আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

যাকাত ও সাদাকাহ: পার্থক্য ও ফযীলত

প্রশ্নঃ ১৫৮৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সূরা তওবার 60 নং আয়াতে আট শ্রেণীর লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের ছাড়া অন্য কাউকে সদকা দেয়া যাবেনা। আমার প্রশ্ন হল, যাকাত কাদেরকে দেয়া যাবেনা ? যাকাত এবং সদকা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য আছে কিনা ? সদকা বলতে কী বোঝায় ?,

২৪ জুন, ২০২৪

ঢাকা ১০০০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


যাকাত ও সাদাকাহ: পার্থক্য ও ফযীলত

যাকাত ও সাদাকাহ বলতে কী বুঝায়?
‘সাদাকাহ’ শব্দের অর্থ ‘দান’। পারিভাষিক অর্থে সাদাকাহ বলা হয় এমন দানকে যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সওয়াবের আশা করা হয়। তবে ইসলামী শরীয়তে দান সাধারণত দুই ধরনের। প্রথমতঃ এমন দান যা বিশেষ কিছু শর্তে মুসলিম ব্যক্তির বিশেষ কিছু সম্পদে ফরয হয়, যা থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করা তার উপর অপরিহার্য হয়। এমন দানকে বলা হয় যাকাত। দ্বিতীয়তঃ এমন দান যা করতে মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু কারও উপরই তা অপরিহার্য করা হয়নি। এমন দানকে সাদাকাহ বলা হয়। তবে শরয়ী পরিভাষায় অনেকক্ষেত্রে যাকাতকেও সাদাকাহ বলার প্রচলন আছে।
যাকাত ও সাদাকাহর মধ্যে কিছু পার্থক্য
১) ইসলাম নির্দিষ্ট কিছু জিনিসে যাকাত বিধিবদ্ধ করেছে। সেগুলো হচ্ছে— স্বর্ণ, রূপা, খাদ্যশস্য, ব্যবসার সামগ্রী এবং চতুষ্পদ জন্তু যেমন- উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি। কিন্তু সাদাকাহ বিশেষ কোনো জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়; মানুষ তার সাধ্যানুযায়ী যেকোনো কিছুর মাধ্যমে তা দিতে পারে।
২) যাকাতের ফরয হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলি বিদ্যমান থাকলেই কেবল যাকাত ফরয হয়। যেমন- নেসাব পরিমাণ সম্পদে এক চন্দ্রবর্ষ অতিক্রান্ত হওয়া, বিশেষ পরিমাণে তা বের করা ইত্যাদি। কিন্তু সাদাকাহর ক্ষেত্রে এমন কোনো শর্ত নেই, তা যেকোনো সময়ে এবং যেকোনো পরিমাণে দেওয়া বৈধ।

৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকাতের খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাই যাকাত কেবল সেগুলিতেই দিতে হবে।সেই খাতগুলি হচ্ছে যথাক্রমে- ফকীর, মিসকিন, যাকাত উসুলকারী কর্মচারী, ইসলামে আগ্রহী কিংবা নওমুসলিম, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, জিহাদ এবং মুসাফির। (আল কুরআন-৯: ৬০)
কিন্তু সাদাকাহ-এর ক্ষেত্রে এমন নির্দিষ্ট কোনো খাত নেই। উপরোক্ত খাতসমূহ ছাড়াও অন্যদেরকে সাদাকাহ দেওয়া বৈধ।
৪) যাকাত জরুরি ছিল এমন ব্যক্তি মারা গেলে তার ওয়ারিশদের উপর জরুরি হয় যে, তারা তার সম্পদ বণ্টনের পূর্বে সেই সম্পদ থেকে প্রথমে যাকাতের অংশ বের করবে অতঃপর বাকি সম্পদ মিরাসের নিয়মানুযায়ী বণ্টন করবে। কিন্তু সাদাকাহ-এর ক্ষেত্রে এমন বিধান নেই।
৫) যাকাত উসুল ও ফুরূকে দেওয়া নিষেধ। কোনো ব্যক্তির উসুল বলতে তার মাতা, পিতা, দাদা ও দাদীদেরকে বুঝায় এবং ফুরূ বলতে নিজের সন্তান ও সন্তানদের সন্তানকে বুঝায়। কিন্তু সাদাকাহ উসুল ও ফুরূ সকলকে দেওয়া বৈধ।
৬) যাকাত নিজ স্ত্রীকে দেওয়া অবৈধ। কিন্তু সাদাকাহ নিজ স্ত্রীকেও দেওয়া যায়।
৭) কাফের মুশরিকদেরকে যাকাত দেওয়া অবৈধ কিন্তু তাদেরকে সাদাকাহ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।
যাকাত ও সাদাকাহর মধ্যে এমন বেশ কিছু পার্থক্য প্রমাণিত।
যাকাত ও সাদাকাহর ফযীলত
১) যাকাতের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয় এবং যাকাত ও সাদাকাহ আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ ও রিযিক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আল্লাহ সুদকে বিলুপ্ত করেন এবং সাদাকাহকে বৃদ্ধি করেন।” (আল কুরআন-২: ২৭৬)। এছাড়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সাদাকাহ কোনো সম্পদকে হ্রাস করে না।” (মুসলিম)
২) যাকাত ও সাদাকাহর মাধ্যমে বান্দাকে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন রোগ থেকে আরোগ্য দান করেন ও বিপদাপদ সমূহ দূর করে দেন।
৩) যাকাত ও সাদাকাহর মাধ্যমে বান্দা হাশরের ময়দানে আরশের নিচে ছায়া পাবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি তার সাদাকাহ-এর ছায়াতলে থাকবে যতক্ষণ না সকল মানুষের ফয়সালা শেষ না হয়।’ অন্য হাদীসে সাত প্রকার লোক
আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে বলে উল্লেখ হয়েছে, তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সে যে, গোপনে এমনভাবে সাদাকাহ করে যে, তার বাম হাত পর্যন্ত টের পাইনা যা তার ডান হাত খরচ করেছে।
৪) সাদাকাহ নবীজী, সাহাবী ও নেককারদের বৈশিষ্ট্য। হাদিসে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন এবং রমযান মাসে তাঁর দানশীলতা আরও বৃদ্ধি পেত। এভাবে হাদিসের কিতাবে সাহাবী ও আমাদের নেককার উত্তরসূরীদের যাকাত আদায়ে অবিচলতা ও সাদাকাহ আদায়ের অনেক ঘটনা পাওয়া যায়।
৫) সাদাকাহ আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং সাদাকাহকারীকে বিপদাপদ থেকে নিরাপদে রাখে।
৬) যাকাত ও সাদাকাহ আদায়কারীদেরকে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করা সহজ করে দিবেন।
৭) যাকাত ও সাদাকাহ গুনাহ মোচন করে এবং গুনাহের জন্য তা কাফফারা স্বরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সাদাকাহ এমনভাবে গুনাহ মুছে দেয় যেমনভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।
৮) নিয়মিতভাবে যাকাত আদায়কারী ও সাদাকাহ প্রদানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা ভালবাসেন।
যাকাত ও সাদাকাহ-এর আরও অনেক ফযীলত কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এসকল ফযীলতসমূহকে সামনে রেখে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে যাকাত আদায়ের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দান-সাদাকাহ করে তার প্রিয়ভাজনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
উম্মাহ২৪ডটকম:

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৭৭৮৭

জিমেইল ফেসবুক আইডি বিক্রি প্রসঙ্গ


২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

গাজীপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০৫৮৩

ভিন্ন দেশ থেকে ৩০ রোযা রেখে বাংলাদেশে গেলে রোযা রাখতে হবে? রাখলে ৩১টা হয়ে যায়। করণীয় কি?


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

대한민국 경기도 파주시 월롱면 통일로৬২০번길 ৮৯-৫৩ (KR)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৭৪৮৭

নখ কাটার সুন্নত


৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy