আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

বরকত কি?

প্রশ্নঃ ১০৮২৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বারাকাহ কী? দয়া করে বিস্তারিত বর্ণনা করলে কৃতজ্ঞ থাকব।,

২৫ জুন, ২০২৫

ঢাকা ১৪২১

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


বরকত কাকে বলে?

ثبوت الخير ودوامه واستقراره

কল্যাণের উপস্থিতি, তার স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতাকে বলা হয় বারাকাহ বা বরকত।

ইমাম রাগিব ইস্পাহানি রহ.-এর মতে

البركة هي ثبوت الخير الإِلهي في الشيء

বারাকাহ বা বরকত বলা হয় ওই জিনিসকে যাতে মহান আল্লাহর কল্যাণ নিহিত থাকে।

(মুফরাদাতু আলফাযিল কুরআন : ১/৮৩)

যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে

وَ هٰذَا کِتٰبٌ اَنزَلنٰهُ مُبٰرَک

আর এটি একটি কিতাব, আমি তা নাযিল করেছি, বরকতময়।

(সূরা আনআম : ৯২)

এ আয়াতে ‘বরকতময় কিতাব’ মানে কল্যাণময় কিতাব।

বরকতের কিছু দৃষ্টান্ত

যেমন টাকা-পয়সার বরকত হওয়ার অর্থ, টাকা-পয়সা মঙ্গল ও কল্যাণের পথে ব্যবহৃত হওয়া। যে কাজে টাকা-পয়সা খরচ হবে সে কাজ আমার জীবনের জন্য স্থায়ীভাবে কল্যাণময় হওয়া।

টাকা-পয়সায় বরকত হওয়ার অর্থ পরিমাণে টাকা-পয়সা বেড়ে যাওয়া নয়। তবে কখনও সেভাবেও বরকত সাধিত হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও স্থায়ী কল্যাণ অবশ্যই থাকবে। খাদ্য-খাবারে বরকত হওয়ার অর্থ খাদ্য-খাবার দ্বারা কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ অর্জিত হওয়া এবং সেই কল্যাণ স্থায়িত্ব লাভ করা।

জীবনের বয়সে বরকত হওয়ার অর্থ মঙ্গলময় ও কল্যাণময় কাজে জীবনের সময় ব্যবহৃত হওয়া এবং অল্প সময়ে অনেক ভাল কাজ করতে পারা।

বরকতহীনতার কিছু দৃষ্টান্ত

যেমন আল্লাহ তাআলা দুধের মধ্যে ভিটামিন রেখেছেন। এখন যদি কারো এই দুধ পান করার পর পেট খারাপ হয়ে যায়। এর অর্থ হল, দুধ তার জন্য বরকতময় ছিল না।

বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য, নিজেকে পাপাচার ও ব্যভিচার হতে মুক্ত রাখা। কেউ যদি বিয়ে করার পরেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এর অর্থ হল, বিয়ের বরকত তাকে স্পর্শ করেনি।

দাম্পত্যজীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য, প্রশান্তি লাভ করা। আল্লাহ বলেন

لِّتَسْكُنُوٓاْ إِلَيْهَا

যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও।

(সূরা রুম : ২১)

কারো যদি এমন হয় যে, স্ত্রী দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ওই দিন এক ভাই বলছিলেন, বাইরে সকলের সঙ্গে ভালো থাকি। কিন্তু বাসায় ঢুকলে বউটাকে দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আরেক লোক নিজে আমাকে বলেছেন, হুযুর! একই ছাদের নিচে থাকি, কিন্তু আমি এবং আমার স্ত্রী বছরের পর বছর থেকে দুইজন দুই জগতের বাসিন্দা! এর অর্থ হল, এরা স্ত্রীর বরকত থেকে বঞ্চিত।

আল্লাহ সন্তান দান করেন, যেন তাদেরকে দেখলে চোখ শীতল হয়, কলিজা ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু সেই সন্তান যদি অশান্তি ও অসম্মানের কারণ হয়ে যায়, সন্তানকে যদি রিহ্যাব সেন্টারে রেখে আসতে হয়। মা যদি সন্তানের ব্যাপারে বলেন, এমন সন্তান কেন যে পেটে ধরলাম! এর অর্থ হল, সন্তান তো আছে, কিন্তু বরকত নেই।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বরকতের প্রয়োজনীয়তা

মূলত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বরকতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা, যার জীবনে বরকত ও কল্যাণ নেই সেই সারা দুনিয়ার সম্পদের মালিক হলেও সুখ পাবে না। নিশ্চিন্তে এক মুহূর্ত থাকতে পারবে না। জীবনটা তখন দুনিয়ার জাহান্নামে পরিণত হবে।

মানসিক সুখ-শান্তি আল্লাহর নেয়ামত। যাদের জীবন মহান আল্লাহ কল্যাণ ও বরকতে ভরপুর করেন, তারাই তা অনুভব করতে পারে। বরকতময় জীবন শান্তিময় হয়, সুখ-শান্তিতে ভরপুর থাকে। সে হায়াতে, সময়ে, সম্পদে বরকত পায়। পক্ষান্তরে জীবনের কোনো কাজে বরকত পায় না। অর্থাৎ হায়াতে, সময়ে ও সম্পদে বরকত পায় না।

এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন, কিন্তু সে জীবনে ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতে কোনো বরকত নেই। আবার অনেকে পরিশ্রম করেন কিন্তু প্রাপ্তি সেভাবে আসে না। এর অর্থ হলো কাজে কোনো বরকত নেই। পক্ষান্তরে এমন অনেক লোক আছেন, যারা কম হায়াত পেয়েছেন কিন্তু ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি, ইবাদত-আমলে বরকত লাভ করেছেন। অনেকে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করেন কিংবা অল্প বেতনে কাজ করেন, কিন্তু তাতে বরকত আছে। তাই প্রত্যেকটা কাজে বরকত খুব জরুরি।

সুখ আছে বরকতের মাঝে

যার বেতন বিশ হাজার টাকা, সে চিন্তা করে আমার বেতন ত্রিশ হাজার হলে সমস্যার সমাধান হয়ে হয়ে যাবে, ত্রিশ হাজার টাকার লোক চিন্তা করে পঞ্চাশ হাজার হলে কোনো সমস্যা আমার জীবনে থাকবে না, পঞ্চাশ হাজার টাকার লোক চিন্তা করে এক লাখ হলে আমার জীবনে আর কোনো পেরেশানি থাকবে না। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, সমস্যা একটা যায় তো এর চেয়ে বড়টা সামনে আসে।

সুতরাং বোঝা গেল, সম্পদ অধিক হওয়া সমস্যা কিংবা পেরেশানির সমাধান নয়। সমাধান আছে,বরকতের মাঝে।
বিস্তারিত: https://muslimbangla.com/article/698
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী হাফি.

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৩১৭৪

সালাতুত তাসবিহ: প্রমাণ ও পদ্ধতি


২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

হরিরামপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১২০১৯

পাগড়ী পড়ে নামাজ পড়ার ফজিলত


২৭ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা ১২১২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy