আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২০৬৬৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ক্বাবলাল জুমার কোন সুন্নাত সালাত আছে কি?হাদিস সহ জানতে চাই?,

২১ জুলাই, ২০২২

বিশ্বম্ভরপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




জুমআর পূর্বের সুন্নতের ব্যাপারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইরশাদ করেন-
১.
হযরত আবূ হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন:
عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّىَ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى وَفَضْلَ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ أخرجه مسلم (٨٥٧)
অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি গোসল করলো, অতঃপর জুমআয় আসলো, এবং তৌফিক অনুসারে নামায পড়লো, এরপর ইমাম খুতবা শেষ করা পর্যন্ত চুপ রইলো এবং তার সঙ্গে নামায আদায় করলো তার পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৮৫৭।
২.
হযরত সালমান ফারসী রা. বলেছেন:
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ فَلَا يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الْإِمَامُ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى. أخرجه البخاري (رقم ৮৮৩) وفي رواية له: ثُمَّ إِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ أَنْصَتَ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি জুমআর দিন গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে কিংবা ঘরে থাকা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর ঘর থেকে বের হয় এবং (বসার জন্য বা পার হওয়ার জন্য) দুজনকে আলাদা না করে, এরপর তাওফিক মতো নামায পড়ে, অতঃপর ইমাম যখন খুতবা দেয় তখন চুপ থাকে, তাহলে অন্য জুমআ পর্যন্ত তার পাপ ক্ষমা করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৮৩) বুখারী শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর ইমাম (খুতবার উদ্দেশ্যে) বের হলে চুপ থাকে। (হাদীস নং ৯১০)
৩.
এ মর্মে হযরত নুবায়শা আল হুযালী রা. থেকে আরেকটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
فَإِنْ لَمْ يَجِدْ الْإِمَامَ خَرَجَ صَلَّى مَا بَدَا لَهُ
অর্থাৎ যদি ইমামকে বের হতে না দেখে তবে যে পরিমাণ ইচ্ছা নামায পড়ে। …. (মুসনাদে আহমদ, ৫খ. ৭৫পৃ.)
৪.হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণিত অপর একটি হাদীসে জুমআর পূর্বে নামায পড়ার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছেন, ثم ركع ما شاء أن يركع অর্থাৎ তার যে পরিমাণ ইচ্ছা রুকু (নামায আদায়) করে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১১৭৬৮)
এসব হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে নামায পড়তে উৎসাহিত করেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে এই সুন্নতের প্রতি উৎসাহিত করেছেন, তা পেছনের হাদীসগুলো থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর নিজস্ব আমল এবং তাঁর সাহাবীগণের নির্দেশ ও আমল সংক্রান্ত হাদীসগুলো এখানে তুলে ধরা হচ্ছে। তার আগে হাদীসশাস্ত্রবিদদের একটি সর্বস্বীকৃত মূলনীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

নীতিটি তারাবীর আলোচনায় সবিস্তারে আসছে। তা হলো, কোন হাদীস যদি একাধিক সনদ বা সূত্রে বর্ণিত থাকে, আর পৃথক পৃথক ভাবে সবগুলো সূত্র দুর্বল হয়, তথাপি সেগুলোর সমষ্টি মিলে হাসান স্তরে উন্নীত হয় এবং প্রমাণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। পরিভাষায় এটাকেই হাসান লিগায়রিহী বলে। আর তদনুযায়ী সাহাবীগণের আমল পাওয়া গেলে তা আরো শক্তিশালী হয়।

আর যদি মূল হাদীসটিরই কোন শক্তিশালী সনদ থাকে তবে তো কোন কথাই নেই। আলোচ্য বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল সম্পর্কে একাধিক হাদীস রয়েছে। সূত্র ও সনদের দিক থেকে এর কোন কোনটি বেশ শক্তিশালী। সেই সঙ্গে রয়েছে বহু সাহাবীর আমল। নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল:
১.
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,
كان النبي صلى الله عليه و سلم يركع قبل الجمعة أربعا . لا يفصل في شيء منهن

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। মাঝে সালাম ফেরাতেন না। ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১১২৯, তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং ১৬৪০। এর সনদ দুর্বল।
২.
হযরত আলী রা. বর্ণনা করেন,
كان رسول الله يصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا يجعل التسليم في آخرهن ركعة
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে পড়তেন চার রাকাত, পরে পড়তেন চার রাকাত। আর চার রাকাতের পরেই তিনি সালাম ফেরাতেন। তাবারানী, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং ১৬১৭; আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী, (মৃত্যু ৩৪০ হি.) আল মুজাম, হাদীস নং ৮৭৪।
এ হাদীসটির সনদ বা সূত্র নিম্নরূপ:
حدثنا أحمد بن الحسين بن نصر أبو جعفر نا خليفة بن خياط شباب العصفري نا محمد بن عبد الرحمن السهمي عن حصين بن عبد الرحمن السلمي عن أبي إسحاق عن عاصم بن ضمرة عن علي

এ সনদটির সকল রাবী (বর্ণনাকারী) নির্ভরযোগ্য। শুধু সামান্য আপত্তি করা হয়েছে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আসসাহ্মী সম্পর্কে। ইবনে হাজার আসকালানী তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেছেন, وهو ضعيف عند البخاري وغيره অর্থাৎ তিনি বুখারী প্রমুখের দৃষ্টিতে দুর্বল।

অথচ ইমাম বুখারী রহ. কোথাও তাকে দুর্বল বলেন নি।
আসিম ইবনে দামরা বলেন-
صلاة النبي صلى الله عليه وسلم بالنهار تطوعا؟ فقال : من يطيق ذلك منكم؟ قلنا نأخذ منه ما أطقنا.

আমরা আলী রা. এর কাছে এলাম এবং আরজ করলাম, আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘সালাতুত তাতাওউ’ (সুন্নত ও নফল নামাযসমূহের) বিষয়ে অবগত করবেন না? তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে তার (অনুসরণের) হিম্মত রাখে? আরজ করলাম, ‘আমরা সাধ্যমতো আমল করব।’

এরপর আলী রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিবসের সুন্নত ও নফল নামাযের বিবরণ দিলেন। প্রথমে ফজরের পর সূর্য মাথার উপর আসার আগ পর্যন্ত দুই নামাযের কথা বললেন: দুই রাকাত এবং চার রাকাত (অর্থাৎ ইশরাকের দুই রাকাত ও চাশতের চার রাকাত)

এর পর বলেন-
ثم أمهل فإذا زالت الشمس قام فصلى أربعا، ثم صلى بعد الظهر ركعتين، ويصلي قبل العصر أربعا، يفصل بين كل ركعتين بتسليم على الملائكة المقربين ومن اتبعهم من المؤمنين والمسلمين، فتلك ست عشرة ركعة.

‘এরপর তিনি নামায পড়া থেকে বিরত থাকতেন। যখন সূর্য ঢলে যেত তখন দাঁড়াতেন ও চার রাকাত পড়তেন। এরপর যোহরের পর দুই রাকাত পড়তেন, আসরের আগে চার রাকাত পড়তেন। প্রতি দুই রাকাতকে তাশাহহুদ দ্বারা আলাদা করতেন। এ হল সর্বমোট ষোল রাকাত। (আল-আহাদীসুল মুখতারা, যিয়াউদ্দীন আলমাকদেসী খ. ১, পৃ. ১৪২-১৪৩ হাদীস : ৫১৪)

সুনানে ইবনে মাজায় (হাদীস : ১১৬১) এই হাদীসের শেষে আছে-
قال علي فتلك ست عشرة ركعة، تطوع رسول الله صلى الله عليه وسلم بالنهار، وقل من يداوم عليها. قال وكيع : زاد فيه أبي : فقال حبيب بن أبي ثابت : يا أبا إسحاق! ما أحب أن لي بحديثك هذا مِلْءَ مسجدك هذا ذهبا.

অর্থাৎ, আলী রা. বললেন, ‘এ হচ্ছে সর্বমোট ষোল রাকাত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের তাতাওউ (নফল ও সুন্নত) নামায। খুব অল্প সংখ্যক মানুষই তা নিয়মিত আদায় করে।’

রাবী বলেন, এই হাদীস বর্ণনা করার পর (উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে থেকে ইমাম) হাবীব ইবনে আবী ছাবিত বলে উঠলেন, ‘আবু ইসহাক! আপনার বর্ণিত এই হাদীসের বিনিময়ে তো আপনার এই মসজিদ ভরা স্বর্ণের মালিক হওয়াও আমি পছন্দ করব না!

এ হাদীসে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর যে চার রাকাতের কথা এসেছে, খুব সহজেই বোঝা যায়, সপ্তাহের ছয়দিন তা যোহরের আগের সুন্নত আর জুমার দিন জুমার আগের সুন্নত। কিন্তু অধিকাংশ দিনে তা যেহেতু ‘কাবলায যোহর’ আর জুমাও হচ্ছে যোহরেরই স্থলাভিষিক্ত, তাই এ চার রাকাতকে অন্যান্য বর্ণনায় এভাবে বলা হয়েছে- وأربعا قبل الظهر إذا زالت الشمس (এবং যোহরের আগে চার রাকাত, যখন সূর্য ঢলে যায়) এবং এভাবে- ويصلي قبل الظهر أربعا. (এবং যোহরের আগে চার রাকাত পড়তেন)

এই বর্ণনাগুলোতে ‘যোহর’ শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকে মনে করেছেন, এই চার রাকাত শুধু ‘যোহরের নামাযে’র আগে পড়তে হবে, কারণ এই হাদীসে তো ‘কাবলায যোহর’ বলা হয়েছে, ‘কাবলাল জুমা নয়।’ বলাবাহুল্য, এটা অগভীর চিন্তার ফল। কারণ,এখানে ঐ সকল সুন্নত ও নফল নামাযের আলোচনা হচ্ছে, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে আদায় করতেন। জুমার দিনও তো দিনই বটে, রাত তো নয়।
তাহলে এই ‘দিন’ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর চার রাকাত নামায কেন হবে না? এ বিষয়ে জুমার দিনের নিয়ম যদি আলাদা হত তাহলে আলী রা. তা বলতেন। বলেননি যখন বোঝা গেল যে, জুমার দিনেও এ নামায পড়া হত। জুমার দিন কি ইশরাক, চাশত ও আসরের আগের সুন্নতসমূহ নেই? তাহলে সূর্য ঢলে যাওয়ার পরের এই চার রাকাত কেন থাকবে না? এটিও তো ‘আন নাহার’ (দিবস) শব্দের অন্তর্ভুক্ত। (সূত্র: কাবলাল জুমা : কিছু নিবেদন, মাওলানা আব্দুল মালেক, মাসিক আলকাউসার, ডিসেম্বর, ২০১২)
৩.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণিত হাদীস:
ইমাম তাবারানী রহ. তাঁর আল মু’জামুল আওসাত গ্রন্থে হাদীসটি এভাবে উদ্ধৃত করেছেন:
حدثنا علي بن سعيد الرازي قال نا سليمان بن عمر بن خالد الرقي قال نا عتاب بن بشير عن خصيف عن ابي عبيدة عن عبد الله عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه كان يصلي قبل الجمعة اربعا وبعدها أربعا

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত পড়তেন। (হাদীস নং ৩৯৫৯)

৪.নাফে’ রহ. বর্ণনা করেন,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُطِيلُ الصَّلاَةَ قَبْلَ الْجُمُعَةِ وَيُصَلِّى بَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ فِى بَيْتِهِ وَيُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ

ইবনে উমর রা. জুমআর পূর্বে দীর্ঘ নামায পড়তেন এবং জুমআর পরে ঘরে গিয়ে দুই রাকাত পড়তেন। আর বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন। (আবু দাউদ শরীফ, ১১২৮)

এ হাদীসের শেষ বাক্যটি থেকে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। ইমাম নববী রহ. এ হাদীস দ্বারা জুমআর পূর্বে চার রাকাত সুন্নত হওয়ার দলিল পেশ করেছেন। ইবনে রজব হাম্বলী রহ. তো স্পষ্ট করে তার বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বলেছেন,
وظاهر هذا : يدل على رفع جميع ذلك إلى النبي ( صلى الله عليه وسلم ) : صلاته قبل الجمعة وبعدها في بيته ؛ فإن اسم الإشارة يتناول كل ما قبله مما قرب وبعد ، صرح به غير واحد من الفقهاء والأصوليين .وهذا فيما وضع للإشارة إلى البعيد أظهر ، مثل لفظة : ” ذلك ” ؛ فإن تخصيص القريب بها دون البعيد يخالف وضعها لغة .

অর্থাৎ এই শেষ বাক্যটি বাহ্যিকভাবে নির্দেশ করে যে, জুমআর পূর্বে চার রাকাত ও পরে ঘরে পড়া দুই রাকাত সবটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল ছিল। কেননা ইসমে ইশারা বা ইংগিত বাচক বিশেষ্য (ذلك) তার পূর্বের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সবটাকেই ইংগিত করে। একাধিক ফকীহ ও উসূলবিদ একথা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। আর এ ذلك দূরবর্তী বস্তুর প্রতি ইংগিতবাচক হওয়ার ক্ষেত্রে ততধিক স্পষ্ট। কারণ দূরবর্তীকে বাদ দিয়ে নিকটবর্তী বস্তুর জন্য সেটাকে খাস করা তার শাব্দিক গঠনের উদ্দেশ্য বিরোধী। (দ্র. হাদীস নং ৯৩৭)
৫.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুস সাইব রা. বর্ণনা করেন,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلي أربعا بعد أن تزول الشمس قبل الظهر – أي :قبل صلاة فريضتها – وقال أنها ساعة تفتح فيها أبواب السماء وأحب أن يصعد لي فيها عمل صالح. أخرجه أحمد ٣/٤١١ والترمذي (٤٧٨) وهذا المعني مذكور في حديث أبي أيوب عند ابن أبي شيبة (٥٩٩٢) ولفظه: أن أبواب الجنة تفتح عند زوال الشمس.

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জোহরের পূর্বে – অর্থাৎ জোহরের ফরজ পড়ার পূর্বে – চার রাকাত নামায পড়তেন। তিনি বলেছেন, এ সময়টায় আসমানের দ্বার খোলা হয়। আর এ সময় আমার নেক আমল উপরে উঠুক, আমি তা পছন্দ করি। মুসনাদে আহমদ, ৩/৪১১; তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ৪৭৮।

হযরত আবূ আইয়্যুব রা. এর হাদীসেও অনুরূপ বক্তব্য পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে- সূর্য ঢলার সময় জান্নাতের দরজা খোলা হয়। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৫৯৯২।

সাহাবায়ে কেরামের আমল:
১. হযরত আলী রা. এর আমল:
আবূ আব্দুর রহমান সুলামী র. বলেন,
كان عبد الله يأمرنا أن نصلي قبل الجمعة أربعا ، وبعدها أربعا ، حتى جاءنا عليّ فأمرنا أن نصلي بعدها ركعتين ثم أربعا . أخرجه عبد الرزاق (٥٥٢٥) وإسناده صحيح.

অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে কাবলাল জুমআ চার রাকাত, বা’দাল জুমআ চার রাকাত পড়ার নির্দেশ দিতেন। অবশেষে হযরত আলী রা. যখন আমাদের এখানে (কূফায়) আসলেন, তখন তিনি আমাদেরকে বা’দাল জুমআ দুই রাকাত তারপর চার রাকাত (মোট ছয় রাকাত) পড়ার আদেশ দিয়েছেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৫৫২৫। এর সনদ সহীহ।
২.
কাতাদা র. বলেন,
أن ابن مسعود كان يصلي قبل الجمعة أربع ركعات وبعدها أربع ركعات ، قال أبو إسحاق : وكان علي يصلي بعد الجمعة ست ركعات ، وبه يأخذ عبد الرزاق . أخرجه عبد الرزاق (٥٥٢٤) ورواه الطبراني وإسناده صحيح قاله النيموي في آثار السنن.

অর্থ: ইবনে মাসউদ রা. কাবলাল জুমআ চার রাকাত ও বা’দাল জুমআ চার রাকাত পড়তেন। আবূ ইসহাক বলেন, আলী রা. বা’দাল জুমআ ছয় রাকাত পড়তেন।

অধিকাংশ আলেমের মত:
ইবনে রজব রহ. বলেছেন:
وقد اختلف في الصلاة قبل الجمعة : هل هي من السنن الرواتب كسنة الظهر قبلها ، أم هي مستحبة مرغب فيها كالصلاة قبل العصر ؟ وأكثر العلماء على أنها سنة راتبة ، منهم : الأوزاعي والثوري وأبو حنيفة وأصحابه ، وهو ظاهر كلام أحمد ، وقد ذكره القاضي أبو يعلى في ” شرح المذهب ” وابن عقيل ، وهو الصحيح عند أصحاب الشافعي . وقال كثير من متأخري أصحابنا : ليست سنة راتبة ، بل مستحبة .

কাবলাল জুমআ নামাযটি কি জোহরের পূর্বের সুন্নতের মতো সুন্নতে রাতিবা (মুয়াক্কাদা), নাকি আসরের পূর্বের নামাযের মতো মুস্তাহাব? এনিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে এটি সুন্নতে রাতিবা। ইমাম আওযায়ী, ছাওরী, আবূ হানীফা ও তাঁর শিষ্যবর্গের মত এটাই। ইমাম আহমদের উক্তি থেকেও এটাই স্পষ্ট। কাযী আবূ ইয়ালা ও ইবনে আকীল এ কথা উল্লেখ করেছেন। ইমাম শাফেয়ীর শিষ্যগণের নিকট এটাই সহীহ ও বিশুদ্ধ মত। আমাদের (হাম্বলীদের) পরবর্তী আলেমগণের অনেকে বলেছেন, এ নামায সুন্নতে রাতিবা নয়, বরং মুস্তাহাব। (ইবনে রজব, ফাতহুল বারী, হাদীস নং ৯৩৭)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৮৭৬৫

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জুময়ার নামায কত রাকাত ও কি কি ও কত রাকাত নামায আদায় করতে হবে

২৮ মে, ২০২২

২৮২৯+৪৯৯، بهلاء، عمان (OM)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৭৪৫৯৭

জুমার নামাজে কুনুতে নাযেলা পড়ার বিধান


১১ অক্টোবর, ২০২৪

Dhaka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১৭৩৯২

তিন জুমা আদায় না করলে কি মানুষ কাফের হয়ে যায়?


১৮ অক্টোবর, ২০২৩

Tarumi, Kobe, Hyogo, Japan

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy