আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের কোন ধরণের পোশাক পড়া উত্তম?

প্রশ্নঃ ৭৫১১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের কি ধরণের পোশাক পড়া উত্তম? বেড়াতে বা বিয়েতে যেতে কি রঙিন পোশাক পড়তে পারবে?,

১৮ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


নারীদের পর্দার তিনটি স্তর রয়েছে।
ক. পর্দার প্রথম স্তর :
নারীরা বিশেষ প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বোরকা অথবা মোটা চাদরে আপাদমস্তক আবৃত হয়ে বের হতে পারবে।

یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَبَنٰتِکَ وَنِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

হে নবী ! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মু’মিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টানিয়া দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
—আল আহ্‌যাব - ৫৯

তাফসীরঃ
এ আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পর্দার হুকুম কেবল নবী-পত্নীদের জন্য বিশেষ নয়; বরং সমস্ত মুসলিম নারীদের জন্য ব্যাপক। তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যখন কোন প্রয়ােজনে ঘরের বাইরে যায়, তখন যেন তাদের চাদর মুখের উপর টেনে দেয় এবং এভাবে তাদের চেহারা ঢেকে রাখে। বােঝা যাচ্ছে, পথ-ঘাট দেখার জন্য কেবল চোখ খােলা থাকবে এবং তা বাদে চেহারার অবশিষ্টাংশ ঢেকে রাখবে। এর এক পদ্ধতি তাে এই হতে পারে যে, যে কাপড় দ্বারা সমগ্র শরীর ঢাকা যায়, তার একাংশ চেহারায় এমনভাবে পেচিয়ে দেওয়া হবে, যাতে চোখ ছাড়া আর কিছু খোলা না থাকে। আবার এমনও হতে পারে যে, এজন্য আলাদা নেকাব ব্যবহার করা হবে।

একদল মুনাফেক রাস্তাঘাটে মুমিন নারীদেরকে উত্যক্ত করত। এ আয়াতে পর্দার সাথে চলাফেরা করার একটা উপকার এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, পর্দার সাথে চলাফেরা করলে সকলেই বুঝতে পারবে তারা শরীফ ও চরিত্রবতী নারী। ফলে মুনাফেকরা তাদেরকে উত্যক্ত করার সাহস করবে না। যারা বেপর্দা চলাফেরা করে ও সেজেগুজে বের হয় তারাই রাস্তাঘাটে বেশি ঝুট-ঝামেলার শিকার হয়। আল্লামা ইবনে হাইয়্যান আয়াতটির এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন (আল-বাহরুল মুহীত)।

শানে নুজুলঃ
তৎকালীন আরব সমাজে বাড়ির ভেতরে মল-মূত্র ত্যাগের বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় সম্ভান্ত পরিবারের নারীদেরকেও ভোর অন্ধকারে মল-মূত্র ত্যাগের জন্য পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে যেতে হত । একদা হযরত ছওদাহ (রাঃ) ও এরূপ মলমূত্র ত্যাগের উদ্দেশ্যে জনপদের বাইরে গমনকালে হযরত ওমর (রাঃ) তাঁকে তাঁর দৈহিক গঠনের পরিচয় জানতে পেরে তাঁকে ওই সময়ে ঘরের বাইরে বের হওয়ায় তিরস্কার করলেন । হযরত ছওদাহ (রাঃ) ফিরে গেলেন এবং হুযূর (ছঃ)-এর নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত খুলে বললেন, তখন এ আয়াত কয়টি নাযিল হয়।

খ. পর্দার দ্বিতীয় স্তর :
নারী নিজ ঘরে অবস্থানের সময় পরিবারের গায়রে মাহরাম পুরুষদের আনাগোনা ঠেকিয়ে রাখা অসম্ভব। এ সময় তারা তাদের কাজকর্ম করে যেতে হবে। আবার আপাদমস্তক বোরকা বা মোটা চাদর দিয়ে ঢেকে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়বে। সে সময় তাদের করণীয় ;

وَقُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَیَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَلَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَلۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ۪ وَلَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اٰبَآئِہِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِہِنَّ اَوۡ نِسَآئِہِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡہَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَلَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِہِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِہِنَّ ؕ وَتُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ جَمِیۡعًا اَیُّہَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

আর মু’মিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দিয়ে আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহ্ র দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
—আন নূর - ৩১

তাফসীরঃ
এখানে ভূষণ দ্বারা শরীরের সেই অংশ বােঝানাে হয়েছে, যাতে অলংকার বা আকর্ষণীয় পােশাক পরিধান করা হয়। এভাবে এ আয়াতে নারীদেরকে হুকুম করা হয়েছে, তারা যেন গায়রে মাহরাম বা পরপুরুষের সামনে নিজেদের গােটা শরীর বড় চাদর বা বােরকা দ্বারা ঢেকে রাখে, যাতে তারা তার সাজসজ্জার অঙ্গসমূহ দেখতে না পায়। তবে শরীরের এ রকম অংশ যদি কাজকর্ম করার সময় আপনিই খুলে যায় বা বিশেষ প্রয়ােজনবশত খােলার দরকার পড়ে, তাতে গােনাহ হবে না। সে সম্পর্কে বলা হয়েছে যা আপনিই প্রকাশ পায় তা ছাড়া। ইবনে জারীর তাবারী (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নারী যে চাদর দ্বারা শরীর ঢাকে, এ ব্যতিক্রম দ্বারা সেটাই বােঝানাে উদ্দেশ্য, যেহেতু তা আবৃত করা সম্ভব নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাখ্যা করেন, বিশেষ প্রয়ােজনে যদি চেহারা বা হাত খুলতে হয়, তবে এ আয়াত তার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু চেহারাই যেহেতু রূপ ও সৌন্দর্যের কেন্দ্রস্থল তাই সাধারণ অবস্থায় তা ঢেকে রাখতে হবে, যেমন সূরা আহযাবে হুকুম দেওয়া হয়েছে (৩৩ : ৫৯)। হ্যাঁ,ক্ষক্ষক্ষক্ষক্ষ বিশেষ প্রয়ােজন দেখা দিলে সেটা ভিন্ন কথা। তখন চেহারাও খােলা যাবে, কিন্তু পুরুষের প্রতি নির্দেশ হল তখন যেন সে নিজ দৃষ্টি অবনমিত রাখে, যেমন এর আগের আয়াতে গেছে।
সকল পুরুষের সামনে নারীর পর্দা রক্ষা জরুরী নয়, এবার তাদের তালিকা দেওয়া হচ্ছে।
‘আপন নারীগণ' কোন কোন মুফাসসির বলেন, এর অর্থ মুসলিম নারীগণ। সুতরাং অমুসলিম নারীদের সামনে মুসলিম নারীর জন্য পর্দা রক্ষা জরুরী। কিন্তু বিভিন্ন হাদীস দ্বারা জানা যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের কাছে অমুসলিম নারীরা আসা-যাওয়া করত। এর দ্বারা উপরিউক্ত ব্যাখ্যা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কাজেই অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন, ‘আপন নারীগণ' বলতে এমন নারীদের বােঝানাে হয়েছে, যাদের সঙ্গে মেলামেশা হয়ে থাকে। তা মুসলিম নারী হােক বা অমুসলিম নারী। নারীদের জন্য এরূপ নারীর সঙ্গে পর্দা করা জরুরী নয়। ইমাম রাযী (রহ.) ও আল্লামা আলুসী (রহ.) এ ব্যাখ্যাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন (মাআরিফুল কুরআন)।

যারা নিজ মালিকানাধীন’ -এর দ্বারা দাসীগণকে বােঝানাে হয়েছে। দাসী (চাকরানী নয়) মুসলিম হােক বা অমুসলিম, তার সঙ্গে পর্দা করা আবশ্যিক নয়। কোন কোন ফকীহ গােলামকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন, অর্থাৎ তার সঙ্গেও পর্দা নেই।
‘যৌন কামনা জাগে না এমন খেদমতগার’। কুরআন মাজীদে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে التابمين অর্থাৎ এমন লােক, যে অন্যের অধীন থাকে। অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, এক ধরনের হাবাগােবা লােক থাকে, যারা কোন পরিবারের সঙ্গে লেগে থাকে, তাদের ফুট - ফরমাশ খাটে আর তারা কিছু দিলে খায় কিংবা কোন মেহমানের সাথে জুটে যায় এবং বিনা দাওয়াতে হাজির হয়ে যায়। পেটে কিছু খাবার দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোন লক্ষ্য নেই। যৌন চাহিদার কোন ব্যাপারও তাদের থাকে না। সেকালেও এ ধরনের লােক ছিল। আয়াতের ইশারা তাদের দিকেই। ইমাম শাবী (রহ.) বলেন, এর দ্বারা বয়স্ক চাকর-বাকরকে বােঝানাে হয়েছে, বয়সজনিত জরায় যাদের অন্তর থেকে নারী-আসক্তি লােপ পেয়ে গেছে (তাফসীরে ইবনে জারীর)।

অর্থাৎ সেই নাবালেগ শিশু, নর-নারীর যৌন সম্পর্ক বিষয়ে যার কোন ধারণা সৃষ্টি হয়নি।

অর্থাৎ পায়ে যদি নুপুর পরা থাকে, তবে হাঁটার সময় এমনভাবে পা ফেলবে না, যাতে নুপুরের আওয়াজ কেউ শুনতে পায় বা অলংকারের পারস্পরিক ঘর্ষণজনিত আওয়াজ কোন গায়রে মাহরাম পুরুষের কানে পৌঁছে।

গ. পর্দার তৃতীয় স্তর :
নিজের মাহরাম পুরুষদের সম্মুখে লজ্জা নিবারণ করার সাথে সাথে পেট পিঠ ঢেকে রাখবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে নারী সাহাবীয়ারা সাধারণত কালো বোরকা পরিধান করতো অথবা মোটা চাদর দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে বের হতো।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯১৩৮৬

প্রজেক্টর বা ডিজিটাল পর্দার মাধ্যমে বক্তাকে দেখা মহিলাদের কতটুকু শরীয়তসম্মত?


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নওগাঁ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ আল কাউসার

২৯৪১৮

এক মুষ্ঠির কম দাড়ি রাখার বিধান কি?


১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

নওগাঁ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৬৩০৭০

প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড়ে নামাজ পড়ার জায়েজ হবে কি?


২ জুন, ২০২৪

ঢাকা ১২০৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৪৮৩০

ভ্রু প্লাক করেছে এমন গর্ভবতী মায়ের প্রতি উপদেশ


১৪ জুন, ২০২৩

নারায়নগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy