আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

বাইয়ে সালামের নামে সুদের লেনদেন

প্রশ্নঃ ২৭০০০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, পণ্য বাকি রেখে, টাকা অগ্রিম দিয়ে, ক্রয় বিক্রয় জায়েজ কিনা, যেমন কোন দোকানদারকে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হলো এবং তাকে বলা হলো আপনি দুই মাস পরে আমাকে এক লক্ষ টাকার মাল দিবেন, এবং এই মালগুলো মালিকের কাছে রেখেই অন্য কারো কাছে বিক্রি করতে পারব কিনা, বা মালিকের কাছে বিক্রি করতে পারব কিনা,দয়া করে আমাকে জানাবেন

১১ জানুয়ারী, ২০২৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মনিত প্রশ্নকারী!
পরে পণ্য পরিশোধের শর্তে অগ্রিম টাকা নেওয়াকে ফিকহের পরিভাষায় বাইয়ে সালাম বলে। বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে এই ব্যবসা আছে।

কিন্তু প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে আপনাদের এই ক্রয় বিক্রয় সহিহ নয়। কেননা, কারো কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করার পর সেই পণ্য বিক্রি করার জন্য শর্ত হলো বিক্রেতা থেকে সেই পণ্য ক্রেতার হস্তগত হওয়া। কিন্তু আপনার উল্লেখ করা পদ্ধতিতে তা লঙ্ঘিত হয়েছে। সেখানে আপনি সেই পণ্য হস্তগত না করেই বরং তার কাছে থাকা অবস্থায়ই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
হস্তান্তরযোগ্য পণ্য এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ নাই।

হাদিস শরিফে বর্ণীত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلَا يَبِعْهُ حَتَّى يَقْبِضَهُ অর্থাৎ যে ব্যক্তি খাদ্য ক্রয় করল, সে যেন কবযা (হস্তগত) করার আগে তা বিক্রয় না করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এ বক্তব্য একথাই প্রমাণ করে, ক্রেতা ক্রয় করার পর কাবযা/হস্তগত করলেই তার পক্ষে বিক্রয় করা হালাল ।

হাদিসের বাহ্যিক রূপ যদিও খাদ্যদ্রব্যকে মেনশন করেছে কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস রা. এখানে সকল বস্তুকেই এর উপর তুলনা করেছেন। কাজেই আপনার প্রশ্নোক্ত ক্রয়বিক্রয় সহিহ নয়। বরং এর সঠিক পদ্ধতি হবে আপনি আপনার বিক্রেতার কাছ থেকে প্রথমে পণ্য বুঝে নিবেন। তারপর যদি আপনি তাকে বিক্রির দায়িত্ব দেন তাহলে তিনি আপনার নিযুক্ত উকিল (দায়িত্বশীল) হিসেবে সেগুলো বিক্রি করতে পারবেন।


সম্মানিত ভাই!
সূদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার প্র্রসার এবং মানুষের নীতি নৈতিকতার অধপতনের কারণে ক্রমশই মানুষ ঋণ দানের মহান আমল থেকে সরে যাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে সমাজে বিভিন্ন ধরণের সুদী ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। এমনটি ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়েও অনেক মানুষ হালাল ব্যবসার নামে সুদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আপানার প্রশ্নোক্ত ব্যবসাটি সুদেরই একটি ভিন্নরূপ।তাই আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো, সুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন।

عَنْ ابْنِ طَاوُسٍ عَنْ أَبِیہِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّہِ صَلَّی اللَّہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ مَنْ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلا یَبِعْہُ حَتَّی یَقْبِضَہُ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَأَحْسِبُ کُلَّ شَیْءٍ بِمَنْزِلَةِ الطَّعَامِ۔(مسلم)
(لا) یَصِحُّ اتِّفَاقًا کَکِتَابَةٍ وَإِجَارَةٍ وَ (بَیْعِ مَنْقُولٍ) قَبْلَ قَبْضِہِ وَلَوْ مِنْ بَائِعِہِ۔ (الدر المختار)
قال المرغینانی : وَمَنْ اشْتَرَی شَیْئًا مِمَّا یُنْقَلُ وَیُحَوَّلُ لَمْ یَجُزْ لَہُ بَیْعُہُ حَتَّی یَقْبِضَہُ , لأَنَّہُ علیہ الصلاة والسلام نَہَی عَنْ بَیْعِ مَا لَمْ یُقْبَضْ وَلأَنَّ فِیہِ غَرَرَ انْفِسَاخِ الْعَقْدِ عَلَی اعْتِبَارِ الْہَلاکِ . (الہدایة)
قال الزیلعی: (لا بَیْعُ الْمَنْقُولِ) أَیْ لا یَجُوزُ بَیْعُ الْمَنْقُولِ قَبْلَ الْقَبْضِ لِمَا رَوَیْنَا وَلِقَوْلِہِ علیہ الصلاة والسلام: ”إذَا ابْتَعْت طَعَامًا فَلا تَبِعْہُ حَتَّی تَسْتَوْفِیَہُ“ رَوَاہُ مُسْلِمٌ وَأَحْمَدُ وَلأَنَّ فِیہِ غَرَرَ انْفِسَاخِ الْعَقْدِ عَلَی اعْتِبَارِ الْہَلاکِ قَبْلَ الْقَبْضِ ; لأَنَّہُ إذَا ہَلَکَ الْمَبِیعُ قَبْلَ الْقَبْضِ یَنْفَسِخُ الْعَقْدُ فَیَتَبَیَّنُ أَنَّہُ بَاعَ مَا لا یَمْلِکُ وَالْغَرَرُ حَرَامٌ لِمَا رَوَیْنَ۔ (تبیین الحقائق)

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন