আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

শরঈ মসিজদ

প্রশ্নঃ ১১২৭৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের বিল্ডিং এর ওয়াক্তিয়া নামাযের জায়গায় গত ২০২০ সাল থেকে জুমার নামায পড়ানো শুরু হয়েছে। এলাকার অনেকই পড়েন। কোভিড লক ডাউনের আগে শুধু ওয়াক্তের নামাযের জামাত হতো। আমার প্রশ্ন হলো একটা ওয়াক্তিয়া মসজিদ কে জামে মসজিদে পরিবর্তিত করতে গেলে কি কি শর্ত পালন করতে হবে? জায়গাটি ওয়াকফ করতে হবে কিনা? এখানে ইতিকাফ করার বাধ্যতামূলক কিনা? (আমার জানা মতে এখানে কখনই ইতিকাফ করা হয় নি), ইত্যাদি শর্ত সমূহ ও জামে মসজিদের হক এর ব্যাপারে বিস্তারিত জানালে উপকার হয়। জাযাকাল্লাহ।

২৯ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা ১২১২

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
শরিয়তে ইসলামীতে জুমার নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। একারণেই জুমার জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে সেখানে জুমার নামাজ আদায় করা জুমার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে মসজিদে বা বড় জায়গায় জুমা আদায় করলে মুসলমানদের শান-শওকত ও ঐতিহ্য প্রকাশ পায়। তাছাড়া শর্ত পাওয়া না গেলে জুমার নামাজ সহিহ হবে না। কাজেই যেখানে সেখানে জুমা আদায় করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

পাঞ্জেগানা মসজিদকে জুমার মসজিদে রূপান্তর করার জন্য আলাদা কোনো শর্ত নেই। বরং জুমার নামাজের সকল শর্ত পাওয়া গেলেই সেখানে জুমা সহিহ হবে। সেই শর্তগুলো নিম্নরূপ।

১. শহর বা উপশহর হতে হবে। গ্রামে বা জনমানবহীন বিয়াবানে জুমআর নামায শুদ্ধ হবে না।
২. জামাআত হতে হবে। ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লী হতে হবে। অর্থাৎ মোট চারজন ছাড়া জুমআর নামায আদায় করা যাবে না।
৩. যোহরের সময় হতে হবে।
৪. সকলের জন্য আম অনুমতি থাকতে হবে।
৫. খুতবা দিতে হবে। [দ্রষ্টব্য-হেদায়া-১/১১৪-১১৬, শরহে নুকায়া-১/১২৩-১২৫, কাবীরী-৫৪-৫৫১]

চতুর্থ শর্তটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিবেচনায় ফোকাহায়ে কেরাম জেলখানা, প্রবোশাধিকার সংরক্ষিত স্থান, বাসা-বাড়ি, নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় জুমা সহিহ নয় বলে উল্লেখ করেছেন।

কাজেই আপনাদের বাড়ীর নামাজ ঘরে সেই শর্ত পাওয়া যায় কি না সেটাও আপনাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। এখানে কি সকল পেশার,সকল শ্রেনীর মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে? যদি উপরোক্ত শর্তসমূহের সাথে ব্যাপক প্রবেশাধিকার থাকে তাহলে যদিও এখানে জুমা পড়লে নামাজ সহিহ হয়ে যাবে কিন্তু এটা জুমার শরঈ মাকসাদ পরিপন্থি। তবে যদি জুমার মসজিদ এতোটা দূরে হয়ে যেখানে যাওয়া কষ্টসাধ্য তাহলে সেটা ভিন্ন বিষয়।

ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য ‘শরঈ মসজিদ’ হওয়া জরুরি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَا تُبَاشِرُوۡہُنَّ وَاَنۡتُمۡ عٰکِفُوۡنَ ۙ فِی الۡمَسٰجِدِ ؕ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ فَلَا تَقۡرَبُوۡہَا ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ اٰیٰتِہٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ
(তরজমা) তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের (স্ত্রীদের) সাথে মিলিত হয়ো না। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৭

ইমাম কুরতুবী রাহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, উক্ত আয়াতের আলোকে সকল ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, মসজিদ ছাড়া অন্যস্থানে ইতিকাফ সহীহ হবে না।

শরঈ মসজিদ হলো এমন মসজিদ যেটা কোনো ব্যক্তি/গোষ্ঠি মসজিদ হিসেবে দান/ওয়াকফ করেছেন এবং সেখানে নামাজ পড়া শুরু হয়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত এটা মসজিদ হিসেবে থাকবে। কিন্তু বাসা বাড়ীর নামাজের স্থানগুলো এমনিভাবে অস্থায়ী নামাজঘরগুলো নিয়মতান্ত্রিক মসজিদ নয় বিধায় সেখানে ইতিকাফ সহিহ হবে না।

والله اعلم بالصواب

সাইদুজ্জামান কাসেমি উস্তাজুল ইফতা ওয়াল হাদিস, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন