আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৯৮৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম, লা মাজহাবীগণ(আহলে হাদীস) একটি অভিযোগ করে যে,ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান কম? তিনি নাকি কোনো সহিহ হাদীস জানতেন না,তিনি যা হাদীস জানে সেগুলো নাকি যঈফ?এটার বিষয়ে আমি জানতে চাচ্ছি।,

৯ এপ্রিল, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


وعليكم السلام و رحمة الله
মুহতারাম,
মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ হাফি. লিখিত নিম্নের প্রশ্নোত্তর সম্বলিত প্রবন্ধ টি আপনার জন্য।

ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাফিযুল হাদীসও ছিলেন : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

প্রশ্ন : আমরা জানি যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ইসলামী শরীয়তের অনেক বড় ইমাম ছিলেন। এ কারণেই আমরা তাঁর নির্দেশনামত কুরআন-সুন্নাহর বিধি বিধানের উপর আমল করি। কিন্তু কদিন আগে আমার এক বন্ধু বললেন, জনৈক আহলে হাদীস তাকে বলেছেন, ‘আবু হানীফা হাদীস ও সুন্নাহর আলিম ছিলেন না। তিনি না হাফিযুল হাদীস ছিলেন, না হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ছিকা ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন।

একথা শুনে আমি খুব আশ্চর্য হলাম। কারণ তিনি যখন হাফিযুল হাদীসও ছিলেন না, হাদীসশাস্ত্রে পারদর্শীও ছিলেন না, এমনকি হাদীসের বিষয়ে ছিকাও ছিলেন না তখন তার তাকলীদ করা কীভাবে বৈধ হবে? আমরা তো তাকলীদ এজন্যই করি, যাতে কুরআন কারীম এবং হাদীস-সুন্নাহর উপর আমাদের আমল নির্ভুল হয়।

আমার ধারণা, ঐ আহলে হাদীস ভাইয়ের কথা ঠিক নয়। কারণ মুসলিম উম্মাহর ফিকহ-ফতোয়ার একজন ইমাম হাদীস-সুন্নাহর বিষয়ে অজ্ঞ হবেন তা কী করে হয়? ফিকহ ও ফতোয়ার মূল ভিত্তিই তো কুরআন-সুন্নাহ।

এখন আমার আবেদন, হাদীসের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর অবস্থান সম্পর্কে আমাকে কিছু তথ্য সরবরাহ করবেন এবং এ বিষয়ে আরবী-উর্দূ কিছু কিতাবের নামও জানাবেন।

আরো আবেদন, ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর জীবনীর উপর বাংলা ভাষায় একটি সমৃদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ প্রস্ত্তত করে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন।

উত্তর : আপনার এ কথা ঠিক যে, ফিকহ ও ফতোয়ার একজন ইমাম হাদীস ও সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়া অসম্ভব। এ তো সাধারণ বুদ্ধির কথা। আপনি যে ঐ আহলে হাদীস ব্যক্তির কথা শোনামাত্র সংশয়গ্রস্ত হননি; বরং সাধারণ বিচার-বুদ্ধি কাজে লাগিয়েছেন এজন্য আপনাকে মোবারকবাদ। ইমাম আবু হানীফা রাহ. সম্পর্কে ঐ ব্যক্তি যা বলেছে তা সম্পূর্ণ অবাস্তব। আল্লাহ তাআলা তাকে হেদায়াত দান করুন এবং ইমামগণের প্রতি কুধারণা পোষণের ব্যাধি থেকে মুক্তি দান করুন।

বাস্তবতা এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাদীসের অনেক বড় আলিম ছিলেন। তিনি হাফিযুল হাদীসও ছিলেন এবং হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ছিকা ও নির্ভরযোগ্যও ছিলেন।

উসূলে হাদীস ও উসূলে ফিকহের সর্বসম্মত মূলনীতি এই যে, উম্মাহর ইমামগণের বিষয়ে এই প্রশ্নই ভুল যে, ‘কে তাদেরকে ছিকা বলেছে’। কারণ, এ ধরনের প্রশ্ন তো হয় সাধারণ রাবীদের ক্ষেত্রে, ইমামগণের ক্ষেত্রে নয়। কারণ ইমামগণের বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা; বরং উম্মাহর ইমামের মর্যাদায় উপনীত হওয়া তো এক দুই ব্যক্তির স্বীকৃতির দ্বারা নয় ইজমা ও তাওয়াতুর (তথা ঐকমত্য ও ব্যাপক বর্ণনা) দ্বারা প্রমাণিত।

দুইটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি :

এক. ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাদীসেরও ‘হাফিয’ ছিলেন।

এটি একটি বাস্তবতা, যার অনেক দলীল আছে। এখানে শুধু একটি বিষয় নিবেদন করছি। তা এই যে, মুসলিম উম্মাহর হাফিযুল হাদীসগণের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার অধিকাংশই এখন মুদ্রিত ও প্রকাশিত। এগুলোর কোনো একটি গ্রন্থ আপনি হাতে নিন। তাতে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর আলোচনা পাবেন। যেমন :

১. তাযকিরাতুল হুফফায, শামসুদ্দীন আযযাহাবী (৭৪৮হি.)

যাহাবী রাহ. এই কিতাবের শুরুতে লিখেছেন-

هذه تذكرة بأسماء مُعَدلي حملة العلم النبوي، ومن يرجَع إلى اجتهادهم في التوثيق والتضعيف والتصحيح والتزييف.

অর্থাৎ এ গ্রন্থে ইলমে নবুওয়াতের ঐ বিশ্বস্ত ধারক-বাহকগণের আলোচনা রয়েছে, যাদের সিদ্ধান্ত ও গবেষণার শরণাপন্ন হতে হয় ছিকা ও যয়ীফ রাবী নির্ণয় এবং সহীহ ও যয়ীফ হাদীস চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে।’

এরপর যাহাবী রাহ. এ গ্রন্থের খন্ড ১ পৃষ্ঠা ১৬৮-এ ইমাম আবু হানীফা রাহ-এর আলোচনা লিখেছেন। আলোচনার শিরোনাম-‘আবু হানীফা আল-ইমামুল আযম’

(أبو حنيفة الإمام الأعظم)

২. আল মুখতাসার ফী তবাকাতি উলামাইল হাদীস, শামসুদ্দীন ইবনু আব্দিল হাদী (৭৪৪হি.)

এর কিছু অংশ মুদ্রিত। এর হস্তলিখিত পান্ডুলিপি জামেয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারায় সংরক্ষিত আছে।

৩. আত তিবয়ান লিবাদীআতিল বায়ান আন মাওতিল আ’য়ান, শামসুদ্দীন ইবনু নাসিরুদ্দীন (৮৪২হি.)

এ গ্রন্থের পান্ডুলিপি মদীনা মুনাওয়ারার ঐতিহাসিক কুতুবখানা মাকতাবা আরিফ হিকমত-এ সংরক্ষিত আছে।

৪. তবাকাতুল হুফফায, জামালুদ্দীন ইবনুল মিবরাদ (৯০৯হি.)

এ কিতাব থেকে মুহাদ্দিস আবদুল লতীফ সিদ্দিকী রাহ. ‘‘যাববু যুবাবাতিদ দিরাসাত আনিল মাযাহিবিল আরবাআতিল মুতানাসিবাত’’ গ্রন্থে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর আলোচনা উদ্ধৃত করেছেন।

৫. ‘‘তবাকাতুল হুফফায’’, জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. (৯১১হি.)

৬. ‘‘তারাজিমুল হুফফায’’, মুহাম্মাদ ইবনে রুসতম আল হারিছি আলবাদাখশী

এ গ্রন্থের পান্ডুলিপি নদওয়াতুল উলামা লাখনৌতে রয়েছে। এই পুরো আলোচনার জন্য হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নু’মানী রাহ.-এর কিতাব ‘‘মাকানাতুল ইমামি আবী হানীফাতা ফিল হাদীস’’ (পৃ. ৫৮-৬৮) পাঠ করুন। ওখানে আরো তথ্য রয়েছে। উপরোক্ত তথ্যগুলোও ওখান থেকে নেওয়া হয়েছে ।

দুই. ইমাম আবু হানীফা ‘হাফিযুল হাদীস’ হওয়া একটি সহজ সত্য

দ্বিতীয় যে বিষয়ে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি তা এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ‘সুন্নতে মুতাওয়ারাছা’ এবং হাদীস ও আছারের হাফিয হওয়া এমন এক সহজ স্বাভাবিক বাস্তবতা, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কারণ ঐতিহাসিক সত্য এই যে, ইমাম আবু হানীফা রাহ. ফিকহ ও ফতোয়ার প্রথম সংকলক। আর এ তো বলাই বাহুল্য যে, শরীয়তের এই সকল বিধান তিনি ফিকহের কিতাব থেকে সংকলন করেননি। কারণ ফিকহের প্রথম সংকলকই তো তিনি। তাহলে এই সকল বিধান তিনি কোথা থেকে সংকলন করেছেন? নিশ্চয়ই সুন্নতে মুতাওয়ারাছা, আছারে সাহাবা ও ফতওয়ায়ে তাবেয়ীন থেকে। তাহলে তাঁর উপরোক্ত সকল বিষয়ের হাফিয হওয়া দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।

এখানে ঐ ঘটনাটি উল্লেখ করা সমীচীন মনে হচ্ছে, যা মুয়াফফাক আলমক্কী রাহ. (৫৬৪ হি.) ‘মানাকিবু আবী হানীফা’’ গ্রন্থে (খন্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২) আবু ইসমা সা’দ ইবনে মুয়ায রাহ.-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি আবু সুলায়মান জুযাজানী থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. থেকে, আর তিনি ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু ইউসুফ বলেন-

كنا نكلم أبا حنيفة في باب من أبواب العلم، فإذا قال بقول واتفق عليه أصحابه درت على مشايخ الكوفة هل أجد في تقوية قوله حديثا أو أثرا؟ فربما وجدت الحديثين أو الثلاثة فآتيه بها، فمنها ما يقبله ومنها ما يرده، فيقول : هذا ليس بصحيح أوليس بمعروف، وهو موافق لقوله! فأقول له : وما علمك بذلك؟ فيقول : أنا عالم بعلم الكوفة.

‘আমরা আবু হানীফা রাহ.-এর সাথে একটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতাম। এরপর যখন তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন এবং তার সঙ্গীরাও একমত হতেন তখন আমি কুফার শায়েখগণের কাছে যেতাম তার সিদ্ধান্তের সমর্থনে আরো কোনো হাদীস বা আছর পাই কিনা। কখনো দুইটি বা তিনটি হাদীস পেতাম। তাঁর কাছে পেশ করার পর তিনি কোনোটি গ্রহণ করতেন আবার কোনোটি এই বলে বর্জন করতেন যে, এটি সহীহ নয় বা মারুফ নয়। অথচ তা তার সিদ্ধান্তের অনুকূলে। আমি বলতাম, এ সম্পর্কে আপনার ইলম কীরূপ। তিনি বলতেন, আমি কূফা নগরীর ইলমের ধারক।

এই ঘটনা বর্ণনা করার পর আবু ইসমা যা বলেছেন তার সারকথা এই যে, ‘ইমাম রাহ. সত্য বলেছেন। সত্যি তিনি ছিলেন কুফার মনীষীগণের কাছে সংরক্ষিত ইলমের ধারক। শুধু তাই নয় (হাদীস আছার এবং কুরআন-সুন্নাহর) অন্যান্য শহরের অধিকাংশ ইলমেরও তিনি ধারক ছিলেন। এর প্রমাণ পেতে চাইলে তাঁর কিতাবসমূহ দেখ, তাঁর সঙ্গীদের কাছে সংরক্ষিত তাঁর বর্ণনাসমূহ দেখ, কিতাবুস সালাত থেকে শুরু করে এক একটি অধ্যায় এবং প্রতি অধ্যায়ের এক একটি মাসআলা পাঠ করতে থাক, তাহলেই দেখতে পাবে, কীভাবে তিনি হাদীস ভিত্তিক জবাব দিয়ে চলেছেন এবং চিন্তা কর, হাদীস ও সালাফের আছারের সাথে তার জবাবসমূহ কত সামঞ্জস্যপূর্ণ।’’

এরপরও আপনি যদি প্রশান্তির জন্য ‘হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফার অবস্থান’ সম্পর্কে বিস্তারিত ও প্রামাণিক জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে নিম্মোক্ত কিতাবসমূহ পাঠ করতে পারেন।

বলাবাহুল্য যে, এখানে শুধু নমুনা হিসেবে কয়েকটি কিতাবের নাম লেখা হচ্ছে। এ বিষয়ের সকল রচনাবলির তালিকা দেওয়া তো কোনো সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধের দ্বারা সম্ভব নয়।

১. ‘‘ইমাম আযম আওর ইলমে হাদীস’’, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী সিদ্দীকী কান্ধলভী।

২. ‘‘মাকামে আবু হানীফা’’, মাওলানা সরফরায খান সফদর

৩. কিতাবুল আছার, ইমাম আবু হানীফা-এর বিভিন্ন ভূমিকা। যেমন :

ক. মুফতী মাহদী হাসান শাহাজাহানপুরী রাহ.-এর ভূমিকা (কালাইদুল আযহার)

খ. মুহাদ্দিস আবুল ওয়াফা আফগানী রাহ.-এর ভূমিকা (ইমাম মুহাম্মাদ (রাহ)-এর রেওয়ায়েতের উপর)

গ. মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ.-এর ভূমিকা (উর্দু, আররহীম একাডেমী, করাচী থেকে প্রকাশিত)

৪. মুসনাদে ইমাম আযম-এর ভূমিকা, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ.

৫. ‘‘মাকানাতুল ইমাম আবী হানীফা ফিল হাদীস’’, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নু’মানী (১৪২০হি.)

৬. ‘‘আল-ইমাম আবু হানীফা ওয়া আসহাবুহুল মুহাদ্দিসুন’’, আল্লামা যফর আহমদ উছমানী রাহ. (১৩৯৪ হি.)

৭. ‘‘উকূদুল জুমান ফী মানাকিবিল ইমামিল আযম আবু হানীফাতান নু’মান’’, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আসসালেহী আশ-শাফেয়ী (৯৪২হি.)

৮. সিয়ারু আলামিন নুবালা, শামসুদ্দীন আযযাহাবী রাহ. (৭৪৮হি.) খন্ড : ৬; পৃষ্ঠা : ৩৯০-৪০৩

৯. আল ইনতিকা ফী ফাযাইলিছ ছালাছাতিল ফুকাহা (মালিক ইবনু আনাস ওয়া মুহাম্মাদ ইবনু ইদরীস আশ-শাফেয়ী, ওয়া আবী হানীফা) ইবনু আব্দিল বার আলমালেকী (৩৬৩হি.)

১০. ‘‘ফাযাইলু আবী হানীফা ওয়া আখবারুহূ ওয়া মানাকিবুহু’’, আবুল কাসিম ইবনু আবিল আওয়াম (৩৩৫হি.)

এ বিষয়ে আরো কিতাবের নাম জানতে চাইলে ‘‘উকূদুল জুমানের’’ শুরুতে আল্লামা আবুল ওয়াফা আফগানী রাহ.-এর ভূমিকা অবশ্যই পাঠ করুন। তদ্রূপ ইমাম আবু আব্দিল্লাহ আল-হুসাইন ইবনে আলী আস-সাইমুরী (৪৩৬ হি.)-এর কিতাব- ‘আখবারু আবী হানীফাতা ওয়া আসহাবিহী’, যা আফগানী রাহ.-এর তাহকীকে ছাপা হয়েছে, এর ভূমিকাও পাঠ করতে পারেন।

মারকাযুদ দাওয়াহ-এর দারুত তাসনীফ থেকে এ বিষয়ে একাধিক কিতাব প্রকাশের বিষয়টি পরিকল্পনাধীন আছে। তবে আলকাউসারে একটি ধারাবাহিক লেখা অতি শীঘ্রই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।


ওয়াসওয়াসাঃ ইমাম আবূ হানীফা রহঃ জঈফ রাবী ছিলেন?

মুসলিম বিশ্বের গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ রিজালশাস্ত্রের ইমামদের সংকলিত শুধু ১০টি কিতাবের নাম উল্লেখ করছি। যা এসব ভ্রান্ত ওয়াসওয়াসাকে বাতিল করতে এবং জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির মনকে প্রশান্ত করতে যথেষ্ট হবে বলে মনে করি।



ইমাম যাহাবী রহঃ। আহলে ইলম বলতেই যারা তার নাম জানেন বিখ্যাত জারাহ তাদীলের ইমাম হিসেবে। জারাহ তাদীল সম্পর্কিত একাধিক কিতাবের সংকলক। এই ইমাম যাহাবী রহঃ হাফীজুল হাদীস সম্পর্কিত একটি কিতাব সংকলন করেছেন।

হাফীজুল হাদীস কি? ইলমে হাদীস বিষয়ে সম্মক অবগত প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন যে, হাফীজুল হাদীস ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি হাদীসের রিওয়ায়াত ও দিরায়াত উভয় ময়দানে পারদর্শী এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ।

হাফীজুল হাদীসদের আলোচনামূলক ইমাম যাহাবী রহঃ এর উক্ত গ্রন্থটির নাম “তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ”। উক্ত গ্রন্থে হাফেজ যাহাবী রহঃ ইমাম আজম আবূ হানীফা রহঃ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যা স্পষ্টরূপে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ কে হাফেজ যাহাবী রহঃ হাফীজুল হাদীসের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। যেখানে তিনি ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী উল্লেখ করেছেন। সম্বোধন শুরু করেছেন “ইমাম আজম” বলে। সংক্ষিপ্ত উক্ত পরিচিতিতে প্রশংসাসূচক অসংখ্য বক্তব্য উদ্ধৃত করলেও কোথাও একটি শব্দও ইমাম আবূ হানীফা রহঃ সম্পর্কে সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি। বরং সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, “আমি ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর মানাকেব ও ফযীলত সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র পুস্তকও রচনা করেছি। {তাযকিরাতুল হুফফাজ, রাবী নং-১৬৩,

আহলে ইলমদের জন্য তাযকিরাতুল হুফফাজের উক্ত ইবারতগুলো উদ্ধৃত করে দিচ্ছি-

163- 10/ 5 ع- أبو حنيفة الإمام الأعظم فقيه العراق النعمان بن ثابت بن زوطا التيمي مولاهم الكوفي: مولده سنة ثمانين رأى أنس بن مالك غير مرة لما قدم عليهم الكوفة رواه ابن سعد عن سيف بن جابر أنه سمع أبا حنيفة يقوله. وحدث عن عطاء ونافع وعبد الرحمن بن هرمز الأعرج وعدي بن ثابت وسلمة بن كهيل وأبي جعفر محمد بن علي وقتادة وعمرو بن دينار وأبي إسحاق وخلق كثير. تفقه به زفر بن الهذيل وداود الطائي والقاضي أبو يوسف ومحمد بن الحسن وأسد بن عمرو والحسن بن زياد اللؤلؤي ونوح الجامع وأبو مطيع البلخي وعدة. وكان قد تفقه بحماد بن أبي سليمان وغيره وحدث عنه وكيع ويزيد بن هارون وسعد بن الصلت وأبو عاصم وعبد الرزاق وعبيد الله بن موسى وأبو نعيم وأبو عبد الرحمن المقري وبشر كثير وكان إماما ورعا عالما عاملا متعبدا كبير الشأن لا يقبل جوائز السلطان بل يتجر ويتكسب.

قال ضرار بن صرد: سئل يزيد بن هارون أيما أفقه: الثوري أم أبو حنيفة؟ فقال: أبو حنيفة أفقه وسفيان أحفظ للحديث. وقال ابن المبارك: أبو حنيفة أفقه الناس. وقال الشاقعي: الناس في الفقه عيال على أبي حنيفة. وقال يزيد: ما رأيت أحدًا أورع ولا أعقل من أبي حنيفة. وروى أحمد بن محمد بن القاسم بن محرز عن يحيى بن معين قال: لا بأس به لم يكن يتهم ولقد ضربه يزيد بن عمر بن هبيرة على القضاء فأبى أن يكون قاضيا. قال أبو داود رحمه الله: أن أبا حنيفة كان إماما.

وروى بشر بن الوليد عن أبي يوسف قال: كنت أمشي مع أبي حنيفة فقال رجل لآخر: هذا أبو حنيفة لا ينام الليل, فقال: والله لا يتحدث الناس عني بما لم أفعل, فكان يحيي الليل صلاة ودعاء وتضرعا. قلت: مناقب هذا الإمام قد أفردتها في جزء. كان موته في رجب سنة خمسين ومائة1 رضي الله عنه.

أنبأنا ابن قدامة أخبرنا بن طبرزد أنا أبو غالب بن البناء أنا أبو محمد الجوهري أنا أبو بكر القطيعي نا بشر بن موسى أنا أبو عبد الرحمن المقرئ عن أبي حنيفة عن عطاء عن جابر أنه رآه يصلي في قميص خفيف ليس عليه إزار ولا رداء قال: ولا أظنه صلى فيه إلا ليرينا أنه لا بأس بالصلاة في الثوب الواحد.

ইমাম যাহাবী রহঃ যেখানে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ কে হাফীজুল হাদীস হিসেবে গণ্য করছেন। তার প্রশংসার উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেই সাথে তাযকীরাতুল হুফফাজে অসংখ্য প্রশংসাসূচক বক্তব্য এনেছেন। কিন্তু কোথাও একটি শব্দও সমালোচনা হিসেবে উপস্থিত হিসেবে উপস্থিত করেননি। তার ব্যাপারে এমন জুলুমানা কথা মিথ্যুক ছাড়া আর কে বলতে পারে?



প্রখ্যত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ তার প্রসিদ্ধতম জারাহ তাদীলের গ্রন্থ “তাহযীবুত তাহযীব” এ কোন একটি শব্দও ইমাম আবূ হানীফা রহঃ সম্পর্কে সমালোচনামূলক উচ্চারণ করেননি। বরং তিনি ইমাম আজম সম্পর্কে প্রশংসা ও মানাকেব বর্ণনা করার পর স্বীয় বক্তব্যকে এই দুআর উপর শেষ করেছেন,

مناقب الإمام أبي حنيفة كثيرة جدا فرضي الله تعلى عنه واسكنه الفردوس آمين

ইমাম আবূ হানীফার মর্যাদাতো অনেক, এর বদলায় আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন। {তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং-৮১৭}



হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ স্বীয় গ্রন্থ “তাকরীবুত তাহজীব” এও একটি বাক্য ইমাম আজম রহঃ এর ব্যাপারে সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি।



রিজাল শাস্ত্রের বড় ইমাম সফিউদ্দীন খাজরাজী রহঃ তার “খুলাসাতু তাহযীবু তাহযীবিল কামাল” নামক গ্রন্থে ইমাম আজম রহঃ সম্পর্কে শুধু ফাযায়েল ও মানাকেবই লিখেছেন। একটি বাক্যও সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি।



রিজাল শাস্ত্রের গ্রন্থ তাহযীবু তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল লিজযাহাবীতেও একটি বাক্যও ইমাম আজম সম্পর্কে সমালোচনামূলক নেই।



ইমাম আব্দুল গনী মাকদিসী রহঃ এর লেখা জারাহ তাদীলের গ্রন্থ “আলকামাল ফী আসমায়ির রিজাল” এও একটি বাক্য সমালোচনামূলক উল্লেখ করা হয়নি।



ইমাম আবুল হাজ্জাজ আলমিজ্জী রহঃ এর জারাহ তাদীল গ্রন্থ “তাহযীবুল কামাল” এর মাঝে কোথাও ইমাম সাহেব সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়নি।



ইমাম নববী রহঃ তার জারাহ তাদীল গ্রন্থ “কিতাবু তাহযীবুল আসমায়ি ওয়াল লুগাত” এ সাত পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম সাহেব রহঃ এর হালাত ও প্রশংসা লিখলেও একটি বাক্য দিয়েও সমালোচনা করেননি।



ইমাম আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিন আসআদ আলইয়ামেনী ইয়াফেয়ী রহঃ ইমাম আজম রহঃ সম্পর্কে হালাত ও মানাকেব তার স্বীয় গ্রন্থ “কিতাবু মিরআতিল জিনান ওয়া ইবরাতিল ইয়াকজান” এ উল্লেখ করলেও একটি সমালোচনা বাক্য বলেননি। বরং উল্টো তারীখে বাগদাদে উল্লেখিত খতীব বাগদাদীর সমালোচনা ঠিক নয় মর্মে ইংগিতও করেছেন।

১০

ফক্বীহ ইবনুল আব্বাদ আলখলীলী রহঃ স্বীয় গ্রন্থ “শাজারাতুজ যাহাব ফী আখবারি মান যাহাব’ এ ইমাম আজম রহঃ সম্পর্কে শুধু হালাত ও মানাকেবই লিখেছেন, জারাহমূলক একটি বাক্যও নিঃসরণ করেননি।

জারাহ তাদীলের প্রসিদ্ধ ও মান্যবর ইমামগণ যেখানে ইমামে আজম রহঃ সম্পর্কে একটি বাক্যও সমালোচনামূলক উল্লেখ করেননি, সেখানে ইমাম সাহেবকে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব বলা অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের মিথ্যুকদের ধোঁকা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৯৪৮৫

বাবা মায়ের পক্ষ থেকে উমরা করা


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

Al Khobar ৩৪৪২৯

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৭৮১৩৮

ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাফেজুল হাদীসও ছিলেন


৯ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২২৭৮২

ইমাম আবু হানীফা : একজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস


৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

২FJP+WV৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

৫১০২০

ইসলামে আত্মরক্ষার হুকুম


১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭৪৩২৯৩

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy