কবরের সুওয়াল কি কুরআন সম্মত নয়!
প্রশ্নঃ ৮২৬৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, তাহজিব সেন্টার এর বক্তা মৌলানা মোজাম্মেল সাহেবের(কবরের সাওয়াল কুরআন সম্মত নয়)এবং মেরাজে নামাজরত রাকাত সংখ্যা নিয়েও মুসা এ:এরকথোপকথন বাস্তব সম্মত নয়)মওলানা সাহেবের এই শিরোনামের ভিডিও দুটি দেখার অনুরহাদ করছি.সঠিক আকিদা কি?,
২৬ জুন, ২০২৪
খুলনা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১- মুহতারামা, আপনার প্রশ্ন পেয়ে আমি youtube এ 'তাহযীব সেন্টার রাজশাহী' চ্যানেলটি উল্টে পাল্টে দেখলাম। সেখানে অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মেল হক নামের আলোচকের কিছু বক্তব্য সামান্য শুনলাম।
এতে আমার নিকট ভদ্রলোককে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস অস্বীকারকারী হিসেবে মনে হয়েছে,(https://www.youtube.com/watch?v=9opVqPimUQs)
অতএব, প্রশ্নোক্ত দুটি বিষয় নিয়ে এক হাদীস অস্বীকারকারীর থেকে সঠিক আকিদা পাওয়া তো দূরে থাক,আশাও করা যায় না।
প্রশ্নোক্ত দুটি বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মেল হকের বক্তব্য সরাসরি কুরআন হাদীস বিরোধী এবং সুস্পষ্ট গুমরাহী।
আমাদের সমাজে একশ্রেণীর মুসলমান আছেন যারা নিজেদেরকে আহলে কুরআন পরিচয় দিয়ে বেশ গর্ববোধ করে থাকেন।
নব্য আহলে কুরআনের পরিচয় হল, তারা বলে থাকে, রাসূলের দায়িত্ব ছিল কেবল কুরআন পৌঁছে দেওয়া। তিনি পৌঁছে দিয়েছেন; ব্যস, তাঁর কাজ শেষ। এখন কুরআন বোঝা, তদনুযায়ী কুরআনী ও ঈমানী জীবনের রূপরেখা তৈরি করা, তা থেকে আল্লাহর নির্দেশনাবলি ও বিধানাবলি উদ্ঘাটন করা, তাতে ফরযকৃত ইবাদতসমূহ আদায়ের পদ্ধতি নির্ধারণ করা- এই সব কাজ আমাদের!! নাউযুবিল্লাহ।
তারা নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহর চাইতে অধিক কুরআন অনুধাবনকারী ও অনুসরণকারী এবং কুরআনওয়ালা মনে করে। শুধু এটুকু নয়; তারা যেন এটাও বলতে চায় যে, ‘কেবল আমরাই কুরআন বুঝি এবং কুরআন মানি।’ সেজন্য তাদের শ্লোগান হল, ‘রাসূলের হাদীস, সুন্নত, সীরাত নয়; মানব শুধু কুরআন’। স্পষ্ট, এটা রাসূলের প্রতি চরম অবমননা।
এ ধরনের অবমাননার অর্থ হল, তাদের না আছে রাসূলের প্রতি ঈমান ও নির্ভরতা, না আছে কুরআনের প্রতি ঈমান। এর অনিবার্য ফল হল, আল্লাহ তাআলার নিকট তাদের কুরআন মানাই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কুরআনের প্রতি ঈমান ও কুরআন অনুযায়ী আমলের যে পন্থা ও মাপকাঠি আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেটার প্রতি তাদের আস্থা নেই। তাদের আস্থা কেবল নিজেদের বুঝ ও পছন্দের প্রতি।
‘আহলুল কুরআন’ মূলত একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বীনী পরিভাষা। ‘নব্য আহলে কুরআনেরা’ এটিকে নিজেদের জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে।
আহলে কুরআনের ফেতনা কোনো সাধারণ ফেতনা নয়; অনেক ভয়াবহ ফেতনা। তারা যে ছুতো ধরে এগুচ্ছে, ধীরে ধীরে তারা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক সুন্নাহ এবং মুসলিম উম্মাহর অনেক স্বতঃসিদ্ধ ও সর্ববাদিসম্মত বিষয়কে অস্বীকার বা বিকৃত করে ফেলবে। একেকবার একেক বিষয় নিয়ে আওয়াজ তুলবে আর বলবে, ‘এটা কুরআনে নেই; আমরা তা মানি না।’
এ ফেতনা সম্পর্কে রাসূলের সতর্কবাণীঃ
এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তিনি উম্মতকে এদের বিষয়ে সতর্ক করে গিয়েছেন। মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَلاَ هَلْ عَسَى رَجُلٌ يَبْلُغُهُ الحَدِيثُ عَنِّي وَهُوَ مُتَّكِئٌ عَلَى أَرِيكَتِهِ، فَيَقُولُ: بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابُ اللهِ، فَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَلاَلاً اسْتَحْلَلْنَاهُ. وَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَرَامًا حَرَّمْنَاهُ، وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللهِ كَمَا حَرَّمَ اللهُ.
শুনে রাখ! হয়ত এমন ব্যক্তির উদ্ভব হবে যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে; তখন তার কাছে আমার কোনো হাদীস পৌঁছলে সে বলে উঠবে, আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাবই আছে। এতে আমরা যা হালাল হিসেবে পাব তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করব আর যা হারাম হিসেবে পাব তা হারাম মনে করব। অথচ (প্রকৃত অবস্থা হল এই যে,) রাসূলুল্লাহ যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মতই হারাম। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৬৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১২
قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ.
রাসূল সম্পর্কে ‘আহলে কুরআনের’ ধারণাঃ
‘আহলে কুরআনের’ কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট, এরা কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তের দলীলাদি সম্পর্কে একদম বেখবর। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তারা যেরূপ ধ্যান-ধারণা পোষণ করে তা অত্যন্ত অসম্মানজনক। কারণ, তাদের কাথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডের দাবি তো এই যে, তাদের ধারণায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজ হল ডাকপিয়নের কাজ! ডাকপিয়নের কাজ হল গ্রাহকের হাতে পত্র ধরিয়ে দেয়া। ব্যস, এই তার কাজ। এরপর পত্রে কী আছে, কোন্ কথার কী অর্থ এবং তা বাস্তবায়নের কী পদ্ধতি- এইসব বোঝা গ্রাহকের নিজের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে পিয়ন তাকে কোনো নির্দেশনা দেয় না; পিয়নের কাজ তো শুধু পত্র পৌঁছে দেয়া। আহলে কুরআন নামধারীরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজ ও দায়িত্বকে এই স্তরে নামিয়ে এনেছে। নাউযু বিল্লাহ।
রাসূলের দায়িত্ব কী এবং কী তাঁর মর্যাদা- সেটা তো কুরআনেই আছে। আল্লাহ তাআলাই কুরআনে বলে দিয়েছেন, রাসূলের পরিচয় কী, তাঁর দায়িত্ব কী এবং কেন তাঁকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসাবে পঠিয়েছেন। কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে রাসূলের আনুগত্য ও অনুসরণ সম্পর্কে। বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ণ হলে আল্লাহ তাআলা এতগুলো আয়াতে তার অবতারণা করেছেন। আমরা এখানে কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করছি-
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذْنِ اللهِ.
আমি প্রত্যেক রাসূলকে কেবল এ লক্ষ্যেই পাঠিয়েছি, আল্লাহর হুকুমে তাঁর আনুগত্য করা হবে। -সূরা নিসা (৪) : ৬৪
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.
(হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللهَ كَثِیْرًا.
বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ- এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে। -সূরা আহযাব (৩৩) : ২১
مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ وَ مَنْ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ عَلَیْهِمْ حَفِیْظًا.
যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যারা (তাঁর আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি (হে নবী!) আপনাকে তাদের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়ে পাঠাইনি (যে, তাদের কাজের দায়-দায়িত্ব আপনার উপর বর্তাবে।) -সূরা নিসা (৪) : ৮০
وَ مَنْ یُّطِعِ اللهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاُولٰٓىِٕكَ مَعَ الَّذِیْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ، وَ حَسُنَ اُولٰٓىِٕكَ رَفِیْقًا، ذٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللهِ، وَ كَفٰی بِاللهِ عَلِیْمًا.
যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেইসকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কত উত্তম সঙ্গী তাঁরা!
এটা কেবলই আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব। আর (মানুষের অবস্থাদি সম্পর্কে) ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। -সূরা নিসা (৪) : ৬৯-৭০
وَ مَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَ اتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ.
রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। -সূরা হাশর (৫৯) : ০৭
এ আয়াত প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। তাবেয়ী আলকামা রাহ. থেকে বর্ণিত-
عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: لَعَنَ اللهُ الوَاشِمَاتِ وَالمُوتَشِمَات،وَالمُتَنَمِّصَاتِ وَالمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ، المُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ، فَبَلَغَ ذَلِكَ امْرَأَةً مِنْ بَنِي أَسَدٍ يُقَالُ لَهَا أُمُّ يَعْقُوبَ، فَجَاءَتْ فَقَالَتْ: إِنَّهُ بَلَغَنِي عَنْكَ أَنَّكَ لَعَنْتَ كَيْتَ وَكَيْتَ، فَقَالَ: وَمَا لِي لا أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَنْ هُوَ فِي كِتَابِ اللهِ، فَقَالَتْ: لَقَدْ قَرَأْتُ مَا بَيْنَ اللَّوْحَيْنِ، فَمَا وَجَدْتُ فِيهِ مَا تَقُولُ، قَالَ: لَئِنْ كُنْتِ قَرَأْتِيهِ لَقَدْ وَجَدْتِيهِ، أَمَا قَرَأْتِ: وَ مَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا؟ قَالَتْ: بَلَى، قَالَ: فَإِنَّهُ قَدْ نَهَى عَنْهُ.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আল্লাহর লানত ঐসমস্ত নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে ও নিজ শরীরে উল্কি অংকন করায় এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারী।
তাঁর এ কথা আসাদ গোত্রের উম্মে ইয়াকুব নাম্নী এক মহিলার কাছে পৌঁছল। সে এসে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লানত করেন। ইবনে মাসউদ রা. বললেন, আমি কেন এমন লোকদের প্রতি লানত করব না, যাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন এবং যাদের কথা আল্লাহর কিতাবে আছে? মহিলাটি বলল, আমি তো দুই ফলকের মাঝে যা আছে (অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন) পড়েছি; কিন্তু আপনি যা বলছেন সেটা তো পাইনি। তিনি বললেন, তুমি যদি (ভালোভাবে বুঝে-শুনে) পড়তে তবে অবশ্যই পেতে। তুমি কি পড়নি-
وَ مَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا.
(অর্থাৎ রাসূল যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর আর যা বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।)?
মহিলাটি বলল, হাঁ। বললেন, তিনিই তো নিষেধ করেছেন এ থেকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১২৫
যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে ‘কুরআনে নেই’ বলে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য এই ঘটনায় শিক্ষা রয়েছে।
এ পর্যায়ে আশা করছি আপনি অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মেল হকের গুমরাহী সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। তার মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে।
এখানে হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও সুন্নাহও যে শরীয়তের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দলিল এবং হাদীস অস্বীকারের ভয়াবহতা কী এসম্পরকে কিছুটা আলোকপাত করছি।
২- ঈমান ও ইসলাম আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। আমরা তাঁর শোকর আদায় করি, তিনি আমাদের মুমিন ও মুসলিম বানিয়েছেন। হেদায়েত ও পথনিদের্শনার জন্য দান করেছেন কুরআনে কারীম। এটি নাযিল করেছেন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। তিনি বলেন-
و َ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الذِّكْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیْهِمْ وَ لَعَلَّهُمْ یَتَفَكَّرُوْنَ.
(হে নবী!) আমি আপনার প্রতি ‘আযযিকর’ নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে সেইসব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। -সূরা নাহল (১৬) : ৪৪
‘আযযিকর’ কুরআনে কারীমের একটি নাম। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, আমি আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, যেন আপনি তা মানুষকে খুলে খুলে বুঝিয়ে দেন। আর তারাও যেন চিন্তা-ভাবনা করে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বুঝিয়ে দেবেন, সে আলোকেই তারা চিন্তা-ভাবনা করবে। এতে কুরআনের শিক্ষাগুলো তাদের অন্তরে স্থির হয়ে যাবে এবং আমলে এসে যাবে। লক্ষণীয় হল, আল্লাহ তাআলা কুরআন অবতীর্ণ করে তার বয়ান ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। অর্থাৎ কুরআনে কারীমের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করবেন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমানঃ
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনা।
কেউ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান না আনে, সে মুমিন নয়। তাই আল্লাহর প্রতি যেমন ঈমান আনতে হবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও ঈমান আনতে হবে। সেইসঙ্গে আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি যে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তার প্রতিও ঈমান আনতে হবে। কুরআন মাজীদে তিনি বলেন-
اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْهِ مِنْ رَّبِّهٖ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللهِ وَ مَلٰٓىِٕكَتِهٖ وَ كُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ لَا نُفَرِّقُ بَیْنَ اَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِهٖ.
রাসূল (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাতে ঈমান এনেছেন, যা তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে এবং (তাঁর সাথে) মুমিনগণও। তারা সকলে ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না (যে, কারো প্রতি ঈমান আনব আর কারো প্রতি ঈমান আনব না।) -সূরা বাকারা (২) : ২৮৫
এ আয়াতে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর প্রতি ঈমান, কিতাবের প্রতি ঈমান, ফিরিশতা ও নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান- এগুলোর কী অর্থ সেটা আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, কুরআনে কারীমের প্রতি ঈমান আনার কী অর্থ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার কী অর্থ?
রাসূলের প্রতি ঈমান আনার অর্থঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হল-
এক. বিশ্বাস করা, তিনি আল্লাহর নবী ও রাসূল। এই সাক্ষ্য দেয়া-
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنّ مُحَمّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
দুই. এই বিশ্বাস রাখা, তিনি সর্বশেষ নবী। খাতামুন নাবিয়্যীন। তাঁর পরে আর কেউ নবী হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَ لٰكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ وَ كَانَ اللهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمًا.
মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং নবীগণের মধ্যে সর্বশেষ। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৪০
স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَنَا خَاتَمُ النّبيِّينَ، لَا نَبِيّ بَعْدِي.
আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কোনো নবী নেই। (অর্থাৎ আমার পরে নতুন করে কেউ নবী হবে না।) -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৫৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৮৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২৫২; জামে তিরমিযী, হাদীস ২২১৯
قال الترمذي: هذا حديث صحيح.
তিন. এটাও বিশ্বাস করা যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা যেসকল দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন সেগুলোর প্রত্যেকটি তিনি যথাযথ আদায় করেছেন। তাঁর সে দায়িত্বগুলোর বিবরণ কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। এই সকল দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যা করেছেন এবং যা বলেছেন সবকিছু বিশ্বাস করা এবং মনেপ্রাণে মেনে নেওয়া তাঁর প্রতি ঈমানের অংশ। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত এইসব দায়িত্ব পালনার্থে যা বলেছেন বা করেছেন সেটাই হাদীস ও সুন্নাহ। কুরআনের ভাষায় ‘হিকমাহ’ ও ‘উসওয়ায়ে হাসানাহ’। সেটা গ্রহণ ও অনুসরণ করাকে কুরআন ফরয করেছে এবং মান্য করাকে ঈমানের শর্ত সাব্যস্ত করেছে।
চার. তাঁর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ভালবাসা রাখা।
পাঁচ. তাঁর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা। অবমাননা নয়; শুধু তাঁর সামান্য অসম্মান বা কষ্টের কারণ হয়, এমন সব কথা ও আচরণ থেকে বিরত থাকা।
ছয়. তাঁর প্রতি অবতীর্ণ কুরআনকে সর্বশেষ ওহী-গ্রন্থ হিসাবে মেনে নেওয়া। তাঁর শরীয়তকে আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ ইসলামী শরীয়ত হিসাবে গ্রহণ করা।
সাত. মুক্তি ও সফলতা একমাত্র তাঁর শরীয়ত ও সুন্নাহ্ অনুসরণের মাঝে- এই বিশ্বাস রাখা। এর বিকল্প খোঁজার মতো কুফরী আচরণ থেকে বেঁচে থাকা এবং এমন আচরণকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করা। তাঁর শরীয়ত ও সুন্নাহ ছেড়ে, না কোনো বিকৃত বা রহিত শরীয়তের দিকে যাওয়া যাবে, না কোনো নবআবিষ্কৃত ইজম বা মতাদর্শ গ্রহণ করা যাবে আর না নিজের খেয়াল-খুশির অনুগামী হওয়া যাবে।
এই হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান। বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে।
রাসূলের দায়িত্ব
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা কুরআন দান করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই দায়িত্বগুলোর বিবরণ কুরআনে কারীমে বিস্তারিত আছে। তাঁর তিনটি মৌলিক দায়িত্বের কথা একত্রে কুরআন মাজীদের তিন জায়গায় উল্লেখিত হয়েছে। সূরা বাকারার ১২৯ সংখ্যক আয়াতে, সূরা আলে ইমরানের ১৬৪ সংখ্যক আয়াতে এবং সূরা জুমুআর ২ সংখ্যক আয়াতে।
সূরা আলে ইমরানের আয়তটি হল-
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি (অতি বড়) অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। আর নিশ্চয়ই এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহির মধ্যে ছিল। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৬৪
এই আয়াতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে তিনটি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা এই-
ক. یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِه
তিনি মানুষকে আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনাবেন। যাতে তাদের জন্য কুরআন মাজীদ শেখা ও মুখস্থ করা সহজ হয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কুরআন তিলাওয়াত শিখিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম শিখিয়েছেন তাঁদের শাগরিদদের। তাঁদের বলা হয় তাবেয়ী। তাবেয়ীগণ শিখিয়েছেন তাঁদের শাগরিদদের। এভাবেই কুরআন শিক্ষার ধারাবাহিকতা এ পর্যন্ত চলে এসেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে।
খ. وَ یُزَكِّیْهِمْ
তাদের পরিশুদ্ধ করবেন। তাদের অন্তরকে সব ধরনের আবিলতা থেকে মুক্ত করবেন। শিরক, কুফর, নেফাকসহ যাবতীয় মন্দ স্বভাব ও চিন্তা-চেতনা থেকে তাদের পবিত্র করবেন। তাদের মাঝে তৈরি করবেন সঠিক আকীদা-বিশ্বাস, সুস্থ রুচিবোধ, উত্তম চরিত্র এবং উন্নত চিন্তা-চেতনা।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সরাসরি তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় পরিশুদ্ধি লাভ করেছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। সেজন্য তাঁরা হলেন উম্মতের সর্বোত্তম জামাত। তাঁদের আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, রুচি-প্রকৃতি ও আখলাক-চরিত্র সবই ছিল পরিশুদ্ধ। কারণ তাঁরা তো সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরবিয়ত লাভ করেছিলেন।
গ. وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ
তাদেরকে ‘কিতাব’ ও হিকমত’ শিক্ষা দেবেন। ‘কিতাব’ কুরআনেরই আরেক নাম। ‘হিকমত’ কী? তার আগে কথা হল, এই হিকমতও আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। কিতাব যেভাবে তিনি নাযিল করেছেন, হিকমতও তিনি নাযিল করেছেন। সূরা নিসায় আছে-
وَ اَنْزَلَ اللهُ عَلَیْكَ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ عَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَ كَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَیْكَ عَظِیْمًا.
আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং আপনাকে এমন সব বিষয়ে জ্ঞান দান করেছেন, যা আপনি জানতেন না। বস্তুত আপনার প্রতি সর্বদাই আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। -সূরা নিসা (৪) : ১১৩
অন্যত্র আরো বলেন-
وَّ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَیْكُمْ وَ مَاۤ اَنْزَلَ عَلَیْكُمْ مِّنَ الْكِتٰبِ وَ الْحِكْمَةِ یَعِظُكُمْ بِهٖ.
আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন এবং তোমাদেরকে উপদেশ দানের লক্ষ্যে তোমাদের প্রতি যে কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন তা স্মরণ রেখ। -সূরা বাকারা (২) : ২৩১
অতএব কিতাব ও হিকমত দুই-ই আল্লাহর নাযিলকৃত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে কিতাব শিখিয়েছেন, হিকমতও শিখিয়েছেন। হিকমত হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ এবং শরীয়তের সকল বিধি-বিধান।
সূরা জাসিয়ায় আল্লাহ তাআলা বলেন-
ثُمَّ جَعَلْنٰكَ عَلٰی شَرِیْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَ لَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ.
(হে রাসূল!) আমি আপনাকে দ্বীনের এক বিশেষ শরীয়তের উপর রেখেছি। সুতরাং আপনি তারই অনুসরণ করুন। আর যারা প্রকৃত জ্ঞান রাখে না, আপনি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না। -সূরা জাসিয়া (৪৫) : ১৮
রাসূলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করা এবং নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করা। সূরা আ‘রাফের ১৫৭ সংখ্যক আয়াতে তার বিবরণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَلَّذِیْنَ یَتَّبِعُوْنَ الرَّسُوْلَ النَّبِیَّ الْاُمِّیَّ الَّذِیْ یَجِدُوْنَهٗ مَكْتُوْبًا عِنْدَهُمْ فِی التَّوْرٰىةِ وَ الْاِنْجِیْلِ یَاْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ یَنْهٰىهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ یُحِلُّ لَهُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیْهِمُ الْخَبٰٓىِٕثَ وَ یَضَعُ عَنْهُمْ اِصْرَهُمْ وَ الْاَغْلٰلَ الَّتِیْ كَانَتْ عَلَیْهِمْ فَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِهٖ وَ عَزَّرُوْهُ وَ نَصَرُوْهُ وَ اتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ مَعَهٗۤ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.
যারা এই রাসূলের অর্থাৎ উম্মী নবীর অনুসরণ করবে, যাঁর কথা তারা তাদের নিকট থাকা তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিপিবদ্ধ পাবে, যিনি তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করবেন ও মন্দ কাজে নিষেধ করবেন এবং তাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করবেন ও নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করবেন এবং তাদের থেকে ভার ও গলার বেড়ি নামাবেন, যা তাদের উপর চাপানো ছিল। সুতরাং যারা তাঁর (অর্থাৎ নবীর) প্রতি ঈমান আনবে, তাঁকে সম্মান করবে, তাঁর সাহায্য করবে এবং তাঁর সঙ্গে যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করবে, তারাই হবে সফলকাম। -সূরা আ‘রাফ (৭) : ১৫৭
অন্যত্র বলেন-
قَاتِلُوا الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ لَا بِالْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ لَا یُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَ رَسُوْلُهٗ وَ لَا یَدِیْنُوْنَ دِیْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ حَتّٰی یُعْطُوا الْجِزْیَةَ عَنْ یَّدٍ وَّ هُمْ صٰغِرُوْنَ .
কিতাবীদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না এবং পরকালেও নয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তাকে হারাম মনে করে না এবং সত্য দ্বীনকে নিজের দ্বীন বলে স্বীকার করে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না তারা হেয় হয়ে নিজ হাতে জিযিয়া আদায় করে। -সূরা তাওবা (৯) : ২৯
এই হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম মৌলিক চারটি দায়িত্ব। মানুষকে কুরআনের তিলাওয়াত শেখানো, তাদের পরিশুদ্ধ করা, কুরআন ও হিকমত শিক্ষা দেয়া এবং উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করা ও নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করা। এগুলো ছাড়া তাঁর আরও দায়িত্ব আছে।
রাসূল শুধু ওহীর-ই অনুসরণ করেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এসব দায়িত্ব পালানার্থে যা কিছু বলেছেন ও করেছেন তার কোনোটি নিজের ইচ্ছেমতো করেননি বা বলেননি; বরং সবই আল্লাহর নির্দেশে। সূরা নাজমে আছে-
وَ مَا یَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰی اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْیٌ یُّوْحٰی.
তিনি মনগড়া কথা বলেন না। সেটা তো খালেস ওহী, যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়। -সূরা নাজম (৫৩) : ৩-৪
সূরা আহকাফে আছে-
قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِّنَ الرُّسُلِ وَ مَاۤ اَدْرِیْ مَا یُفْعَلُ بِیْ وَ لَا بِكُمْ اِنْ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوْحٰۤی اِلَیَّ وَ مَاۤ اَنَا اِلَّا نَذِیْرٌ مُّبِیْنٌ.
(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি রাসূলগণের মধ্যে অভিনব নই। আমি জানি না, আমার সঙ্গে কী আচরণ করা হবে এবং এটাও (জানি) না যে, তোমাদের সঙ্গে কী আচরণ করা হবে। আমি তো কেবল আমার প্রতি যে অহী নাযিল করা হয়, তারই অনুসরণ করি। আমি তো কেবল একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। -সূরা আহকাফ (৪৬) : ৯
এই আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনে কারীমের তাফসীর ও ব্যাখ্যা হিসাবে যা কিছু বলেছেন ও করেছেন, সবই ওহীর ভিত্তিতে। তথাপি বিষয়টি কুরআনে আরো বিশেষভাবেও উল্লেখিত হয়েছে। সূরা কিয়ামায় আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَا تُحَرِّكْ بِهٖ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهٖ، اِنَّ عَلَیْنَا جَمْعَهٗ وَ قُرْاٰنَهٗ، فَاِذَا قَرَاْنٰهُ فَاتَّبِعْ قُرْاٰنَهٗ، ثُمَّ اِنَّ عَلَیْنَا بَیَانَهٗ.
(হে রাসূল!) আপনি এটি (অর্থাৎ কুরআন) তাড়াতাড়ি মুখস্থ করবার জন্য তার সঙ্গে জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। নিশ্চয় এটি (অন্তরে) সংরক্ষণ ও (মুখে) পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। সুতরাং আমি যখন তা (জিবরীলের মাধ্যমে) পাঠ করি, আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর তার বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই। -সূরা কিয়ামাহ (৭৫) : ১৬-১৯
সূরা নিসায় বলেন-
اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرٰىكَ اللهُ وَ لَا تَكُنْ لِّلْخَآىِٕنِیْنَ خَصِیْمًا.
(হে নবী!) নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য-সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছি, যাতে আল্লাহ আপনাকে যে উপলব্ধি দিয়েছেন, সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে মীমাংসা করতে পারেন। আর আপনি বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের পক্ষাবলম্বনকারী হবেন না। -সূরা নিসা (৪) : ১০৫
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এইসকল কথা ও কাজকে বলে হাদীস ও সুন্নাহ। সুতরাং রাসূলের প্রতি ঈমান আনার অর্থই হল তাঁর সুন্নাহ ও হাদীসের অনুসরণ করা, তাঁর সকল কথা ও কাজ বিনা দ্বিধায় মেনে নেওয়া এবং তাঁর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ اَطِیْعُوا اللهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ لَا یُحِبُّ الْكٰفِرِیْنَ.
(হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ কাফেরদের পছন্দ করেন না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩২
অন্যত্র বলেন-
وَ مَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّ لَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَی اللهُ وَ رَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ یَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِیَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ وَ مَنْ یَّعْصِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیْنًا.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা দান করেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর নিজেদের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার বাকি থাকে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করলে সে তো সুস্পষ্ট গোমারাহীতে পতিত হল। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৩৬
আরো বলেন-
فَلَا وَ رَبِّكَ لَا یُؤْمِنُوْنَ حَتّٰی یُحَكِّمُوْكَ فِیْمَا شَجَرَ بَیْنَهُمْ ثُمَّ لَا یَجِدُوْا فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیْتَ وَ یُسَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.
না, (হে নবী!) আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজেদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে আপনাকে বিচারক মানবে। তারপর আপনি যে রায় দেন, সে বিষয়ে নিজেদের অন্তরে কোনরূপ কুণ্ঠাবোধ করবে না এবং অবনত মস্তকে তা গ্রহণ করবে। -সূরা নিসা (৪) : ৬৫
সাহাবা-তাবেয়ীনসহ সকল যুগের হকপন্থীগণ এভাবেই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করেছেন। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজ বিনা দ্বিধায় মান্য করেছেন। তাঁর সুন্নাহকে শরয়ী বিধি-বিধানের উৎস এবং কুরআন অনুধাবনের ভিত্তি ও মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
আমাদের করণীয়ঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ اِنَّ اللهَ یُضِلُّ مَنْ یَّشَآءُ وَ یَهْدِیْۤ اِلَیْهِ مَنْ اَنَابَ.
(হে নবী!) আপনি বলে দিন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন আর তাঁর পথে কেবল তাকেই আনয়ন করেন, যে (তাঁর) অভিমুখী হয়। -সূরা রা‘দ (১৩) ২৭
তাই কুরআনের এই দুআটি আমরা বেশি বেশি পাঠ করি-
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ.
হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে যখন হেদায়েত দান করেছেন, তারপর আর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনিই মহাদাতা। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯
আর যারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়েছে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। দেখুন, বিষয়টা অনেক গুরুতর। কিছু বিষয় এমন, যাতে দলীলের আলোকে ইমামগণের মাঝে একাধিক মত হতে পারে। এটা সে ধরনের বিষয় নয়। এটা তো ঈমান-কুফরের বিষয়। এটা ঈমান আর ওটা কুফর। এটা হেদায়েত আর ওটা গোমরাহী। কিন্তু তারা ভুল বুঝেছে অথবা কেউ তাদের কুমন্ত্রণা দিয়েছে; কোনো একটা সমস্যা তাদের হয়েছে। দুআ করতে হবে, বোঝাতে হবে এবং আলেম-উলামার মজলিসে নিয়ে যেতে হবে। এরপর তারা নিজেরাও যদি নিজেদের জন্য দুআ করেন এবং সত্যটা বোঝার চেষ্টা করেন, আশা করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের হেদায়েত দান করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন এবং সিরাতে মুসতাকীমের উপর অবিচল রাখুন- আমীন।
৩- কবরের প্রশ্ন-উত্তর প্রমাণিত সত্য।
সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ২৭
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
আল্লাহ ঈমানদারদের ইহকাল ও পরকালে দৃঢ় বাক্য (কালেমা তায়্যিবা) দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। আর যারা জালিম, আল্লাহ তাদের বিভ্রান্তিতে রাখেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা-ই করেন। [সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৭
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে ঈমানদারদের প্রসঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা ঈমানের কারণে ঈমানদারদের ইহকাল ও পরকালে অবিচল রাখেন। আর সীমা লঙ্ঘনকারী অবিশ্বাসীদের তিনি বিভ্রান্তিতেই রাখেন। অনাস্থা, অশান্তি ও অস্থিরতা তাদের জীবনকে বিস্বাদময় করে তোলে।
‘মহান আল্লাহ পরকালে ঈমানদারদের অবিচল রাখেন’—এর ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা উল্লেখ করেছেন, এখানে কবরের প্রশ্ন-উত্তরের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ কবরে সবাইকে বিশেষ তিনটি প্রশ্ন করা হবে। কবরে সবাইকে জিজ্ঞেস করা হবে রব বা প্রতিপালক সম্পর্কে। জিজ্ঞেস করা হবে ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে। সে সময় খাঁটি ঈমানদাররা অনায়াসেই সেই প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম হবেন।
হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমানকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হয়, তখন সে সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। এটাই সুরা ইবরাহিমের ২৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আলোচ্য আয়াত ও হাদিস থেকে জানা যায়, কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্ন-উত্তর প্রমাণিত সত্য।
৪- রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেরাজ কুরআন-হাদীস ও ইজমায়ে উম্মত-এর অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। মেরাজ সত্য-এই বিশ্বাস রাখা ফরয। অস্বীকার করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আর মেরাজ যে সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল তা যে শুধু রূহানী বিষয় ছিল না এ বিষয়টির উপরও ঈমান রাখা জরুরি। সকল সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের বিশ্বাসও এটিই। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা.-এর থেকে যে কথা বর্ণনা করা হয় তা ঠিক নয়। একে তো সেটির সনদ দুর্বল। আর ইমাম আবুল আব্বাস ইবনে সুরাইজ বলেছেন, এ উক্তিটি হযরত আয়েশা রা.-এর উপর আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি তা বলেননি অথচ তার নামে একথা চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। (শরহুল মাওয়াহিব, যুরকানী ৮/৭) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত সফরের কথা সূরা বনী ইসরাঈলের শুরুতে এবং উর্ধ্ব জগতের সফরের কথা সূরা নাজমের ১৩ থেকে ১৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন মজীদের আয়াত, সহীহ হাদীস ও উম্মতের ইজমা দ্বার প্রমাণিত বিষয়ের বিপরীত ঐ ধরনের যয়ীফ বর্ণনার কোনো স্থান নেই তা বলাই বাহুল্য। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবুল খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া বলেন, ইসরার হাদীসের উপর মুসলিমদের ইজমা রয়েছে এবং বেদ্বীন ও মুলহিদরা তা থেকে বিমুখ হয়েছে। তারা ফুঁৎকারে আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়। আর আল্লাহ তার নূরকে পূর্ণ করবেন। যদিও কাফেররা অপছন্দ করে। বিস্তারিত জানার জন্য আলকাউসারে (আগস্ট ’০৬) প্রকাশিত হযরত মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমের প্রবন্ধটি পড়া যেতে পারে।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
২৫১০০
তাওহিদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও পুরস্কার
১৩ নভেম্বর, ২০২২
ঢাকা ১২১৪

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
৫১১৪০
লোগো হিসেবে Caduceus এবং প্রেসক্রিপশনে Rx ব্যবহারের বিধান
৩ জুন, ২০২৪
৯M৮F+P৯২

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী হিফজুর রহমান
২৪২৫৩
শুধু কুফরি ও শিরকি চিন্তা আসে; কী করবো?
১৫ নভেম্বর, ২০২২
ঢাকা ১২১১

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
৪০৭৪৭
অমুসলিমের কাছে দোয়া চাওয়া কি জায়েজ?
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে