আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

যে মেয়ে গুনাহয় আসক্ত; তার প্রতি নসিহত

প্রশ্নঃ ২৫৫৭৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হুজুর, আমি একটা গুনাহয় আসক্ত। এখন আমি গুনাহ ছাড়তে চাই। নামাজ পড়ি। কিন্তু ২,৩ দিন পর পর আবার করে ফেলি। কিন্তু যখন হয়ে যায় তখন ভাবি যে, আর করব না। নামাজ পড়ি। কুরআন পড়ি। মাঝে মাঝে আবার ওইদিনে আবার ২,৩ বার করে ফেলি।আমি কোন ভাবেই ছাড়তে পারছি না? আমি কী করব?,

২১ নভেম্বর, ২০২২

দিনাজপুর ৫২০০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রিয় দীনী বোন, প্রথমে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ আমাদের সকলকে এজাতীয় বেড়াজাল থেকে মুক্তি দান করুন। আর আপনার করণীয় হল–
এক. আপনার গুনাহটার ধরণ কী, কোন্ কোন্ দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করছে। ঘরের দরজা বন্ধ না করলে যেমন চোর ঢুকবে, তেমনি গুনাহর দরজা বন্ধ না করলেও অনিচ্ছায় আপনি জড়িয়ে পড়বেন। সুতরাং দরজাগুলো যদি বন্ধ করতে পারেন, তাহলে বাঁচা সহজ হয়ে যাবে। আর এক্ষেত্রে ভাবলে দেখবেন, তালিকার প্রথমেই আসবে অসৎ সঙ্গ। সুতরাং যে কোনো মূল্যে আপনাকে অসৎ সঙ্গ থেকে বাঁচতে হবে। এর পরেই আসবে, মোবাইল ও কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট। এগুলো ভাল কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার এগুলো দিয়ে গুনাহও হয়ে যায়। প্রয়োজনের কথা বলে এগুলো হাতে আসে, আর তা দিয়ে প্রযুক্তির তুলনায় গুনাহই বেশি প্রবেশ করে।
দুই. নিয়মিত নামাজ আদায় করুন এবং আল্লাহ্‌র কাছে মুনাজাত করে, তাঁকে স্মরণ করে, তাঁর কিতাব তেলাওয়াত করে স্বাদ অনুভব করুন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। (সূরা আনকাবুত ৪৫)
একবার সাহাবারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলল, অমুক সাহাবী বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, সে কি এখনো নামাজ পড়ে? সবাই বলল, হ্যাঁ, পড়ে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে যদি নামাজ পড়তে থাকে তাহলে নামাজ তাকে অবশ্যই একদিন খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। (মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪৭)
তিন. যৌনসুড়সুড়ি জাগানিয়া কাণ্ডসমূহ থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে চলুন। বিশেষত ইন্টারনেটের অবাধ ও অবৈধ ব্যবহার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। নারীপুরুষের সহাবস্থান কিংবা ফ্রেন্ডশিপের নামে ছেলেদের সঙ্গে কথোপকথন এড়িয়ে চলুন। এক কথায়, পর্দার প্রতি পরিপূর্ণ যত্নশীল হোন। মনে রাখবেন, পৃথিবীর সবচে দীর্ঘতম সফর এক পা ওঠালেই শুরু হয়ে যায়। অনুরূপভাবে উক্ত কর্মকান্ডগুলোর মাধ্যমে শুরু হয় মূল ব্যভিচারের প্রতি সফর। ঈমানদারের কর্তব্য হল সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেলা থেকে বিরত থাকা। এজন্যই আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন–
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর ৩১)
চার. মাসে অন্তত তিনদিন অর্থাৎ আরবি মাসের ১৩,১৪,১৫ রোজা রাখার চিন্তা করতে পারেন। অথবা প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার। কেননা রোজার মধ্যে প্রবৃত্তির টানে ছুটে যাওয়া থেকে যেমন সুরক্ষা রয়েছে, তেমনি রয়েছে আল্লাহর কাছে বড় প্রতিদান। মানুষের ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় করা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নফসের খাহেশ ও আনন্দদায়ক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দীক্ষাও রয়েছে রোজায়। তাই রোজা রাখার ব্যাপার মনস্থির করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ আপনার বোঝা হালকা করবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ ، مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ
হে যুবক সম্প্রদায় ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে এবং যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নাই, সে যেন রোযা পালন করে। কেননা, রোযা তার যৌনতাকে দমন করে। (বুখারী ৪৯৯৬)
চার. কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গুনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আর আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। যেমন, অধিকহারে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’র জিকির প্রতিদিনের অবসর সময়ের জন্য আবশ্যিক আমল করে নিতে পারেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب
যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)
পাঁচ. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’
ছয়. ঘুমানোর সময় ইসলামী আদবগুলো মেনে চলুন। যেমন ঘুমানোর দোয়াগুলো পড়া, ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শোয়া, পেটের উপর ভর দিয়ে না-ঘুমানো; যেহেতু এ সম্পর্কে নবী ﷺ-এর নিষেধ আছে।
এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।
হে প্রিয় বোন, সর্বোপরি কোনো পাপের পথে পা বাড়াবার আগে একটু ভাবুন, আল্লাহ আমাকে দেখছেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪১১৫৬

বিয়ের আগে যিনা করা নারীকে বিয়ে করা কি আবশ্যক?


২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

Al-Madinah al-Munawwarah ৪২৩১৬

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৭৫২৮

পালক পিতা-মাতার হক


৯ আগস্ট, ২০২৩

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৬৮৯২

বেনামাজীর হাতের রান্না কি শুকরের মাংসের সমান?


২৭ জুলাই, ২০২৩

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯৪৯১৯

মোবাইলের ব্লুটুথে মাগরিবের আজান চালিয়ে দিয়ে ইফতার করতে চাওয়া


১১ মার্চ, ২০২৫

সিন্দুর পুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy