আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মুজেযা অস্বীকার করলে ঈমান থাকবে কি?

প্রশ্নঃ ১১৩০৪১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম, নবী করীম (সা:) এর মুজেযা অস্বীকার করলে কি ইমান থাকবে না?

৬ আগস্ট, ২০২৫
ঢাকা ১২০৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. পবিত্র কুরআন ছাড়া নবী করীম (সা.)-এর থেকে অসংখ্য মুজিযা প্রকাশিত হয়েছে, যা নির্ভরযোগ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, বুখারী ও মুসলিমের একাধিক বর্ণনায় নবী করীম (সাঃ) এর আঙ্গুলের ডগা থেকে পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া এবং সাহাবীদের এক বিশাল জামাআত সেই পানি দ্বারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করার ঘটনা প্রমাণিত আছে। এ ধরনের মুজিযাকে অস্বীকার করা পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী।

হাদীসটি লক্ষ্য করুন,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: عَطِشَ النَّاسُ يَوْمَ الحُدَيْبِيَةِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ يَدَيْهِ رِكْوَةٌ فَتَوَضَّأَ، فَجَهِشَ النَّاسُ نَحْوَهُ، فَقَالَ: «مَا لَكُمْ؟» قَالُوا: لَيْسَ عِنْدَنَا مَاءٌ نَتَوَضَّأُ وَلاَ نَشْرَبُ إِلَّا مَا بَيْنَ يَدَيْكَ، فَوَضَعَ يَدَهُ فِي الرِّكْوَةِ، فَجَعَلَ المَاءُ يَثُورُ بَيْنَ أَصَابِعِهِ، كَأَمْثَالِ العُيُونِ، فَشَرِبْنَا وَتَوَضَّأْنَا قُلْتُ: كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ: لَوْ كُنَّا مِائَةَ أَلْفٍ لَكَفَانَا، كُنَّا خَمْسَ عَشْرَةَ مِائَةً
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ায় অবস্থান কালে একদিন সাহাবায়ে কেরাম পানির পীপাসায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। নবী কারীম (ﷺ)- এর সম্মুখে একটি (চামড়ার) পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি উযু করলেন। তাঁর নিকট পানি আছে মনে করে সকলে ঐ দিকে ধাবিত হলেন। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, আপনার সম্মুখস্থ পাত্রের সামান্য পানি ব্যতীত উযু ও পান করার মত পানি আমাদের নিকট নাই। নবী কারীম (ﷺ) ঐ পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন। তখনই তাঁর হাত উপচিয়ে ঝর্ণা ধারার ন্যায় পানি ছুটিয়ে বের হতে লাগলো। আমরা সকলেই পানি পান করলাম আর উযু করলাম। সালিম (রাহঃ) (একজন রাবী) বলেন, আমি জাবির (রাযিঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আমরা যদি এক লক্ষও হতাম, তবুও আমাদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম মাত্র পনেরশ।
আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ (সহীহ বুখারী)
হাদীস নং: ৩৩২৩ আন্তর্জাতিক নং: ৩৫৭৬
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/3323

দুই. নবীজির মুজিযাকে অস্বীকার করা চরম ধৃষ্টতার শামিল। যেসব মুজিযা পবিত্র কুরআন এবং মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, সেগুলোকে অস্বীকার করা কুফরী।

وخبر المعراج، أي بجسد المصطفى يقظة إلى السماء، ثم إلى ماشاء الله تعالى في المقامات العلى حق، أي حديثه ثابت بطرق متعدة فمن رده أي ذلك الخبر ولم يؤمن بمقتضى ذلك الأثر فهو ضال مبتدع، أي جامع بين الضلالة والبدعة. وفي كتاب الخلاصة: من أنكر المعراج ...... إلى قوله . فهو كافر. (شرح فقه أكبر، مكتبه اشرقی دیوبند (١٣٥)

এবং মিরাজের ঘটনা, অর্থাৎ হযরত মুস্তাফা (সা.)-এর সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আসমানে আরোহণ, এবং তারপর আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছায় সর্বোচ্চ স্থানসমূহে গমন করা, এসবই সত্য। অর্থাৎ এর বর্ণনা বহু সূত্রে প্রমাণিত। সুতরাং যে ব্যক্তি এই বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করবে এবং এর মর্ম অনুযায়ী ঈমান আনবে না, সে পথভ্রষ্ট। আর যে ব্যক্তি মিরাজকে অস্বীকার করে সে কাফের।

তিন. মুজিযা প্রমাণিত হওয়া একটি অকাট্য সত্য এবং এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব।

قد ظهر على يديه بعض المعجزات ثابت بالتواتر المعنوي على الله فلا بد من اعتقاد ثبوت معجزات النبي الله في الجملة .( تكملة فتح الملهم، كتاب الفضائل، باب في المعجزات، مكتبه اشرفيه ديوبند ٤٧٤/٤)

والمعراج حق، وقد أسرى بالنبي الله وعرج بشخصه في اليقظة إلى السماء، ثم إلى حيث شاء الله من العلا، وأكرمه الله بما شاء وأوحى إليه ما أوحى ما كذب الفؤاد ما رأى، فصلى الله عليه وسلم في الآخرة والأولى. (شرح العقيدة الطحاوية، المكتبة الإسلامي، بيرت: ۲۲۳)

চার. মিরাজের ঘটনা সহীহ হাদীস এবং মুতাওয়াতির সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। এর উল্লেখ বিভিন্ন হাদীস এবং সীরাতের কিতাবসমূহে বিদ্যমান। আর একে অস্বীকার করা কুফর এবং গোমরাহী।

والمعراج الرسول الله عليه السلام في اليقظة بشخصه إلى السماء، ثم إلى ما شاء الله تعالى من العلى حق، أي ثابت بالخبر المشهور حتى أن منكره يكون مبتدعا وتحته في هامشه أي خارجا عن السنة يضلل، ولا يكفر في إنكار المعراج على التفصيل المذكور، وأما إنكار نفس المعراج فهو كفر بلا شبهة. (شرح عقائد مع هامشه : ١٤٣، شرح فقه أكبر :135)

والله اعلم بالصواب

মুফতি জাওয়াদ তাহের মুহাদ্দিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন