আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সাজদায়ে সাহু, আদায় পদ্ধতি

প্রশ্নঃ ৯৪৬৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নামাজের কোথাও ভুল হলে শাহূ সিজদা কিভাবে দিতে হবে?,

১০ মার্চ, ২০২৫

LQDB৫২০৫، ৫২০৫ محمد الهاشمي، ৯৮৮৪، القويعية ১৯২২৬، السعودية (SA)

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সেজদা সাহু সালামের পরে না আগে?

সেজদা সাহু নামাযের সালাম ফিরানোর পরে ও আগে উভয়ভাবেই করা যাবে। তবে সর্বোত্তম হল পরে করা। কারণ এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বড় বড় সাহাবী-তাবেয়ীর আমল বা ফতোয়াও এ অনুযায়ীই ছিল। এ সম্পর্কে কিছু হাদীস ইতিমধ্যে উল্লেখিত হয়েছে। এখানে আরো কিছু হাদীস ও আছার উল্লেখ করা হল :

১. আলকামা থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. সেজদা সাহু সালামের পরে করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৪৭৫

حدثنا ابن عيينة، عن منصور، عن إبراهيم، عن علقمة: أن عبد الله سجد سجدتي السهو بعد السلام، وذكر أن النبي صلى الله عليه وسلم فعله.

নিমাবী রাহ. (১৩২২হি.) ‘আছারুস সুনান’ কিতাবে (পৃ. ২৯৬) বলেন, إسناده صحيح ‘এর সনদ সহীহ’।

২. কায়েস ইবনে আবী হাযিম থেকে বর্ণিত, মুগীরা ইবনে শুবা রা. আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। দ্বিতীয় রাকাতে সোজা দাঁড়িয়ে গেলে আমরা সুবহানাল্লাহ বলি। তিনি ইশারা করেন এবং সুবহানাল্লাহ বলে নামায অব্যাহত রাখেন। নামায শেষ করে সালাম ফিরিয়ে বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করেন। তারপর বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। (দ্বিতীয় রাকাতে) না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যান এবং নামায অব্যাহত রাখেন। যখন নামায পূর্ণ করলেন তখন বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন এবং বললেন, তোমাদের কেউ যখন নামায পড়ে আর বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়, পুরোপুরি না দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে। তাকে সেজদা সাহু করতে হবে না। আর পুরোপুরি দাঁড়িয়ে থাকলে যেন নামায অব্যাহত রাখে এবং বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করে। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২২-৭২৩

حدثنا ابن مرزوق، قال: ثنا أبو عامر، عن إبراهيم بن طهمان، عن المغيرة بن شبيل، عن قيس بن أبي حازم، قال: صلى بنا المغيرة بن شعبة، فقام من الركعتين قائماً، فقلنا: سبحان الله فأومى وقال: سبحان الله فمضى في صلاته. فلما قضى صلاته وسلم، سجد سجدتين وهو جالس، ثم قال: صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم، فاستوى قائماً من جلوسه، فمضى في صلاته. فلما قضى صلاته، سجد سجدتين وهو جالس، ثم قال: إذا صلى أحدكم فقام من الجلوس، فإن لم يستتم قائماً، فليجلس، وليس عليه سجدتان، فإن استوى قائماً، فليمض في صلاته، وليسجد سجدتين وهو جالس.

৩. আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা ইবনে রাহিব থেকে বর্ণিত, উমর ইবনে খাত্তাব রা. মাগরিবের নামায পড়েন। কিন্তু প্রথম রাকাতে একেবারেই কুরআন পাঠ করেননি। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা দু’বার পড়েন। যখন সালাম ফিরালেন তখন দুটি সেজদা করলেন। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৪

حدثنا سليمان بن شعيب، قال: ثنا عبد الرحمن بن زياد قال: ثنا شعبة، قال: حدثني عكرمة بن عمار اليمامي، عن ضمضم بن جوس الحنفي، عن عبد الرحمن بن حنظلة بن الراهب ১[1].: أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه صلى صلاة المغرب، فلم يقرأ في الركعة الأولى شيئاً. فلما كانت الثانية قرأ فيها بفاتحة القرآن وسورة مرتين، فلما سلم سجد سجدتي السهو.

বদরুদ্দীন আইনী রাহ. (৮৫৫হি.) ‘নুখাবুল আফকার’ গ্রন্থে (৪/৩২৪) লেখেন,

أخرج الأثر المذكور بإسناد حسن جيد

‘ইমাম তহাবী এটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেছেন’।

৪. কায়েস ইবনে আবী হাযিম থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে মালেক রা. আমাদের নিয়ে নামায পড়েন এবং দুই রাকাতে (না বসে) দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরা সুবহানাল্লাহ বললে তিনিও সুবহানাল্লাহ বলেন এবং নামায অব্যাহত রাখেন। অতপর সালাম ফিরিয়ে দুটি সেজদা করেন। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৪

حدثنا سليمان، قال: ثنا عبد الرحمن، قال: ثنا شعبة، عن بيان أبي بشر الأحمسي، قال: سمعت قيس بن أبي حازم، قال: صلى بنا سعد بن مالك، فقام في الركعتين الأوليين، فقالوا: سبحان الله، فقال: سبحان الله فمضى، فلما سلم سجد سجدتي السهو.

বদরুদ্দীন আইনী রাহ. ‘নুখাবুল আফকার’ গ্রন্থে (৪/৩২৮) বলেন, أخرجه بإسناد رجاله كلهم ثقات ‘ইমাম তহাবী এটি এমন সনদে বর্ণনা করেছেন যার সকল রাবী ছিকা’।

আরো দ্রষ্টব্য : কিতাবুল হুজ্জা আলা আহলিল মাদীনা ১/২২৭

৫. ইউসুফ ইবনে মাহাক থেকে বর্ণিত, ইবনে যুবাইর রা. আমাদের নিয়ে যোহরের নামায পড়েন। দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে গেলে আমরা সুবহানাল্লাহ বলি। তিনিও সুবহানাল্লাহ বলেন এবং তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি। অতপর নামায পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে দুটি সেজদা করেন। -শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৫

حدثنا أبو بكرة، قال: ثنا أبو داود، قال: ثنا هشيم، عن أبي بشر، عن يوسف بن ماهك قال: صلى بنا ابن الزبير رضي الله عنهما، فقام في الركعتين الأوليين من الظهر، فسبحنا به، فقال: سبحان الله ولم يلتفت إليهم، فقضى ما عليه، ثم سجد سجدتين بعد ما سلم.

৬. আবদুল আযীয ইবনে সুহাইব থেকে বর্ণিত, আনাস রা. তৃতীয় রাকাতে বসে গেলে মুকতাদীরা (সতর্ক করার জন্য) সুবহানাল্লাহ বলে। তিনি দাঁড়িয়ে চার রাকাত পূর্ণ করেন। যখন সালাম ফিরালেন তখন দুটি সেজদা করলেন। তারপর লোকদের দিকে মুখ করে বললেন, তোমাদের ভুল হলে অনুরূপ করবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫২০

حدثنا ابن علية، عن عبد العزيز بن صهيب: أن أنساً قعد في الركعة الثالثة فسبحوا، فقام فأتمها أربعاً، فلما سلم سجد سجدتين، ثم أقبل على القوم فقال: إذا وهمتم فاصنعوا هكذا.

আরো দ্রষ্টব্য : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৪৭০, ৪৫১৯; শরহু মাআনিল আছার ১/৭২৫

৭. শা‘বী থেকে বর্ণিত, দাহ্হাক ইবনে কায়েস রা. লোকদের নিয়ে যোহরের নামায পড়েন। কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতে বসেননি। অতপর যখন সালাম ফিরালেন তখন বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫৩৭

حدثنا أسباط بن محمد، عن مطرف، عن الشعبي، قال: صلى الضحاك بن قيس بالناس الظهر، فلم يجلس في الركعتين الأوليين، فلما سلم سجد سجدتين وهو جالس.

৮. যুহরী থেকে বর্ণিত, আবু সালামা রাহ. সেজদা দুটি সালাম ফিরানোর পরে করেছেন। -প্রাগুক্ত, বর্ণনা ৪৪৭১

حدثنا أبو معاوية، عن زياد بن سعد، عن الزهري، عن أبي سلمة: أنه سجدهما بعد التسليم...

৯. ইবনে জুরায়জ থেকে বর্ণিত, আমি আতা (ইবনে আবী রাবাহ) রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম- সেজদা সাহু কখন করা হবে? বললেন, যখন সালাম ফিরাবে। ­-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৫০৫

عن ابن جريج قال: قلت لعطاء: متى يسجد سجدتي السهو؟ قال: حين يسلم.

আরো দ্রষ্টব্য : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৫৩৩

১০. মা‘মার থেকে বর্ণিত, হাসান (বছরী) ও কাতাদা রাহ. বলেন, সেজদা সাহু সালাম ফিরানোর পরে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৪৫৪

عن معمر، عن الحسن وقتادة قالا: سجدتي السهو بعد التسليم.



সাহু সেজদার পর পুনরায় তাশাহহুদ ও সালাম

পাঠক এখানে লক্ষ করেছেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহু নামাযের সালাম ফিরানোর পরে করেছেন, করতে বলেছেন এবং অনেক বড় বড় সাহাবী-তাবেয়ীও অনুরূপ করেছেন।২[2] তাই এ পদ্ধতিই উত্তম। এক্ষেত্রে অবশ্য তাশাহহুদ ও সালামের পুনরাবৃত্তি হবে। অর্থাৎ সেজদা সাহু করার পর আবার তাশাহহুদ পড়া হবে এবং সালাম ফিরানো হবে। এটা একাধিক হাদীস এবং সাহাবী-তাবেয়ীর আমল ও ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত। কিছু হাদীস ও আছার লক্ষ করুন :

১. ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায তিন রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। তারপর ঘরে প্রবেশ করেন। এক ব্যক্তি যাকে খিরবাক বলা হয় এবং যার উভয় হাত কিছুটা লম্বা ছিল, বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ। এরপর সে তিনি যা করেছেন তা উল্লেখ করল। তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে লোকদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কি ঠিক বলেছে? তারা বলল, জ্বী। অতপর তিনি এক রাকাত পড়লেন। তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর দুটি সেজদা করে সালাম ফিরালেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭৪

حدثنا أبو بكر بن أبي شيبة، وزهير بن حرب، جميعاً عن ابن علية، قال زهير: حدثنا إسماعيل بن إبراهيم، عن خالد، عن أبي قلابة، عن أبي المهلب، عن عمران بن حصين: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم صلى العصر، فسلم في ثلاث ركعات، ثم دخل منزله، فقام إليه رجل يقال له الخرباق، وكان في يديه طول، فقال: يا رسول الله، فذكر له صنيعه، وخرج غضبان يجر رداءه، حتى انتهى إلى الناس، فقال: أصدق هذا؟ قالوا: نعم. فصلى ركعة، ثم سلم، ثم سجد سجدتين، ثم سلم.

২. যিয়াদ ইবনে ইলাকা থেকে বর্ণিত, মুগীরা ইবনে শু‘বা রা. আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। দুই রাকাত পড়ে না বসে দাঁড়িয়ে গেলে মুকতাদীরা সুবহানাল্লাহ বলে। তিনি তাদের দাঁড়াতে ইশারা করলেন। যখন নামায শেষ করলেন তখন সালাম ফিরালেন, দুটি সেজদা করলেন। তারপর আবার সালাম ফিরালেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৬৫

حدثنا عبد الله بن عبد الرحمن، قال: أخبرنا يزيد بن هارون، عن المسعودي، عن زياد بن علاقة، قال: صلى بنا المغيرة بن شعبة، فلما صلى ركعتين قام ولم يجلس، فسبح به من خلفه، فأشار إليهم أن قوموا، فلما فرغ من صلاته سلم وسجد سجدتي السهو وسلم، وقال: هكذا صنع رسول الله صلى الله عليه وسلم.

ইমাম তিরমিযী বলেন,

هذا حديث حسن صحيح ‘এই হাদীস হাসান সহীহ’।

৩. ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে নামায পড়েন এবং এতে তাঁর ভুল হয়। অতপর তিনি দুটি সেজদা করেন। তারপর তাশাহহুদ পড়েন। তারপর সালাম ফিরান। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৯৭

সনদসহ হাদীসটির আরবী পাঠ নিম্নরূপ :

حدثنا محمد بن يحيى، قال: حدثنا محمد بن عبد الله الأنصاري، قال: أخبرني أشعث، عن ابن سيرين، عن خالد الحذاء، عن أبي قلابة، عن أبي المهلب، عن عمران بن حصين: أن النبي صلى الله عليه وسلم صلى بهم فسها، فسجد سجدتين، ثم تشهد، ثم سلم.

ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯হি.) এটি তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে (১/৪৪৬)

باب ما جاء في التشهد في سجدتي السهو

অর্থাৎ সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ হবে, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন এবং লিখেছেন,

هذا حديث حسن غريب، ... واختلف أهل العلم في التشهد في سجدتي السهو، فقال بعضهم: يتشهد فيهما ويسلم. وقال بعضهم: ليس فيهما تشهد وتسليم، وإذا سجدهما قبل السلام لم يتشهد. وهو قول أحمد، وإسحاق، قالا: إذا سجد سجدتي السهو قبل السلام لم يتشهد.

অর্থাৎ, এই হাদীস হাসান গরীব। সেজদা সাহুতে তাশাহহুদ পড়া সম্পর্কে আহলে ইলমদের মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন, এতে তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। আর কেউ কেউ বলেন, এতে তাশাহহুদ ও সালাম হবে না। আর তা সালামের আগে করলে তাশাহহুদ পড়া হবে না। এটা ইমাম আহমদ ও ইসহাকের মত। এঁরা বলেন, সেজদা সাহু সালামের আগে করলে তাশাহহুদ পড়া হবে না।

ইমাম আবু দাউদ রাহ. (২৭৫ হি.) এটি তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে (২/১০২)

باب سجدتى السهو فيهما تشهد وتسليم

অর্থাৎ সেজদা সাহুতে সালাম ও তাশাহহুদ হবে, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। আর তাঁর নীরবতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যদি ইমাম মুনযিরী রাহ. (৬৫৬হি.)-ও তাঁর ‘মুখতাসারু সুনানি আবী দাউদ’ ও ‘আততারগীব ওয়াততারহীব’ গ্রন্থদ্বয়ে বা কোনো একটিতে নীরবতা অবলম্বন করেন, তাহলে তো এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। আর এখানে তিনি (মুনযিরী) কেবল নীরবই থাকেননি, বরং ইমাম তিরমিযীর এ বক্তব্যও উল্লেখ করেছেন, ‘এটি হাসান গরীব।’ -দ্রষ্টব্য : মুখতাসারু সুনানি আবী দাউদ ১/৪৭০

ইমাম ইবনে খুযায়মা রাহ. (৩১১হি.) এটি তাঁর ‘সহীহ’ গ্রন্থে (২/১৩৪)

باب التشهد بعد سجدتي السهو إذا سجدهما المصلي بعد السلام

অর্থাৎ সেজদা সাহু সালামের পরে করলে এরপর তাশাহহুদ পড়বে, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম ইবনে হিব্বান রাহ. (৩৫৪হি.) এটি তাঁর ‘সহীহ’ গ্রন্থে (৬/৩৯২)

ذكر البيان بأن الساجد سجدتي السهو بعد السلام عليه أن يتشهد، ثم يسلم ثانياً

অর্থাৎ সালামের পরে সেজদা সাহুকারীর জন্য পুনরায় তাশাহহুদ পড়া ও সালাম ফিরানো জরুরি, এই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন। সামনে গিয়ে (৬/৩৯৪) তিনি

ذكر البيان بأن المرء إذا سجد سجدتي السهو في الحال التي وصفناها بعد السلام، عليه أن يتشهد بعدها ثم يسلم.

শিরোনামে আরেকটি অনুচ্ছেদ কায়েম করেছেন এবং তাতেও এই হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাকিম আবু আবদুল্লাহ রাহ. (৪০৫হি.) এটি তাঁর ‘আলমুসতাদরাক’ গ্রন্থে (১/৩২৩) বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন,

هذا حديث صحيح على شرط الشيخين، ولم يخرجاه، إنما اتفقا على حديث خالد الحذاء، عن أبي قلابة، وليس فيه ذكر التشهد لسجدتي السهو.

অর্থাৎ, এটি বুখারী-মুসলিমের সনদের সমমানের। কিন্তু এঁরা তা বর্ণনা করেননি। এঁরা বর্ণনা করেছেন খালিদ আলহায্যার হাদীস, যাতে সেজদা সাহুর জন্য তাশাহহুদ পড়ার উল্লেখ নেই।

ইমাম যাহাবী রাহ. (৭৪৮হি.) তাঁর ‘তালখীছুল মুসতাদরাক’ গ্রন্থে এর উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন। ৩[3]

ইমাম ইবনে দাকীকুল ঈদ রাহ. (৭০২হি.) এটি তাঁর ‘আলইলমাম বিআহাদীসিল আহকাম’ কিতাবে (১/১৯১) উল্লেখ করেছেন।

এই কিতাবের ভূমিকায় (পৃ. ৪৭) তিনি লিখেছেন, ‘এখানে আমার শর্ত হল কেবল এমন ব্যক্তির হাদীস আনব, যাকে জরহ-তাদীলের কোনো ইমাম ছিকা বলেছেন এবং যা কিছু সংখ্যক হাফিযুল হাদীস মুহাদ্দিসের নীতি অনুযায়ী কিংবা ফিকহের ইমামের নীতি অনুযায়ী সহীহ। কারণ তাদের প্রত্যেকের একটি নীতি আছে যা তারা অবলম্বন করেছেন ...। আর এসবেই কল্যাণ রয়েছে।

وشرطي فيه أن لا أورد إلا حديث من وثقه إمام من مزكي رواة الأخبار، وكان صحيحاً على طريقة (بعض) أهل الحديث الحفاظ، أو أئمة الفقه النظار، فإن لكل منهم مغزى قصده وسلكه وفي كل خير.

এখানে কয়েকজন ইমামের নাম উল্লেখ করা হল, যারা এই হাদীসকে সহীহ বা দলীলযোগ্য বলেছেন। আর যারা এর দ্বারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলীল পেশ করেছেন বা এ অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন তাদের সংখ্যা তো অনেক। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (২৪১হি.), আবু বকর আলজাস্সাস (৩৭০হি.), ইবনে হাযম (৪৫৬হি.)।

ইসহাক ইবনে মনসূর আলকাউসাজ বলেন, ইমাম আহমদ বলেছেন, যখন দুই রাকাতে বা তিন রাকাতে সালাম ফিরিয়ে দিবে তখন আবু হুরায়রা ও ইমরান ইবনে হুসাইন রা.-এর হাদীস অনুযায়ী সেজদা দুটি সালাম ফিরানোর পরে করবে এবং তাতে তাশাহহুদ পড়বে।

وإذا سلم من ثنتين أو من ثلاث سجدهما بعد التسليم وتشهد، على حديث أبي هريرة وعمران بن حصين رضي الله عنهما.

-মাসাইলুল ইমাম আহমদ, কাউসাজ সংকলিত ১/৩০৪

আবু বকর আলজাস্সাস রাহ. লেখেন, সেজদা সাহুর পর তাশাহহুদ ও সালামের কথা আমরা এ কারণে বলেছি যে, ইমরান ইবনে হুসাইন ও মুগীরা ইবনে শু‘বা রা. বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহুর পর তাশাহহুদ পড়েছেন।

ইমরান ইবনে হুসাইন ও আবু হুরায়রা রা. উভয়ে বর্ণনা করেছেন, সেজদা দুটির পর তিনি সালাম ফিরিয়েছেন।

وإنما قلنا إنه يتشهد ويسلم بعد سجود السهو، لما في حديث عمران بن حصين، والمغيرة بن شعبة رضي الله عنه: أن النبي صلى الله عليه وسلم تشهد بعد سجدتي السهو.

وقال عمران بن حصين وأبو هريرة رضي الله عنهما، جميعًا: إن النبي صلى الله عليه وسلم سلم بعدهما.

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৩-২৪

ইবনে হাযম রাহ. বলেন, ‘উত্তম হল সেজদা দুটির মধ্যে প্রত্যেকটির জন্য তাকবীর দিবে এবং সেজদা করার পর তাশাহহুদ পড়বে ও সালাম ফিরাবে...।’ এরপর দলীল বয়ান করতে গিয়ে তিনি এই হাদীসটিও উল্লেখ করেন।

والأفضل أن يكبر لكل سجدة من سجدتي السهو، ويتشهد بعدهما ويسلم منهما...

وأما اختيارنا التكبير لهما والتشهد والسلام، فلما حدثناه عبد الله بن ربيع ...

وبه إلى أبي داود: ثنا محمد بن يحيى بن فارس، ثنا محمد بن عبد الله بن المثنى، حدثني أشعث ـ و ابن عبد الملك ـ عن محمد بن سيرين، عن خالد الحذاء، عن أبي قلابة، عن أبي المهلب، عن عمران بن الحصين: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سها، فسجد سجدتين، ثم تشهد، ثم سلم.

-আলমুহাল্লা ৪/১৬৮

এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হল যে, এ হাদীসটি সহীহ। বিভিন্ন মুহাদ্দিস একে সহীহ বা দলীলযোগ্য বলেছেন অথবা অন্যের সহীহ বলায় মৌনতাবলম্বন করেছেন কিংবা এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে খুযায়মা, ইবনে হিব্বান, জাস্সাস, হাকিম, মুনযিরী ও যাহাবী রাহ.। এবং সামনে গিয়ে পাঠকগণ দেখবেন, এতে যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে (সেজদা সাহুর পর আবার তাশাহহুদ পড়া ও সালাম ফিরানো) সেটি সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন যুগে বেশ অনুসৃত ছিল। কিন্তু এ সত্ত্বেও কেউ কেউ এতে একটি আপত্তি করে থাকে। এখানে ওই আপত্তিটি সম্পর্কে কিছু পর্যালোচনা করা হল।

#মাসিক আল কাউসার, বর্ষ: ১২, সংখ্যা: ০৯

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৩৫২২

যেসব কারণে সেজদা সাহু দিতে হয়


৪ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

২৬৪১৪

সাহু সেজদা ওয়াজিব না হওয়া সত্বেও সেজদা করা


১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

Nagda Shimla Syodpur Rd

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

২৯৫৫২

কোনো রাকাতে ভুলে তিন সিজদা করলে করণীয়


১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সুনামগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৯১৪৮৫

এক নামাজে দুইবার সেজদায়ে সাহু দিলে নামাজ হবে?


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy