আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

রুজি রোজগারে বারাকাহ হওয়ার আমল

প্রশ্নঃ ১০৭০৭১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, Ki kore rijjik barbe,

৬ জুন, ২০২৫

West Bengal ৭৩২২০৬

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!!
মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ-

وَمَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰہِ رِزۡقُہَا وَیَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّہَا وَمُسۡتَوۡدَعَہَا ؕ کُلٌّ فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ

অর্থঃ- ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিযক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। তিনি তাদের স্থায়ী ঠিকানাও জানেন এবং সাময়িক ঠিকানাও। সব কিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। (সুরা হুদ, আয়াতঃ ৬)


ব্যাখ্যাঃ- আল্লাহ তাআলাই রিযকদাতা। সৃষ্টি করার সাথে সাথে একান্ত নিজ অনুগ্রহে রিযকের দায়িত্বও তিনি নিজ দায়িত্বে রেখেছেন। কাজেই যার জন্য যে পরিমাণ রিযক বরাদ্দ আছে সে তা পাবেই। সুতরাং এ ব্যাপারে তাঁরই উপর ভরসা রাখতে হবে। একে তাওয়াক্কুল বলে। উপায় অবলম্বন করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। বরং বান্দার উপায় অবলম্বনকে তিনি তার জন্য বরাদ্দকৃত রিযক পৌঁছানোর দুয়ার ও মাধ্যম বানিয়েছেন। তাওয়াক্কুল যেমন তাঁর হুকুম, তেমনি কোন উপায় অবলম্বন করাও তার হুকুম। তাই কোন উপায় অবলম্বন না করলে তাতে তাঁর আদেশ অমান্য করা হয়। এ কারণে রিযকের সংকট দেখা দিলে তা তার আদেশ অমান্য করারই পরিণাম। উপায়-এর নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই যে, তা অবলম্বন করলে রিযক প্রাপ্তি অবশ্যম্ভাবী হবে আর না করলে অপ্রাপ্তি অনিবার্য হবে। এজন্যই কখনও কখনও উপায় নিষ্ফল হয় এবং কখনও উপায় ছাড়াই ফল পাওয়া যায়। মূল দাতা যেহেতু আল্লাহ তাআলা, তাই তিনি চাইলে উপায়কে ফলপ্রসূ করতে পারেন, চাইলে নিষ্ফল করে দিতে পারেন এবং বিনা উপায়েও রিযক দিতে পারে।


মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ-

وَکَاَیِّنۡ مِّنۡ دَآبَّۃٍ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَہَا ٭ۖ اَللّٰہُ یَرۡزُقُہَا وَاِیَّاکُمۡ ۫ۖ وَہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ

অর্থঃ- এমন কত জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য সঙ্গে বয়ে বেড়ায় না। আল্লাহই তাদেরকে রিযক দান করেন এবং তোমাদেরকেও। ৩৯ তিনিই সব কথা শোনেন, সকল কিছু জানেন।
(সুরা আল আনকাবুত, আয়াতঃ ৬০)


ব্যাখ্যাঃ- চিন্তা কর,পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন হাজারো জীবজন্তু আছে, যারা খাদ্য সঞ্চয় করার কোন ব্যবস্থা করে না। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা নিজ কৃপায় প্রত্যহ তাদেরকে খাদ্য সরবরাহ করেন। পণ্ডিতগণ বলেন, সাধারণ জীবজন্তু এরূপই। কেবল পিপীলিকা ও ইঁদুর তাদের খাদ্য গর্তে সঞ্চিত রাখার ব্যবস্থা করে। পিপীলিকা শীতকালে বাইরে আসে না। তাই গ্রীষ্মকালে গর্তে খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য চেষ্টা করে। জনশ্রুতি এই যে, পক্ষীকুলের মধ্যে কাকও তার খাদ্য বাসায় সঞ্চিত রাখে। কিন্তু রাখার পর বেমালুম ভুলে যায়। মোটকথা, পৃথিবীর অসংখ্য ও অগণিত প্রকার জীবজন্তুর মধ্যে অধিকাংশের অবস্থা এই যে, তারা অন্য খাদ্য সংগ্রহ করার পর আগামীকালের জন্য তা সঞ্চিত রাখে না এবং এর প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জামও তাদের নেই। হাদীসে আছে, পশুপক্ষী সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদরপূর্তি করে ফিরে আসে। তাদের না আছে ক্ষেতখোলা, না আছে জমি ও বিষয়সম্পত্তি। তারা কোন কারখানা অথবা অফিসের কর্মচারীও নয়। তারা আল্লাহ্ তা'আলার উন্মুক্ত পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং পেট-চুক্তি খাদ্য লাভ করে। এটা একদিনের ব্যাপার নয় বরং তাদের আজীবনের কর্মধারা, মোটকথা রিযিকের আসল উপায় আল্লাহরই দান,

এছাড়াও হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই রিজিক বান্দাকে সেভাবে তালাশ করে, যেভাবে তার মৃত্যু তাকে তালাশ করে।’-সহীহ ইবনে হিব্বান ৮/৩১, হাদীস ৩২৩৮

অর্থাৎ মানুষের মৃত্যু যেমন অবধারিত তেমনি তার রিজিকও তার কাছে পৌঁছা অবধারিত।

সারকথা এই যে, প্রতিটি প্রাণীর রিজিক আল্লাহ তাআলাই দান করেন এবং এই রিযিক অবশ্যই তার কাছে পৌঁছবে। এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুমিন্তমুসলমানের ঈমানের অংশ।

আর আল্লাহ তাআলার চিরন্তন নীতি, পদ্ধতি হল, প্রিয় বান্দাদেরকে মাঝে মধ্যে বালা-মুসিবত ও অভাব-অনটন দিয়ে থাকেন। এর পিছনে মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লাহ তাআলার অনেক হেকমত-রহস্য থাকে। যেমন তাদের গুনাহ মাফ করা, মর্তবা বুলন্দ করা, তারা যেন কখনো আল্লাহমুখিতা থেকে গাফিল না হন সেজন্য সতর্ক করা, সর্বোপরি তাদের ঈমান ও ছবরের পরীক্ষা গ্রহণ করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) এবং আমি তোমাদিগকে অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন্তসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের কিছু ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা। (হে নবী) আপনি  সুসংবাদ দান করুন ধৈর্য্যশীলদের, যখন তাদের উপর বিপদ আপতিত হয় তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর এবং আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব।’’ (বাকারা : ১৫৫-১৫৬)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনো তোমাদের কাছে আসেনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা, তাদেরকে স্পর্শ করেছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তাঁর সাথে ঈমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিল, কখন আসবে আল্লাহর নুসরত। জেনে রাখ, অবশ্যই আল্লাহর নুসরত নিকটে। (সূরা বাকারা : ২১৪)

হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, (তরজমা) সবচাইতে অধিক বালা-মুসিবতে পতিত হয়েছেন নবী-রাসূলগণ, তারপর যথাক্রমে তাঁদের নিকটবর্তী ব্যক্তিগণ।’-জামে তিরমিযী ২/৬৫
সুতরাং জীবনের নানা রকম কষ্ট যেমন- বালা-মুসিবত (দুর্দশা বা বিপদ), চিন্তা-পেরেশানি (দুশ্চিন্তা), অভাব-অনটন ইত্যাদিতে আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

প্রিয় দ্বীনী ভাই!!
রুজি রোজগারের বারাকাহ হওয়ার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর এবং দৈনিক ন্যূনতম দু'রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে পড়ে আল্লাহ তাআলার কাছে বিশেষভাবে দোয়া করবে। তিনি অবশ্যই দোয়া কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।

রিযিক বৃদ্ধির জন্য এই আয়াত বেশি বেশি করে ‌‌পড়বে:

اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ
আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু; তিনি যাকে ইচ্ছা রিযিক দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।
—আশ্‌-শূরা - ১৯

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ আরিফুর রহমান
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৬৫২৬

দোয়া কবুল হওয়ার রুকন ও শর্তসমূহ


২১ জুলাই, ২০২৩

ঢাকা ১২০৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৯০৭৩৭

ফরয নামাযের সিজদায় অতিরিক্ত দু‘আ করা


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মনাইর কান্দি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

৮৫৬৭১

মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে করনীয় আমাল


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

২৭৫৪৩

হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করা


৬ জানুয়ারী, ২০২৩

West Bengal ৭২২১৫১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy