আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭৫০৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জাকাতের বিষয়ে জানতে চায়

২৪ জুলাই, ২০২১
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


السلام عليكم ورحمة الله وبركاته



ডাকাতের বিষয়ে কুরআনুল কারীমের এই আয়াতটি অত্যন্ত স্পষ্ট।

اِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِیۡنَ یُحَارِبُوۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَیَسۡعَوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَسَادًا اَنۡ یُّقَتَّلُوۡۤا اَوۡ یُصَلَّبُوۡۤا اَوۡ تُقَطَّعَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَاَرۡجُلُہُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ اَوۡ یُنۡفَوۡا مِنَ الۡاَرۡضِ ؕ  ذٰلِکَ لَہُمۡ خِزۡیٌ فِی الدُّنۡیَا وَلَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ۙ

যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় এটাই তাদের শাস্তি যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে বা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে বা বিপরীত দিক হতে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে বা তাদেরকে দেশ হতে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্ছনা ও পরকালে তাদের জন্যে মহাশাস্তি রয়েছে;
—আল মায়িদাহ - ৩৩

তাফসীরঃ
পূর্বে মানুষের প্রাণের মর্যাদা তুলে ধরার সাথে ইঙ্গিত করে দেওয়া হয়েছিল যে, যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, এ মর্যাদা তাদের প্রাপ্য নয়। এবার তার বিস্তারিত বিধান বর্ণিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে মুফাসসির ও ফকীহগণ প্রায় সকলেই একমত যে, এ আয়াতে সেই সব দস্যু-ডাকাতদের কথা বলা হয়েছে, যারা অস্ত্রের জোরে মানুষের মাঝে লুটতরাজ চালায়। বলা হয়েছে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ ও রাসূল প্রদত্ত আইন-কানুনের অমর্যাদা করে। আর মানুষের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ যেন আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ। আয়াতে তাদের চার রকম শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) সে শাস্তিসমূহের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই যে, তারা যদি কাউকে হত্যা করে, কিন্তু অর্থ-সম্পদ লুট করতে না পারে, তবে তাদেরকে হত্যা করা হবে। আর এ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে শরয়ী শাস্তি (হুদুল) হিসেবে, কিসাস হিসেবে নয়। সুতরাং নিহতের ওয়ারিশ ক্ষমা করলেও ঘাতক ক্ষমা পাবে না। ডাকাত যদি কাউকে হত্যা করার সাথে অর্থ-সম্পদ লুটও করে, তবে তাকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। যদি সম্পদ লুট করে, কিন্তু কাউকে হত্যা না করে, তবে তাদের ডান হাত ও বাম পা কেটে দেওয়া হবে। যদি হত্যা ও লুট কোনটাই না করে, কিন্তু মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে, তবে তাদেরকে চতুর্থ শাস্তি দেওয়া হবে, যার বর্ণনা পরবর্তী টীকায় আসছে। মনে রাখতে হবে, কুরআন মাজীদ এসব কঠোর শাস্তির কথা কেবল মূলনীতি আকারে বর্ণনা করেছে, কিন্তু এগুলো প্রয়োগ করার জন্য কি-কি শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, নবী সাল্লাল্লহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। ফিকহী গ্রন্থাবলীতে সবিস্তারে তার উল্লেখ রয়েছে। সে সকল শর্ত এমনই কঠিন যে, কোনও মামলায় তা পূরণ হওয়া খুব সহজ নয়। কেননা উদ্দেশ্য তো হল এ সকল শাস্তি যত সম্ভব কম প্রয়োগ করা, কিন্তু শর্তাবলী পাওয়া গেলে মোটেই ছাড় না দেওয়া, যাতে এক অপরাধীর শাস্তি দেখে অন্যান্য অপরাধীগণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

৩০. এটা কুরআনী শব্দাবলীর তরজমা। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) 'দেশ থেকে দূর করে দেওয়া’-এর ব্যাখ্যা করেছেন ‘কারাগারে আটকে রাখা'। হযরত উমর (রাযি.) থেকেও এরূপ ব্যাখ্যা বর্ণিত আছে। অন্যান্য ফকীহগণ এর অর্থ করেছেন, দেশ থেকে বিতাড়িত ও নির্বাসিত করা হবে।

শানে নুজুলঃ
ষষ্ঠ হিজরীতে উ’কল ও উ’রাইনার গোত্রের কতিপয় লোক মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করার পর মদীনার আবহাওয়ার কারণে তারা অসুস্থ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এর নিকট গেলে, তিনি তাদেরকে, যাকাতের উটের দুগ্ধ ও মূত্র সেবন করতে বললেন । তারপর সুস্থ হয়ে তারা রাখাল ইয়াসারকে হাত, পা কেটে জিহ্বায় কাট বিদ্ধ করে শহীদ করে । এ সংবাদ অবগত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) অত্যন্ত ব্যথিত হলেন এবং কুরুয বিন্ খালেদ ফিহরী কিংবা কারও মতে হযরত ইবনে জাবেরের নেতৃত্বে বিশজন অশ্বারোহীকে পাঠান । তারা তাদেরকে নবীর দরবারে হাযির করেন । তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় । (মুঃ কোঃ, আসাঃ সিয়ার)

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন