আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

খেলার সামগ্রী এবং ছবি সম্বলিত পণ্য বিক্রির হুকুম

প্রশ্নঃ ৩০৮৯৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি শর্তে বাহিরে প্রশ্নটা করছি, দরকার তো তাই। ➡️ আমি একজন স্পোর্টস দোকানদার আমি জার্সির প্যান্ট বা হ্যাপ প্যান্ট বিক্রি করি ফুটবল, ভলিবল এবং বাস্কের্ট বলের। এখন আমার ব্যবসায় হালাল হবে না হারাম। যদিও আমি অনেক আইটেম বিক্রি করি যার সব কিছু খেলা বা জিম সম্পর্কিত। ➡️আর আমি অনেক জিনিস বিক্রি করি যেগুলোর গায়ে মেয়ে ছেলেদের ছবি থাকে এখন, ছবি যেখানে থাকে সেখানে নাকি রহমতের ফেরেস্তা আসে না শুনেছি, যদি সত্যি হয় তাহলে আমি কী করতে পারি? জানাবেন দয়া করে।

৩ এপ্রিল, ২০২৩
Yanqul

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. খেলোয়াড়দের জার্সি, হাফ প্যান্ট, ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেট বল বিক্রি করা মানে মানুষকে এ সব খেলায় উদ্বুদ্ধ করা। অথচ বলা বাহুল্য যে, এ সব খেলায় অসংখ্য শরিয়া বিরোধী ক্রিয়াকাণ্ড জড়িত। সুতরাং এগুলো বিক্রি করা জায়েয হবে না। কেননা, আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হচ্ছে,
وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহায়তা করো না। (সূরা মায়েদা ২)
তাছাড়া এসব পণ্যের মধ্যে অনেক সময় অমুসলিমদের বিভিন্ন প্রতীক এমন কি ক্রুশ পর্যন্ত আঁকা থাকে, যা কোন মুসলিমের জন্য পরিধানের চিন্তা করাটাও অন্যায়। সুতরাং বিক্রি করাও নাজায়েয। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى
যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। (তিরমিযী ২৬৯৫)
দুই. দোকানে ছবি টাঙ্গানো না থাকলে, ছবির সম্মান প্রদর্শন না করা হলে মালের সাথে ছবি বিক্রি উদ্দেশ্য না হলে ছবিযুক্ত মাল বিক্রি করা যাবে। অর্থাৎ হীনকর কাজে ছবি ব্যবহার করা যাবে। তবে অশ্লীল ছবিযুক্ত পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে। কেননা এগুলির মাধ্যমে দোকানী ও ক্রেতা উভয়েরই চোখের যেনায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ
যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা নূর: ১৯)
তিন. প্রশ্নকারী দীনী ভাই, রিযিকের বহু পথ রয়েছে, এ পথ বন্ধ নয়, বরং সর্বদা খোলা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا
আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের বা বাঁচার পথ করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট । আল্লাহ তাঁর ইচ্ছে পূরণ করবেনই, অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্রা। (সূরা আত-ত্বালাক: ২-৩)
সুতরাং আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল, যদি আপনার আর্থিক অবস্থা মজবুত হয় এবং আপনি উক্ত ব্যবসা ছাড়াও সংসার চালাতে সক্ষম হন তাহলে কোনো চিন্তা না করে যত দ্রুত সম্ভব উক্ত ব্যবসা গুটিয়ে ফেলুন এবং উপার্জনের অন্য কোনো হালাল পথ খুঁজে নিন।
কিন্তু যদি আপনার উপার্জনের অন্য কোনো উৎস না থাকে তাহলে আপনি সংসার চালানোর জন্য অন্য কোনো হালাল পন্থা বের করার আগ পর্যন্ত ওই ব্যবসা করতে থাকুন এবং তাওবাসহ আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকুন। এর পাশাপাশি আপনি অন্য কোনো কোনো হালাল পন্থা বের করার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যান।
মনে রাখবেন, ‘অন্য কোনো হালাল পন্থা বের করার আগ পর্যন্ত ওই ব্যবসা করতে থাকুন’–আমাদের এই শেষোক্ত পরামর্শ কেবল আপনার আপারগতার ক্ষেত্রে। অন্যথায় ইসলামের মূলনীতি তো এই যে, হারাম একেবারে পরিহার করে চলা। সুতরাং সর্বাবস্থায় আপনি অবশ্যই সাবধান থাকবেন যেন আপনার এই অপারাগতা আল্লাহর পথ থেকে আপনাকে বিচ্যুত না করতে পারে।

والله اعلم بالصواب

শাইখ উমায়ের কোব্বাদী সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন