আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মহররমের প্রথম দশদিন রোজা রাখা কি সুন্নাহ সম্মত?

প্রশ্নঃ ৩৭৩৯৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হচ্ছে মহররম মাসে এক থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখতে হবে এরকম কোন দলিল আছে কি? যদি কেউ এক থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখে তাহলে সে মহরম মাসের রোজা রাখার ফজিলত পাবে কি? আশা করি উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞ থাকবেন,

১ আগস্ট, ২০২৩

HG২R+WWW

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা : মুহাররমের প্রথম দশ দিন রোযা রাখার ফযীলত

বার চান্দের ফযীলত শিরোনামের বেশ কিছু পুস্তিকায় মুহাররম মাসের প্রথম দশ দিন রোযা রাখার ফযীলত উল্লেখ করা হয়েছে। একটি পুস্তিকার ভাষায়-
“হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি মহররমের প্রথম দশ দিন রোযা রাখে, সে দশ হাজার বছর যাবৎ দিনে রোযা ও রাত্রে ইবাদতের নেকী পাবে।”

এটি একটি ভিত্তিহীন বানোয়াট বর্ণনা। জাল বর্ণনা বিষয়ক কিতাবেও এটি খুঁজে পাওয়া যায় না। জাল বর্ণনা বিষয়ক কিতাবে এর কাছাকাছি একটি বর্ণনা পাওয়া যায়-

مَنْ صَامَ تِسْعَةَ أَيّامٍ مِنْ أَوّلِ الْمُحَرّمِ بَنَى اللهُ لَهُ قُبّةً فِي الْهَوَى مِيلا فِي مِيلٍ لَهَا أَرْبَعَةُ أَبْوَابٍ .
যে ব্যক্তি মুহাররম মাসের প্রথম নয় দিন রোযা রাখবে আল্লাহ তার জন্য শূন্যে একটি কুববা (তাঁবু) নির্মাণ করবেন; যা হবে দ্যৈর্ঘ-প্রস্থে এক মাইল। এর চারটি দরজা থাকবে।

ইবনুল জাওযী রাহ. উপরোক্ত বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ مَوْضُوعٌ عَلَى رَسُولِ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.
قَالَ ابْنُ حِبّانَ: مُوسَى الطّوِيل يروي عَن أنس أَشْيَاء مَوْضُوعَة لَا يحل كتبها إِلّا عَلَى التّعَجّب.

এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে জালকৃত একটি বর্ণনা।
(এ বর্ণনায় মূসা আততাবীল রয়েছে) ইবনে হিব্বান রাহ. বলেন, মূসা আততাবীল আনাস রা.-এর সূত্রে অনেক জাল বিষয় বর্ণনা করেছে; এগুলোর (অসারতা প্রকাশ এবং এর) উপর বিস্ময় প্রকাশের জন্য ছাড়া তা লেখা বা উল্লেখ করা বৈধ নয়। -আলমাউযূআত, ইবনুল জাওযী, খ. ২, পৃ. ১৯৯
আরও দ্রষ্টব্য : আললাআলিল মাছনূআহ, খ. ২, পৃ. ১০৮; তানযীহুশ শরীআহ, খ. ২, পৃ. ১৪৮; তাযকিরাতুল মাউযূআত, পৃ. ১১৮

আসলে মাসের প্রথম দশকে রোযার বিষয়টি এসেছে যিলহজ্ব মাসের ক্ষেত্রে। এসব পুস্তিকায় সেটিকেই নিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে মুহাররমের সাথে এবং যুক্ত করা হয়েছে বিশাল ফযীলত। যিলহজ্বের প্রথম দশকে রোযার বিষয়ে উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-
أَرْبَعٌ لَمْ يَكُنْ يَدَعُهُنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: صِيَامَ عَاشُورَاءَ، وَالْعَشْرَ، وَثَلَاثَةَ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ.
চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহজ্বের প্রথম দশকের (অর্থাৎ প্রথম নয় দিনের) রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৬৪২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬৩৩৯

আর বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে কেবল আশুরা তথা মুহাররমের দশম তারিখের রোযার বিষয়ে। আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ.
আশুরার রোযার বিষয়ে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২

উল্লেখ্য, মুহাররম মাসের প্রথম দশকের রোযা বিষয়ে কিছু বর্ণিত না হলেও সাধারণভাবে মুহাররম মাসে রোযা রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرّمُ.
রমযানের পর সবচে উত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩

আলী রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল-
يَا رَسُولَ اللهِ، أَيّ شَهْرٍ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ بَعْدَ رَمَضَانَ؟
আল্লাহর রাসূল! রমযানের পর আপনি আমাকে কোন্ মাসে রোযা রাখার নির্দেশ দেন? উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
إِنْ كُنْتَ صَائِمًا بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصُم المُحَرّمَ، فَإِنّهُ شَهْرُ اللهِ، فِيهِ يَوْمٌ تَابَ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ، وَيَتُوبُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ آخَرِينَ.
তুমি যদি রমযানের পর আরও কোনো মাসে রোযা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোযা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরও মানুষের তাওবা কবুল করবেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৫১

ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেন-هذا حديث حسن غريب.
(সূত্র: মাসিক আলকাউসার, মহররম ১৪৪২, সেপ্টেম্বর ২০২০)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩২৫১৬

তারাবীহ নামাজের কাজা পড়ার বিধান


১০ এপ্রিল, ২০২৩

Cairo Governorate 4454511

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৪৮৫৮

মেয়েরা মোটর সাইকেল চালাতে পারবে?


১৮ জুন, ২০২৩

বিয়ানীবাজার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

১৪৯২৮

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, লাইলাতুল বরাত এর কোনো বিশেষ আমল । আছে ।

১০ মার্চ, ২০২২

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

১৩৯৬৮

সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে নববী নির্দেশনা


২৮ জানুয়ারী, ২০২৫

সুবর্ণচর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy