মনে কুফরি চিন্তা আসলে করণীয়
প্রশ্নঃ ৩৬৩৪৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হলো, আমি আমার অজান্তে কোনো চিন্তা ভাবনা করা ছাড়াই মনে মনে চিন্তা করেছি, আমি হিন্দুধর্ম গ্রহন করলাম। কিন্তু আমি মুখে উচ্চারণ করি নাই। এটা ভুলে মনে আসার পর অনেক কালিমা পড়েছি। আল্লাহর কাছে মাফ চেয়েছি। তাও মন থেকে এই চিন্তা যাচ্ছে না। খাইতে পারছিনা। ঘুমোতে পারছিনা। শুধু মনে হচ্ছে আমি কি তাহলে হিন্দু হয়ে গেলাম! এই খারাপ কথাটা মনে আসার কারণে আমার কি গুনাহ হয়েছে বা আমি কি সত্যি হিন্দু হয়ে গেছি? দয়া করে তাড়াতাড়ি উত্তর দিবেন।,
২২ আগস্ট, ২০২৪
আক্কেলপুর
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এক.
প্রিয় ভাই, আপনি বলেছেন, আপনার মনের মাঝে আসা চিন্তাটির কারণে আপনি খুবই বিচলিত। সুতরাং বোঝা গেল, এগুলো শুধুমাত্র মনের কল্পনা এবং ওয়াসওয়াসা; যা শয়তানের ফাঁদ। এর কারণে আপনার কোনো গুনাহ হচ্ছে না। কেননা, হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ
আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (বুখারী ২৩৬১)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবন হাজর আসকালানি রহ. বলেন,
والمراد : نفي الحرج عما يقع في النفس ، حتى يقع العمل بالجوارح ، أو القول باللسان على وفق ذلك
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মনে যা আসে তার দ্বারা কোনো ক্ষতি হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কাজ দ্বারা কিংবা কথা দ্বারা চিন্তা অনুপাতে তা বাস্তবায়ন করবে না। ( ফাতহুল বারি ৫/১৬১)
দুই.
তবে এধরণের কুচিন্তা গুনাহের পর্যায়ে গণ্য না হলেও এবং এর দ্বারা কোনো ক্ষতি না হলেও এটি যে শয়তানের ফাঁদ; সে বিষয়টি আপনার মনে রাখতে হবে। এর দ্বারা তার অন্যতম উদ্দেশ্য হল, বান্দার অন্তরে সন্দেহ তৈরি করা, যাতে সে বান্দার ঈমান দুর্বল করে দিতে পারে । এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে এ থেকে সতর্ক করেছেন। যেমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ ، فَيَقُولَ : مَنْ خَلَقَ كَذَا وَكَذَا ؟ حَتَّى يَقُولَ لَهُ : مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ ؟ فَإِذَا بَلَغَ ذَلِكَ ، فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ
শয়তান তোমাদের কারো নিকট আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরণের ভাবনা থেকে বিরত হও। ( বুখারী ৩২৭ )
তিন.
প্রিয় ভাই, উক্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে দুটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন–
১. আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তাঁর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর। তিনি অসীম দয়ালু। সুতরাং তিনি তোমাকে ক্ষমা করবেন ও মুক্তি দিবেন। মূলত এই নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহরই। তিনি বলেন,
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তুমি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব কর, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম-সিজদাহ ৩৬)
২. কুমন্ত্রণাকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপকারী কাজে ব্যস্ত হয়ে যাও। হাদিসে এসেছে, একবার সাহাবায়ে কেরামের একদল রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সত্যিই কি তোমরা এরকম পেয়ে থাক? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমরা এরকম অনুভব করে থাকি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ
এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ। (মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ: অন্তরের ওয়াসওয়াসা)
ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে একজন লোক এসে বললেন, আমার মনে কখনো এমন কথার উদয় হয়, যা উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমার কাছে বেশি ভালো মনে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ أَمْرَهُ إِلَى الْوَسْوَسَةِ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি এ বিষয়টিকে নিছক একটি মনের ওয়াসওয়াসা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। (আবু দাউদ, কিতাবুল আদব, অনুচ্ছেদ: ওয়াসওয়াসা প্রতিরোধ)
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. বলেন, চোর তো সেই ঘরেই ঢুকে যে ঘরে দামী সম্পদ থাকে। অনুরূপভাবে ইবলিস উক্ত ওয়াসওয়াসা ওই মানুষকেই দিয়ে থাকে, যার অন্তরে ঈমান নামক মহামূল্যবান সম্পদ থাকে।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, মুমিনব্যক্তি এ ধরণের ওয়াওয়াসাকে অপছন্দ করা সত্ত্বেও তার মনে এর উদয় হওয়া এবং তা প্রতিহত করতে প্রাণপন চেষ্টা করা তার ঈমানদার হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যেমন কোনো মুজাহিদের সামনে শত্রু এসে উপস্থিত হলো। মুজাহিদ শত্রুকে প্রতিহত করল এবং পরাজিত করল। এটি একটি বিরাট জিহাদ। অনুরূপভাবে শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করাও একটি বড় জিহাদ।
সুতরাং উক্ত দু’টি দিক-নির্দেশনা মেনে চলুন এবং পাশাপাশি শয়তানের উক্ত ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করার লক্ষে নিমোক্ত হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করতে পারেন–
১. আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন,
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ
হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।
আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)
সুতরাং এই হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী আপনিও উক্ত দোয়া অধিকহারে করুন।
২. হাদিস শরিফে এসেছে, মা’কাল ইবনু ইয়াসার রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ আবু বকর রাযি.-কে বলেছেন,
يا أبا بكرٍ ، لَلشِّركُ فيكم أخْفى من دبيبِ النَّملِ والذي نفسي بيدِه ، لَلشِّركُ أخْفى من دَبيبِ النَّملِ ، ألا أدُلُّك على شيءٍ إذا فعلتَه ذهب عنك قليلهُ و كثيرهُ ؟ قل : ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَ اَنَا أَعْلَمُ وَ اَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ
হে আবু বকর! নিশ্চয় তোমাদের মাঝে শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়ে সূক্ষ্ম। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়ে সূক্ষ্ম। আমি কি আপনাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যা বললে শিরকের অল্প ও বেশি সবই দূর হয়ে যাবে? আপনি বলুন,
ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَ اَنَا أَعْلَمُ وَ اَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ
হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই। (সহিহ আলআদাবুল মুফরাদ ৫৫১)
সুতরাং এই হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী আপনি উক্ত দোয়াও অধিকহারে করুন।
والله اعلم بالصواب
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
২৪২৫৩
শুধু কুফরি ও শিরকি চিন্তা আসে; কী করবো?
১৫ নভেম্বর, ২০২২
ঢাকা ১২১১

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
৩৪৪১৪
তাকদীর সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা কি ঈমান বিধ্বংসী চিন্তা?
৪ জুলাই, ২০২৩
Dhaka, Dhaka, Bangladesh

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
২২০৪৩
২৬ আগস্ট, ২০২২
ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭০০০১২

উত্তর দিয়েছেনঃ শফিকুল ইসলাম হাটহাজারী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে