সহবাসের নিষিদ্ধ সময়
প্রশ্নঃ ৭৪৪৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম! ১.শরিয়তে সহবাসের কি কোনো নিষিদ্ধ সময় আছে? ২.ছেলে মেয়ে বালেগ হওয়ার যে আলামতগুলো আছে, তার মধ্য থেকে যেকোনো একটি বা দুটি আলামত পাওয়া গেলে ও কি তাকে বালেগ বলে ধরা যাবে?,
২৫ অক্টোবর, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১- রমযান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রী-সহবাস করা হারাম। এছাড়া হজ্জ কিংবা উমরার ইহরাম অবস্থায় হারাম। এবং মহিলারা হায়েয বা নিফাস অবস্থায় থাকলে হারাম। এছাড়া ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ কোনো সময় যেমন নেই, অনুরূপভাবে উত্তম সময়ও নেই। বরং দিবারাত্রে যে কোনো দিন যে কোনো সময় স্বামী স্ত্রীর যখনই সুযোগ হয়, তখনই সহবাস বৈধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা ২২২)
২- ছেলে বা মেয়ের বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার মূল নিদর্শন বীর্যস্খলন হওয়া। এটির প্রকাশক অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন
১ ছেলে মেয়েদের সেটি স্বপ্নদোষের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে।
২ ছেলেদের দাড়ি গোফ উঠা আর মেয়েদের স্তন বড় হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।
৩ মেয়েদের হায়েজ আসা, গর্ভধারণ করা ইত্যাদির মাধ্যমেও বালেগ হওয়া সাব্যস্ত হয়।
এইতো গেল নিদর্শন হিসেবে বালেগ হওয়া নির্ধারণ করা। যা নির্ধারণ করা খুবই সহজ।
কিন্তু কথা হল, যদি নিদর্শন বুঝা না যায়,তাহলে বয়স হিসেবে কিভাবে বালেগ হওয়া নির্ধারণ করবে?
বয়সের ভিত্তিতে বালেগ ও নাবালেগ নির্ধারণে ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে বিস্তর মতভেদ হয়ে গেছে। আসলে এটি নির্ণয় করা একটু দূঃরহ ব্যাপারও। কারণ সমাজ, পরিবেশ এবং রাষ্ট্রের আবহওয়ার ভিন্নতার কারণে মানুষের শারীরিক গঠনে, আচরণে ভিন্নতা দেখা দেয়। সেই হিসেবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া না হওয়ার বিষয়টিও যেহেতু শরীরের সাথে অনেকটা সম্পর্কিত, তাই এটির বয়সসীমা নির্ধারণও বেশ দুঃসাধ্য বিষয়।
তবে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল, বালেগ হবার উপরোক্ত আলামতগুলো যদি কোন ছেলে বা মেয়ের মাঝে প্রকাশিত না হয়, তাহলে সন্তানের বয়স পনের বছর হলেই উক্ত ছেলে মেয়ে বালেগ হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
عن ابن عمر رضي الله عنهما أنه عُرِض على النبي صلى الله عليه وسلم يوم أُحدٍ وله أربع عشرة سنة فلم يُجِزْه، وعُرِض عليه يوم الخندق وله خمس عشرة سنة فأجازه.
ইবনে উমর রাঃ উহুদের জিহাদে অংশ নেবার অনুমতি চাইলেন, তখন তার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। রাসূল সাঃ তাকে অনুমতি প্রদান করেননি। কিন্তু খন্দকের জিহাদের অংশ নিতে অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয়া হয়, তখন তার বয়স ছিল পনের বছর। [আলআহাদ ওয়ালমাছানী, হাদীস নং-৭৪৬]
বুঝা গেল, শরীয়তের মুকাল্লাফ হতে হলে আর কোন আলামত না থাকলে বয়স হিসেবে কমপক্ষে পনের বছর হতে হয়।
দ্রষ্টব্য
আল ইনায়া শারহুল হেদায়া ৮/২০১;আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩;তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৫১, -সহীহ বুখারী হাদীস : ২৬৬৪, ৪০৯৭; আললুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৬।
**ছেলেদের বালেগ হওয়ার সময় এবং পর্দার ব্যাপারে ভ্রান্তি
‘১৫ বছর বয়সে ছেলেরা বালেগ হয়’ এই একটা অস্পষ্ট কথার উপর ভিত্তি করে আজকাল অনেক পর্দানশীন পরিবারেও এর কম বয়সী ছেলেদের সাথে পর্দা করার কথা চিন্তাই করা হয় না। যদিও সে বাস্তবে বালেগ হোক না কেন। ১৫ বছরের আগে স্বপ্নদোষ হলে কিংবা নাভির নিচের পশম হলে অথবা বীর্য নির্গত হলে যে কোনো বালক বালেগ হয়ে যায়। কিন্তু যে ছেলের এসব নিদর্শনের কোনোটি প্রকাশ পায়নি তার বয়স ১৫ হলে তাকে বালেগ ধরে নেওয়া হবে। সুতরাং প্রতীয়মান হল যে, ১৫ বছর বয়স হওয়া বালেগ হওয়ার জন্য একটি নিদর্শন। এর পূর্বে অন্যান্য নিদর্শনাবলীর কোনোটি প্রকাশ পেলে সে-ও বালেগ। যদিও তার বয়স ১৩ বা ১৪ হোক না কেন।
অনেক পরিবারে ছেলেরা পূর্ণ বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সাথে পর্দা তো নয়ই, এমনকি ঢেকে টেকে থাকারও প্রয়োজন অনুভব করা হয় না। অথচ কুরআন মজীদে সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে পর্দার হুকুম থেকে মুক্ত ব্যক্তিদের আলোচনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, সন্তান, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।’ (সূরা নূর ৩১)
উক্ত আয়াতে সর্বশেষে দ্বাদশ নম্বরে এ সকল অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালককে বোঝানো হয়েছে যারা এখনো সাবালকত্বের নিকটবর্তী হয়নি এবং নারীদের বিশেষ আকর্ষণ, কমনীয়তা ও গতিবিধি সম্পর্কে সম্পূর্ণ বে-খবর, তাদেরকে পর্দার হুকুমের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে যে বালক নারীদের এসব অবস্থা সম্পর্কে সচেতন তার কাছে নারীদের পর্দা করা ওয়াজিব। যদিও এসব বালকের উপর পর্দা ফরয নয়, কিন্তু নারীদের জন্য এদের সাথে পর্দা করে চলা জরুরি। ফিকাহবিদগণ বালকের এ হুকুম অবস্থাভেদে ১০ বছর থেকে শুরু হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বালেগ হয়নি কিংবা পনের বছর হয়নি বলেই এ বয়সের ছেলেদেরকে গায়রে মাহরাম মহিলাদের ভিতর যেতে দেওয়া অন্যায়। তদ্রূপ মহিলাদের জন্যও এ বয়সের ছেলেদের সামনে বেপর্দা চলাফেরা করা গুনাহ।
-মাআরিফুল কুরআন ৬/৪০৫, তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৫৭, তাফসীরে মাজহারী ৬/৫০১, আল মুফাস্সাল ফী আহকামিন নিসা ৩/১৭৬-১৭৭, আহসানুল ফাতাওয়া ৩৬-৪০
-রদ্দুল মুহতার ৬/১৫৩-১৫৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৮৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/২০৩
***মেয়েদের বালেগ হওয়ার সময় নিয়ে ভ্রান্তি
সমাজে প্রচলন রয়েছে যে, মেয়েরা বালেগ হয় স্রাব চালু হলে। এটাকেই একমাত্র মাপকাঠি ধরা হয়। অথচ এটি নিদর্শনাবলীর একটি। এই নিদর্শন প্রকাশ না পেলে ১৫ বছর বয়স হলেই বালেগ ধরা হবে। চাই স্রাব চালু হোক বা না হোক। (প্রাগুক্ত)
এক্ষেত্রে প্রথম ভুল হল, প্রচলন অনুযায়ী পর্দার সময় স্রাব চালু হওয়াকেই ধরে নেওয়া হয়। এর আগে পর পুরুষের সামনে বে-পর্দা হওয়াকে গুনাহ মনে করা হয় না। অথচ মেয়েরা পরিপূর্ণ বালেগ হওয়ার আগে যখন শরীরের বাহ্যিক দিকগুলো বালেগদের মত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তখন থেকেই তাদের উপর পর্দা করা জরুরি হয়ে যায়। এ পর্যায়ে পর্দার বিধানটা গুনাহ ও ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্যে। ফিকাহবিদগণ নয় বছর বয়স থেকেই শরীরের গড়ন অনুযায়ী এ হুকুম আরোপিত হতে পারে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।
স্রাবের হুকুম না জানানো
স্রাব মহিলাদের শারীরিক একটি বিষয়। যার সম্মুখীন হতেই হয়। কিন্তু লজ্জায় হোক বা অন্য কোনো কারণে অধিকাংশ মেয়েকেই এ সম্পর্কে যথাযথ হুকুম জানানো হয় না। শুধু এতটুকু জেনেই ক্ষান্ত হয়ে যায় যে, এ অবস্থায় নামায পড়া যায় না। কিন্তু কতদিন হলে কীভাবে হলে কী করণীয়? এ সময়ের নিষিদ্ধ কাজ কী কী ইত্যাদি বিষয়ে তারা অনবগতই থেকে যায়। ফলে শত শত মহিলা এমন আছে যারা ১৫-২০ দিন স্রাব আসলেও নামায-রোযা করে না। এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য আহকামও জানে না। এভাবে কত নামায-রোযা যে অনাদায়ী থেকে যায় তা ভাবাই যায় না। মা-বাবার কর্তব্য হল, মেয়ে এ অবস্থায় উপনীত হওয়ার পূর্বেই এ সম্পর্কিত মাসআলার সহীহ জ্ঞান দেওয়া বা এর ব্যবস্থা করা।
আল্লাহ্ তাওফীক দান করেন।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৬৯৪২৩
ঔষধ কোম্পানির পক্ষ থেকে ডাক্তারকে উপঢৌকন বা কমিশন দেয়া
১৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা ১২৩০

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
৫৭৩১৭
নেশামুক্ত অ্যালকোহল মিশ্রিত পারফিউম, বডি স্প্রে, আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করার মাস'আলা
১১ মে, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৯০৩৯৭
সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সার্জারী করে স্তন করা ছোট করা যাবে কি?
২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ON M৩C ১A২

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৬১৫৯২
বাবার হারাম সম্পত্তি কি সন্তানদের জন্য হালাল হয়ে যাবে?
১৮ মে, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে