আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

জিলহজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমালসমূহ

প্রশ্নঃ ৭২৭২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, যুলহিজ্জাহ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমালগুলো কি?,

১৭ জুন, ২০২৩

Mecca, Mecca, Mecca, Saudi Arabia

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


যুলহাজ্ব মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল :

1️⃣ প্রথম দশ দিনে নফল রোযা রাখা ও রাতে ইবাদত করা।

যুলহাজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন সম্ভব নফল রোযা রাখা আর রাতে বেশী বেশী ইবাদত করা। নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবাহ-ইস্তিগফার ও আল্লাহরা কাছে কান্নাকাটি ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।

عن حفصة رضى الله عنها- قالت : أربع لم يكن يدعهن النبي- صلى الله عليه وسلم- : صيام عاشوراء، والعشر، وثلاثة أيام من كل شهر والركعتين قبل الغداة .
হযরত হাফসা রাদি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। আশুরার রোযা, যিলহজ্জের দশ দিনের রোযা, প্রত্যেক মাসের [১৩, ১৪, ১৫] তিন দিনের রোযা, ও ফজরের পূর্বের দু রাক্আত সুন্নাত নামায। -মুসনাদেআহমদ -২৮৭/৬; সুনানে আবূদাউদ-২১০৬; সুনানে নাসায়ী- ২২৩৬

এ হাদীসে যুলহাজ্বের দশ দিনের রোযা বলতে নবম তারিখ ও তার পূর্বের রোযা বোঝানো হয়েছে। কেননা দশম দিন অর্থাৎ ঈদের দিনে রোযা রাখা জায়েয নেই।

عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه و سلم : قال ما من أيام أحب إلى الله أن يتعبد له فيها من عشر ذي الحجة يعدل صيام كل يوم منها بصيام سنة وقيام كل ليلة منها بقيام ليلة القدر
হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যুলহাজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদত তুলনায় বেশী প্রিয়‌। প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায়, আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় ।[তিরমিজী শরীফ,হাদীস নং-৭৫৮]

2️⃣ যারা কুরবানী করার ইচ্ছে পোষণ করছেন, তারা যুলহাজ্ব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে হাত পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত পশম ইত্যাদি কাটবে না। এ আমলটি সুন্নত (যদি এগুলো না কাটার মেয়াদ ৪০ দিন না হয়ে থাকে)

عن أم سلمة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال اذا دخلت العشر فأراد أحدكم أن يضحي فلا يمس من شعره ولا من بشره شيئا.

হযরত উম্মে সালমাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন [যুলহাজ্বের প্রথম] ১০ দিনের সূচনা হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছে করে, সে যেন চুল-নখ ইত্যাদি না কাটে। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৪৫৪}

قال الرجل أرأيت ان لم أجد إلّامنيحة أنثى أفأضحى بها؟ قال لا، ولكن تاخذ من شعرك وأظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فتلك تمام أضحيتك عند الله.
“জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি দুধ খাওয়ার জন্য আমাকে একটি উট দিয়েছে। আমি কি তা দ্বারা কুরবানী করবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, তবে তুমি [যুলহাজ্জ মাসের চাঁদ দেখা দিলে নিজের চুল ও নখ কর্তন করো না এবং ঈদুল আযহার দিন] চুল, নখ কাটো, মোচ ছোট করো এবং নাভীর নিচের পশম হলক্ব করো। এটাও তোমার জন্যে আল্লাহ’র দরবারে পূর্ণ কুরবানী।‘’ [এটা বলে রহমাতুললিল আলামীন গরীব সাহাবীকে সুসংবাদ দিলেন।] -আবূদাউদ : ২৪১০; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৬০৪০

3️⃣ যুলহাজ্ব মাসের নয় তারিখ রোযা রাখা সুন্নাত :

صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده
হযরত আবু কাতাদাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোযা তার পূর্বের ও পরের বৎসরের গোনাহ মুছে ফেলবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭৪০}

তবে যারা হজ্বে গিয়েছেন, তাদের জন্য এদিন রোযা না রাখা উচিত।

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- نَهَى عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ بِعَرَفَةَ
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৪২}

4️⃣ তাকবীর তাশরীক্ব বলা :

যুলহাজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব।পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে।

اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ্।
— মুসান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ, ২/১৬৪; ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড,৬১ পৃষ্ঠা

5️⃣ ঈদুল আযহার রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা :

عن أبي أمامة عن النبي صلى الله عليه و سلم قال من قام ليلتي العيدين محتسبا لله لم يمت قلبه يوم تموت القلوب
যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাতে সওয়াবের নিয়তে জাগরিত থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, তাহলে যে দিন অন্যান্য দিল মরে যাবে সেদিন তার দিল মরবে না।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৮২, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৭১১}

6️⃣ ঈদের দিনের সবচে বড় আমল হল ঈদের নামায শেষে "কুরবানী করা"।

১০, ১১, ১২ যুলহজ্বের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য।
ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭; ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২

عن عائشة : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ما عمل آدمي من عمل يوم النحر أحب إلى الله من إهراق الدم إنها لتأتي يوم القيامة بقرونها وأشعارها وأظلافها وأن الدم ليقع من الله بمكان قبل أن يقع من الأرض فيطيبوا بها نفسا
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা তথা কুরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয়। কুরবানীর পশু সকল শিং, তাদের পশম ও তাদের খুরসহ কিয়ামতের দিন [কুরবানীদাতার পাল্লায়] এসে হাজির হবে। আর কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। সুতরাং তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানী করবে।
{সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৯৩}

عن زيد بن أرقم قال أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم يا رسول الله ماهذه الأضاحي ؟ قال ( سنة أبيكم إبراهيم ) قالوا فما لنا فيها ؟ يا رسول الله قال ( بكل شعرة حسنة ) قالوا فالصوف ؟ يا رسول الله : قال ( يكل شعرة من الصوف حسنة
যায়েদ বিন আরকাম রাঃ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি বললেন, তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর সুন্নাত।
তারা পুনরায় আবার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? [এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়] তিনি বললেন, ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে।
{সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদীস নং-৩১২৭}

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪১০০০

১২ ই রবিউল আউয়ালে বিশেষ রোযা বা আমল আছে কি?


৬ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

৩৭৩৯৭

মহররমের প্রথম দশদিন রোজা রাখা কি সুন্নাহ সম্মত?


১ আগস্ট, ২০২৩

HG২R+WWW

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১৩১৯০

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রজব মাসের কিছু আমল বিস্তারিত বললে ভালো হতো ।

৩০ জানুয়ারী, ২০২২

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy