আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

রেজিস্টার্ড দম্পতি !!

প্রশ্নঃ ৩৭৯৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার সর্বমোট ৩ টি প্রশ্ন আছে।১। কোন মেয়ের সাথে কোন ছেলের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে কাগজে-কলমে তারা বিবাহিত তবে যদি এখনো ফ্যামেলি গতভাবে ঘরে তুলে নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র কাগজ-কলমের লিখিত বিবাহ । তবে এখানে বলার বিষয় এই যে ছেলে এবং মেয়ে দুজনের সম্মতি ক্রমে তারা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কাজীর কাছে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সেখানে এক পক্ষের পরিবার ছিল এবং অন্য পক্ষের পরিবার উপস্থিত ছিল না। কাগজে-কলমে তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য কবুল বলা লাগে সেটাও তারা বলেনি। শুধুমাত্র কাগজে-কলমে লিখিত আছে। তাছাড়া তখন তারা এই বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় যে তারা একে অপর জনের ওপর স্বামী-স্ত্রীর দাবি প্রয়োগ করবে না। কারণ তারা কবুল বলে নি। পরবর্তীতে যখন দুই পক্ষের পরিবার এসে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করবে তখনই শুধুমাত্র তারা একে অপরের ওপর স্বামী-স্ত্রীর অধিকার খাটাবে। এমত অবস্থায় ওই ছেলে এবং মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে কিনা? এবং তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে পারবে কিনা অথবা একে অপরের সাথে দেখা করতে পারবে কিনা?২। বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি স্বামী কর্মক্ষেত্রের জন্য স্ত্রি থেকে অন্য কোথাও গিয়ে চাকরি করে এবং সময়ের সুযোগে তার স্ত্রীর সাথে মোবাইলে কথা বলে। স্বামী-স্ত্রীর কথার মাঝে কখনো কখনো কিছুটা উষ্ণতা মুলক কথাবার্তা আসে। তখন ওই স্বামীর লিঙ্গের মাথায় পানির মত পিচ্ছিল এক ধরনের পদার্থ বের হয়। এই এই বীর্যের মত পিচ্ছিল তরল পদার্থ বের হওয়া কি তাকে ফরজ গোসল করতে হবে? আর যদি করতে না হয় তাহলে কি সে ওই অবস্থায় ওই কাপড় পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করতে পারবে?৩। একজন ছেলে যদি অতিরিক্ত মাত্রায় হস্তমৈথুন করে তাহলে শারিরীক এবং মানসিক ভাবে তার জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং ধর্মীয় ভাবে তা নিষেধ রয়েছে।একজন ছেলে নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং মাঝে মাঝে কুরআন তেলাওয়াত করে কিন্তু হস্তমৈথুনের মত খারাপ কাজটি সে ত্যাগ করতে পারছে না কোনোভাবেই। এই ক্ষেত্রে এই ধরনের বাজে অভ্যাস থেকে বের হওয়ার জন্য কি করা যেতে পারে ইসলামিক শরীয়ত অনুসারে জানাবেন আশা করছি?।

৩০ মে, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


১. "বিবাহ" শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।শরীয়তের প্রতিটি বিধানের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও নিয়ম-নীতি রয়েছে। বিবাহের ক্ষেত্রেও তাই। স্বামী-স্ত্রী অথবা তাদের পক্ষের কোনো উকিল "ইজাব-কবুল" তথা "প্রস্তাব প্রদান ও গ্রহণ" করতে হয়। শুধুমাত্র কাগজের লেখালেখির মাধ্যমে বিবাহ হয়ে যায় না।
অতএব আপনার বর্ণনামতে আপনাদের বিবাহ সংঘটিত হয়নি। ফলে আপনারা স্বামী-স্ত্রীর মতো সাক্ষাৎ করতে এবং কথাবার্তা বলতে পারবেন না।

فَقَال الْحَنَفِيَّةُ: النِّكَاحُ عَقْدٌ يُفِيدُ مِلْكَ الْمُتْعَةِ بِالأُْنْثَى قَصْدًا، أَيْ يُفِيدُ حِل اسْتِمْتَاعِ الرَّجُل مِنَ امْرَأَةٍ لَمْ يَمْنَعْ مِنْ نِكَاحِهَا مَانِعٌ شَرْعِيٌّ (3) .
الموسوعة الفقهية

২. উত্তেজনাকর কোন কিছু চিন্তা করলে, কথা বললে অথবা কাজ করলে যুবক-যুবতীদের লিঙ্গে এক ধরনের তরল ও পিচ্ছিল পানি বের হয়। বাংলায় যেটাকে যৌনরস বলে, আরবিতে مَذْي (মাযিই) বলে। মযীর হুকুম হলো :
ক. এটা নাপাক।
খ. শরীরে বা কাপড়ে লাগলে ঐ অংশটুকু ধুয়ে ফেলতে হবে।
গ. নাপাক পরিস্কার করার পর অযু করতে হবে।
এরপর নামায সহীহ হবে।
মযী শরীরে বা কাপড়ে লেগে থাকলে অথবা মযী বের হওয়ার পর ওযু না করলে নামাজ হবে না।

مَا يَتَعَلَّقُ بِالْمَذْيِ مِنْ أَحْكَامٍ
أ - نَجَاسَتُهُ:
4 - ذَهَبَ الْفُقَهَاءُ إِلَى نَجَاسَةِ الْمَذْيِ لِلأَْمْرِ بِغَسْل الذَّكَرِ مِنْهُ وَالْوُضُوءِ لِحَدِيثِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حَيْثُ قَال: كُنْتُ رَجُلاً مَذَّاءً وَكُنْتُ أَسْتَحِي أَنْ أَسْأَل النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَكَانِ ابْنَتِهِ، فَأَمَرْتُ الْمِقْدَادَ بْنَ الأَْسْوَدِ، فَسَأَلَهُ فَقَال: يَغْسِل ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ (1) .
وَلأَِنَّهُ - كَمَا قَال الشِّيرَازِيُّ - خَارِجٌ مِنْ سَبِيل الْحَدَثِ لاَ يُخْلَقُ مِنْهُ طَاهِرٌ فَهُوَ كَالْبَوْل (2) .
الموسوعة الفقهية

৩. যৌবন আল্লাহ তা'আলার দেয়া নিয়ামত। নিয়ামতের সঠিক প্রয়োগ না করলে আল্লাহর আজাব অনিবার্য। এছাড়া শরীরের ক্ষতি করা কোনভাবেই জায়েয নয়। বিধায় হস্তমৈথুন একাধিক কারণে নাজায়েয ও হারাম। যৌবনের প্রয়োগ ক্ষেত্র সঠিক পন্থায় বিবাহ করা। অতএব :
ক. বিবাহ করে হস্তমৈথুনের মত এই মারাত্মক বদঅভ্যাস থেকে পরিপূর্ণ মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।
খ. অতীত জীবনের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে খাঁটি দিলে তওবা করুন।
গ. আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দোয়া করুন। ঘ. যে পরিবেশে থাকলে এই বদ অভ্যাস পুনরাবৃত্তি হয় সে পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন।
ঙ. আল্লাহ ওয়ালাদের সুহবত গ্রহণ করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা মুক্তি দিবেন।

قَال الْحَنَفِيَّةُ: النِّكَاحُ يَكُونُ وَاجِبًا عِنْدَ التَّوَقَانِ، أَيْ شِدَّةِ الاِشْتِيَاقِ بِحَيْثُ يَخَافُ الْوُقُوعَ فِي الزِّنَا لَوْ لَمْ يَتَزَوَّجْ؛ إِذْ لاَ يَلْزَمُ مِنَ الاِشْتِيَاقِ إِلَى الْجِمَاعِ الْخَوْفُ الْمَذْكُورُ، قَال ابْنُ عَابِدِينَ: وَكَذَا فِيمَا يَظْهَرُ لَوْ كَانَ لاَ يُمْكِنُهُ مَنْعُ نَفْسِهِ عَنِ النَّظَرِ الْمُحَرَّمِ أَوْ عَنِ الاِسْتِمْنَاءِ بِالْكَفِّ، فَيَجِبُ التَّزَوُّجُ وَإِنْ لَمْ يَخَفِ الْوُقُوعَ فِي الزِّنَا.
وَيَكُونُ النِّكَاحُ فَرْضًا إِنْ تَيَقَّنَ الزِّنَا إِلاَّ بِهِ، بِأَنْ كَانَ لاَ يُمْكِنُهُ الاِحْتِرَازُ عَنِ الزِّنَا إِلاَّ بِهِ؛ لأَِنَّ مَا لاَ يُتَوَصَّل إِلَى تَرْكِ الْحَرَامِ إِلاَّ بِهِ يَكُونُ فَرْضًا.
وَيُشْتَرَطُ لِوُجُوبِ النِّكَاحِ أَوْ فَرْضِهِ أَنْ يَمْلِكَ مَنْ قَامَتْ بِهِ حَالَةُ الْوُجُوبِ أَوِ الْفَرْضِ الْمَهْرَ وَالنَّفَقَةَ، قَال ابْنُ عَابِدِينَ: وَزَادَ فِي الْبَحْرِ شَرْطًا آخَرَ فِيهِمَا وَهُوَ: عَدَمُ الْجَوْرِ أَيِ الظُّلْمِ، فَإِنْ وُجِدَتِ الشُّرُوطُ كَانَ الْحُكْمُ، وَإِلاَّ فَلاَ إِثْمَ بِتَرْكِ النِّكَاحِ.
الموسوعة الفقهية

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন