আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২২১২০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম,প্রিয় শায়েখ, আমি একজন যুবক। আল্লাহর হেদায়েত পাওয়ার পর আমি পুরোপুরি দিনের সাথে লেগে ছিলাম।যাকে বলে দুনিয়ার কোনো চিন্তা আর মনে আসতো না।কিন্তু এত কিছু করার পরও আমি পর্ন এবং হস্তমৈথুন এর সাথে জড়িত।এই পাপ কাজ করার পর আমার মনে অনুশোচনা হতো মনে হতো এই পাপ কাজ আর কোনোদিন করবো না। আল্লাহর উপর ভরসা ছিল অত্যাধিক।কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন বসে থাকা অবস্থাই আমার ইসলাম নিয়ে মনে সন্দেহ সৃষ্ট্রি হয়।এটা সয়তানের ওসওসা কিনা আমি জানি না,তবে এটা যখন প্রথম ভাবি তখন থেকে মনে হলো আমার বুকে কি জেন আটকে গেল আর আমার আল্লাহর উপর ভরসা হারিয়ে গেল।আমি পর্ন এবং হস্তমৈথুনে জড়িয়ে গেলাম ভয়ানক ভাবে আর অনুশোচনাও হয় না এই ব্যাপারে।নামায পড়তে গেলে শান্তি নায়,মুনাজাতে আল্লাহে সব কিছু বলতে গেলে কান্না আসে না আমি এখন কি করব কিছুই বুজতেছি না।আমায় সাহায্য করুন শায়েখ,না জানি আমার ইমানের কি হয়,আর পরকালে কি হয়,আমি খুবি চিন্তিত তা আপনাকে বলে বুঝাতে পারবোনা।আমার কি করা উচিত?,

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




হস্তমৈথুন একটি মহামারি। এর কারণে মানুষের জীবন-যৌবন, ইমান-আমল সব শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই এর থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যক।

মানব প্রকৃতি গুনাহের দিকে ধাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর মুমিন বান্দা বসে থাকতে পারে না। তাওবা না করা পর্যন্ত তার মনে স্থীরতা আসে না। কাজেই যখনই কোনো গুনাহ হয়ে যাবে সাথে সাথে তাওবা করে নিতে হবে। আর বারবার তাওবা করা এটাই মুমিনের শান । তবে তাওবা হতে হবে খাঁটি দ্বিলে।

আপনি ওই গর্হিত কাজ পরিহার করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাওবা করে ফিরে আসুন।

এই মহামারী থেকে বাঁচার উপায়
(১) সদাসর্বদা নিজের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার ধ্যান ও খেয়াল জাগ্রত রাখুন এবং এই পাপকাজ থেকে বাঁচতে সর্বদা আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা করুন। আপনি যেখানেই থাকুন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দেখছেন। আপনি কি আপানার পিতা-মাতা কিংবা উস্তাত-শিক্ষকের সামনে এই গর্হিত কাজ করতে পারবেন? নিশ্চয়ই না! কেননা, তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা, ভয়-ভালোবাসা আপনাকে এই পাপাচারে লিপ্ত হতে দিবে না। তাহলে যিনি আমার খালিক, আমার মালিক, আমার দিবিনিশি, যার সামনে। আমাকে চাইলে যিনি এক মুহূর্তে তুলে নিতে পারেন। যার হাতে আমার জান, যার হাতে আমার প্রাণ-সেই মহান রাজাধীরাজ বিশ্বচরাচরের একচ্ছত্র অধিপতি মহান আল্লাহ তায়ালার সামনে আমি কি করে এই পাপ করি। এই খেয়াল ও অনুভূতি যদি কোনো মানুষের মধ্যে থাকে তাহলে তার দ্বারা ইনশাআল্লাহ কোনো গুনাহ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
(২) বিবাহের উপযুক্ত হলে নিজের দ্বিন ও ইমান রক্ষার্থে বিবাহ করে নিন এবং স্ত্রীর সাথে একান্তে অধিক সময় কাটান। অশ্লীল ছবি, ভিডিও, সিনেমা, গেইম এবং যৌনউত্তেজক কোনো বই, গল্প, উপন্যাস, ফিচার, নিউজ পড়া , শোনা এবং দেখা থেকে বিরত থাকুন। পরনারী, গার্লফ্রেন্ড, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো… ইত্যাদী বোনদের সাথে দেখা-সাক্ষাত, একান্ত কথাবার্তা ও অপ্রয়োনীয় আলাপচারিতা পরিহার করুন। মনেরাখবেন বাইরের অশ্লীলতাই আস্তে আস্তে আপনাকে ভিতরের অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যাবে।
(৩) যথাসম্ভব নিজেকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখুন। কারণ অবসরতাই এজাতীয় গুনাহের অন্যতম হাতিয়ার।
(৪) হস্তমৈথুন খারাপভাবে এডিক্টেড হলে কখনোই একা একা থাকবেন না। দ্রুত আপনার অবস্থান পরিবর্তন করুন। বসে থাকলে দাঁড়িয়ে যান। শুয়ে থাকলে ওঠে হাঁটাহাঁটি শুরু করুন। আসতাগফিরুল্লাহ্, দুরুদশরীফ, লা হাওলা ইত্যাদী পড়তে থাকুন। শরীয়তে সীমার মধ্য খেলাধুলা করুন। শরীরচর্চা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ছাত্র হলে ক্লাস বন্ধুদের সাথে পড়াশুনা শুরু করুন। লাইব্রেরি বা কফি দোকানে গিয়ে কিছুটা রিফ্রেশ হয়ে আসুন।
(৫) সন্ধ্যায় সময় কখনই ঘুমাবেন না। কিছু করার না থাকলে কুরআন তেলাওয়াত করুন, দ্বিনী বই-পুস্তক পড়ুন।
(৬) যে সময়গুলোতে হস্তমৈথুন বেশী হয় বলে মনে করেন সেই সময়গুলো মার্ক করুন। বাথরুমে বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি উত্তেজিত থাকেন, হঠাৎ কোনও সময়ে যদি হস্ত মৈথুনের ইচ্ছে জাগে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই কোনো না কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কাজে বা ব্যায়াম করতে লেগে যান। যতক্ষণ পর্যন্ত শরীর ক্লান্ত না হয়, এবং হস্তমৈথুন করার শক্তি ও ইচ্ছা নিশেঃষ না হয়।
গোসলের সময় হস্তমৈথুনের ইচ্ছে জাগলে শুধুমাত্র ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন এবং দ্রুত সময়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসুন।
(৭) নির্জনতা পরিহার করে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান। হঠাৎ বিছানায় শুয়ে পড়বেন না। যথাসম্ভব কোল বালিশব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
(৮) ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের অযাচিত ব্যবহার রোধ করুন।
(৯) নিজের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে হলে অবশ্যই কোনো হক্কানী আল্লাহওয়ালার হাতে বাইয়াত হয়ে তার দেওয়া ইসলাহী পরামর্শ মেনে চলুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা সঠিক পথ দান করবেন।

গুনাহ্ বর্জনের প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং আল্লাহ তায়ালার সাহায্যই আমাদের সবচে বড় ও মজবুত হাতিয়ার। সুতরাং, হস্তমৈথুন নামক যৌনবিকৃতি থেকে সবসময় দূরে থাকুন। মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করুন এবং তার আজাবকে সবসময় ভয় করুন।

রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গ) নিশ্চয়তা দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব।" (বুখারী ও মুসলিম)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪১২০৪

বান্দার হক


২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

Dhaka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৩৫৯১৭

মানুষের হক নষ্ট করলে মুক্তির উপায় কী?


৯ জুলাই, ২০২৩

Bandar Seri Begawan

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৪০১৭

নিজের হক আদায়ে জন্য মিথ্যা বলার হুকুম।


৯ জুন, ২০২৩

ত্রিশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৪১৩৩৪

ব্যাংকের অনুদান গ্রহণ করা জায়েজ?


৩ অক্টোবর, ২০২৩

শ্রীনগর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy