আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মজহাব কতটি মানা যাবে?

প্রশ্নঃ ১১৬৬৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মজহাব কতটি মানা যাবে?,

২৪ অক্টোবর, ২০২৩

VV6C+35P

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কুরআন-হাদীস থাকতে আমরা মাজহাব কেন মানব?
এমন অভিনব ধরনের প্রশ্ন ইদানীং অনেকে করে থাকেন। দীর্ঘ ১৪০০ বছর এমন প্রশ্ন কোনো মুসলমান করেননি। কারণ একথা সবাই জানেন যে, শরিয়তের সব বিধানই আল্লাহ ও রাসুল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত। কিছু বিধান শরীয়ত অফশনাল রেখেছে, যা ইমামগণ গবেষণার মাধ্যমে বাছাই করে নেবেন। এটি শরিয়তের চিরন্তন ও কালজয়ী হওয়ার জন্য জরুরি।

তাছাড়া শরিয়তে ইমামগণের ভ‚মিকা সাহাবায়ে-কেরাম থেকে শুরু। যা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি রহমতস্বরূপ। ইজতিহাদ ও তাকলীদের ফলেই ইসলাম কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের সবাইকে সব জিজ্ঞাসার জবাব এবং সব সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। যেমন ধরুন, মাজহাব কী জন্য অপরিহার্য। ওযু, নামাজ ইত্যাদি বিষয়ের ফরজ, সুন্নত, মুস্তাহাব ও মাকরুহ কী কী, স্পষ্টভাবে কোরআন-হাদিসে তা উপযুক্ত কারণেই উল্লেখ না থাকায় সাধারণ মানুষের জন্য তা বের করে আমল করা অসম্ভব।

তাই তাদের জন্য সহজ পথ হলো, কোরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ যেসব মুজতাহিদ ইমামগণ কোরআন ও হাদীস ঘেঁটে এসব বিষয় বের করে দিয়েছেন, তাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত অনুসরণ করা। এরা ছিলেন স্বর্ণযুগের মানুষ। এদের গবেষণার উপকার ভোগ করার নামই হলো মাজহাব অনুসরণ। আর দীনের এমন প্রথম যুগের বিশেষজ্ঞকে অনুসরণের কথা কোরআন ও হাদীসের অসংখ্য স্থানে এসেছে। যেমন, যে (ইলম তাকওয়া ও ইখলাসের সাধনায়) আমার নৈকট্যশীল হয়, তার দেখানো পথ (মাজহাব) অনুসরণ করবে। (সুরা লুকমান : ১৫)।

মাজহাব মানে পথ। এ আয়াতে আল্লাহর প্রতি ঝুঁকেপড়া, নৈকট্যশীল ব্যক্তি তথা কোরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির মাজহাব অনুসরণ করার পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আরেক আয়াতে এসেছে, তোমরা যদি না জানো- তবে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। (সুরা আম্বিয়া : ৭)।
এ আয়াতেও না জানলে, না বোঝলে, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করে মানতে বলা হয়েছে। আর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্দেশনা অনুপাতে ইসলামী শরীয়ত মানার নামই মাজহাব মানা।

এরকম আরও অনেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জ্ঞানীদের পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুসরণ করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মতো। আর এভাবে কোরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণে ইসলামী শরীয়ত মান্য করার নামই হলো মাজহাব অনুসরণ করা। যদি কেউ স্বর্ণযুগের মনীষীদের পরামর্শ না মানে তাহলে তাকে তার সমসাময়িক জুনিয়র আলেমদের মতো, গবেষণা ও পরামর্শ মানতে হবে। কারণ মাজহাব ছাড়া পূর্ণ দীন পালন করা তো দূরের কথা, দুই রাকাত নামাজ পড়াও অসম্ভব।

যেমন, ১. রুকু করা ফরজ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। ২. রুকুর তাসবীহ পড়া সুন্নত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু শরীয়তের অন্তত ২০% মাসআলা কোরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। অথচ সেসব জাকাত, হজ, রোজা, লেনদেন, আচরণ ও নামাজের সাথে সংশ্লিষ্ট মাসআলা। এভাবে আমল করার দ্বারা নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত শুদ্ধ হচ্ছে কি না? তা সরাসরি কোরআন ও হাদীস থেকে জানা ও বোঝার উপায়ও নেই। এসব আল্লাহওয়ালা মুজতাহিদ ইমামগণের গবেষণার বিষয়।

এসবের সমাধান মাজহাবের ইমামদের ইজমা তথা ঐকমত্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। ধরুন, রুকুতে গিয়ে যদি কেউ ভুলে তাকবীর না বলে, রুকুর তাসবীহের বদলে কেউ সেজদার তাসবীহ বলে ফেলে, তাশাহহুদের বদলে সুরা ফাতিহা পড়ে ফেলল, জোরে কিরাতের স্থলে আস্তে কিরাত পড়ল, আস্তের স্থলে জোরে পড়ল, এসব মাসআলার সমাধান ছাড়া তো সহিহ পদ্ধতিতে নামাজ পড়া সম্ভব নয়।

আধুনিক সময়ের দাবি এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জীবনযাত্রার সর্বত্র অকল্পনীয় পরিবর্তনের ফলে হাজারো মাসআলার জন্ম হয়েছে, এসবের শরয়ীহ সমাধান দিতে গবেষণা ইজতিহাদের কারণে মাজহাব সমৃদ্ধ হবে। নতুন মানব বসতি, সভ্যতা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, ব্যাংক বীমা, শিল্পায়ন, উন্নয়ন ইত্যাদি হাজারো মানুষের জন্য নতুন নতুন জিজ্ঞাসা নিয়ে আসছে। কোরআন হাদীসের আলোকে এসবের সমাধান দিতে মাজহাব অনুসরণের বিকল্প নেই। এটাই শরিয়তের নির্দেশনা।

আর এসব মাসআলাসহ নামাজের অসংখ্য মাসায়েলের সমাধান না কোরআনে বর্ণিত, না হাদীস দ্বারা মীমাংসা যোগ্য। কেননা এসব বিষয়ে বিপরীতধর্মী অধিক হাদিস দেখে আনাড়ি পাঠকের মনে দ্বিধা সৃষ্টি হতে পারে। এসব সমাধান মাজহাবের ইমামগণ কোরআন ও হাদীসের গভীর থেকে মূলনীতি বের করে আলোকে উদ্ভাবন করেছেন। আর তাদের উদ্ভাবিত সেসব সমাধানের নামই হল মাজহাব।

এই তো গেল শুধু নামাজের ছোট্ট অংশের উদাহরণ। এমনিভাবে মানুষের জীবনঘনিষ্ট এমন অসংখ্য মাসআলার উপমা পেশ করা যাবে, যার সরাসরি কোনো সমাধান কোরআন ও হাদীসে নেই। কিংবা অনেক স্থানেই বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ।
তাই সুনির্দিষ্ট একটি মাজহাব মানা ছাড়া সাধারণ মুসলমানদের কোনো গত্যন্তর নেই।
অতএব গায়রে মুজতাহিদ আলেম বা সাধারণ উম্মতের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি মাজহাব মানা ওয়াজিব।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৪৯৪

হারাম টাকায় পোষাক বানিয়ে তা পরে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হবে?


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

G৯FW+M৫W

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৫৭৪৫

ইল্লাল্লাহ জিকির করার বিধান


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

কালিয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy