আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মসজিদের উপর মাদরাসা নির্মাণ এবং মাদরাসার কাজে মসজিদের টাকা ব্যবহারের বিধান

প্রশ্নঃ . আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মাননীয় মুফতী সাহেব, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা। জনাব, আমাদের জানার বিষয় হচ্ছে : (১) জামে মসজিদের উপর মাদরাসা করা যাবে কি না? (২) মসজিদের উন্নয়নকল্পে অতিরিক্ত ওয়াক্ফকৃত জমিতে মাদরাসা করা যাবে কি না? (৩) মসজিদের ওয়াক্ফকৃত জমির ভাড়ার টাকা প্রতি মাসে এত পরিমাণ জমা হয়, যার ২৫% টাকা মসজিদের কাজে লাগে, বাকি ৭৫% টাকা জমা থেকে যায়। উক্ত ৭৫% টাকা মাদরাসার কাজে ব্যবহার করা যাবে কি না? অন্যথায় উক্ত টাকা-পয়সার জন্য কী ব্যবস্থা করা যেতে পারে? জানিয়ে বাধিত করবেন।,

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


(১) মসজিদের উপর ও নিচতলাসহ পুরোটাই মসজিদ হিসেবে বহাল রাখা আবশ্যক। তাই মসজিদের উপরে স্থায়ীভাবে মাদরাসা বা অন্যকিছু প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তবে দ্বীনী ইলমের তালীম মসজিদের মৌলিক উদ্দেশ্যাবলী ও কার্যক্রমের অংশ। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে দ্বীনী তালীমের গোড়াপত্তন করেছেন। তাই মসজিদে প্রয়োজনীয় দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা শরীয়তের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে মসজিদে তালীম হওয়া উচিত অনাবাসিক ভিত্তিতে। স্থায়ীভাবে আবাসিক মাদরাসা করা যাবে না। কোনো এলাকায় দ্বীনী শিক্ষার জন্য পৃথক ব্যবস্থা না থাকলে অস্থায়ী ভিত্তিতে ভিন্ন আয়োজন হওয়া পর্যন্ত মসজিদে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে উস্তায, তালিবে ইলম ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অবশ্যই মসজিদের সম্মান ও আদব যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। মসজিদের আদব ক্ষুণœ হয় এমন সব আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সাথে সাথে মুসলমানদের নামায ও ইবাদতে বিঘœ ঘটে এমন সকল কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে এবং এলাকায় দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা হলে আবাসিক ব্যবস্থা মসজিদ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৭২৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৫

(২) মসজিদের উন্নয়নের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গা মসজিদের কাজে ব্যবহার করাই শরীয়তের বিধান। এলাকার মানুষদের দ্বীনী শিক্ষা-দীক্ষার উদ্দেশ্যে পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করে তাতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কর্তব্য। মসজিদের জায়গায় স্থায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ নেই। তবে মসজিদের অতিরিক্ত জমি যদি এখনই  মসজিদের কাজে না লাগে তাহলে মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেখানে সাময়িকভাবে মাদরাসার জন্য ঘর বানানো যাবে এবং তাতে মাদরাসার কার্যক্রমও পরিচালনা করা যাবে। তবে পরবর্তীতে যখনই ঐ জায়গা মসজিদের প্রয়োজন হবে তখন তা মসজিদের জন্য দ্রæত খালি করে দিতে হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০

(৩) মসজিদ স্বতন্ত্র একটি ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠান। আর শরীয়তের নির্দেশনা হল, মুতাওয়াল্লি বা তার লোকজন ওয়াক্ফকারীর উদ্দেশ্য সাধন করে যাবে। তাই ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, মসজিদের আয় মসজিদের খাতেই ব্যয় হবে। যদি কোনো মসজিদের যাবতীয় খরচাদি নির্বাহ করার পরও তার আয় থেকে যায় তাহলে উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে নি¤œাক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে :

১. পর্যাপ্ত ও যৌক্তিক পরিমাণে ইমাম-মুয়াযযিন ও খাদেমদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা।

২. তারা যাতে নিশ্চিন্ত মনে মসজিদের খেদমত আঞ্জাম দিতে পারেন সে লক্ষ্যে মসজিদের অদূরে তাদের বসবাসের জন্য আবাসন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।

৩. সাধারণ মুসল্লিদের দ্বীনী ইলম চর্চা ও সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মানসম্মত ও যুগোপযোগী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা।

৪. দ্বীনী ইলমের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে সকল শ্রেণি-পেশার মুসলামনদের জন্য খণ্ডকালীন দ্বীন শেখার আয়োজন করা।

৫. এলাকার স্কুলগামী ছেলেদের জন্য এবং স্কুলগামী মেয়ে শিশুদের জন্য প্রভাত ও বৈকালিক মক্তবের আয়োজন করা এবং পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য শিক্ষকের মাধ্যমে তা পরিচালনা করা।

৬. মুসল্লিদের নামায, ইতিকাফ ও অন্যান্য ইবাদত আদায়ে আরাম হয়- এমন ব্যবস্থা করা।

৭. মসজিদের অযুখানা যদি অপর্যাপ্ত বা অস্বস্তিকর হয় অথবা মসজিদের জায়গার ভেতর এর যথাযথ সংকুলান না হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী জায়গায় ভিন্নভাবে আলাদা ভবন নির্মাণ করে অযু-ইস্তিঞ্জার পর্যাপ্ত ও আরামদায়ক ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

এমন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর টাকা উদ্বৃত্ত থাকলে তা ভবিষ্যতে মসজিদ-এর সম্ভাব্য নির্মাণ-স¤প্রসারণ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সংরক্ষণ করে রাখবে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য খরচের যোগান দেওয়া যায়- এ পরিমাণ টাকা গচ্ছিত রাখার পরও টাকা অতিরিক্ত হলে তা বাস্তবে প্রয়োজন আছে, আশপাশের এমন কোনো মসজিদে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এমনকি তখন দ্বীনী তালীম যেহেতু মসজিদের মৌলিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত তাই কর্তৃপক্ষ চাইলে সে টাকার অংশবিশেষ মাদরাসার খাতেও খরচ করতে পারে। -আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১৫


والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মাসিক আলকাউসার

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩২৭১১

মসজিদের জায়গায় কবর করা যাবে কি?


১২ এপ্রিল, ২০২৩

ঝালকাঠি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৪১২৩২

মসজিদের মিনার নির্মাণ প্রসঙ্গ


২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

৪MV৭+XP৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৬৬২০

মসজিদের পানি বাসায় নিয়া যাওয়া যাবে?


২৪ জুলাই, ২০২৩

টুঙ্গিপাড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy