আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা

প্রশ্নঃ ১০৪৬১২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, প্রশ্ন: আমি অনেকদিন ইউটিউবে ইসলামিক কনটেন্ট বানিয়ে আসছি, উদ্দেশ্য ছিল দাওয়াহ ও হালালভাবে আয়ের ব্যবস্থা করা। কিন্তু পরে শুনি ইউটিউব থেকে আয়ের টাকা নাকি হারাম। তাই আমি ইউটিউবিং ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো: ইউটিউব মনিটাইজেশন চালু রেখে আয় করা কি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ? যদি বৈধ হয়, তাহলে আমি আবার কাজ শুরু করতে চাই। আর যদি বৈধ না হয়, তাহলে মুসলিমদের কি উচিত ইউটিউব থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়া? এটা তো বাস্তবে অসম্ভব, কারণ বাতিলপন্থীরা তো ইউটিউবেই সক্রিয় থেকে ইসলামবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, একটি ইসলামিক কনটেন্ট তৈরি করতে অনেক সময়, শ্রম ও গবেষণা দরকার হয়—যা একটি পূর্ণাঙ্গ পেশার মতোই। যেমন, মাদরাসায় পড়িয়ে বা ইমামতি করে যদি বৈধ উপার্জন করা যায়, তাহলে ইসলাম প্রচারে করা ভিডিও থেকে উপার্জন কেন হারাম হবে? হ্যাঁ, ইউটিউবে অনেক সময় অশ্লীল অ্যাড দেখানো হয়, এটা ঠিক। কিন্তু যেমন দোকানে নারী-পুরুষ আসা-যাওয়ার কারণে দোকানদারি হারাম হয় না, তেমনি ইউটিউবেও দৃষ্টি নত রাখাই কি যথেষ্ট নয়? আর এমনিতেই, আমরা মনিটাইজেশন বন্ধ রাখলেও ইউটিউব আমাদের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখায়। তাহলে কি শুধুই এই কারণে আমাদের ইউটিউব ছেড়ে দেওয়া উচিত? আমি চাই, দলিল ও যুক্তিসহ স্পষ্টভাবে জানানো হোক—ইউটিউব থেকে আয় করা বৈধ কি না।

৪ আগস্ট, ২০২৫
নেত্রকোনা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইউটিউব এমন একটা জগত যেখানে ভালো মন্দ সব ধরনের ভিডিও রয়েছে। আর ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন হয় এড দেখিয়ে। এড এর মধ্যে রয়েছে দুই ধরনের। কিছু হারাম বস্তুর ও অশ্লীলতা পূর্ণ, আর কিছু আছে সে সব মুক্ত।

ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওর বিষয়বস্তু যদি হারাম হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে এর উপার্জন হারাম হবে।

আর যদি কন্টেন্ট হালাল হয়, তবুও এর থেকে উপার্জন হারাম।

ইউটিউব-এর মাধ্যমে যে অর্থোপার্জন করা হয় তার মূল উৎস কী? কেন গুগল টাকা দিচ্ছে? মূলত গুগলের একটি বিশেষ সার্ভিসের নাম হল : ‘গুগল এডসেন্স’। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন কোম্পানির নোংরা, অশ্লীল ও হারাম পণ্যের বিজ্ঞাপন বিপুল অর্থের বিনিময়ে ইউটিউবসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সম্প্রচার করে। আর ঐ খাত থেকে অর্জিত লভ্যাংশের একটা অংশ ইউটিউবারদের দিয়ে থাকে।

তাদের বিজ্ঞাপনগুলোর ৯৯.৯% অশ্লীল ও হারাম পণ্যের। তাই এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ হালাল হবে না। বরং তা হারাম হওয়ার পাশাপাশি হারামের প্রচার ও সহযোগিতা করার পাপও হবে। আল্লাহ তা‘আলা এদের শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করে বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ

‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না’ -সূরা আন-নূর : ১৯

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘বলুন, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপাচারকে ও অসংগত বিদ্রোহকে’ -সূরা আল-আ‘রাফ : ৩৩

শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, হারাম ও অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা এবং তা প্রচার করে অর্থ উপার্জন করা উভয়-ই হারাম। কেননা তা অন্যায়, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও পাপাচারে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সহযোগিতা কর। এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা কর না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যধিক কঠোর’
-সূরা আল-মায়িদাহ : ২; মুসলিম, হা/২৬৭৪, ৬৬৯৭, ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২৬৭১৭৩

উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন’ -তাফসীর ইবনে কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২; তাফসীরে কুরতুবী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪৬-৪৭

‘ইসলাম ওয়েব’-এর আলেমগণ বলেন, ‘হারাম ও নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত করে অর্থোপার্জন করা জায়েয নয়। সুতরাং আপনার উপর অপরিহার্য হল নিজেকে এর থেকে মুক্ত করা’
-ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং-২৬৫১০২, ১৩২১৩৯

তৃতীয়তঃ ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের মধ্যে রয়েছে, إذا اجتَمَع الحلالُ والحرامُ غُلِّبَ الحرامُ ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাসআলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাসআলা প্রাধান্য পায়’ (অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে)। হাদীছেও এমন বক্তব্য এসেছে।
-বুখারী, হা/৫২; মুসলিম, হা/৩৯৮৬)। অন্য হাদীছে নবী (ﷺ) বলেন,

دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ

‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হল দ্বিধা-সন্দেহ’
-তিরমিযী, হা/২৫১৮, সনদ ছহীহ

অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সন্দেহমুক্ত, বৈধ ও উৎকৃষ্ট পন্থায় অর্থোপার্জন করার প্রচেষ্টা করা এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন উপার্জনের পথ অন্বেষণ করা’ -ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ্ দায়িমাহ, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ২৭৪-২৭৫ ও ১৪তম খণ্ড, পৃ. ৪২০

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া খতীব, নবোদয় সি ব্লক জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর ইমাম, বায়তুল ওয়াহহাব জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন