আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

নূর ও বাশার প্রসঙ্গ

প্রশ্নঃ ৯৬৮৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) নূরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি। সূরা কাহফে মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী, আপনে বলুন আমি তোমাদের মতোই মানুষ (সূরা কাহফ আয়াতঃ ১১০) এখন আপনে আমাকে বলতে পারেন নবী (সাঃ) কে নূরের তৈরি বললে আপনার সমস্যা কি। আমার এমন প্রশ্ন করা দরকার কারন মহান আল্লাহ মানুষ,পশুপাখি, জিন,ফেরেশতা,কি দিয়ে তৈরি সেটা বলতে পারলো কিন্তু নবী (সাঃ) কি দিয়ে তৈরি সেটা বলতে পারলেন না?,

১ নভেম্বর, ২০২৩

গাবতলী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


নূর ও বাশার প্রসঙ্গ:
আল্লাহ পাক কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেনঃ-
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَى إِلَّا أَنْ قَالُوا أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَسُولًا

অর্থাৎ-আল্লাহ কি মানুষকে পয়গাম্বর করে পাঠিয়েছেন? তাদের এই উক্তি’ই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে, যখন তাদের নিকট হেদায়েত আসে।(বনী ইসরাইল-৯৪)

সাধারণ কাফের ও মুশরিকদের ধারণা ছিল যে, মানব আল্লাহ’র রাসূল হতে পারে না। কেননা, সে মানবীয় অভাব ও প্রয়োজনে অভ্যস্ত হয়। কাজেই সাধারণ মানুষের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নেই যে, তারা তাঁকে রাসূল মনে করে অনুসরণ করবে। তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার জবাবে কোরআনে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-
قُلْ لَوْ كَانَ فِي الْأَرْضِ مَلَائِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِمْ مِنَ السَّمَاءِ مَلَكًا رَسُولًا

অর্থাৎ- বলুন! যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবেআমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতাকে’ই তাদের পয়গম্বর করে প্রেরণ করতাম।
(বনী ইসরাইল-৯৫)

এখানে প্রথম আয়াতে ومامنعالناس (মানুষদের বিরত রাখে) বলে আয়াতে যে আলোচনা করা হয়েছে তার সারমর্ম হলো যে, রাসূলকে যাদের প্রতি প্রেরণ করা হয়, তাঁকে তাদেরই শ্রেণীভূক্ত হতে হবে। তারা মানব হলে রাসূলেরও মানব হওয়া জরুরী। কেননা শ্রেণী বিন্যাসে পারস্পরিক মিল ব্যতিত হেদায়েত ও পথ প্রদর্শনের উপকার অর্জিত হয় না। ফেরেশতারা ক্ষুধা, পিপাসা জানে না, কাম প্রবৃত্তিরও জ্ঞান রাখে না,শীত-গ্রীষ্মের অনুভূতি ও পরিশ্রম জনিত ক্লান্তি থেকেও মুক্ত। এমতাবস্থায় মানুষের প্রতি কোন ফেরেশতাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হলে, সে মানবের কাছেও উপরোক্তরুপ কর্ম আশা করত এবং মানবের দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলদ্ধি করতে পারত না। এমনিভাবে মানবও যখন বুঝত যে, সে ফেরেশতা তাঁর কাজ কর্মের অনুসরণ-অনুকরণ করার যোগ্যতা মানুষের নেই, তখন মানবও তার অনুসরণ-অনুকরণ মোটেই করত না।

সুতরাং- সংশোধন ও পথ প্রদর্শনের উপকার তখনই অর্জিত হতে পারে যখন রাসূল মানব জাতির মধ্যে থেকে হবে। তিনি একদিকে মানবীয় ভাবাবেগ ও স্বভাবগত কামনা-বাসনার বাহকহবেন। যাতে সাধারণ মানব ও ফেরেশতাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং ওহী নিয়ে আগমনকারী ফেরেশতার কাছ থেকে ওহী বুঝে নিয়ে স্বজাতীয় মানবের কাছে পৌছাতে পারেন।

অন্যদিকে চারিত্রিক পবিত্রতা, উর্ধ্বজগতের আধ্যাত্মিকতা, উন্নত রুচিশীলতা ও আনুগত্যশীলতার দিক দিয়ে থাকবে ফেরেশতার সাথে সামঞ্জস্য। আর অন্যরা তাঁর মাঝে ফেরেশতাসুলভ চরিত্র দেখে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবে। অপরদিকে মনুষ্য অনুভূতির কারণে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করবে। আর তখনই পূর্ণ হতে পারে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সাথে সাথে রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য।

কোরআন-হাদীসের দৃষ্টিতে হুজুর (সাঃ) মাটির তৈরি মানুষঃ-
উপরোক্ত উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে’ই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যত নবী-রাসূল পৃথিবীতে প্রেরণ করেছে তন্মধ্যে হযরত আদম (আঃ) প্রথম নবী ও প্রথম মানুষ। তেমনিভাবে তাঁর সকল সন্তানরাও মানুষ। আর আদম (আঃ) এর
সন্তানদের মধ্যে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ওএকজন এবং তিনিও মানুষ। যেমনি ভাবে কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ

অর্থাৎ- হে মুহাম্মদ (সাঃ) আপনি বলুন- যে, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ।(সূরা-কাহ্ফ-১১০)

এমনিভাবে হাদীসে আছে- হুজুর (সাঃ) যখন মদিনায় হিজরত করে গেলেন তখন দেখলেন যে, তারা খেজুর গাছে কলম দিত। হুজুর (সাঃ) তাঁদের বললেন তোমরা এগুলো কি কর? তাঁরা বলল আমরা এগুলো আগে থেকে করতাম। হুজুর (সাঃ) তাঁদের বললেন- হয়তো তোমরা এগুলো না করলে ভালো হবে। অতঃপর তারা তা পরিত্যাগ করলে পরবর্তী বছর ফসল কম হলো। তারা এ বিষয়ে হুজুর (সাঃ) কে জানালে, তিঁনি বললেনঃ-

انماانابشراذاامرتكمبشيئمنامردينكمفخذوابهواذاامرتكمبشيئمارائفانماانابشر-(رواه-مسلم)
অর্থাৎ- আমি তোমাদের মতই মানুষ, যখন আমি তোমাদেরকে দ্বীনি কোন বিষয়ে আদেশ করি, তখন তা আঁকড়ে ধর। আর যখন দুনিয়াবী কোন বিষয়ে আদেশ করি সেক্ষেত্রে আমি তোমাদের মতই মানুষ।(মুসলিম,মেশকাত-২৮)

তেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামগণেরওআকীদা ছিল হুজুর (সাঃ) মানুষ। যেমন, হুজুর (সাঃ) এর ওফাতের পর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক ভাষনে বলেন-

انرسولاللهصلىاللهعليهوسلمقدماتوانهبشر)دارمى)

অর্থাৎ- নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন কেননা তিনিও একজন মানুষ।(দারেমী -২৩)
সুতরাং- কোরআন-হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামগণের মতামত দ্বারা স্পষ্টভাবে ইহাই প্রতিয়মান হয় যে, হুজুর (সাঃ) মানুষ ছিলেন। আর ইহাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা।
কোরআন-হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামগণেরইজমা দ্বারাএকথাই প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সাঃ) ছিলেন মানুষ। আর মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালা মাটি দ্বারাই সৃষ্টি করেছেন। যেমনিভাবে কালামে পাকে ইরশাদ করেন-
خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ
অর্থাৎ- আল্লাহ মানুষকে পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছেন।
(সূরা- আর রহমান-১৪)

আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর হযরত আদম (আঃ) থেকে রাসুল(সাঃ) পর্যন্তসকল নবী রাসূলগণ ছিলেন মানুষ ও সত্বাগতভাবে মাটির তৈরী।
সুতরাং কোরআনের আয়াতের ব্যাপকতার প্রেক্ষিতে ইহাই প্রতিয়মান হয় যে, হুজুর (সাঃ)ও মাটির তৈরি মানুষ, যা কোরআনে পাকের উক্ত আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। এবং এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।


হাদীসের ভাষ্যে হুজুর (সাঃ) মাটির তৈরি মানুষঃ-

হযরত আবুল আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন আল্লাহ তা’য়ালা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, জিবরিল (আঃ)কে এক ধরণের সাদা মাটি আনার জন্য নির্দেশ দিলেন। তখনি হযরত জিবরিল (আঃ) বেহেশতের ফেরেশতাদের মধ্যে অবতীর্ণ হলেন এবং হুজুর (সাঃ)এর রওজা মুবারক হতে সাদা ও উজ্জল রঙের এক মুষ্ঠি মাটি নিয়ে এলেন। এবং এ মাটি বেহেশতের পবিত্র পানি দ্বারা খামির বানানো হয়েছে।(শরহে শেফা-২/২০১)

বেরলভী আলেমদেরশিরোমনি আহমদ রেজা খাঁন নিজেই কোন এক বিষয় বণর্ণা করতে গিয়ে খতীবে বাগদাদীর উদ্ধতি দিয়ে বলেন যে,হযরত ইবনে মাস’উদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, হুজুর (সাঃ) ইরশাদ করেন! আমাকে, আবু-বকরকে ও ওমরকে একই মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এক স্থানেই কবর দেয়া হবে(আস-সুন্নিয়্যাতুল য়ানীকাহ-৮৬)

“হুজুর (সাঃ) মানুষ” তার যৌক্তিক প্রমাণঃ-

মানুষ পৃথিবিতে আগমন করার স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী হুজুর (সাঃ)ও বাবা আব্দুল্লাহর ওরশে ও মা আমেনার গর্ভ ধারণেরমাধ্যমে পৃথিবীতে আগমন করেছেন।হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে মা আমেনা ও বাবা আব্দুল্লাহ পর্যন্ত হুজুর (সাঃ) এর বংশ ধারার সবাই ছিলেন মাটির তৈরি মানুষ। আর আল্লাহর সুন্নাত ও প্রাকৃতির নিয়মানুযায়ী মানুষের ওরশে মানুষই হয় কোন ফেরেশতা বা জি¦ন নয়।
সুতরাং তিনি মানুষ আর কোরআন-হাদিসের ভাষ্যনুযায়ী সব মানুষই মাটির তৈরি অতএব বুঝা যা”্ছে হুজুর (সাঃ)ও মানুষএবং মাটির তৈরি।

তাছাড়া হুজুর (সাঃ) বিবাহ-শাদী করেছেন। পরিবার-পরিজন ছিল। যেমনঃ- হুজুর (সাঃ)এর ১১ জন পতœীর মধ্যে সবাই ছিলেন মাটির তৈরি মানুষ। এতে কারো দ্বিমত নেই। আর নিয়ম হল মানুষ শুধু মাটির তৈরি মানুষকে’ই বিবাহ করতে পারে, অন্য কোন জাতিকে নয়। এমনকি যেখানে কোন জ্বিন মানবের আকৃতি ধারণ করলেও সত্বাগত ভিন্নতার কারণে তার সাথে কোন মাটির তৈরি মানুষের বিবাহ জায়েয নেই, সেখানে কি করে মেনে নেয়া যায় যে, হুজুর (সাঃ)এর পতœীগণ ও হুজুর (সাঃ)এর মাঝে মানবাকৃতির হওয়া সত্তে¡ও-সত্বাগত ভিন্নতা রয়েছে। তেমনিভাবে হুজুর (সাঃ) এর সন্তানাদিও ছিল এবং তাঁরাও ছিল মাটির তৈরি মানুষ।এটাও বা কিভাবে মেনে নেয়া যায় যে, পিতা ও সন্তানের মধ্যে থাকবে সত্বাগত বা জাতিগত পার্থক্য।

সর্বোপরি কোরআন-হাদীস, সাহাবায়ে কেরামগণের মতামত ও যুক্তিযুক্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, সহীহ কথা এটাই যে- হুজুর (সাঃ) মাটির তৈরি মানুষ। এবং আল্লাহর মনোনীত রাসূল যিনি সম্মানের চূড়ান্ত সীমায় অধিষ্ঠিত। এবং মানুষ হওয়ার সাথে সাথে তাঁর উক্ত সম্মান ও মর্যাদাকে স্বীকার করা ফেরেশতাসুলভগুন। পক্ষান্তরে তা অস্বীকার করা ইবলিশ ওতার দোসর মক্কার কাফের-মুশরিকদের সাথে সামঞ্জস্যশীল অভ্যাস।

তাছাড়া কোরআনের আয়াত, রাসূলের হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামগণের উক্তির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে-হুজুর (সাঃ) মানুষ, আর কোরআনের আয়াতের ব্যাপকতা, রাসূলের হাদিসের স্পষ্টতা ও সাহাবায়ে কেরামগণের উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সাঃ)কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য কোন মত প্রমাণ করতে হলে সেক্ষেত্রেও কোরআন-হাদিসের স্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমান পেশ করতে হবে, যা অদ্যবধি বিদ’আতিরা পারেনি, বরং বানোয়াট হাদিস ও মিথ্যা কাহিনির উপর ভিত্তি করে’ই তারা উক্ত আকিদা প্রমান করতে চায় যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

বস্তুত যারা হুজুর (সাঃ) কে নূরের তৈরি বলে দাবী করে থাকে, মূলত তারা এ দাবী এই ধারণার উপর ভিত্তি করে’ইকরে থাকে যে,‘হুজুর (সাঃ)কে মাটির তৈরী’ বলা হলে তাঁর মর্যাদা হ্্রাস করা হবে এবং ‘হুজুর (সাঃ)কে‘নূরের তৈরী’ বলা হলে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। তাই তারা মর্যাদা বৃদ্ধি হবে মনে করেই ‘হুজুর (সাঃ)কে নূরের তৈরী বলে দাবী করে থাকেন।

কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মাটির তৈরী বা নূরের তৈরী হওয়ার মাঝে মর্যাদা হ্্রাস-বৃদ্ধির কিছু’ই নেই, বরং আল্লাহ যাকে মর্যাদাবান করেন, তিঁনি এমনিতেই মর্যাদাবান হয়ে থাকেন।

নূর নয়, মাটির তৈরি’ই শ্রেষ্ঠতম ঃ-
হযরত আদম (আঃ)কে মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেফেরেশতাদের উপর তার মর্যাদা দিয়ে আল্লাহ পাক নূরের তৈরি ফেরেশতাদের আদেশ করলেন ঃ-
اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ
অর্থাৎ-তোমরা(মাটির তৈরি)আদমকে সিজদা কর, অতঃপর তাঁরা সবাই সিজদা করল ইবলিশ ব্যতিত।(সূরা-বাক্বারা-৩৪)

নূরের তৈরি ফেরেশতাদের উপর মাটির তৈরি আদম (আঃ কে মর্যাদা দিয়ে আল্লাহ তা’য়ালা যখন তাদেরকে সন্মান প্রদর্শনার্থে সেজদা করার আদেশ দিলেন। তখন সবাই আদম (আঃ)কে সন্মানিত মেনে নিয়ে সন্মান প্রদর্শনার্থে সেজদা করল। কিন্তু কেবল মাত্র ইবলিশ’ই মাটির তৈরি ও নূরের তৈরির মাঝে সম্মান ও মার্যাদার পার্থক্য করল এবংমাটির তৈরি হওয়ার কারণে আদম (আঃ)এর এই সম্মান ও মর্যাদাকে মেনে নিতে অস্বীকার করল। যেমন আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ-

قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ . قَالَ لَمْ أَكُنْ لِأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ. قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ .وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَى يَوْمِ الدِّينِ

আল্লাহ-বললেন হে ইবলিশ! তোমার কি হলো যে, তুমি সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে স্বীকৃত হলে না ? সে বললঃ- আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজ্দা করব, যাকে আপনি পঁচা কর্দম থেকে তৈরি ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বললেন তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। তুমি বিতাড়িত এবং তোমার প্রতি ন্যায় বিচারের দিন পর্যন্ত অভিসম্পাত-
(সূরা-হিজর- আয়াত-৩২-৩৫)


অর্থাৎ-ইবলিশ আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করে উল্টো এই যুক্তি দাঁড় করাল যে, মাটির চেয়ে আগুনের দাম বেশী। তাই কিভাবে তাঁকে সেজদা করা যায়। কেননা ইবলিশেরধারণা ছিল যে, হযরত আদম (আঃ) মাটির তৈরি আর আমি তো আগুনের তৈরি।সুতরাং-মাটির তৈরি আদম থেকে আমি’ই উত্তম হবো। যার কারণে সে কাফের ও লা’নত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। অপরদিকে অন্য ফেরেশতাগণ নিজেরা নূরের তৈরি হওয়া সত্বেও কোন যুক্তি তর্কের ধার ধারলো না বরং তারা আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে মাটির তৈরি আদমকে নিজেদের থেকে শ্রেষ্ঠতম মেনে নিয়ে তাঁকে সেজদা করল।
উক্ত ঘটনা থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, মাটির তৈরি মানুষকে শ্রেষ্ঠতম মনে করা ফেরেশতাদের গুণ আর যারা ‘বাশার’ অর্থাৎ-মানুষকে মাটির তৈরি হওয়ার কারণে শ্রেষ্ঠতম ও আল্লাহর রাসূল মানতে অথবা রাসূলকে মানুষ বা রাসূল মাটির তৈরি হয়েও শ্রেষ্ঠতম হওয়াকেঅস্বীকার করে, তারা ইবলিশ ও তার দোসর কাফের-মুশরিকদের গুনে গুনাম্বিত। অর্থাৎ- মক্কার কাফের-মোশরেকরা যেমনিভাবে হুযুর (সাঃ) মানুষ হওয়ার কারনে তাঁকে রাসূল মানতে রাজি ছিল না, ঠিক তেমনিভাবে বিদ’আতিরাও রাসূূলকে মানুষ মানতে রাজি নয়। ব্যাপারটি এমন যে- দুই পাগলের মধ্যে এই নিয়ে বাকযুদ্ধ চলছিল যে- একজন বলছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ৩০ কিঃমিঃ, অন্যজন বলছে- চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ৩০ কিঃমিঃ। ঠিক তেমনিভাবে মক্কার কাফের-মোশরেকরা মানুষকে রাসূল মানতে রাজি নয়, আর বিদ’আতিরা রাসূলকে মানুষ মানতে রাজি নয়।


সম্মানিত পাঠক! মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মাটির তৈরি বা নূরের তৈরির কোন বৈশিষ্ট নেই। বরং আল্লাহ যাকে সন্মান দেন তা এমনিতেই সম্মানিত, চাই তা মাটি হোক বা নূর হোক। সর্বোপরি আল্লাহ পাকরাব্বুল আলামীন ঘোষনা করেন-
اناكرمكمعنداللهاتقىكم
তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট অধিকসন্মানিত ব্যক্তি সে’ই যে অধিক তাকওয়াবান-(আল-কোরআন)
আর সমস্তমানব জাতির মধ্যে হুযূর (সাঃ)এর তাকওয়াকোন ব্যক্তি বিশেষের সাথে তুলনা করা তো দূরের কথা বরং সমগ্র মানব ও জিন জাতির তাকওয়া ও পরহেযগারীকে একত্র করলেও হুজুর (সাঃ)এর তাকওয়া ও পরহেযগারীর সাথেতুলনা করার উপযূক্তও হবেনা

সুতরাং আল্লাহর ঘোষনানুযায়ী হুজুর (সাঃ) শুধু সমস্ত মানব জাতি’ই নয়, বরং সমস্ত সৃষ্টি কুল থেকেও শ্রেষ্ঠও বেশী সম্মানিত।

আর তাঁর এই শ্রেষ্ঠত্ব এমন যে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের সাথে অন্য কারো তুলনাই হতে পারে না এবং তাঁর এই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে ‘নূরের তৈরি বা মাটির’ তৈরি এর কোন আলোচনা করার প্রশ্নই আসে না। তারপরও যারা ‘নূরের তৈরির কারনেই মর্যাদাবান’একথার দাবিদার এবং ইহা নিয়ে সমাজে কাঁদা ছোড়া-ছোড়িতে মেতে উঠেছেন এবং তাদের এই অহেতুক কথাবার্তার দ্বারা জনসাধারণ বিভ্রান্ত হতে চলছে, তাই জনসাধারনের অবগতির জন্যই এখানে কিছু আলোকপাত করা হচ্ছে-

হুজুর (সাঃ)কে যারা নূরের তৈরি বলেন তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সমস্ত মানুষ যেখানে মাটির তৈরি যা আপনারাও নিঃসংকোচে স্বীকার করেন তবে সেখানে নবীজীকে নূরের তৈরি বলেন কেন? তখন তারা উত্তর দিয়ে থাকে যে, হুজুর (সাঃ)এরমর্যাদা আমাদের মত নয় বরং অনেক উপরে।সুতরাং আমরা মাটির তৈরি, হুজুর (সাঃ)ও মাটির তৈরি তাহলে আর মর্যাদার প্রার্থক্য থাকল কোথায়? এতএব হুজুর (সাঃ) মাটির তৈরি হতে পারে না বরং নূরের তৈরি।

এখানে তাদের বুঝা উচিত যে, আল্লাহপাক সন্মানিত হওয়ার মাধ্যম হিসেবে তাকওয়াবান হওয়ার শর্ত করেছেন। নূর, মাটি বা অন্য কোন শর্ত নয়।
সুতরাং এখানে যারা‘হুজুর (সাঃ)কে নূরের তৈরি’দাবি করার মাধ্যমে সম্মান ও মর্যাদা বাড়াতে চায়, তাঁদের বুঝা উচিৎ যে সম্মান দেনেওয়ালা আল্লাহ তায়ালা। তিনিযেটাকে সম্মান দিতে চান সেটা এমনিতেই সম্মানি ও মর্যাদাবান হবে। বান্দা সেটাকে আল্লাহ থেকে আরো আগে বেড়ে সম্মান প্রদর্শন করলে সেটা সম্মানতো হবেই না বরং হিতে বিপরীত হওয়ারসম্ভাবনা রয়েছে।
যেমন আল্লাহ তা‘য়ালা খানায়ে কা’বাকে সম্মানিত করেছেন এবং এর সম্মান প্রদর্শন হিসেবে হেরেমের সীমানার ভেতরে শিকার করা নিষেধ করেছেন এবং খানায়ে কা’বার সম্মান ও আল্লাহর ইবাদত হিসেবে খানায়ে কা’বাকে তওয়াফ করার হুকুম দিয়েছেন, এমতাবস্থায় যে কা’বা ঘর কোন হীরা, জহরত মণি-মুক্তা বা স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত নয় বরং পাথর দিয়ে কাবা ঘর নির্মিত। এখন আল্লাহ তা‘য়ালা কা’বাকে সম্মান দিয়েছেন। এটা খুবই সম্মানিত এটা মনে করে কেউ যদি তওয়াফ করা বাদ দিয়ে শুধু কা’বার পাশে বসে বসে ‘এই কা’বাখুব সম্মানিত, এই কা’বা খুবই মর্যাদাবান, ইহা স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত, জহরত ও মুক্তা খচিত, মেশক আম্বড় দিয়ে গথিত’ ইত্যাদি আরো এমন সবগুনকির্তন করতে থাকে যা বাস্তবিক’ই কা’বার সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং সাথে সাথে নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ যথাঃ শিকার করা, গালি দেয়া, হত্যা করাসহ সকল নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ করতে থাকে, তাহলে এটা কিকা‘বার সম্মান করা হবে? না কি স্ত্রীকে বেশী আদর করতে যেয়ে জিহার ( স্ত্রীকে মাহরামের সাথে তুলনা) করার মত অবস্থা হবে। তা পাঠক বৃন্দই বিবেচনা করুন।
হুজুর (সাঃ) নূরের তৈরি হলে কি কি ভ্রান্তি আবশ্যক হয়?

যারা হুজুর (সাঃ)কে নূরের তৈরি বলে দাবী করে থাকে,তারা শুধু মাত্রযতসব ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক দলিল সমূহ’ই পেশ করে থাকেন(যার খন্ডন সামনে আসবে ইনশাল্লাহ)
কিছুক্ষণের জন্য যদি আমরা তাদেরএই দাবিসমূহ মেনেও নিই, তাহলে দেখুন হুজুর (সাঃ) নূরের তৈরি হওয়ার কারনে কি কি ভ্রান্তি আবশ্যক হয়?

প্রথমতঃ জানাযাক নূর অর্থ কি? নূর অর্থ আলো যা দ্বারা আল্লাহ পাক ফেরেশতাগণকে সৃষ্টি করেছেন। এখন যদি বলা হয় যে, এই নূর দ্বারাই আল্লাহ পাক রাসূল (সাঃ)কে সৃষ্টি করেছেন, তাহলে এখানে হুজুর (সাঃ) এর সম্মান বাড়ানো নয় বরংযথাস্থান থেকে নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে। কেননাআল্লাহ তা’য়ালাফেরেশতাগণকে সৃষ্টি করেছেন নূর দ্বারা, আর মানুষ সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা, অতঃপর এই নূরের তৈরি ফেরেশতাদেরকে’ই হুকুম করেছেন মাটির তৈরি মানুষকে সেজদা করতে। ইহা থেকেই সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিয়মান হয় যে,নুরের তৈরি ফেরেশতা নয়,বরং মাটির তৈরি মানুষ,ই শ্রেষ্ঠ।(যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে এবং এটা প্রমানিত হয়েছে যে, নূরের তৈরি ফেরেশতার চেয়ে মাটির তৈরি মানুষ’ইদামী ও শ্রেষ্ঠ)।

এখন যারা হুজুর (সাঃ)কে নূরের তৈরি বলে দাবি করে থাকেন আপনারা’ই বলুন- হুজুর (সাঃ)কি মানুষ, না মানুষ নয়? যদি বলেন মানুষ তাহলে তো কোরআনের আয়াতের ব্যাপকতা ও হাদিসের ভাষ্যনুসারে তিনিমাটির তৈরি এবং নূরের তৈরি ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর যদি বলেন যে, না মানুষ নয় বরং নূরের তৈরি ফেরেশতা বা অন্য কিছু। তাহলে আপনাদের কথা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আপনারা হুজুর (সাঃ) এর মর্যাদা বৃদ্ধি নয় বরং যথাস্থান থেকে নিচে নামাতেই এ দাবি করে থাকেন। আর যদি বলেন যে, নূরের তৈরি, আবার মানুষ এই হিসেবে যে হুজুর (সাঃ)এর রুহ মোবারক হিসেবে তিনি নূরের তৈরি এবং কোরআন-হাদিসের ভাষ্যমতে মাটি দ্বারা দেহ তৈরি হিসেবে মানুষ তাহলে এক্ষেত্রে আপনাদের সাথে আমাদের কোন মতবিরোধ নেই। আর যদি বলেন যে দেহের তৈরি হিসেবেই নূরের তৈরি আবার মানুষও, তাহলে এখানে আপনাদেরকে স্পষ্টভাবে বলতে হবে যে নূরের তৈরি মানুষ হয় কিভাবে অথচ আল্লাহ পাক ঘোষনা করেছেন ‘আমি মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছি’।

সুতরাং এক্ষেত্রে আপনাদের কথা আল্লাহর কালামের সাথে সাংঘর্ষিক। এখন আপনারাই বলুন! আপনাদের কথা গ্রহণ যোগ্য কি না ?
আর যদি বলেন যে, সব মানুষকেই নয় বরং শুধু রাসূল (সাঃ) কেই আল্লাহ তা’য়ালা নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, তাহলে এক্ষেত্রে আপনারা যেসব অস্পষ্ট ও দুর্বল দলীল পেশ করে থাকেন তা গ্রহণ যোগ্য নয়, বরং এক্ষেত্রে আপনাদেরকে সুস্পষ্ট দলীল দ্বারাই তা প্রমাণ করতে হবে, যা অদ্যবধি আপনারা পারেননি।
সুতরাং-‘হুজুর (সাঃ) নূরের তৈরি’ এই আকীদা কালামে পাকের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। আর কালামে পাকের সাথে সাংঘর্ষিকএমন আকীদা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।


জাতি নূরের শিরীকি আকিদা-

বিদ’আতিদের অনেকে আবার হুজুর (সাঃ)কে ‘আল্লাহ তা‘য়ালার জাতি নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে’ বলে দাবি করে থাকে যা কিনা পূর্বের দাবি থেকে আরো জঘন্যতম শিরকী আকীদা।এবং তা কিভাবে এখানে তার কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা হচ্ছে-

প্রথমত- আমরা আপনাদের প্রশ্ন করতে চাই যে, ঐ নূর যা দ্বারা আল্লাহ পাক রাসূল (সাঃ)কে সৃষ্টি করেছেন তা কি রাসূল (সাঃ)কে সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহর জাতের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, নাকি ছিল না? যদি বলেন ছিল না, তাহলে তা আর জাতি নূর হতে পারে না, আর জাতি নূর না হলে মর্যাদা বাড়ছেনা বরং কমছে, যার আলোচনা পূর্বে’ই উল্লেখ করা হয়েছে।আর যদি বলেন যে, পূর্ব থেকেই সেই নূরটুকু আল্লাহর সত্বার সাথে সম্পৃক্ত ছিল এবং পরে ঐ নূর টুকুকে আল্লাহর সত্বা থেকে আলাদাকরে তা দ্বারা হুজুর (সাঃ) কে সৃষ্টি করাহয়েছে। তাহলে আমরা প্রশ্ন করতে চাই যে, ঐ নূর যা পূর্বে আল্লাহর সত্বার সাথে সম্পৃক্ত ছিল’ তা কি আল্লাহর সত্বা তথা আল্লাহ’ হিসেবেই ছিল নাকি, ‘আল্লাহর গাইর’ তথা অন্য কোন বস্তু হিসেবে ছিল। যদিবলেন যে, আল্লাহর সত্বা হিসেবেই ছিল তাহলে আমরা বলব আল্লাহর সত্বা তো ভাগ হওয়া জায়েয নাই, এখানে কিভাবেভাগ হবে?আর যদি বলেন যে, না আল্লাহর সত্বার গাইর হিসেবে ছিল তাহলে আমরা বলব,যে জিনিস আল্লাহ নয় তা কিভাবে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে?এখানে তো আল্লাহর সাথে গায়রুল্লাহর সম্পৃক্ততা আবশ্যক হয়। আর এটা জায়েজ নাই বরং বাতেল।
সুতরাং আপনাদের দাবিকৃত বিষয়ও বাতেল।

প্রতিপক্ষের প্রতি করুনা বশত: এখানেও যদি আমরা কিছুক্ষণের জন্য তাদের দাবি মেনে নেই, যে আল্লাহর জাতিনূর যা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত ছিল তা ভাগ হতে পারে তাহলে এখানে আরেকটা প্রশ্ন চলে আসে যে, আল্লাহর জাত থেকে সেই নূরটুকু পৃথক হওয়ার পর কি আল্লাহ হিসেবে ছিল নাকি গাইরুল্লাহ হিসেবে ছিল? যদি বলেন আল্লাহ হিসেবেই ছিল এবং তা দিয়েই রাসূল (সাঃ)কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাহলে তো আল্লাহ দিয়ে রাসূল তৈরি, সুতরাং রাসূল ও আল্লাহ এক ও অভিন্ন হওয়া আবশ্যক হয় যা সম্পূর্ণ র্শিকী আকিদা।আর যদি বলেন যে,না ঐ নূর টুকু গাইরুল্লাহ হিসেবে ছিল তাহলেও ঐ পূর্বের ভ্রান্তি আবশ্যক হয়। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে গাইরুল্লাহর সম্পৃক্ততা আবশ্যক আসে।।
উপরোক্ত সমস্ত সুরতগুলোই বাতিল আর আপনাদের দাবিকৃত বিষয় অর্থাৎ-‘হুজুর (সাঃ) আল্লাহর জাতি নূরের তৈরি’ ইহা উপরোক্ত ভ্রান্ত সুরুতগুলোকে আবশ্যক করে সেগুলোও বাতিল। হুজুর (সাঃ) নূরে তৈরি বলে এসব ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত না হয়ে তা হতে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরী।অতএব এই বাতিলবিষয়সমূহ নিয়েজনসমাজে ফিৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক পথে ফিরে আসার আহŸান করছি।

‘নূরের তৈরি’ দাবীদারদের দলীল ও তার খন্ডনঃ-

হুজুর (সাঃ) নূরের তৈরি’র দাবীদারেরা প্রথমত কোরআনে পাকের এই আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করে থাকে-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ

অর্থাৎ-তোমাদের কাছে একটি উজ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্বল গ্রন্থ।(সূরা মায়েদাহ -১৫)

উল্লেখিত আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করতে গিয়ে তারা বলেন যে, معطوفওمعطوفعليهএকটি আরেকটির বিপরীত হয়ে থাকে, এবং এখানেنور ও كتابمبين একটি আরেকটির বিপরীত। অতএব এখানে نور দ্বারা হুজুর (সাঃ) এবং كتابمبين দ্বারা কোরআনুল কারীম উদ্দেশ্য।

উক্ত দলীলের প্রথম জবাবঃ-

উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখিত ‘نور’ শব্দ দ্বারা হুজুর (সাঃ) নয়, বরং কোরআনুল কারীমই উদ্দেশ্য।

(তাফসীরে বায়যাভী-১/২৬৮ দারুত তাওফীকীয়া,সফওয়াতুত তাফাসীর-১/৩২৬ দারুল হাদীস, মিশর -বয়ানুল কোরআন-১/৪৫৪)

আরمعطوفعليهও معطوفউভয়টি পরস্পর বৈপরিত্যের যে দাবী তারা করেছে, তা আমরা অস্বীকার করছিনা। কিন্তু এই বৈপরিত্য যে মুলবস্তুর ক্ষেত্রে’ই হতে হবে তাতো জরুরী নয়। বরং মূল বস্তুর প্রাসঙ্গিক দিক থেকেও হতে পারে, এবং সেগুলোর মধ্যে বৈপরিত্য থকতে পারে যেমনঃ আল্লাহ পাক রাব্বুলআলামিন ইরশাদ করেনঃ-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا .وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا

অর্থাৎ- হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর দিকে আহŸায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।(আহযাব-৪৫,৪৬(

উল্লে¬খিত আয়াতে আল্লাহপাক রাসূল (সাঃ)এর কযেকটি গুণ উলে¬খ করেছেন, এবং সেগুলোর মাঝে আত্ফ করেছেন। কেননা উল্লে¬খিত গুনগুলোর মাঝে পরষ্পর বৈপরিত্য রয়েছে। যদিও রাসূল (সাঃ)এর সত্তা এক ও অভিন্ন, কিন্তু তাঁর সাথে সংশি¬ষ্ট তাঁর একাধিক গুণ তথা সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভিতিপ্রদর্শনকারী এগুলো একটি অপরটির বিপরিত। যার কারনে এখানে আত্ফ করা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে এখানেও কুরআনুল কারীমের দুটি ভিন্ন ভিন্ন গুন উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো-

প্রথমতঃ-نور(অর্থাৎ- আল্লাহ প্রদত্ত আলো) আর ইহা এজন্য যে- কুরআনুল কারীম বাতিলের শত-ঘন অন্ধকারের মাঝেও বান্দাদেরকে হেদায়েতের আলো দ্বারা পথ প্রদর্শন করে থাকে।

দ্বিতীয়তঃ- كتابمبين (সুষ্পষ্ট কিতাব) অর্থাৎ- হেদায়েতের আলো হওয়ার সাথে সাথে ইহা আল্লাহর বাণীকে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণণা করে দেয়।
আর এই উভয় গুন পরষ্পর ভিন্ন বিধায় এখানেعطف করা হয়েছে।কিন্তু যে জিনিসের গুন বর্ণনা করা হয়েছে তা সত্ত¡াগত দিক থেকে এক ও অভিন্ন।
সুতরাং এখানে নূর দ্বারা রাসূল (সাঃ) নয়, বরং কুরআনুল কারীম’ই উদ্দেশ্য।
(বয়ানুল কোরআন-১/৪৫৬)

দ্বিতীয় জবাবঃ-এখানেنورশব্দ দ্বারা হুজুর (সাঃ)এর সত্ত¡া উদ্দেশ্য না হওয়ার আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে তা এই যে,
১/ উক্ত আয়াতের শুরুতেই পৃথকভাবে হুজুর (সাঃ) এর সত্ত¡ার আলোচনা করা হয়েছে-যথাঃ-আহলে কিতাবদের সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا.......الاية

অর্থাৎ-হে আহলে কিতাব (ইহুদী-খ্রীষ্টান) স¤প্রদায় তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন।
[

উক্ত আয়াতের শুরুতে ভিন্নভাবে হুজুর (সাঃ) এর সত্ত¡ার আলোচনার পরে’ই আয়াতের শেষে কিতাব তথা কুরআনুল কারীমের আলোচনা করা হয়েছে।

২/ আয়াতে উল্লেখিত نورদ্বারা হুজুর (সাঃ) এর সত্ত¡া উদ্দেশ্য না হয়ে বরং‘نور’ ও كتبمبين উভয় শব্দ দ্বারা কুরআনুল কারীম উদ্দেশ্য হওয়াটা উক্ত আয়াতের পরের আয়াতের শুরুর অংশ দ্বারাই বুঝা যায় যথা-

قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ. يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ..........الاية
অর্থাৎ- তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উজ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। এর দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে পথ প্রদর্শন করেন, যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে-(সূরা- মায়েদা - ১৫,১৬)

উল্লেখিত আয়াতে‘به’শব্দের মধ্যে এখানে যমীরকে এক বচন আনা হয়েছে। যদি نور ওكتابمبين উভয়টি ভিন্ন ভিন্ন দুটি সত্ত¡া হতো তবে এখানে এক বচন এর যমীর به এর স্থলে দ্বিবচনের যমীর بهما আনাই অধিক উপযোগী ছিল।
সুতরাং একবচনের ‘যমীর’ (সর্বনাম) আনার দ্বারা ইহাই প্রতিয়মান হয় যে, উভয় শব্দ দ্বারা একই সত্ত¡া উদ্দেশ্য আর তা হলো -কুরআনুলকারীম। (বয়ানুল কোরআন - ১/৪৫৬)

[
তৃতীয় জবাবঃ- বিপক্ষ দলের দলীল ও দাবী অনুযায়ী যদি আমরা কিছুক্ষনের জন্য মেনেও নেই যে,نور দ্বারা এখানে হুজুর (সাঃ)এর সত্ত¡া‘ই উদ্দেশ্য, তবুও তাদের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। কেননা উক্ত শব্দ দ্বারা হুজুর (সাঃ) এর সত্ত¡া বুঝিয়ে তাঁরা এটাই প্রমাণ করতে চান যে, “হুজুর (সাঃ) ‘নূরের” তৈরি।অথচ মুফাসসিরিনে কেরামগণের মধ্যে থেকে যারা‘ইنور শব্দ দ্বারা হুজুর (সাঃ) এর সত্ত¡া উদ্দেশ্য বলে মত ব্যক্ত করেছেন তাঁরাও তাদের কিতাবের অন্য আয়াতের তাফসীরে সুস্পষ্টভাবেহুজুর (সাঃ) মানুষ হওয়াকে স্বীকার করেছেন। যেমনঃ- তাফসীরে জালাইলাইনেنورএর তাফসীর রাসূল (সাঃ) এবং بشرএর তাফসীর করা হয়েছে-ادمى তথা মানুষ দ্বারা।(তাফসীরে জালাইলাইন ২/২৫৩পৃঃ)
আর মানুষকে আল্লাহ তা‘য়ালা মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছেন। যদিও স্থান ও সম্মানের দিক থেকে সেই মাটি অতি মূল্যবান ও সম্মানি। আর রাসূল (সাঃ) মানুষ হওয়া সত্বেও এখানে ‘নূর’ বলে উল্লেখ করার কারণ এই যে, কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ও স্বয়ং কোরআনুল কারীমকেও নূর বলে অভিহিত করা হয়েছে।(সূরা- নিসা ১৭৫,সূরা-আন’য়াম,৯১ সূরা- আ‘রাফ-১৫৭,সূরা-শুরা-৫২)

এগুলোকে নূর এজন্যই বলা হয়েছে যে, তা হেদায়েতের পথ প্রদর্শন করে। আর স্বয়ং হুজুর (সাঃ)ও হেদায়েতের পথ প্রদর্শন করেন বিধায় কোরআনের সাথে গুনগত দিক থেকে মিল থাকায় হুজুর (সাঃ) কেও ‘নূর’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।(তাফসীরে আইসার -১/৪০০পৃঃ)

মোটকথা- হেদায়েত হচ্ছে জ্যোতি বা আলো আর হুজুর (সঃ) হচ্ছে সেই হেদায়েত বা আলোর দিশারী তাইগুণগত দিক থেকে মিল থাকায় রাসূল (সাঃ)কেওنورবলাহয়েছে।এজন্য নয় যে, হুজুর (সাঃ) কে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।


সুতরাং- উক্ত আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করে ‘হুজুর (সাঃ) ‘নূরের’ তৈরি প্রমাণ করার চেষ্টা করা কোরআনের অপব্যাখ্যা বৈ কিছুই নয়।


হাদীস দ্বারা ‘হুজুর(সাঃ) নূরের তৈরি’ প্রমাণ করার ব্যর্থপ্রয়াসঃ-

বিদ’আতী স¤প্রদায় ‘হুজুর (সাঃ) নূরের তৈরী’ এই দাবী প্রমাণ করার জন্য যে হাদীসটি পেশ করে থাকে তা হলো-

হযরত যাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস, যা ইমাম আব্দুর রাজ্জাক তার নিজ সনদে হযরত যাবের (রাঃ) থেকে বর্ণণা করেন যে, তিনি বলেন, আমি হুজুর পাক (সাঃ) এর নিকট আরজ করলাম- ইয়া রাসূলুল্লাহ!আমার আব্বা-আম্মাআপনার উপর কোরবান হউক। আমাকে বলে দিন! আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেনÑ


ياجابرانالله خلق كل الاشياء نورنبيكم من ننوره-

অর্থাৎ- হে যাবের! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম তাঁর ‘নূর' থেকে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।(যূরকানী শরহে মাওয়াহেব-১/৭পৃঃ)
জবাবঃ- দলীল হিসেবে উক্ত হাদীসটি গ্রহণযোগ্য না হবার কয়েকটি কারণ রয়েছে তন্মধ্যে-

প্রথমটি হলোঃ-হাদীসটির সনদের সঠিক তথ্য জানা যায় নি যে, সনদটি কেমন?
(তাযকিরাতুল হোফফাজ-১/৩৩ পৃঃ)
দ্বিতীয়টিহলঃ-হাদীটির সনদ অজ্ঞাত হওয়ার সাথে সাথে অন্য আরেকটি সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। যথাঃ- হযরত ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত! তিনি বলেনÑ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-

اول ماخلق الله القلم-

অর্থাৎ-আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম কলমসৃষ্টিকরেছেন।

সুতরাং- এমন হাদীস যার সনদ অজ্ঞাত হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক তা দ্বারা দলিল পেশ করা ধোঁকাবাজি বৈ কিছুই নয়।

তর্কের খাতিরে কিছুক্ষনের জন্য হাদিসটিকে মেনে নিলেও তদ্বারা দলিল পেশ করার সুযোগ নেই। কারণ সর্ব প্রথম সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই হাদীসে যেমনিভাবে ‘নূর’ এর কথা বলা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে অন্য হাদীসে ‘কলম’ এর কথা বলা হয়েছে যদিও এক্ষেত্রে কেউ কেউ اول حقيقىওاولاضافي ভাগ করেছে কিন্তু তাদের কোনটাই কোরআন-হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত নয় বিধায় সুনির্দিষ্টভাবে কোনটাই ‘নিশ্চিত’ নয়, বরং উভয় হাদীসের ক্ষেত্রে উভয়টি একটি আরেকটির উপর প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর শরয়ী মূলনীতি হলো-


اذاجاءالاحتمال بطل الاستدلال

অর্থাৎ- দলীল পেশ করার ক্ষেত্রে কোন দলীল যখন অন্যের সম্ভাবনা এসে যায় তখন তদ্বারা দলিল পেশ করা বাতিল হয়ে যায়।

প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে পেশকৃত উভয় হাদীস যেহেতু একটি আরেকটির উপর প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোনটি প্রাধান্য পাবে তা‘نص’ (তথা কোরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা) প্রমাণিত নয়, সুতরাং প্রথম সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাদের পেশকৃত হাদীস দ্বারাও দলীল পেশ করা সঠিক হবে না।

তৃতীয়টি হলঃ- তাদের দাবীনুসারে যদি আমরা কিছুক্ষণের জন্য তাদের এই হাদীস মেনেও নেই, তবুও ইহা তাদের পক্ষে কোন ফায়দা বহন করে না। কেননা তাদের পেশকৃত হাদীসে نورى(আমার ‘নূর')বলে এখানে روحى (আমার রুহ বা আত্মা) বোঝানো হয়েছে। যেমনিভাবে অন্য হাদীসে রয়েছে-
اول ماخلق الله روحى-

অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার রুহ (আত্মা)সৃষ্টি করেছেন। আর রুহ বা আত্মা সমূহ নূরানী বস্তু বিধায় এখানে روحى এর স্থলে نورى শব্দ এনেছে। আর ‘রুহ’ বা আত্মা নূর হওয়ার দ্বারা তো جسم (শরীর)ও ‘নূর’ বা নূরের তৈরি হওয়া জরুরী হয় না।

সুতরাং-হুজুর (সাঃ) নূরের তৈরী প্রমানার্থে উক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা মোটেও জ্ঞানের পরিচায়ক হবে না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৫৯৭০৬

আকিদা


২৬ মে, ২০২৪

বরিশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

২৪৮২৫

গণতন্ত্রের হুকুম কী?


৪ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy