ
قال الامام تاج الدين بن تقي الدين السبكي (المتوفى: 771هـ):
أول ما نقدمه أنه ينبغى لك أيها المسترشد أن تسلك سبيل الأدب مع الأئمة الماضين وأن لا تنظر إلى كلام بعضهم فى بعض إلا إذا أتى ببرهان واضح ثم إن قدرت على التأويل وتحسين الظن فدونك وإلا فاضرب صفحا عما جرى بينهم فإنك لم تخلق لهذا فاشتغل بما يعنيك ودع مالا يعنيك ولا يزال طالب العلم عندى نبيلا حتى يخوض فيما جرى بين السلف الماضين ويقضى لبعضهم على بعض فإياك ثم إياك أن تصغى إلى ما اتفق بين أبى حنيفة وسفيان الثورى أو بين مالك وابن أبى ذئب أو بين أحمد بن صالح والنسائى أو بين أحمد ابن حنبل والحارث المحاسبى وهلم جرا إلى زمان الشيخ عز الدين بن عبد السلام والشيخ تقى الدين بن الصلاح فإنك إن اشتغلت بذلك خشيت عليك الهلاك فالقوم أئمة أعلام ولأقوالهم محامل ربما لم يفهم بعضها فليس لنا إلا الترضى عنهم والسكوت عما جرى بينهم كما يفعل فيما جرى بين الصحابة رضى الله عنهم
من طبقات الشافعية الكبرى للسبكي (2/ 278)
**ينبغي لكل من يخوض في علمائنا المتقنين أن يقرأه بعين النصح والاعتدال لا بعين التعصب و الجهالة.
সারমর্ম, সমালোচনার উরধে কে থাকতে পারে ? এমন কোন ইমাম গত হন নাই যার ব্যাপারে সমালোচক সমালোচনা করে নি এবং ধ্বংস প্রাপ্তরা ধ্বংস হয়নি।
উপরের বিস্তারিত আলোচনার পর এ দাবীর অসাড়তা এমনিই প্রমাণিত হয়ে যায়।
৫ম প্রশ্নের উত্তরঃ
التمهيد لما في الموطأ من المعاني والأسانيد (11/ 48)
وقد روى هذا الحديث أبو حنيفة عن موسى بن أبي عائشة عن عبد الله بن شداد ابن الهادي عن جابر بن عبد الله عن النبي عليه السلام ولم يسنده غير أبي حنيفة وهو سيء الحفظ عند أهل الحديث وقد خالفه الحفاظ فيه سفيان الثوري وشعبة وابن عيينة وجرير فرووه عن موسى بن أبي عائشة عن عبد الله بن شداد مرسلا وهو الصحيح فيه الإرسال وليس مما يحتج به
উনার উক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক নয় আর তা ভূমিকার আলোচনা থেকেই বুঝে আসার কথা। আর আবু হানীফাকে উনি যঈফ বললেই কী হয়ে যাবে ? অথচ ইবনে মাঈন সহ তার পূর্বের প্রথিতযশা মুহাদ্দিসীন ছিকাহ বলে গেছেন। আবু হানীফার জমহুর মুহাদ্দিসের নিকটে কী অবস্থান তা হচ্ছে দেখার বিষয়। আর তা হলো, তিনি একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস ও হাফিযুল হাদীস।
নিম্নে আরো কিছু নূসুস উল্লেখ করা হলোঃ
ইমাম আবু হানীফা রহ. এর হাদীস শাস্ত্রে দক্ষতা ও পারঙ্গমতার অনেক প্রমাণ আছে। নিম্নে কিছু প্রমাণ কয়েকটি পয়েন্টে উল্লেখ করা হলো।
এক. সমকালীন মুহাদ্দিসীনদের দৃষ্টিতে ইমাম আযম আবু হানীফা রহ.।
দুই. পরবর্তী ওলামায়ে কেরামের প্রশংসা এবং ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ইমামতের ব্যাপারে ইজমা’।
তিন. ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মুসনাদসমূহকে মুহাদ্দিসীনে কেরামের সংরক্ষণ।
চার. ইমাম আবু হানীফা রহ. এর স্বরচিত অনবদ্য কিতাব ‘কিতাবুল আসার’।
পাঁচ. মুহাদ্দিসীনে কেরাম কর্তৃক ইমাম আবু হানীফা রহ.কে হাফিজুল হাদীস হিসেবে গণ্য করা।
মুহাদ্দিসীনদের দৃষ্টিতে ইমাম আযম আবু হানীফা রহ.
১. ইমাম বুখারীর উস্তাদ মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ. (১২৬-২১৫ হি.) বলেন,
كان أعلم أهل زمانه
“ইমাম আবু হানীফা রহ. তাঁর যুগের সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন।” তাহযীবুত তাহযীব ১০/৪৫০
২. আবু ওসমান শাদ্দাদ ইবনে হাকীম বলখী রহ. (মৃ. ২১০ হি.) বলেন,
ما رأيت أعلم من أبي حنيفة.
“আমি ইমাম আবু হানীফা রহ. থেকে বড় কোন আলেম দেখিনি।” তারীখে বাগদাদ ১৫/৪৭৩
আল্লামা যফর আহমদ ওসমানী রহ. বলেন,
ولا يخفى أن العلم فى ذلك الزمن لم يكن إلا علم الحديث والقرآن فأعلم الناس حينئذ من كان أعلمهم بالقرآن والحديث
“এটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয় যে, তৎকালীন যুগে ‘ইলম’ বলতে ইলমুল হাদীস ও ইলমুল কুরআনকে বুঝানো হতো। তাই মানুষের মধ্যে সর্বাধিক ইলমের অধিকারী হওয়ার অর্থ তিনি ইলমুল হাদীস ও ইলমুল কুরআনে সবার শীর্ষে ছিলেন।” কাওয়াইদ ফি উলুমিল হাদিস ৩১০
৩. ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহ. (১৫৮-২৩৩ হি.) বলেন,
كان أبو حنيفة ثقة فى الحديث.
“ইমাম আবু হানীফা রহ. হাদীস শাস্ত্রে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।” তাহযীবুত তাহযীব ১০/৪৫
অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
ما رأيت أحدا أقدمه على وكيع وكان يفتي برأي أبي حنيفة وكان يحفظ حديثه كله، وكان قد سمع من أبي حنيفة حديثا كثيرا.
“আমি ওকী’ ইবনুল জাররাহ রহ. এর উপর প্রাধান্য দেওয়ার মতো কাউকে দেখিনি। (অথচ) ওকী’ ইবনুল জাররাহ রহ. ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতানুসারে ফাতোয়া প্রদান করতেন এবং ইমাম আবু হানীফা রহ. এর সকল হাদীস হেফজ করে রাখতেন। আর তিনি ইমাম আবু হানীফা রহ. থেকে অনেক হাদীস শ্রবণ করেছেন।” জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী,
ইবনে আব্দিল বার মালেকী পৃ. ৪৩১
৪. প্রসিদ্ধ হাফিযুল হাদীস ইয়াযিদ ইবনে হারুন রহ. (১১৮-২০৬ হি.) বলেন,
أدركت الف رجل وكتبت عن أكثرهم وما رأيت فيهم أفقه ولا أورع ولا أعلم من خمسة، أولهم أبوحنيفة.
“আমি এক হাজার মনীষী পেয়েছি, তাদের অধিকাংশ থেকেই আমি হাদীস লিখেছি। তবে তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ, অধিক খোদাভীরু ও সর্বাধিক ইলমের অধিকারী পেয়েছি পাচঁজনকে। তন্মধ্যে প্রথমজন হলেন, ইমাম আবু হানীফা রহ.।” প্রাগুক্ত
৫. হাফেজ ইবনে খসরু তার সনদে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা থেকে বর্ণনা করেন যে, খালফ ইবনে আইয়ূব রহ. (মৃ. ২০৫/২২০ হি.) বলেন,
صار العلم من الله تعالى إلى محمد صلى الله عليه وسلم ثم صار إلى أصحابه، ثم صار إلى التابعين، ثم صار إلى أبي حنيفة، وأصحابه،
“আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইলম মুহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌছেছে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কেরামদের কাছে, এরপরে তাবেঈদের নিকট, অতঃপর আবু হানীফা ও তার শিষ্যগণের নিকট পৌঁছেছে।” তারীখে বাগদাদ ১৩/৩৩৬
৬. মিসআর ইবনে কিদাম (মৃ. ১৫৩/১৫৫ হি.) রহ. (যিনি ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ছাত্রজীবনের বন্ধু এবং তাঁর বিশিষ্ট শাগরেদ ছিলেন) বলেন,
طلبت مع أبى حنيفة الحديث فغلبنا وأخذنا فى الزهد فبرع علينا وطلبنا معه الفقه فجاء منه بما ترون.
“আমরা আবু হানীফার সাথে হাদীস তলব করেছি, এতে তিনি আমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। আমরা পরহেযগারী অর্জনের চেষ্টায় ব্রতী হয়েছি, তো আমাদের উপর তিনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন এবং আমরা একত্রে ফিকহ অর্জন করেছি, আর এতে তিনি যে স্তরে পৌঁছেছেন, তা তো আপনারা দেখছেন।” মানাকিবে আবু হানিফা,আল্লামা শামসুদ্দিন যাহাবি রহ.
পৃ.২৭
৭. প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. (১১৯-১৮১ হি.) বলেন,
لولا أعانني الله بأبى حنيفة وسفيان لكنت كسائر الناس.
“যদি আল্লাহহ তাআলা আমাকে আবু হানীফা ও সুফিয়ান রহ. এর মাধ্যমে সাহায্য না করতেন, তাহলে আমি ‘সাধারণ’ লোক বা অন্যদের মতোই থেকে যেতাম।”
অন্যত্র বর্ণিত আছে,
لولا أن الله عز وجل يداركنى بأبى حنيفة وسفيان الثوري لكنت بدعيا.
“আল্লাহ তাআলা আবু হানীফা ও সুফিয়ান ছাওরীর সাথে যদি আমার সাক্ষাৎ করিয়ে না দিতেন, তাহলে আমি বিদআতী হয়ে যেতাম।” ফাযায়েলে আবী হানিফা, আবুল কাসিম ইবনুল আওয়াম পৃ.৮৪
এতো এক সামান্য ফিরিস্তি দেওয়া হলো। যদি সবটুকু উল্লেখ করি, তবে প্রবন্ধের কলেবর অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তাই এতটুকু নির্দ্বধিায় বলতে পারি যে, আবু হানীফা রহ. এর ইমামতের উপর উম্মতের ইজমা’ হয়ে গেছে।
হাফেজ ইবনে আব্দিল বার মালেকী রহ. (মৃ. ৪৬৩ হি.) তাঁর ‘আল-ইনতিকা ফী ফাযায়িলিল আয়িম্মাতিছ ছালাছাতিল ফুকাহা’ কিতাবে আবু হানীফা রহ. এর ভূয়সী প্রশংসাকারীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরেছেন। এতে পূর্ববর্তী ৬৮ জন মুহাদ্দিস, ফকীহ ও ওলামায়ে কেরামের নাম উল্লেখ করেছেন; যারা ছিলেন ইলমের বিভিন্ন শাখার স্তম্ভ। উক্ত কিতাবটির টীকায় শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. আরো দুজনের নাম উল্লেখ করে বলেন,
وأكثر ما حدد به العلماء التواتر عددا سبعون فقد بلغ الثناء على الإمام أبى حنيفة حد التواتر ولكن ممن؟ من خيار سلف هذه الأمة وعلمائها المشهود لهم بالدين والعلم والورع.
“ওলামাগণ তাওয়াতুরের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন ৭০, আর আবু হানীফা রহ. এর প্রশংসাও তাওয়াতুরের সর্বোচ্চ সংখ্যায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে কাদের মাধ্যমে? উম্মতের পূর্ববর্তী সে সকল ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে এ সংখ্যা পূর্ণ হয়েছে, যাদের দীনদারী, ইলম ও তাকওয়া চির স্মরণীয় হয়ে আছে।” আল-ইনতিকার টীকা পৃ.২৩০
পরবর্তী মুহাদ্দিসীনদের দৃষ্টিতে ইমাম আযম আবু হানীফা রহ.:
চতুর্থ শতাব্দি পরবর্তী মুহাদ্দিসীনে কেরাম ইমাম আবু হানীফা রহ. কে হাদীস বিশেষজ্ঞ মনে করতেন এবং তাঁদের অমর গ্রন্থসমূহে ইমাম আবু হানীফা রহ.এর গুণকির্তন করেছেন।
স্মর্তব্য যে, ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহ. ৪৬৩ হি.তে ইনতিকাল করেন, যার কারণে তার কিতাবে উল্লেখিত ৬৮জন মুহাদ্দিসের সকলেই ছিলেন তাঁর পূর্বযুগের। তাই সঙ্গত করণেই ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহ. এর যুগ পরবর্তী ইমাম ও বিখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কেরামের নাম উক্ত কিতাবে আসেনি। তাদের কয়েকজনের নাম নিম্নে দেয়া হল। যেমন:-
আবু সাআদ সামআনী (মৃ. ৫৬২ হি.), আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (মৃ. ৭২৮ হি.), ইবনুল কায়্যিম (মৃ. ৭৫৬ হি.), ইমাম যাহাবী (মৃ. ৭৪৮ হি.), হাফেজ ইবনে কাছীর (মৃ. ৭৭৪ হি.), ইবনে হাজার আসকালানী, তাজউদ্দিন সুবকি (মৃ. ৭৭১ হি.), হাফেজ শামসুদ্দীন সাখাবী (মৃ. ৯০২ হি.), ইবনে হাজার হাইতামী মাক্কী (মৃ. ৯৭৪ হি.), ইবনু আল্লান শাফেয়ী (মৃ. ১০৫৭ হি.), আব্দুল ওয়াহহাব শা’রানী (মৃ. ৯৭৩ হি.), ইমাম আলাউদ্দিন কাসানী (মৃ. ৫৮৭ হি.), ইবনুল আসীর আল-জাযারী (মৃ. ৬০৬ হি.), ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী (মৃ. ৯১১ হি.), হাফেজ মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সালেহী শামী শাফেয়ী (মৃ. ৯৪২ হি.) (রাহিমাহুমুলস্নাহু) সহ শত শত ইসলামী ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যারা অন্য মাযহাব ও ভিন্ন মানহাজের হওয়া সত্ত্বেও ইমাম আবু হানীফার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। সুতরাং এটা স্বীকৃত বাস্তবতা যে, ইমাম আবু হানীফা রহ. হাদীসের ক্ষেত্রেও পারদর্শী।
মুহাদ্দিসীনে কেরামের ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মাসানীদ সংরক্ষণ:
ইমাম আবু হানীফা রহ. এর যে সকল মুসনাদের নাম আজও পর্যন্ত পাওয়া যায়, তার সংখ্যা ২৮/২৯টি। প্রকৃত সংখ্যার ব্যাপারে আল্লাহই অধিক পরিজ্ঞাত।
উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও ইমামের সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এমন কিতাবকে মুসনাদ বলা হয়।
যারা ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মুসনাদ সংকলন করেছেন, সে সব সৌভাগ্যবান মুহাদ্দিসগণ হলেন:-
১. হাফেজ মুহাম্মদ বিন মাখলাদ আদ-দূরী রহ. (মৃ. ৩৩১ হি.)।
২. হাফেজ ইবনে উকদাহ রহ. (মৃ. ৩৩১ হি.)।
৩. ইবনু আবীল আওয়াম রহ. (মৃ. ৩৩৫ হি.)।
৪. কাযী ওমর বিন হাসান বিন আলী আশনানী রহ. (মৃ. ৩৩৯ হি.)।
৫. বড় মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে আদী রহ. (মৃ. ৩৬৫ হি.) (আল-কামেল ফী দুআফায়ির রিজাল গ্রন্থকার)।
৬. হাফেজ আবু মুহাম্মদ আব্দুলস্নাহ আল-হারেছী রহ. (মৃ. ৩৪০ হি.)।
৭. হাফেজ তালহা বিন মুহাম্মদ বিন জাফর আল-বাগদাদী (মৃ. ৩৮০ হি.)।
৮. হাফেজ ইবনুল মুযাফফার আবুল হাসান মুহাম্মদ বিন মুযাফফার বিন মূসা আল-বাগদাদী রহ. (মৃ. ৩৭৯ হি.)।
৯. হাফেজ ইবনুল মুকরি/শায়খ আবু বকর মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম বিন আলী আল-আসবাহানী (মৃ. ৩৮১ হি.)।
১০. ইমাম দারাকুতনী শাফেয়ী রহ. (মৃ. ৩৮৫ হি.) (সুনানে দারাকুতনীর লেখক)।
১১. হাফেজ ইবনে শাহীন (মৃ. ৩৮৫ হি.)।
১২. হাফেজ ইবনে মানদাহ রহ. (মৃ. ৩৯৫ হি.)।
১৩. ইমাম আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ বিন হাবিব আল বুসাইরী আল-মাওয়ারদী শাফেয়ী রহ. (মৃ. ৪০৫ হি.)।
১৪. ইমাম আবু নুআইম আল-আসবাহানী শাফেয়ী রহ. (মৃ. ৪৩০ হি.)।
১৫. শায়খুল ইসলাম হাফেজ আবু ইসমাইল আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আল-আনসারী (মৃ. ৪৮১ হি.)।
১৬. কাযী আবু বকর আব্দুল বাকী আল-আনসারী বাগদাদী হাম্বলী রহ. (মৃ. ৫৩৫ হি.)।
১৭. হাফেজ ছিকাতুদ্দীন ইবনে আসাকির শাফেয়ী রহ.।
১৮. হাফেজ ইবনে খসরম্ন হানাফী রহ. (মৃ. ৫২২ হি.)।
১৯. ইমাম আলী বিন আহমদ ইবনুল মাক্কী আর-রাযী হানাফী রহ. (মৃ. ৫৯০ হি.)।
২০. হাফেজ শামসুদ্দীন সাখাবী শাফেয়ী রহ. (মৃ. ৯০২ হি.)।
২১. ইমামুল হারামাইন আবুল মাহদী ঈসা বিন মুহাম্মাদ আল জা’ফরী আছ-ছাআলেবী রহ. (মৃ. ১০৮২ হি.)।
২২. হাফেজ আবু আলী আল-বাকরী।
এছাড়াও মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সালেহী শামী রহ. ‘উকূদুল জুমান’ এর মাঝে আরোও কিছু মুসনাদের কথা উল্লেখ করেছেন।
২৩. ইমাম হাসান বিন যিয়াদ লু‘লূয়ী রহ. (মৃ. ২০৪ হি.) এর সূত্রে আবুল হাসান মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম বিন হুবাইশ রহ.।
২৪. ইমাম হাসান বিন যিয়াদ সূত্রে আবু বকর আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন খালিদ আল-কালাঈ রহ.।
২৫. ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর সূত্রে কিছু মুহাদ্দিসীনের মুসনাদ।
২৬. ইমাম মুহাম্মদ বিন হাসান থেকে শ্রবনকৃত কিছু মুহাদ্দিসীনের মুসনাদ।
২৭. ইমাম হাম্মাদ বিন আবী হানীফা রহ. এর সূত্রে কিছু মুহাদ্দিসীনের মুসনাদ।
২৮. ইমাম মুহাম্মদ রহ. বর্ণিত মুসনাদ, যা ‘কিতাবুল আসার’ নামে প্রসিদ্ধ।
জামিউ মাসানীদিল ইমামিল আযম প্রসঙ্গ:
ইমাম আবু হানীফার মুসনাদসমূহ থেকে ১৫টি নুসখাকে একত্রিত করেছেন কাযিউল কুযাত, মুহাদ্দিস আবুল মুআইয়াদ খুওয়ারেযমী রহ. (মৃ. ৬৫৫ হি.) ‘জামিউ মাসানীদিল ইমামিল আযম’ নামে।
কিতাবটি সংকলনের কারণ বর্ণনার্থে ভূমিকায় লিখেন,
(وقد سمعت) بالشام عن بعض الجاهلين أنه ينقصه (أي أبا حنيفة) ويستصغره ويستعظم غيره ويستحقره وينسبه إلى قلة رواية الحديث ويستدل باشتهار المسند الذي جمعه أبو العباس الأصم للشافعي وموطأ مالك ومسند أحمد. وزعم أنه ليس لأبي حنيفة مسند وكان لا يروي إلا عدة أحاديث فلحقتني حمية دينية ربانية وعصبية حنفية نعمانية...
সারাংশ “আমি শাম দেশের কোন কোন অজ্ঞ লোককে বলতে শুনেছি যে, ইমাম আবু হানীফার কোন মুসনাদ নেই। আর তিনি কেবল মুষ্টিমেয় কিছু হাদীসের বর্ণনাকারী... এ সমস্ত কথা শুনে আমার মাযহাবী আত্ম মর্যাদাবোধে আঘাত লাগল। তাই আমি ইচ্ছে করলাম, বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ কর্তৃক সংকলিত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর পনেরটি মুসনাদ এক মলাটে একত্র করব।”
‘মুসনাদুল ইমামিল আযমের’ ইলমী অবস্থান প্রসঙ্গে:
গভীর বিশ্লেষণ করে দেখলে কেউ এই কিতাবের ব্যাপারে তুচ্ছ-জ্ঞান রাখতে পারে না। মুসনাদের ইলমী মান কত উর্ধ্বে তা আঁচ করা যায় ওলামায়ে কেরামের ভাষ্য থেকে। নিম্ননে কিছু তুলে ধরা হল:-
এক. বিখ্যাত মুহাদ্দিস মুহাম্মদ বিন জাফর কাত্তানী মালেকী রহ. (মৃ. ১৩৪৫ হি.) ‘আর-রিসালাতুল মুসতাতরাফাহ’ কিতাবে সিহাহ সিত্তাহ, মুসনাদে আয়িম্মায়ে ছালাছা ও মুয়াত্তা মালেক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর লিখেছেন,
فهذه هي كتب الأئمة الأربعة وبإضافتها إلى الستة الأولى تكمل الكتب العشرة التي هي أصول الإسلام وعليها مدار الدين.
“এগুলো চার (মাযহাবের) ইমামের কিতাব, এর পূর্বে আলোচিত ছয় কিতাবের সাথে এ কিতাবগুলোকে মিলালে দশটি কিতাব হয়। এ দশটি কিতাব ইসলামের মূল ভিত্তিগ্রন্থ এবং দীন-ইসলাম এগুলোর উপরই নির্ভরশীল।” আর-রিসালাতুল মুসতাতরাফাহ ১৬
দুই. বিখ্যাত হাফিযুল হাদীস ও হাদীস পর্যালোচক আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হামযা হুসাইনী দিমাশকী রহ. ‘আত-তাযকিরাহ বি রিজালিল আশারাহ’ কিতাবের ভূমিকাতে বলেন,
مسند الشافعى موضوع لأدلته على ما صح عنده من مروياته وكذلك مسند أبى حنيفة.
“মুসনাদে শাফেয়ী এমন বর্ণনার সংকলন, যা ইমাম শাফেয়ীর কাছে সহীহ বলে বিবেচিত। অনুরূপভাবে ‘মুসনাদে আবী হানীফা’র একই অবস্থা।”
তিন. শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. স্পষ্ট বলেন,
مسند ابی حنیفہ وآثارامام محمد ببنائے فقہ حنفیہ است
“মুসনাদে আবু হানীফা ও ইমাম মুহাম্মদ বর্ণিত ‘কিতাবুল আসার’ ফিকহে হানাফীর ভিত্তিতুল্য।” কুররাতুল আইনাইন ফী তাফযীলিশ শায়খাইন পৃ.১৭১
চার. শাফেয়ী মাযহাবের অন্যতম আলেম আরেফ বিল্লাহ আল্লামা আব্দুল ওয়াহহাব শা’রানী রহ. (মৃ.৯৭৩ হি.) তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘মীযানুল কুবরা’ তে ‘মাসানিদে আবী হানীফা’ সম্পর্কে মূল্যায়ন করে বলেছেন,
كل حديث وجدناه فى مسانيد الإمام الثلاثة فهو صحيح.
“ইমাম আবু হানীফা রহ. এর তিনটি মুসনাদে যে হাদীসসমূহ আমরা পেয়েছি, তা সবই সহীহ।” আল-মীযানুল কুবরা পৃ.৮৪
‘কিতাবুল আসার’ প্রসঙ্গ:
ইমাম আবু হানীফা রহ. এর স্বরচিত ও অনবদ্য রচনা ‘কিতাবুল আসার’ সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে রাখা একান্ত প্রয়োজন:-
১. কিতাবুল আসার ব্যতীত সুনান সংক্রান্ত হাদীসের যত কিতাব লিখা হয়েছে তার সংকলকদের কেউ তাবেঈ ছিলেন না। সুনান সংকলকদের ভেতরে তাবেয়ী হওয়ার ফযীলতটি একমাত্র ইমাম আবু হানীফা রহ. এরই অর্জিত হয়েছে।
২. ইমাম আযমের হাদীসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ে পূর্ণ সতর্কতা ইলমে হাদীস মহলে বেশ পরিচিত।ইমাম ওকী’
ইবনুল জাররাহ রহ. বলেন,
لقد وجد الورع عن أبى حنيفة فى الحديث ما لم يوجد عن غيره.
“ইমাম আবু হানীফা রহ.এর হাদীসের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতেন।” মানাকিবুল ইমামে আজম ১/৯৭
ইমাম আলী ইবনুল জা’দ রহ. (মৃ. ২৩৫ হি.) বলেন,
أبو حنيفة إذا جاء بالحديث جاء به مثل الدر.
“ইমাম আবু হানীফা রহ. যখন হাদীস বর্ণনা করতেন, মনে হত যেন তিনি মুক্তো ছড়াচ্ছেন।”
৩. তারীখ ও রিজাল শাস্ত্রের কিতাবসমূহে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণের ইলমে হাদীসের উপর পাণ্ডলিপির উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন, বিখ্যাত তাবেঈ হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ এর সহীফা ইত্যাদি। তবে এটি সত্য যে, ইমাম আবু হানীফা রহ. এর পূর্বে হাদীসের যত পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়, এগুলোর শাস্ত্রীয় বিন্যাস ছিলো না। বরং যে হাদীস তাদের স্মরণে বা কাছে ছিলো, সেগুলো তারা অবিন্যাস্তভাবে লিখে রাখতেন। ইসলামের ইতিহাসে অধ্যায় পরিচ্ছেদ আকারে শাস্ত্রীয় বিন্যাসে রচিত প্রথম হাদীসের কিতাব ‘কিতাবুল আসার’ এবং এ বিষয়ে প্রথম সংকলকের মর্যাদা ও গৌরব একমাত্র ইমাম আবু হানীফা রহ. এরই অর্জিত হয়েছে। কিতাবুল আসারের বিন্যাস এতটাই সৌন্দর্য্যমন্ডিত ছিলো যে, অদ্যবধি প্রচলিত ধারার যত হাদীসের কিতাব সংকলিত হয়েছে কিতাবুল আসারের বিন্যাসকে অনুসরণ করেই লিখা হয়েছে। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, প্রচলিত ধারার সুনান রচনাশৈলীর আবিষ্কারক ইমাম আবু হানীফা রহ.।
মুহাদ্দিসীনে কেরামের দৃষ্টিতে ‘কিতাবুল আসার’ এর কিছু বৈশিষ্ট্য:
কিতাবুল আসারের বৈশিষ্ট নিয়ে যুগশ্রেষ্ঠ ইমামগণের কয়েকটি বক্তব্য উলেস্নখ করা হল:
এক. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. লিখেছেন,
من مناقب أبى حنيفة التى انفرد بها أنه أول من دون علم الشريعة ورتبه أبوابا ثم تبعه مالك ابن أنس في ترتيب المؤطا ولم يسبق أبا حنيفة أحد.
“ইমাম আবু হানীফা রহ. এর জীবন চরিতের স্বতন্ত্র একটি বৈশিষ্ট হল, তিনিই প্রথম ব্যক্তি যে শরীয়তের ইলমকে সকলের পূর্বে সংকলন করেছেন এবং অধ্যায় ও পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত করেছেন। পরে ইমাম মালেক বিন আনাস রহ. তাঁর ‘মুয়াত্তা’ গ্রন্থে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর এ বিন্যস্ততার অনুসরণ করেছেন। এ বিষয়ে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর পূর্বে কেউ অগ্রগামী হতে পারেনি।” তাবয়ীযুস সাহীফা ফী মানাকিবে আবী হানিফা পৃ.৩৯
দুই. ইমাম আবু বকর আতীক বিন দাউ ইয়ামানী রহ. বলেন যে,
فإذا كان الله تعالى قد ضمنا لنبيه صلى الله عليه وسلم حفظ الشريعة وكان أبو حنيفة أول من دونها فيبعد أن يكون الله تعالى قد ضمنها ثم يكون أول من دونها على خطإ.
“আল্লাহ তাআলা নিজে তার হাবীব সা. এর শরীয়তের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রথম ব্যক্তি, যিনি এ শরীয়ত সংকলন করেছেন। অতএব আল্লাহ তাআলা যে শরীয়ত হেফাজতের দায়িত্ব নিবেন আর সে শরীয়তের প্রথম সংকলক ভুল রচনা করবেন, এটা অসম্ভব বিষয়।” মানাকিবে ইমামিল আজম ২/১৭৩
শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. তার ‘উজালায়ে নাফে’ কিতাবে লিখেছেন,
صحیح بخاری وصحیح مسلم ہر چند در بسط وکثرت احادیث دہ چند موطا باشند لیکن طریق روایت احادیث وتمیز رجال وراہ اعتبار واستنباط از موطا آموختہ اند
“সহীহ বুখারী ও মুসলিম ব্যপ্তি ও দীর্ঘতার দিক থেকে মুয়াত্তা মালেকের দশগুনেরও বেশি। কিন্ত হাদীস বর্ণনার পন্থা, রাবীদের পার্থক্য, ই‘তিবার ও ইস্তেম্বাতের বৈচিত্র মুয়াত্তা থেকেই তারা শিখেছেন।”
মুয়াত্তা সম্পর্কে অন্যত্র তিনি বলেছেন,
اصل وام صحیحین است
“এটিই সহীহাইন তথা বুখারী মুসলিমের মূল”।
আর ‘কিতাবুল আসার’ হচ্ছে মুয়াত্তার মূল ও উৎস গ্রন্থ, এ হিসেবে ‘কিতাবুল আসার’ হচ্ছে সহীহাইনের মায়ের মা।
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আব্দুল আযীয দারাওয়ারদী রহ. বলেন,
كان مالك ينظر فى كتب أبى حنيفة و ينتفع بها.
“ইমাম মালেক আবু হানীফা রহ. এর কিতাবগুলো অধ্যয়ন করতেন ও এর দ্বারা উপকৃত হতেন।” আখবারু আবী হানিফা পৃ.২৫৩
সদরুল আয়িম্মাহ মুওয়াফফাক বিন আহমদ মাক্কী রহ.‘মানাকিবুল ইমামিল আযম’ বর্ণনা করেন,
انتخب أبو حنيفة رحمه الله الآثار من أربعين ألف حديث.
“ইমাম আবু হানীফা রহ. ৪০ হাজার হাদীস থেকে নির্বাচন করে ‘কিতাবুল আসার’ সংকলন করেছেন।” মানাকিবুল ইমামিল আ'জম ১/৯৫
ইয়াহইয়া বিন নসর ইবনে হাজেব রহ. বলেন,
سمعت أبا حنيفة يقول: عندى صناديق من الحديث، ما أخرجت منها إلا الشيئ اليسير الذى ينتفع به.
“আমি ইমাম আবু হানীফা রহ. কে বলতে শুনেছি যে, আমার কাছে হাদীসের অনেক সিন্দুক রয়েছে। কিন্ত আমি তার মধ্য থেকে উপকারে আসে এমন মুষ্টিমেয় হাদীসই প্রকাশ করেছি।” মানাকিবুল ইমামিল আ'জম ১/৯৫
‘উকূদুল জাওয়াহিরিল মুনীফা’ গ্রন্থে ইয়াহইয়া ইবনে নসর ইবনে হাজিবের উক্তি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে,
دخلت على أبى حنيفة فى بيت مملوء كتبا فقلت: ما هذه؟ قال: هذه أحاديث كلها، وما حدثت به إلا اليسير الذى ينتفع به.
“আমি আবু হানীফার একটি কিতাবভর্তি ঘরে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তাকে বললাম, এগুলো কী? তিনি উত্তর দিলেন, এগুলো সবই হাদীস। তবে আমি এগুলো থেকে অল্পকিছু হাদীস বর্ণনা করেছি, যা মানুষের প্রয়োজন পড়ে।”
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যে, ইমাম বুখারী রহ. ছয়লক্ষ হাদীস থেকে নির্বাচন করে সহীহ বুখারী সংকলন করেছেন আর ইমাম আবু হানীফা রহ. মাত্র চল্লিশ হাজার হাদীস হতে ‘কিতাবুল আসার’ লিপিবদ্ধ করেছেন!
উত্তর: প্রথমত, ইমাম আবু হানীফা রহ. শুধু এতে আহকাম সংশ্লিষ্ট হাদীস এনেছেন, অন্যান্য হাদীস উল্লেখ করেননি যেমনটি ইমাম বুখারী রহ. করেছেন।
দ্বিতীয়ত: ইমাম আবু হানীফা রহ. এর যুগে হাদীসের সনদ বা সূত্রের সংখ্যা ৪০/৫০ হাজারের বেশি ছিলো না। অর্থাৎ তাঁর যুগে সনদ ও বর্ণনাসূত্রের আধিক্য ও বিস্তৃতি সৃষ্টি হয়নি। তাই হাদীসের সংখ্যা কম ছিলো আর এ সংখ্যাটিই একশতক পেরিয়ে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহ. এর যুগে কয়েক লক্ষ হাদীসে পৌঁছায়। যেমন কোনো মুহাদ্দিস তার দশজন ছাত্রের কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করলেন আর এই হাদীসটিই দশটি সন তথা সূত্রে ইমাম বুখারীর কাছে পৌঁছল, তখন মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় এই দশ সূত্রকে দশটি হাদীস বলা হবে। আপনি যি ‘মুআত্তা মালেক’ ও ‘কিতাবুল আসার’ এর হাদীসগুলো অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে বের করেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন যে, পূর্বোক্ত ’ কিতাবের এক একটি হাদীসের ১০/২০ নয়, বরং শত শত সন বা সূত্র বের হয়ে আসবে।
এ সমস্ত আলোচনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয় যে, ইমাম আবু হানীফা রহ. শুধু হাদীস বেশিই জানতেন না; বরং তিনি হাফেজে হাদীস ও প্রচলিত ধারার সুনানের কিতাব রচনার আবিষ্কারক এবং হাদীস জগতের সম্রাট ছিলেন।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম কর্তৃক ইমাম আবু হানীফা রহ.কে ‘হাফেজুল হাদীস’ হিসেবে গণ্য করা:
যে সকল জগদ্বিখ্যাত ও সর্বমহলে সমাদৃত মুহাদ্দিসগণ ইমাম আবু হানীফা রহ. কে হাফেজুল হাদীসগণের মধ্যে গণ্য করেছেন, নিম্নে তাদের নাম উলেস্নখ করা হল। যেমন :-
এক. ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রহ. তার ‘তাযকিরাতুল হুফফাজ’ (১/১২৬ পৃ.) গ্রন্থে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর নাম হাফেজে হাদীসের তালিকায় উলেস্নখ করেছেন।
দুই. হাফেজ ইবনে আব্দিল হাদী হাম্বলী রহ. তাঁর ‘আল-মুখতাসার ফী তাবাকাতি ওলামাইল হাদীস’ গ্রন্থে।
তিন. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. তাঁর ‘তাবাকাতুল হুফফাজ’ কিতাবে।
চার. হাফেজ ইবনে নাসির দেমাশকী রহ. তাঁর ‘বাদীআতুল বায়ান’ ও ‘আত-তিবয়ান লিবাদীয়াতিল বায়ান’ নামক হাফিজুল হাদীসের জীবন চরিত গ্রন্থদ্বয়ে।
পাঁচ. মুহাদ্দিস ইবনুল মিবরাদ হাম্বলী রহ. তার ‘তাবাকাতুল হুফফাজ’ গ্রন্থে।
ছয়. মুহাদ্দিস ইবনে রস্তম ইবনে কুবাদ রহ. তার ‘তারাজিমুল হুফফাজ’ গ্রন্থে ।
সুতরাং কিছু লোক ছাড়া সকলের সামনেই এটা সুস্পষ্ট যে, ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. হাফেজে হাদীস ছিলেন। আর ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ ইমামগণের বক্তব্য জানার পর আপত্তিকারীদের অভিযোগের কি কোন মূল্য থাকে?! (শায়খ Sayed Ahmad হাফি. )
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য "ইমাম মালেক মুআত্তা রচনার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর অনুসরণ করেছেন।"
মুআত্বা রচনার পূর্বে ইমাম মালেক রহঃ এর সমকালীন মদীনার প্রসিদ্ধ ফকীহ আব্দুল আযীয মাজিশুন (মৃত্যু:১৬৪হি:) মদীনাবাসীর সর্বসম্মত মাসআলাগুলো একত্রিত করে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
তবে সেখানে হাদীস না থাকার কারণে ইমাম মালেক রহঃ কিতাবটি তেমন একটা পছন্দ করেননি। তিনি এটা দেখে বলেছিলেন"এটা ভালো কাজ হয়েছে তবে আমি রচনা করলে প্রথমে হাদীস এনে এরপর এতদসংক্রান্ত মাসআলা বর্ণনা করতাম।"
পরবর্তীতে ইমাম মালেক রহঃ যখন মুআত্বা রচনায় হাত দিলেন ততদিনে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর গ্রন্থ "কিতাবুল আসার" তৎকালীন ইলমী দুনিয়ায় প্রসিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ইমাম মালেক রহঃ তা অধ্যয়ণ করতেন এবং উপকৃত হতেন। সকল মুজতাহিদ ইমামের মাঝে ইমাম আবু হানিফা রহ: এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী যে, তিনি সর্বপ্রথম শরীয়তের ইলম অধ্যায়ভিত্তিক বিন্যাস করেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের লেখকগণ তাঁর অনুসরণ করে গ্রন্থ রচনা করেছে।
ইমাম শাফেয়ী রহ:এর একটি প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে-"লোকেরা ফিকহের ক্ষেত্রে আবু হানিফা রহঃ এর উপর নির্ভরশীল।"
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর গ্রন্থসমুহের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল কিতাবুল আসার।এতে তিনি আহকামের হাদীসগুলো ফিকহি বিন্যাসে উপস্থাপন করেছেন।এই কিতাবটি চয়ন,বিন্যাস, উঁচু সনদ ও গ্রহনযোগ্যতার বিচারে অতুলনীয়।
এজন্যই ইমাম মালেক রহঃ মুআত্তা রচনার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর অনুসরণ করেছেন।
ইমাম সুয়ুতী রহ:এর ভাষায়, ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইলমে শরীয়তকে অধ্যায়ভিত্তিক বিন্যাস করে গ্রন্থ রচনা করেছেন।এরপর ইমাম মালেক রহঃ তাঁকে অনুসরণ করে মুআত্তা রচনা করেছেন।
(মুকাদ্দিমাতে নুমানী,৫৭-৫৮)
পরিশেষে, ইমাম আবু হানীফা রহি. 'জারহ ও তা'দীলের একজন ইমাম ছিলেন। হাদীস বর্ণনাকারীদের স্মরণশক্তি ও আমানতদারির দিক থেকে তাদের মানগত অবস্হান নির্ণয়ে আবু হানীফা রহি. মন্তব্য গ্রহণযোগ্য ছিল।
ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী রহি. ذكر من ىعتمد قوله فى الجرح والتعديل 'জারাহ তা'দীলের ক্ষেত্রে যাদের মন্তব্যের উপর নির্ভর করা যায়, তাঁদের আলোচনা'
নামক কিতাবে হাদীস বর্ণনাকারীদের জীবন-বৃত্তান্ত অর্থাৎ স্বভাব-চরিত্রের পর্যালোচনাকারী সমীক্ষক ইমামগণের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ জারাহ-তা'দীল কবে থেকে শুরু হয়েছে! কোন কোন ইমাম সর্বপ্রথম জারাহ-তা'দীল করেছেন? কাকে করেছেন? এবং কত পরিমাণ লোকের ব্যাপারে জারাহ-তা'দীল করেছেন? সে ক্ষেত্রে তিনি আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
সাহাবায় কেরামের যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পর তাবেয়ীনদের জামানায় সর্বপ্রথম জারাহ-তা'দীল করেন ইমাম শা'বী রহি. ও ইমাম ইবনে সীরীন রহি. সহ আরও অনেকে। তাঁরা কিছু লোকের তা'দীল করেছেন আবার কিছু লোকের জারাহ করেছেন। তবে সমালোচিত ব্যক্তিদের সংখ্যা ছিল সেকালে খুব কম। কারণ দূর্বল বর্ণনাকারী তখন কম ছিল।
এরপর যখন তাবেয়ীদের জামানা শেষ হলো, জামানাটা হচ্ছে একশত পঞ্চাশ হিজরীর মধ্যে তখন দক্ষ পর্যবেক্ষকদের একটি দল জারাহ-তা'দীল করলেন। যাদের মধ্যে রয়েছে ইমাম #আবু_হানীফা, আ'মাশ, শো'বা ও মালেক রহি.।
ইমাম আবু হানীফা রহি. বলেছেন, আমি জাবের জু'ফীর ছেয়ে মিথ্যাবাদী কাউকে দেখিনি।
আ'মাশ কিছু লোককে জারাহ করেছেন, আর কিছু লোককে তা'দীল করেছেন। শো'বা বর্ণনাকারীদের প্রতি মনোনিবেশন করেছেন। এমনিভাবে মালেক রহি. ও।
(যিকরু মা'ইউতামাদু কাওলুহু ফিল জারহে ওয়াত তা'দীল পৃ. ১০৯)
উল্যেখিত মুহাদ্দীসগণ তাঁদের জামানায় জারাহ-তা'দীলের ইমাম ছিলেন। তবে তাঁদের জামানায় বর্ণনাকারীদের মধ্যে দুর্বলতা তুলনামূলক কম থাকায় জারাহ-তা'দীলের কিতাবাদীতে তাঁদের বক্তব্য কম এসেছে। এদের মধ্যে ইমাম আবু হানীফা রহি. ছিলেন শীর্ষ পর্যায়ে।
ইমাম মুাহাম্মদ ইবনে ইউসুফ সালেহী রহি. বলেন,
''ইমাম আবু হানীফা রহি. হাদীসের ইল্লত এবং জারাহ-তা'দীল বিষয়ে একজন দক্ষ ব্যক্তি ছিলেন এবং এক্ষেত্রে তার মতামত গ্রহণযোগ্য ছিল।''
(উকুদুল জুমান সালেহী পৃ. ১৬৭)
সালেহী রহি. তাঁর এ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আবু হানীফা রহি. এর বিশেষ তিনটি গুনের কথা তুলে ধরেছেন।
১. হাদীসের ইল্লত তথা সূক্ষ্ম সমস্যা যা সাধারণ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না সে বিষয়ে আবু হানীফা রহি. যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। যে বিষয়ে হাদীসবিশারদগণের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনেরই দক্ষতা রয়েছে।
২. বর্ণনাকারী যাচাই বাচাইয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল। তিনি যে শুধু হাদীস বর্ণনা করতেন তা নয়! বরং বর্ণনাকারীদের মধ্যে কে কেমন? তাও তিনি জানতেন এবং সে বিষয়ে মন্তব্য করতেন।
৩. হাদীস শাস্ত্রে জারাহ-তা'দীলের ক্ষেত্রে তাঁর মন্তব্যগুলো হাদীস বিশারদগণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। তিনি অপাত্রে মন্তব্য করেন নি বলেই কখনোও তা প্রত্যাখ্যাত হয়নি।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৬১৮০৮
কেউ বলল আমি যাকে বিয়ে করব সে তালাক তাহলে করণীয় কি?
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ
৩৭০৯০
জিবরাইল (আ.) এর সিজদার ভিত্তিহীন বর্ণনার তাহকীক।
৮ আগস্ট, ২০২৩
হাটহাজারী

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ
৪০২০০
নবীজী কি সর্বদা কেবল জুব্বা পরিধান করেছেন ?
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
নোয়াখালী

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে