আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

১৫ বছর বয়সে কি বিবাহ করা যাবে?

প্রশ্নঃ ৭৯৪৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, প্রশ্ন: ১.দ্রুত বিয়ে সমন্ধে সমস্ত হাদিস জানতে চাই।২.দ্রুত বিবাহের কিছু বুদ্ধি এবং পরামর্শ চাই।৩.আমার আসল বয়স ১৫ বছর।আমার এখনো কোনো মানুষের ভরন-পোষণের ক্ষমতা হয়নি।কিন্তু আমার প্রচন্ড যৌন চাহিদা।নিজেকে খুব কষ্টে হস্তমৈথুন থেকে আটকে রাখি। বাবা-মা কেও বিয়ের কথা বলতে পারি না। (ক) এ আবস্থায় আমার করণীয় কি?? (খ)আমি কি করলে হস্তমৈথুন থেকে বাচবো??(গ)এ অবস্থায় নিজের সামর্থ না হয়া পর্যন্ত কিভাবে যৌন চাহিদা মিটাবো??

৬ জুন, ২০২৪
DMAN৮৫৮৮، ৮৫৮৮ طريق قباء، ৪৫৪৫، المغيسلة، المدينة المنورة ৪২৩১৫، السعودية (SA)

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


যৌবনের প্রথম ধাক্কা সামাল দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সলাত জামাতের সাথে সুন্নত তরীকায় আদায় করুন।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করুন।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরআনুল কারীমের অনুবাদ ও তাফসীর অধ্যায়ন করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ুন।
সমস্ত গুনাহ পরিত্যাগ করুন। বিশেষ করে চোখের গুনাহ থেকে পরিপূর্ন মুক্ত থাকুন।
সর্বদা ভালো লোকদের সান্নিধ্যে থাকুন।
একাকী নিঃসঙ্গ সময় কাটাবেন না।
প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখুন।
আরো বেশি রোযা রাখার সাহস থাকলে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন করুন।
কোন আল্লাহ ওয়ালা মুত্তাকী আলিমের সাহচর্য গ্রহণ করুন। তার উপদেশ শুনুন। উপদেশগুলো বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে তার কাছে কিছু সময় অতিবাহিত করুন।
যেসব পরিবেশে গেলে হস্তমৈথুন বারবার হয়ে যায়, যাদের সঙ্গে থাকলে এই ধরনের ইচ্ছা জাগে, তাদেরকে উপেক্ষা করুন।

যৌনচাহিদা ও শারীরিক সক্ষমতা থাকলেই বিবাহ করা নয়। শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ قَالَ حَدَّثَنِي عُمَارَةُ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ دَخَلْتُ مَعَ عَلْقَمَةَ وَالأَسْوَدِ عَلٰى عَبْدِ اللهِ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّه“ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّه“ لَه“ وِجَاءٌ.

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মাস’উদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন। হে যুবক সম্প্রদায় ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।

টীকা :
হাদীসে ‘যুব সম্প্রদায়’ কাদের বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে ইমাম নাবাবী লিখেছেন-
আমাদের লোকদের মতে যুবক-যুবতী বলতে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যারা বালেগ [পূর্ণ বয়স্ক] হয়েছে এবং ত্রিশ বছর বয়স পার হয়ে যায়নি।
আর এ যুবক-যুবতীদের বিয়ের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকীদ করলেন কেন, তার কারণ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তার বিশ্ববিখ্যাত বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী” গ্রন্থে লিখেছেনঃ
“হাদীসে কেবলমাত্র যুবক-যুবতীদের বিয়ে করতে বলার কারণ এই যে, বুড়োদের অপেক্ষা এ বয়সের লোকদের মধ্যেই বিয়ে করার প্রবণতা ও দাবী অনেক বেশী বর্তমান দেখা যায়।
যুবক-যুবতীদের বিয়ে যৌন সম্ভোগের পক্ষে খুবই স্বাদপূর্ণ হয়। মুখের গন্ধ খুবই মিষ্টি হয়, দাম্পত্য জীবন যাপন খুবই সুখকর হয়, পারস্পরিক কথাবার্তা খুবই আনন্দদায়ক হয়, দেখতে খুবই সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়, স্পর্শ খুব আরামদায়ক হয় এবং স্বামী বা স্ত্রী তার জুড়ির চরিত্রে এমন কতগুলো গুণ সৃষ্টি করতে পারে যা খুবই পছন্দনীয় হয়, আর এ বয়সের দাম্পত্য ব্যাপার প্রায়ই গোপন রাখা ভাল লাগে। যুবক বয়স যেহেতু যৌন সম্ভোগের জন্য মানুষকে উন্মুখ করে দেয়। এ কারণে তার দৃষ্টি যে কোন মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে এবং সে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় পড়ে যেতে পারে। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বয়সের ছেলেমেয়েকে বিয়ে করতে তাকীদ করেছেন এবং বলেছেনঃ বিয়ে করলে চোখ যৌন সুখের সন্ধানে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবে না এবং বাহ্যত তার কোন ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদিও কথা শুরু করেছেন যুবক মাত্রকেই সম্বোধন করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ের এ তাকীদকে নির্দিষ্ট করেছেন কেবল এমন সব যুবক-যুবতীদের জন্য যাদের বিয়ের সামর্থ্য আছে। আর যারা বিয়ের ব্যয় বহনের সঙ্গতি রাখে না তারা সওম পালন করবে। সওম পালন তাদের যৌন উত্তেজনা দমন করবে। কারণ পানাহারের মাত্রা কম হলে যৌন চাহিদা প্রদমিত হয়।

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৬

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন