আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কাফের মুশরিকদের থেকে মুসলমানদের ভিন্নতা

প্রশ্নঃ ৩৬৪৪৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্নটি হলো: ‘রং’ আল্লাহর এক অপরূপ সৃষ্টি। তবে রঙে রঙে গুরুত্ব ও তারতম্য রয়েছে। আমি যতটুকু জানি, ইসলাম ধর্মে সবুজ বা সাদা রঙের তাৎপর্য অধিক। যদিও বা সকল রং আল্লাহরই সৃষ্টি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বেগুনি রং খুব পছন্দ করে থাকি, যে কোন কিছুর ক্ষেত্রেই যদি বাছাইয়ের সুযোগ থাকে তাহলে সবসময় বেগুনি রং বেছে নেই। ঘরের রং থেকে শুরু করে পারফিউমের বোতলে পর্যন্ত আমার এই রং পছন্দ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় টুকটাক গবেষণায় দেখলাম যে এই রঙটি নিয়ে অনেক কথা আছে। এই বেগুনি রঙটি বিভিন্ন শয়তানের পূজারী অর্থাৎ ফ্রিম্যাসন, ইলুমিনাতি সহ নানান ধরনের রিচুয়াল বা জাদু চর্চায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খ্রিস্টীয় ধর্ম যাজক, ইউরোপীয় শাশকেরাও বিভিন্ন সময় এই রঙের বস্ত্র পরিধান করে। ‘হ্যাভেন্স গেইট’ নামক এক প্রকার শয়তানের জাদু বিদ্যা যেখানে মূলত মানুষের রূহ কে শরীর থেকে বের করে অনন্তকালের জগতে নেওয়ার জন্য জাদু চর্চা করা হয় এবং আত্মহত্যা করা হয়, পরিশেষে সেই লাশ গুলোকে টায়রিয়ান পার্পল বা বেগুনি রোগের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এমন আরো কথা আছে, তবে সংক্ষেপে এটা বোঝা যায় সবুজের যেমন ইসলামে গুরুত্ব আছে তেমনি বেগুনি রঙের ও হয়তো শয়তানি কর্মকাণ্ডের জন্য কোন বিশেষত্ব রয়েছে। পরিশেষে আরো একটা জিনিষ আমাকে একটু অবাক করেছে, যে সবুজ রঙের নেগেটিভ বা ঠিক বিপরীত রং হলো বেগুনি। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে পছন্দনীয় রঙের উল্টো করলে বা নেগেটিভ করলে বেগুনি রং হয়, তাহলে কি সত্যিই এই বেগুনি রং ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় হওয়া উচিৎ? যদিও বা এসব নিয়ে হয়তো কোন হাদীস নেই, তার চেয়েও বড় কথা সব স্রষ্ঠার সৃষ্টি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়। এখন আমি জানতে চাই আমি যদি এই রঙকে খুব পছন্দ করি তাহলে কি সেটা খারাপ হবে কি না, এবং ঘরে ও পোশাকে ব্যবহার করলে সেটি কেমন হবে? প্রশ্নটি একটু অস্বাভাবিক তবে উপরোক্ত তথ্য গুলো ইন শা আল্লাহ্ সঠিক এবং শেষ জামানার সাইন। ইন শা আল্লাহ্ একটি তৃপ্ত উত্তর পাওয়ার আশায় রইলাম।,

১০ আগস্ট, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তাআলা গোটা বিশ্বজগত এবং পৃথিবীর মাঝে যা কিছু আছে সব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কোনোটি সরাসরি মানুষের কল্যাণে আসে। কোনোটি পরোক্ষভাবে মানুষের কল্যাণ করে। কোন বস্তুর কল্যাণ মানুষের অনুভূত। আর কিছু জিনিসের কল্যাণ সকলের কাছে অনূভূত নয়।

পৃথিবীতে যত রং আছে সব আল্লাহর সৃষ্টি। সবই মানুষের কল্যাণের জন্য। রঙ হিসেবে কোনটিই মুসলমানদের কাছে অপছন্দের হওয়ার কথা নয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইবাদতের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে কাফির-মুশরিক ও ইয়াহুদী-নাসারাদের থেকে মুসলমানদের সবকিছুকে ভিন্ন ঘোষণা করেছেন। সাধারণ জীবন যাত্রায় বেশভূষা, গতিপ্রকৃতি, রুচি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও মুসলমানদেরকে ভিন্নতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَسَّانَ، وَإِسْمَاعِيلُ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَنْبَسَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ غَنَّامٍ الْبَيَاضِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ . فَقَدْ أَدَّى شُكْرَ يَوْمِهِ وَمَنْ قَالَ مِثْلَ ذَلِكَ حِينَ يُمْسِي فَقَدْ أَدَّى شُكْرَ لَيْلَتِهِ " .

৪৯৮৯. আহমদ ইবনে সালিহ (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ ইবনে গাননাম বায়াযী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন; যে ব্যক্তি সকালে বলবেঃ সকালে আমার কাছে যে নিআমত আছে, তা আপনিই দিয়েছেন। আপনি একক, আপনার কোন শরীক নেই। সমস্ত প্রশংসা ও শোকর আপনারই, তবে সে যেন সেদিনের শোকর আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এরূপ বলবে, সে যেন সে রাতের শোকর আদায় করলো।
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৮৯ (আন্তর্জাতিক নং ৫০৭৩)


এজন্যই গেরুয়া কালার যা মুশরিকদের নিদর্শন বহন করে সেটি নবীজি পছন্দ করতেন না। মূলত ওদের সাথে যেন মুসলমানদের সাদৃশ্য না হয়ে যায়।

অতএব আপনার জ্ঞান গবেষণা অনুযায়ী বেগুনি কালার যদি ইলুমিনাতি ও শয়তান চক্রের পছন্দের কালার হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের থেকে আপনি মুসলমান হিসেবে ভিন্নতা প্রদর্শনের জন্য বেগুনি কালার থেকে রুচি ও মানসিকতা পরিবর্তনের চেষ্টা করুন। এতেই আপনার ঈমানের পরিচয় প্রকাশ পাবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আপনার মহাব্বত ভালোবাসা শানিত করবে ইনশাআল্লাহ।


وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتكْمل الْإِيمَان» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

৩০। হযরত আবু উমামা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে একমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালবাসে, আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করে এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে দান করে, আবার আল্লাহর জন্যই দান বন্ধ করে, সে অবশ্যই ঈমান পরিপূর্ণ করেছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
—মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ৩০

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬৮৭০৭

মানসুখ আয়াত অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যাবে?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Keraniganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯৭১৫৭

ঔষধের ক্ষেত্রে মুমিনের বিশ্বাস কেমন হবে


২৩ মার্চ, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

২৪২৫৩

শুধু কুফরি ও শিরকি চিন্তা আসে; কী করবো?


১৫ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২১১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৪৮২৫

গণতন্ত্রের হুকুম কী?


৪ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy