তিন তালাকে এক তালাক
প্রশ্নঃ ৭৩৮৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালায়কুম। আমার সাথে একছেলের পরিচয় হয়। আমরা জেনা থেকে বাঁচার জন্য বিয়ে করি হানাফি মাহজাব অনুসরন করে। তিনজন সাক্ষির সামনে মোহরানা ধার্য করে তিনি আমাকে বলেন আপনাকে আমি আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করলাম। আপনি কি আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহন করছেন। আমি উত্তর দিলাম আলহামদুলিল্লাহ কবুল। বিয়েতে আমাদের দুজনের পরিবারের কোন অভিভাবক উপস্থিত ছিলোনা। হানাফি মাহজাব মতে আমাদের বিয়েটি সহীহ হয়েছে বলে মত পাই। আমি ওনাকে মোহরানা মাফ করে দিই এবং আমাদের মধ্যে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে ঊঠে।কিছুদিন আগে আমার স্বামী আমার সাথে ঝগড়া করে রেগে আমাকে বলেন আমি তোমাকে তালাক দিলাম। আমি তাকে বলি একবার বললে হয় না। তিনি আরো দুইবার এই একই ভাবে বলেন আমি তোমাকে তালাক দিলাম। রাগ কমার পর তিনি বুঝতে পারেন ভুল হয়ে গেছে। আমরা একটি মাসয়ালা পাই যে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে এক তালাক গন্য হয়। আমরা সেটি মেনে নিয়ে একসাথে আসি। এতে কি আমাদের পাপ হচ্ছে? আমাদের কি তালাক হয়ে গেছে? আমাকে বিস্তারিত জানাবেন দয়া করে। আমি আমার স্বামীকে অনেক ভালোবাসি। এইসব নিয়েও অনেক কষ্টে আছি।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
বৈবাহিক জীবনের পরিপূর্ন ফায়দা পেতে চাইলে শরীয়তের শর্ত মেনে পারিবারিকভাবে বিবাহের বিকল্প নেই।
কোন মেয়ে পরিবারের অমতে নিজের চেয়ে নিম্নমানের ছেলের কাছে বিবাহ বসলে তার অভিভাবকগণ চাইলে এই বিবাহ নাকচ করে দিতে পারেন।
তালাক এমন এক বিষয় যা স্বেচ্ছায় অথবা খেলনার ছলেও বলে ফেললে তালাক হয়ে যায়।
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنِ ابْنِ مَاهَكَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْعَةُ " .
আবূ হুরাইরাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি কাজ এমন যা বাস্তবে বা ঠাট্টাচ্ছলে করলেও তা বাস্তবিকই ধর্তব্য। তা হলোঃ বিবাহ, তালাক ও (তালাকে রজয়ী দেয়ার পর) স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা।
—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৯৪
এক বৈঠকে এক তালাক দিলে যেভাবে প্রযোজ্য হয়, তিন তালাক দিলে তিন তালাকই প্রযোজ্য হয়ে যায়।
1581 حَدَّثَنِي يَحْيَى، عَنْ مَالِكٍ ؛ أَنَّهُ بَلَغَهُ : أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ : إِنِّي طَلَّقْتُ امْرَأَتِي مِائَةَ تَطْلِيقَةٍ، فَمَاذَا تَرَى عَلَيَّ ؟ فَقَالَ لَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ : طَلُقَتْ مِنْكَ بِثَلَاثٍ، وَسَبْعٌ وَتِسْعُونَ اتَّخَذْتَ بِهَا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا.
মালিক রাহিমাহুল্লাহ সূত্রে বর্ণিত:
জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল, আমি আমার স্ত্রীকে একশত তালাক দিয়েছি। আমার উপর কি প্রযোজ্য হবে?
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তিন তালাক দ্বারাই তোমার স্ত্রী তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ৯৭ তালাক নিয়ে তুমি আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছ
—মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহ.
আপনার পরিপূর্ণ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, আপনাদের মাঝে বৈবাহিক বন্ধনের লেশমাত্র বাকি নেই। যেহেতু তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে।
দ্রুত আপনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। অতীত গুনাহের জন্য তাওবাহ করুন। পরিশুদ্ধ জীবনযাপন করুন। দুনিয়ার কেউ আপনাদেরকে বাধা না দিলেও আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়াতে হবে, বিষয়টি মাথায় রাখুন।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন