অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ
প্রশ্নঃ ৩৪২৮৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মা বাবার অনুমতি ছাড়া কি বিয়ে জায়েজ? জনৈকা মহিলার বিয়েতে তার কোনো অভিভাবক রাজি না। কিন্তু ছেলে পক্ষের অভিভাবক রাজি। এভাবে বিয়ে দিলে কি বিয়েটা শরীয়তসম্মত হবে? জনৈকা মহিলা হারাম রিলেশনশিপ থেকে বাঁচতে এভাবে বিয়ে করতে চায়। এভাবে বিয়ে করার পর উক্ত পুরুষ তার জন্য হালাল হবে কি?,
৫ জুন, ২০২৩
চট্টগ্রাম ৪৩৩০
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, যদিও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সমঝদার স্বাক্ষীর সামনে প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র ও পাত্রীর একজন প্রস্তাব দিলে এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নিলে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি কিংবা উপস্থিতি আবশ্যক নয়, তবে যদি মেয়ে গায়রে কুফুতে বিবাহ করে, তথা এমন পাত্রকে বিয়ে করে, যার কারণে মেয়ের পারিবারিক সম্মান বিনষ্ট হয়, তাহলে বাবা সে বিয়ে আদালতের মাধ্যমে ভেঙ্গে দিতে পারে। যদি কুফুতে বিবাহ করে, তাহলে বাবা এ অধিকার পায় না।
আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে রুশদ আন্দালুসী রহ. বলেন,
اختلف العلماء هل الولاية شرط من شروط صحة النكاح أم ليست بشرط؟ فذهب مالك إلى أنه لا يكون النكاح إلا بولي… وبه قال الشافعي وقال أبو حنيفة وزفر والشعبي والزهري: إذا عقدت المرأة نكاحها بغير ولي وكان كفؤا جاز وفرق داود بين البكر والثيب فقال باشتراط الولي في البكر وعدم اشتراطه في الثيب
বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবক শর্ত কি শর্ত নয় এই বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক রহ.-এর মতে অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হবে না। এমন মতই পোষণ করেছেন ইমাম শাফেয়ী রহ.। ইমাম আবু হানীফা, যুফার, শা’বী ও যুহরী রহ. বলেছেন, যদি মহিলা অভিভাবক ছাড়া বিবাহ করে আর স্বামী যদি তার কুফু (সর্বদিক দিয়ে যোগ্য) হয় তাহলে জায়েয হবে। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ২/৮)
দলিল–
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। (মুয়াত্তা মালিক ৮৮৮, সহীহ মুসলিম ১৪২১, মুসনাদে আহমাদ ১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ ২০৯৮, সুনানে দারেমী ২২৩৪, সুনানে তিরমিজী ১১০৮, সুনানে নাসায়ী ৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী ৩৫৭৬)
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ، وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ
হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল ﷺ এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল ﷺ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল ﷺ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। (সুনানে সাঈদ বিন মানসূর ৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া ৫৪১
عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ،عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَتْ: إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا،فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي،وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ
হযরত বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী ﷺ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল ﷺ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮৭৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ ১৩৫৯, সুনানে দারা কুতনী ৩৫৫৫)
উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও আরো এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যা স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করে যে, বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে পিতা বা অভিভাবকের হস্তক্ষেপ কার্যকর হবে না।
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাবকের সম্মতি ছাড়া যদিও বিয়ে করতে পারে, তবে বিবাহের ক্ষেত্রে অভিবাবক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মনে রাখতে হবে, বিবাহ নিছক ভোগ-বিলাসের উদ্দেশ্যে চঞ্চল মনের ভাবাবেগ তাড়িত কোনো বন্ধন নয়, এটি কোনো ছেলেখেলাও নয় বরং এটি হলো, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন। এজন্য ইসলাম বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতকে ‘চূড়ান্ত মতামত’ হিসাবে সাব্যস্ত করলেও পাশাপাশি অভিভাবকের মতামতকেও সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সুতরাং ছেলে-মেয়ের জন্য বিশেষত মেয়ের জন্য আবশ্যক হলো, অভিবাবকের সম্মতি নিয়ে বিবাহ করা। আর আমাদের উচিৎ, বিবাহের সময় মানুষদেরকে ‘অভিবাবকের অনুমতি’র বিষয়ে উৎসাহিত করা, অভিবাবক ছাড়া বিয়ে করতে নিষেধ করা এবং অভিবাবক থাকার কল্যাণ বর্ণনা করা।
والله اعلم بالصواب
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
২৭৯৪৫
ফাতেমা রাযি.-এর মহর কত ছিল?
১২ জানুয়ারী, ২০২৩
Dhaka, Bangladesh

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
২৭৩০৬
ছেলে-মেয়ে রাজি, কিন্তু অভিভাবক রাজি নয়; তাহলে গোপন-বিয়ের অনুমতি আছে কি?
২ জানুয়ারী, ২০২৩
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে