আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কি চারের অধিক বিবাহ করা যাবে না?

প্রশ্নঃ ৪০৯৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কি চারের অধিক বিবাহ করা যাবে না?,

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কুমিল্লা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
একাধিক বিবাহ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন।

وَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تُقۡسِطُوۡا فِی الۡیَتٰمٰی فَانۡکِحُوۡا مَا طَابَ لَکُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَثُلٰثَ وَرُبٰعَ ۚ  فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ؕ  ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَلَّا تَعُوۡلُوۡا ؕ

তোমরা যদি আশংকা বোধ কর যে, ইয়াতীমদের প্রতি ইনসাফ রক্ষা করতে পারবে না, তবে (তাদেরকে বিবাহ না করে) অন্য নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের পছন্দ হয় বিবাহ কর দুই-দুইজন, তিন-তিনজন অথবা চার-চারজনকে। অবশ্য যদি আশংকা বোধ কর যে, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে এক স্ত্রীতে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীতে (ক্ষান্ত থাক)। এতে তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।


তাফসির: (অংশিক)
আলোচ্য আয়াতে ماطاب (যা তোমাদের ভাল লাগে) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। হযরত হাসান বসরী, ইবনে জুবায়ের এবং ইবনে মালেক (র) শব্দটির ব্যাখ্যা করেছেন ماحل শব্দ দ্বারা; যার অর্থ হচ্ছে, যেসব মেয়ে তোমাদের জন্য বৈধ। আর অনেক তফসীরকার উপরোক্ত শব্দটির শাব্দিক অর্থ ’পছন্দ’ দ্বারাই এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন। তবে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে কোন প্রকার বৈপরীত্য নেই। অর্থাৎ এর মর্মার্থ হচ্ছে এই যে, যেসব মেয়ে প্রকৃতিগতভাবে তোমাদের মনঃপূত এবং শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ হয় কেবল তাদেরকেই বিয়ে করতে পার।

আলোচ্য আয়াতে একাধিক অর্থাৎ চারজন স্ত্রী গ্রহণ করার সুযোগ অবশ্য দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে এই চার পর্যন্ত কথাটি আরোপ করে তার ঊর্ধ্বসংখ্যক কোন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না বরং তা হবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ—তাও ব্যক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

মহানবী (সা)-এর বর্ণনা দ্বারাও এ বিষয়টি অর্থাৎ চার পর্যন্ত সীমাবদ্ধকরণের কথাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর গায়লান বিন আসলামা সাকাফী নামে এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন; তখন তাঁর দশজন স্ত্রী ছিল। তাঁর স্ত্রীরাও তাঁর সাথে মুসলমান হয়ে গেলেন। মহানবী (সা) নির্দেশ দিলেন, এ দশজন স্ত্রীর মধ্য থেকে যে কোন চারজনকে রেখে বাকি সবাইকে যেন তালাক দিয়ে দেওয়া হয়। গায়লান বিন আসলামা সাকাফী রসূল (সা)-এর নির্দেশ মোতাবেক তাই করলেন। অর্থাৎ চারজন রেখে আর সবাইকে তালাক দিয়ে বিদায় করে দিলেন। (মিশকাত, পৃ. ২৭৪, তিরমিযী ও ইবনে মাযাহ)

মসনাদে আহমদে এই ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে আরো বলা হয়েছেঃ গায়লান বিন আসলামা শরীয়তের হুকুম মোতাবেক চারজন স্ত্রী রেখেছিলেন। কিন্তু হযরত উমর ফারুক (রা)-এর যুগে তিনি সে চারজন স্ত্রীকেও তালাক দিয়ে দেন এবং তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ তাঁর ছেলেদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে দেন। এ ব্যাপারটি হযরত উমর ফারুক (রা)-এর গোচরে এলে তিনি তাঁকে ডাকালেন এবং বললেন, “তুমি স্ত্রীদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্যই এ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছ যা একান্তই জুলুম। অতএব, তুমি শীঘ্র তাদেরকে পুনরায় গ্রহণ কর এবং তোমার সে ধন-সম্পদ তোমার ছেলেদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে তাদেরকে দিয়ে দাও। আর যদি এ ব্যবস্থা না কর তাহলে মনে রাখবে যে, এ জন্য তোমাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।”

কায়েস ইবনুল হারিস আসাদী (রা) বলেনঃ আমি যখন মুসলমান হলাম, তখন আমার আট স্ত্রী ছিল। আমি ব্যাপারটি মহানবী (সা)-এর গোচরীভূত করলাম। তিনি আমাকে চারজন স্ত্রী রেখে বাকি সবাইকে বিদায় করে দিতে বললেন – (আবূ দাউদ, পৃ. ৩০৪)

ইমাম শাফিয়ী (র) তাঁর মসনাদে নওফেল বিন মুয়াবিয়া দায়লামীর একটি ঘটনা নকল করেছেন। ঘটনাটি এরূপ যে, তিনি (দায়লামী) যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর পাঁচজন স্ত্রী ছিল। মহানবী (সা) তাঁকে একজন স্ত্রী তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। এ ঘটনা মিশকাত শরীফের ২৭৪ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। হুযূর (সা)-এর এবং সাহাবীদের এরূপ আচরণ থেকে কোরআনের উপরোক্ত আয়াতের মর্মার্থ সবার কাছেই প্রতিভাত হয়ে ওঠে। আর তা হচ্ছে এই যে, চারজন স্ত্রীর অধিক সংখ্যক স্ত্রী একসঙ্গে রাখা কোনক্রমেই বৈধ নয়।

আয়াতের পুরো তাফসির দেখতে নিচের লিংকে প্রবেশ করুন। https://muslimbangla.com/sura/4/tafsir/3

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৮৫৯৭৬

স্ত্রীর সাথে কথা বন্ধ রাখা


২২ জানুয়ারী, ২০২৫

১৭০২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৮১৭৯৯

অমুসলিমের সাথে বর্গা চুক্তি করলে উশর নাকি খারাজ দিবে?


২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৮৫৩৫

মুসলিম বাংলা অ্যাপে আরবি তারিখ কেন দুইটি দেখায়?


১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৮২২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy