আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মাসবুকের কেরাত

প্রশ্নঃ ২২২৯৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শায়েখ ,নামাজের একটি মাছআলা অনেকের কাছ থেকে অনেক ভাবে শুনেছি ।প্রিয় শায়েখ আপনার কাছ থেকে কোরআন হাদীস হতে সঠিক ভাবে জানতে চাই নামাজে যখন মাসবুক হয় ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে যখন বাকি নামাজ সম্পন্ন করি তখন যদি চার রাকাতের নামাজ হয় আর আমি দুই রাকাত পেয়েছি দুই রাকাত পাইনি তখন দাঁড়িয়ে আমাকে সে দুই রাকাত পড়বো সেই রাকাত গুলোতে কি আলহামদু সুরার সাথে সূরা মিলাতে হবে হলে কিভাবে মিলাতে হবে জানাবেন। আর যদি তিন রাকাতের নামাজ হয় ধরেন আমি এক রাকাত পেয়েছি ২ রাকাত পাইনি তখন কি আমাকে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলাতে হবে কিনা জানাবেন। কেউ কেউ বলে যে যদি আমি তিন রাকাতের মধ্যে দুই রাকাত পাই তাহলে ইমাম সাহেবের দ্বিতীয় রাকাত আমার প্রথম রাকাত ইমাম সাহেবের তৃতীয় রাকাত আমার দ্বিতীয় রাকাত তাহলে তো আমার তৃতীয় রাকাত বাকি থাকলো তাহলে আমাকে আর দাঁড়িয়ে কেরাত পড়তে হবে না কেন না তৃতীয় রাকাতে তো কোন কেরাত নেই। আবার কেউ বলে তুমি তো প্রথম ডাকাত পাওনি প্রথম রাকাতে তো কেরাত পড়া ওয়াজিব তাই প্রথম রাকাতে পড়তে হবে কোনটা সঠিক জানাবেন।ধন্যবাদ,

২২ অক্টোবর, ২০২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মাসবুক ব্যক্তির নামাযের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হলো। আশা করি আপনার উত্তরটি পেয়ে যাবেন।
ইমামের পিছনে যে ব্যক্তি এক বা ততোধিক রাকাত নামায পড়ে ফেলার পর শরীক হয় উক্ত ব্যক্তিকে ইসলামী ফিক্বহের পরিভাষায় মাসবুক বলে।

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের শেষ বৈঠকে প্রথমে তাশাহুদ পড়বে। তারপর কি করবে? এ নিয়ে বেশ কিছু মত পাওয়া যায়। কোন ফক্বীহ বলেছেন-ইমামের সাথে দরূদ ও দুআয়ে মাসুরা পড়বে। কেউ কেউ বলেন-চুপ থকেব। কেউ কেউ বলেন-অন্যান্য দুআয়ে মাসুরা পড়বে। কেউ বলেন-তাশাহুদ আবার পড়বে।

এসকল বক্তব্যের মাঝে সবচে’ অগ্রধিকারপ্রাপ্ত মত হল-মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ধীরে ধীরে পড়বে। এতটা ধীরে যে, ইমাম সাহেব তাশাহুদ শেষ করে, দরূদ ও দুআয়ে মাসুরাও শেষ করে ফেলতে পারে। তারপর ইমাম সালাম ফিরানোর পর মুনফারিদ তথা একাকি নামায পড়া ব্যক্তির মত বাকি নামায পূর্ণ করবে।

(ফাতওয়ায়ে শামী-২/২২০-২২১.
ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৯১.আল বাহরুর রায়েক-১/৮৭৫.ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া-১/৫৫৯,আহসানুল ফাতওয়া-৩/৩৮১)

فى الدر المختار- وأما المسبوق فيترسل ليفرغ عند سلام إمامه وقيل يتم وقد يكرر كلمة الشهادة،

وقال ابن عابدين- ( قوله فيترسل ) أي يتمهل ، وهذا ما صححه في الخانية وشرح المنية في بحث المسبوق من باب السهو وباقي الأقوال مصحح أيضا…… وقيل يكرر كلمة الشهادة كذا في شرح المنية والذي في البحر والحلية والذخيرة يكرر التشهد تأمل(رد المحتار-كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، فروع قرأ بالفارسية أو التوراة أو الإنجيل-2/220-221)
যার সারমর্ম হলো মাসবুক ব্যাক্তি আস্তে তাশাহুদ পড়বে,যাতে ইমাম সালাম ফিরায়,,,,

মাসবুক ব্যক্তি ইমাম সাহেব উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে বাকি নামায আদায় করবে।
এক্ষেত্রে সে একাকী নামায আদায়কারীর হুকুমে চলে যাবে। অর্থাৎ কোন কারণে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হলে সেজদায়ে সাহু দিতে হবে। নামায ভঙ্গের কারণ হলে, নামায ভেঙ্গে যাবে ইত্যাদি।

আর কেরাতের ক্ষেত্রে প্রথম দিককার রাকাতের হুকুম আরোপিত হবে। অর্থাৎ যদি এক রাকাত না পায়, তাহলে দাঁড়িয়ে সানা পড়বে, তারপর ফাতিহা ও সূরা মিলাবে এভাবে বাকি নামায পূর্ণ করবে। আর যদি দুই রাকাত না পায়, তাহলে প্রথম রাকাতে, সানা, ফাতিহা, সূরা মিলিয়ে নিয়মমাফিক পূর্ণ করবে, তারপর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা মিলাবে। আর যদি তিন রাকাত না পায়, তাহলে প্রথমে দুই রাকাত পূর্বের মত পড়বে। আর তৃতীয় রাকাতে শুধু ফাতিহা পড়বে কিন্তু সুরা মিলাবে না।

মোটকথা, রাকাত হিসেবে প্রথম রাকাত আদায়কারীর মত নামায আদায় করবে।

কিন্তু বৈঠক হিসেবে ধর্তব্য হবে শেষ। তথা এক রাকাত না পেলে, এক রাকাত পূর্ণ করেই শেষ বৈঠক আদায় করবে নিয়মমাফিক। আর দুই রাকাত না পেলে তা পূর্ণ করে শেষ বৈঠক আদায় করবে। এভাবে তিন রাকাত ও চার রাকাতের একই হুকুম।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ اَنَّه غَزَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ غَزْوَةَ تَبُوْكَ قَالَ الْمُغِيْرَةُ فَتَبَرَّزَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قِبَلَ الْغَائِطِ فَحَمَلْتُ مَعَه اِدَوَاةً قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَمَّا رَجَعَ اَخَذْتُ اُهْرِيْقُ عَلى يَدَيْهِ مِنَ الاِدَاوَةِ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَه وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ مِّنْ صُوْفٍ ذَهَبَ يَحْسِرُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَ كُمُّ الْجُبَّةِ فَاَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ وَاَلْقَى الْجُبَّةَ عَلى مَنْكِبَيْهِ فَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ مَسَحَ بِنَاصِيَتِه وَعَلَى الْعِمَامَةِ ثُمَّ اَهْوَيْتُ لَانْزِعَ خُفَّيْهِ فَقَالَ دَعْهُمَا فَاِنِّىْ اَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ فَمَسَحَ عَلَيْهِمَا ثُمَّ رَكِبَ وَرَكَبْتُ فَانْتَهَيْنَا اِلَى الْقَوْمِ وَقَدْ قَامُوْا اِلَى الصَّلَاةِ وَيُصَلِّىْ بِهِمْ عَبْدُ الرَّحْمنِ بْنِ عَوْفٍ وَّقَدْ رَكَعَ بِهِمْ رَكْعَةً فَلَمَّا اَحَسَّ بالنَّبِىِّ ﷺ ذَهَبَ يَتَاَخَّرُ فَاَوْمَا إِلَيْهِ فََاَدْرَكَ النَّبِىُّ ﷺ اِحْدَىِ الرَّكْعَتَيْنِ مَعَه فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ النَّبِىُّ ﷺ وَقُمْتُ مَعَه فَرَكَعْنَا الرَّكْعَةَ الَّتِىْ سَبَقَتْنَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাবূক যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। মুগীরাহ্ বলেন, একদিন ফজরের (ফজরের) সলাতের আগে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানার উদ্দেশে বের হলেন। আর আমি তাঁর পেছনে একটি পানির পাত্র বহন করে গেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বেরিয়ে আসার পর আমি তাঁর দুই হাতের কব্জির উপর পানি ঢালতে লাগলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দুই হাত ও চেহারা ধুলেন। তখন তাঁর গায়ে একটি পশমের জুববাহ্ ছিল। তিনি তাঁর (জুববার আস্তিন গুটিয়ে) হাত দু’টি খুলতে চাইলেন। কিন্তু জুববার আস্তিন খুব চিকন ছিল। তাই জুববার ভেতর দিক দিয়েই তাঁর হাত দু’টি বের করে নিজের দুই কাঁধের উপর রেখে দিলেন এবং হাত দু’টি (কনুই পর্যন্ত) ধুলেন। অতঃপর মাথার সামনের দিক (কপাল) ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করলেন। তারপর আমি তাঁর মোজাগুলো খুলতে চাইলাম। তিনি বললেন, এগুলো এভাবে থাকতে দাও, আমি এগুলো পবিত্রাবস্থায় (অর্থাৎ- উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে) পরেছি। তিনি এগুলোর উপর মাসাহ করলেন। অতঃপর তিনি সওয়ারীর উপর আরোহণ করলেন, আমিও আরোহণ করলাম এবং আমরা একটা দলের কাছে পৌঁছে গেলাম। তখন তারা সলাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, আর ‘আবদুর রহমান ইবন ‘আওফ (রাঃ) তাদের সলাতের ইমামাত করছিলেন এবং তাদের নিয়ে এক রাক্‘আত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ও করে ফেলেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন বুঝতে পেরে তিনি পেছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার স্থানে (স্থির থাকতে) ইশারা করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে দুই রাক্‘আতের মধ্যে এক রাক্‘আত সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) পেলেন। তিনি সালাম ফিরালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমিও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। আর এক রাক্‘আত ছুটে যাওয়া সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আমরা আদায় করলাম।
(মুসলিম ২৭৪, নাসায়ী ১০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১৪৩, ইবনু মাজাহ্ ১২৩৬।)

والدر المختار- (وَالْمَسْبُوقُ مَنْ سَبَقَهُ الْإِمَامُ بِهَا أَوْ بِبَعْضِهَا وَهُوَ مُنْفَرِدٌ) حَتَّى يُثْنِيَ وَيَتَعَوَّذَ وَيَقْرَأَ، وَإِنْ قَرَأَ مَعَ الْإِمَامِ لِعَدَمِ الِاعْتِدَادِ بِهَا لِكَرَاهَتِهَا مِفْتَاحُ السَّعَادَةِ (فِيمَا يَقْضِيهِ) أَيْ بَعْدَ مُتَابَعَتِهِ لِإِمَامِهِ، فَلَوْ قَبِلَهَا فَالْأَظْهَرُ الْفَسَادُ، وَيَقْضِي أَوَّلَ صَلَاتِهِ فِي حَقِّ قِرَاءَةٍ، وَآخِرَهَا فِي حَقِّ تَشَهُّدٍ؛ فَمُدْرِكُ رَكْعَةٍ (وَالْمَسْبُوقُ مَنْ سَبَقَهُ الْإِمَامُ بِهَا أَوْ بِبَعْضِهَا وَهُوَ مُنْفَرِدٌ) حَتَّى يُثْنِيَ وَيَتَعَوَّذَ وَيَقْرَأَ، وَإِنْ قَرَأَ مَعَ الْإِمَامِ لِعَدَمِ الِاعْتِدَادِ بِهَا لِكَرَاهَتِهَا مِفْتَاحُ السَّعَادَةِ (فِيمَا يَقْضِيهِ) أَيْ بَعْدَ مُتَابَعَتِهِ لِإِمَامِهِ، فَلَوْ قَبِلَهَا فَالْأَظْهَرُ الْفَسَادُ، وَيَقْضِي أَوَّلَ صَلَاتِهِ فِي حَقِّ قِرَاءَةٍ، وَآخِرَهَا فِي حَقِّ تَشَهُّدٍ؛ فَمُدْرِكُ رَكْعَةٍ (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الامامة، مطلب فيما لو اتى بالركوع او السجود او بهما مع الامام او قبله او بعده-1/596-597، سعد كرتاشى
মাসবুক ব্যাক্তি তার বাকি নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে তার বাকি নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে একাকী নামাজ আদায়কারীর হুকুমে হবে,সেইভাবেই অবশিষ্ট নামাজ আদায় করবে।

ইমাম সাহেবের উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর মাসবুক তার অবশিষ্ট নামায আদায়ের জন্য দাঁড়াবে। ইমামের প্রথম সালামের পরই দাঁড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ ইমাম সাহু সিজদা দিলে মাসবুকেরও ইমামের সাথে সিজদা করা আবশ্যক। আর ইমামের সাহু সিজদা নেই এটা প্রায় নিশ্চিত হবে দ্বিতীয় সালামের পর। তাই দ্বিতীয় সালামের পরই মাসবুক দাঁড়াবে।
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩১৫৫)
আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৭)
والله أعلم بالصواب

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা ৷

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৭৩৭

ফরয নামাযের সিজদায় অতিরিক্ত দু‘আ করা


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মনাইর কান্দি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

৭১৭০৩

মাগরিব পড়ে সৌদীগামী বিমানে আরোহণ


৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Chinarang

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬৬৫১৬

জুমার নামাজে ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয়


৫ জুলাই, ২০২৪

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৭০২০৭

নামাজে ঢেকুরের সাথে মুখে খাবার চলে আসলে নামাজের বিধান


৯ অক্টোবর, ২০২৪

ঘোড়াশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy