আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

পালিয়ে বিয়ে করার পর মেয়েটি স্বামীকে ছাড়তে পারবে কি?

প্রশ্নঃ ৩০৯৫৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, প্রশ্নটি একজনের পক্ষ থেকে,আমার একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো। কয়েক মাস পর বুঝতে পারি হারাম। তাই পালিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের পর ১ দিন তার সাথে ছিলাম। তারপর যার যার বাড়িতে থাকি। বিয়ের ৬ মাস পর জানতে পারি আমাদের বিয়ে বাতিল। কারণ পালিয়ে বিয়ে করেছি। এখন পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্ভব না। কারণ ছেলে মাত্র এইচ.এস.সি শেষ করলো। পরিবার মানবে না। এখন আমার করণীয় কি? আর অন্য জায়গায় বিয়ে করলে এই কথা না জানালে কি ধোঁকা হবে?

৩১ মার্চ, ২০২৩
শেরপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. ইসলামি শরিয়তে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক ও ন্যূনতম শর্ত হলো, বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার ৩/৯ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২৬৮)
তবে ইসলাম বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতকে ‘চূড়ান্ত মতামত’ হিসাবে সাব্যস্ত করলেও পাশাপাশি অভিভাবকের মতামতকেও সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। দেখুন, আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وأَنْكِحوا الأيامى منكم
আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও। (সূরা নুর ৩২)
সুতরাং উক্ত পদ্ধতিতে বিয়ে করে থাকলে তাদের বিবাহ বৈধ হয়েছে। তবে অভিভাবককে গুরত্ব না দিয়ে তারা একটি মহা অন্যায় এবং অমানবিক ও অসামাজিক করেছে, সুতরাং আল্লাহ তাআলার নিকট এই গুনাহর জন্য তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

দুই. গোপন বিয়ে অমানবিক ও অসামাজিক হলেও যেহেতু তারা করেই ফেলেছে, এখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি কোনো ছেলেখেলা নয় বরং এটি হলো, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন। ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায় এবং সমাধানের কোনো পথ থাকে না তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম বৈধ কাজ। রাসূলুল্লাহ ﷺ তা চরমভাবে ঘৃণা করতেন। হাদীসে এসেছে,
أبغض الحلال عند الله الطلاق
‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল–তালাক।’ (আবু দাউদ ২১৭৭)
এজন্য যেমনিভাবে অতীব প্রয়োজন (যা শরীয়তে ওজর বলে গণ্য) ছাড়া স্বামীর জন্য তালাক দেওয়া জায়েয নয়, অনুরূপভাবে স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত বোন এখন যা করবে তাহল, অস্বীকার করে অন্যায়ের পর অন্যায় আর নয়; বরং মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করবে। তাদের সঙ্গে অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করেছে, তা তাদের কাছে স্বীকার করে নিবে। তারপর যা কিছু করবে, পারিবারিকভাবেই করবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, এর প্রতিকার হিসাবে তালাকের মত দূর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।

والله اعلم بالصواب

শাইখ উমায়ের কোব্বাদী সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন