আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

গণতন্ত্রের হুকুম কী?

প্রশ্নঃ ২৪৮২৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, গণতন্ত্রের বিধান জানতে চাই।,

৪ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. গণতন্ত্র একটি মানব রচিত মতবাদ। আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে গেটিসবার্গের এক জনসভায় গণতন্ত্রের আধুনিক সংজ্ঞা দেন এভাবে যে, Democracy is the government of the people by the people and for the people. অর্থাৎ গণতন্ত্র এমন একটি সরকার ব্যবস্থা, যা জনগণের উপর জনগণের দ্বারা পরিচালিত জনগণের শাসন ব্যবস্থা বুঝায়। (সৈয়দ মকসুদ আলী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পৃঃ ২৮৫) এর মানে- জনগণ নিজেই নিজেকে শাসন করা। তাই এটি ইসলাম বিরোধী মতবাদ। কেননা, শাসনের অধিকার আল্লাহর অধিকার। কোনো মানুষকে আইন প্রণয়ন করার অধিকার দেয়া জায়েয নেই; সে মানুষ যেই হোক না কেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيْكٌ فِي الْمُلْكِ
রাজত্বে তাঁর কোন শরীক নেই। (বনী ইসরাঈল ১১১)
তিনি আরো বলেন,
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
আল্লাহ ব্যতীত কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ব্যতীত তোমরা অন্য কারু ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। (ইউসুফ ৪০)
মাউসুআতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহেব আল-মুআসেরা-গ্রন্থ (২/১০৬৬) তে এসেছে-
ولا شك في أن النظم الديمقراطية أحد صور الشرك الحديثة في الطاعة والانقياد أو في التشريع ، حيث تُلغى سيادة الخالق سبحانه وتعالى وحقه في التشريع المطلق ، وتجعلها من حقوق المخلوقين ، والله تعالى يقول : ( مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآَبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ) يوسف/40 ، ويقول تعالى : ( إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ) الأنعام/57
‘কোন সন্দেহ নেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আল্লাহর আনুগত্য ও আইনপ্রণয়ন অধিকারের ক্ষেত্রে একটি নব্য শিরকের স্বরূপমাত্র। যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহর আইন প্রণয়ন করার একক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা হয় এবং মাখলুককে এ অধিকার প্রদান করা হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কিছু নামের ইবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। আল্লাহ এদের কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি। আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেওয়ার অধিকার নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ (সূরা আল-আনআম ৫৭)

দুই. যে ব্যক্তি ইসলামে গণতন্ত্রের হুকুম কি সেটা জানে, তারপরও এ পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়ে এটিকে জনগণের জন্য কল্যাণকর হিসেবে বিশ্বাস করে তাহলে সন্দেহ নেই, সে ব্যক্তি ভুলের মধ্যে আছে এবং তার ঈমান ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে আছে। কারণ ইতিপূর্বেই আমরা প্রমাণ করেছি যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি একটি নব্য শিরকের স্বরূপমাত্র।
তবে যদি দেশের জনগণ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সরকার নির্বাচনের জন্য এ পদ্ধতির অনুসরণ করতে বাধ্য হয় এবং এ ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো উপায় না থাকে তাহলে যেন গোটা ময়দান দুর্নীতিবাজ ও নাস্তিকদের হাতে চলে না যায়; বরং সংসদে গিয়ে এর বিরোধিতা করা যায় এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে সাধ্যানুযায়ী গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অকল্যাণ ও দুর্নীতি রোধ করা যায় — তখন এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করে কোনো কোনো আলেম মনে করেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক।
যেমন,
১. ইতিপূর্বে মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. জাওয়াহিরুল ফিকহ কিতাবে লিখেছেন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি। ১. সাক্ষ্য প্রদান ২. সুপারিশ ও ৩. প্রতিনিধিত্বের অথরিটি প্রদান।
২. আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটি ‘ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা’-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তারা উত্তরে লিখেছেন,
إلا إذا كان من رشح نفسه من المسلمين ومن ينتخبون يرجون بالدخول في ذلك أن يصلوا بذلك إلى تحويل الحكم إلى العمل بشريعة الإسلام ، واتخذوا ذلك وسيلة إلى التغلب على نظام الحكم ، على ألا يعمل من رشح نفسه بعد تمام الدخول إلا في مناصب لا تتنافى مع الشريعة الإسلامية
‘তবে কোন মুসলমান যদি এ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কিংবা অন্যকে নির্বাচিত করে যে, এর মাধ্যমে এ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকে তারা বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর আধিপত্য বিস্তার করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে সেটা জায়েয। তবে, সে ক্ষেত্রেও যে ব্যক্তি প্রার্থী হবেন তিনি এমন কোন পদ গ্রহণ করতে পারবেন না যা ইসলামী শরিয়ার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।’ ( ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ২৩/৪০৬, ৪০৭)
৩. দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক দারুল উলুম’-এ মুফতি মুহাম্মাদ নিমাবি কাসেমী বলেন,
اگر ہندوستان کی صورتِ حال کا جائزہ لیا جائے ؛تو معلوم ہوگا کہ یہاں حکومت کی بنیادالیکشن پرہے اور الیکشن… انجام کار کبھی ایسی نا پسندیدہ پارٹی یا افراد مسندِ اقتدار پر فائز ہوجاتے ہیں؛ جو مسلمانوں کے لیے سم ِقاتل کے مانند ہوتے ہیں۔ …لہٰذ اجمہوری ممالک میں الیکشن میں ووٹ ڈالنے کے عمل کومحض مباح نہیں؛ بلکہ واجب سے کم درجہ نہیں قرار دیا جاسکتاہے۔
যদি ভারতের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, এখানে সরকার গঠনের মূল ভিত্তি হল, নির্বাচন। ফলে অনেক সময় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দল বা ব্যক্তি ক্ষমতায় চলে আসে যে মুসলমানদের জন্য প্রাণ-বিনাশী বিষের মত হয়। সুতরাং (এরকম পরিস্থিতিতে) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে ভোট দেয়া কেবল বৈধ নয়; বরং ওয়াজিব থেকে কম বলা যাবে না। (বিস্তারিত দেখুন-মাসিক দারুল উলুম, জুমাদাল উলা ১৪৩৪ হি./মার্চ ২০১৩ ইং)
৪. মুফতি আব্দুল মজিদ দীনপুরী রহ. লিখেছেন,
ووٹ امانت ہے اور اس کا صحیح استعمال اسلامی فریضہ ہے۔
ভোট আমানত এবং এর সঠিক ব্যবহার দীনী দায়িত্ব। (বিস্তারিত দেখুন-জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া, বিন্নুরি টাউন, করাচী থেকে প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়িনাত জুমাদাল উখরা ১৪৩৪ হি)
৫. শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীনকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন,
أنا أرى أن الانتخابات واجبة ، يجب أن نعين من نرى أن فيه خيراً ، لأنه إذا تقاعس أهل الخير ، مَنْ يحل محلهم ؟ سيحل محلهم أهل الشر ، أو الناس السلبيون الذين ما عندهم خير ولا شر ، أتباع كل ناعق ، فلابد أن نختار من نراه صالحاً
‘আমি মনে করি এ নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়া আবশ্যক। আমরা যাকে ভাল মনে করি তাকে সহযোগিতা করা আবশ্যক। কারণ ভাল লোকেরা যদি ঢিলেমি করে তাহলে এ স্থানগুলো কে দখল করবে? খারাপ লোকেরাই দখল করবে কিংবা এমন লোকেরা দখল করবে যাদের কাছে না আছে ভাল; না আছে খারাপ; যারা সুবিধাবাদী। তাই আমাদের উচিত যাকে যোগ্য মনে করি তাকে নির্বাচিত করা।’

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৩৯৩৬

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এবং পুজা উপলক্ষে সহযোগিতা করা


১৫ নভেম্বর, ২০২২

নরসিংদী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৬৩৪৮

মনে কুফরি চিন্তা আসলে করণীয়


২২ আগস্ট, ২০২৪

আক্কেলপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৪৪৩২

কুফরি কালাম বা জাদু থেকে মুক্তির দোয়া ও আমল


১ নভেম্বর, ২০২২

পলাশ ১৬১০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৫১০০

তাওহিদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও পুরস্কার


১৩ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২১৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy