আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২১৭২৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي الضُّحَى، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ خَمْسٌ قَدْ مَضَيْنَ الدُّخَانُ وَاللِّزَامُ وَالرُّومُ وَالْبَطْشَةُ وَالْقَمَرُ .৬৮১১। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ... মাসরুক (রাহঃ) সূত্রে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি বিষয় অতীত হয়ে গিয়েছেঃ ধোয়া, অনিবারনীয় শাস্তি, রোম (এর পরাজয়), পাকড়াও এবং চাঁদ (দ্বিখণ্ডিত হওয়ার নিদর্শন)।—সহীহ মুসলিম, ইফা নং ৬৮১১তাহকীক: তাহকীক নিষ্প্রয়োজনঅনেক সহিহ হাদিস থেকে এই বিষয়টা স্পষ্ট যে কিয়ামতের পুর্বে জেসব বড় নিদর্শন ঘটবে তার মধ্যে অন্যতম হল ধোয়া বা আদ দুখানকিন্তু ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন ) সহিহ মুসলিম এর ৬৮০৯, ৬৮১০ ও ৬৮১১ নাম্বার হাদিস এর দির্ঘ আলচনা থেকে বুঝা জায় যে এই বিষয়টি নাকি ঘটে গেছে।৬৮১১ নাম্বার হাদিসটি সংক্ষিপ্ত তাই এখানেদিয়েছিকিন্তু এর পূর্ববর্তী 2 টি হাদিস অনেক দির্ঘ তাই দিতে পারি নি। আপনি একটু দেখেনিবেন দয়া করে।আমার প্রশ্ন টা হল যে ধোঁয়ার ব্যাপারটা কি আসলেই হয়ে গেছে নাকি সামনে হবে?,

১৮ আগস্ট, ২০২২

কালীগঞ্জ

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





মুহতারাম, আলোচ্য হাদীসত্রয়ে (https://muslimbangla.com/hadith/19132 ও https://muslimbangla.com/hadith/19133 ও https://muslimbangla.com/hadith/19134) যে ধোয়ার কথা বলা হয়েছে তা কেয়ামতের পূর্বে প্রকাশিত ধোয়া নয়,যা কেয়ামতের অন্যতম আলামত। বরং তা কুরাঈশদের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাসূলের (সা) বদদোয়ার ফলে অবতীর্ণ আযাব ছিল যার উল্লেখ সুরা দুখানের ১০ নং আয়াতে হয়েছেঃ
فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُّبِينٍ
অর্থঃ সুতরাং সেই দিনের অপেক্ষা কর, যখন আকাশ স্পষ্ট ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে দেখা দেবে। সূরা আদ-দুখান আয়াত নং - ১০
https://muslimbangla.com/sura/44/verse/9
https://muslimbangla.com/sura/44/verse/10
https://muslimbangla.com/sura/44/verse/11

যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা এই যে,
*(তারা সত্য সুস্পষ্ট হওয়ার পরেও মানে না.) অতএব আপনি তাদের জন্য সে দিনের অপেক্ষা করুন, যখন আকাশ ধুম্রাচ্ছন্ন হবে। এটাও এক যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। [ এখানে দুর্ভিক্ষ বোঝানো হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সা)-র বদ-দোয়ার ফলে মক্কা বাসীরা এ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছিল। এ বদ-দোয়া একবার মক্কায় ও একবার মদীনা হয়েছিল। ক্ষুধার তীব্রতায় ও মাটির শুষ্কতায় আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে ধোঁয়ার মত দৃষ্টিগোচর হয়। তা-ই এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে মক্কাবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে কাকুতি-মিনতি শুরু করে দেয়। সেমতে ভবিষ্যদ্বাণীরূপে বলা হয়েছে যে, মক্কাবাসীরা তখন আল্লাহর সকাশে আরয করবে,] হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের থেকে এ আযাব সরিয়ে নিন, আমরা অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করব। [ ভবিষ্যদ্বাণী এভাবে পূর্ণ হয় যে, আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য কুরায়েশ রসূলুল্লাহ্ (সা)-র কাছে চিঠি লিখে এবং নিজেরাও এসে দোয়ার অনুরোধ করে। ইয়ামামার সরদার সুমামা তাদের খাদ্যশস্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল, তাকেও বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। রূহুল মাআনীতে আবূ সুফিয়ানের ঈমানের ওয়াদাও বর্ণিত রয়েছে। অতপর বলা হয়েছে যে, তাদের ওয়াদা খাঁটি মনে ছিল না। তারা কি করে উপদেশ লাভ করবে যদ্দ্বারা তাদের ঈমান আশা করা যায়, অথচ (ইতিপূর্বে) তাদের কাছে সুস্পষ্ট পয়গম্বর আগমন করেছেন (অর্থাৎ যাঁর নবুয়ত সুস্পষ্ট ছিল)। অতপর তারা তাঁকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে এবং বলেছে, সে তো (অন্য লোকের) শিখানো বুলি বলে (এবং) সে উন্মাদ (সুতরাং এরপরও যখন তারা বিশ্বাস স্থাপন করল না, তখন দুর্ভিক্ষে কিরূপে ঈমান আশা করা যায়। দুর্ভিক্ষে সম্পর্কে তো অবিবেচকরা একথাও বলতে পারে যে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা, যা বোধগম্য কারণে সংঘটিত হয়েছে-কুফরের শাস্তি নয়। সুতরাং তাদের ওয়াদা কেবল উপস্থিত বিপদ চলানোর জন্য।) আমি নিরুত্তর করার জন্য) কিছুদিন আযাব প্রত্যাহার করব, কিন্তু তোমরা পুনরায় তোমাদের প্রথমাবস্থায় ফিরে যাবে। [এ ভবিষ্যদ্বাণী এভাবে পূর্ণ হয় যে, রসূলুল্লাহ্ (সা)-র দোয়ার ফলে বৃষ্টি হয় এবং ইয়ামামার সরদারকে চিঠি লিখে খাদ্যশস্যের সরবরাহ পুনরায় চালু করা হলে মক্কাবাসীরা স্বস্তি লাভ করে। কিন্তু ঈমান দূরের কথা, তাদের নম্রতাও বিদায় নেয় এবং তারা পূর্ববৎ ঔদ্ধত্ব প্রদর্শন আরম্ভ করে। 'কয়েকদিন' বলার অর্থ এই যে, এ আযাবের অপসারণকাল পার্থিব জীবন পর্যন্তই সীমিত। মৃত্যুর পর যে আযাব আসবে, তার অবসান হবে না। সেমতে ইরশাদ হয়েছে, যেদিন আমি প্রবলভাবে পাকড়াও করব, (সেদিন) আমি (পুরোপুরি) প্রতিশোধ নেবই (অর্থাৎ পরকালে পুরোপুরি শাস্তি হবে)।

**আলোচ্য আয়াতসমূহে উল্লিখিত ধোঁয়া সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তিন প্রকার উক্তি বর্ণিত আছে। প্রথম উক্তি এই যে, এটা কিয়ামতের অন্যতম আলামত যা কিয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে সংঘটিত হবে। এই উক্তি হযরত আলী, ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর, আবু হুরায়রা (রা), হাসান বসরী (র) প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এ ভবিষ্যদ্বাণী অতীতে পূর্ণ হয়ে গেছে এবং এতে মক্কার সে দুর্ভিক্ষ বোঝানো হয়েছে, যা রসুলুল্লাহ্ (সা)-র বদ-দোয়ার ফলে মক্কাবাসীদের উপর আপতিত হয়েছিল। তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল এবং মৃত জন্তু পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়েছিল। আকাশে বৃষ্টি ও মেঘের পরিবর্তে ধূ্ম্র দৃষ্টিগোচর হত। এ উক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ (রা) প্রমুখের তৃতীয় উক্তি এই যে, এখানে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার আকাশে উত্থিত ধূলিকণাকে ধূ্ম্র বলা হয়েছে। এ উক্তি আবদুর রহমান আরাজ প্রমুখের।(কুরতুবী) প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ই সমধিক প্রসিদ্ধ। তৃতীয় উক্তি ইবনে কাসীরের মতে অগ্রাহ্য। সহীহ্ হাদীসসমূহে দ্বিতীয় উক্তিই অবলম্বিত হয়েছে। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ের রেওয়ায়েত নিম্নরূপঃ

সহীহ্ মুসলিমের রেওয়ায়েতে হুযায়ফা ইবনে উসায়েদ বলেন, একবার রসুলুল্লাহ্ (সা) উপর তলার কক্ষ থেকে আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করছেন। আমরা তখন পরস্পর কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যত দিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ, ততদিন কিয়ামত হবে না-(১) পশ্চিম নিক থেকে সূর্যোদয়, (২) দুখান তথা ধূম্র, (৩) দাব্বা (8) ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব, (৫) ঈসা (আ)-র অবতরণ, (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধস, (১) আরব উপদ্বীপে ভূমিধস, (১০) আদন থেকে এক অগ্নি বের হবে এবং মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষ যেখানে রাত্রি যাপন করতে আসবে, অগ্নিও থেমে যাবে, যেখানে দুপুরে বিশ্রামের জন্য আসবে, সেখানে অগ্নিও থেমে যাবে। -(ইবনে কাসীর)

আবূ মালিক আশ'আরী বর্ণিত রেওয়ায়েতে রসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, আমি তোমাদেরকে তিন বিষয়ে সতর্ক করছি—এক. ধূম্র, যা মু'মিনকে কেবল এক প্রকার সর্দিতে আক্রান্ত করে দেবে এবং কাফিরের দেহে প্রবেশ করে প্রতিটি রন্ধ্রপথে বের হতে থাকবে। দুই. দাব্বা (ভূগর্ভ থেকে নির্গত অদ্ভূত জানোয়ার) এবং তিন দাজ্জাল। ইবনে কাসীর এমনি ধরনের আরও কয়েকটি রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করে লিখেন।

هذا إسناد صحيح الى ابن عباس خير الامة وترجمان القرآن وهذا قول من وافقه من الصحابة والتابعين مع الأحاديث المرفوعة من الصحاح والحسان وغيرهما التي اوردوها مما فيه مقنع ودلالة ظاهرة على أن الدخان من الآيات المنتظرة مع أنه ظاهر القرآن قال الله تبارك وتعالى فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّماءُ بِدُخانٍ مُبِينٍ وعلى ما فسره به ابن مسعود رضي الله عنه إنما هو خيال رأوه في أعينهم من شدة الجوع والجهد وهكذا قوله تعالى يَغْشَى النَّاسَ أي: يتغشاهم ويعميهم، ولو كان أمرا خياليا يخص أهل مكة المشركين لما قيل فيه يَغْشَى النَّاسَ

কোরআনের তফসীরকার হযরত ইবনে আব্বাস (রা) পর্যন্ত এই সনদ বিশুদ্ধ। অন্যান্য সাহাবী ও তাবেয়ীর উক্তিও তাই, তারা ইবনে আব্বাসের সঙ্গে একমত হয়েছেন। এছাড়া কিছু সহীহ্ ও হাসান হাদীসও একথা প্রমাণ করে যে, 'দুখান' বা ধূম্র কিয়ামতের ভবিষাৎ আলামতসমূহের অন্যতম। কোরআনের বাহ্যিক ভাষাও এর সাক্ষ্য দেয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদের তফসীরে উল্লিখিত ধূম্র একটি কাল্পনিক ধূম্র ছিল, যা ক্ষুধার তীব্রতার কারণে তাদের চোখে প্রতিভাত হয়েছিল। এর জন্য 'মানুষকে ঘিরে নেবে' কথাটি অবাত্তর মনে হয়। কেননা, এই কাল্পনিক ধূম্র মক্কাবাসীদের মধ্যেই সীমিত ছিল। অথচ يَغْشَى النَّاسَ থেকে বোঝা যায় যে, এটা সব মানুষকে ব্যাপকভাবে ঘিরে ফেলবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদের উক্তির রেওয়ায়েত বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি কিতাবে হযরত মসরূকের বাচনিক বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন আমরা আবওয়াবে কেন্দার নিকটবর্তী কৃফার মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, জনৈক ওয়ায়েয ওয়াজ করছেন। তিনি يَوْمَ تَأْتِي السَّماءُ بِدُخانٍ مُبِينٍ আয়াত সম্পর্কে শ্রোতাদেরকে প্রশ্ন করলেন, এই দুখানের কি অর্থ, আপনারা জানেন ? অতপর নিজেই বললেন, এটা এক ধূম্র, যা কিয়ামতের দিন নির্গত হবে এবং মুনাফিকদের কর্ণ ও চক্ষু নষ্ট করে দেবে। পক্ষান্তরে মুমিনদের মধ্যে এর কারণে কেবলমাত্র সর্দির উপসর্গ সৃষ্টি হবে।

মসরূক বলেন, ওয়ায়েযের এ কথা শুনে আমরা আবদুল্লাহ ইবনে মসউদের কাছে গেলাম। তিনি শায়িত ছিলেন—ব্যস্ত সমস্ত হয়ে উঠে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের নবী (সা)-কে এই পথনির্দেশ দিয়েছেনঃ قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ --অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে আমার সেবাকর্মের ‘কোন বিনিময় চাই না এবং আমি কোন কথা বানিয়ে বলি না। কাজেই যে আলিম হবে, সে যা জানে না, তা পরিষ্কার বলে দেবে, আমি জানি না। আল্লাহ্ তাআলাই জানেন। নিজে কোন কথা বানিয়ে বলা উচিত নয়। অতপর তিনি বললেন, এখন আমি তোমাদেরকে এ আয়াতের তফসীর সম্পর্কিত ঘটনা শোনাই।কাফিররা যখন রসূলুল্লাহ্ (সা)-র দাওয়াত কবুল করতে অস্বীকার করল এবং কুফুরীকেই আঁকড়ে রইল, তখন রসূলুল্লাহ্ (সা) তাদের জন্য বদ-দোয়া করলেন যে, হে আল্লাহ্ এদের উপর ইউসুফ (আ)-এর আমলের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন। ফলে কাফিররা ভয়ংকর দুর্ভিক্ষে পতিত হল। এমনকি তারা অগ্নি এবং মৃত জন্তুও ভক্ষণ করতে লাগল। তারা আকাশের দিকে তাকালে ধম্র ব্যতীত কিছুই তাদের দৃষ্টিগোচর হত না। এক রেওয়ায়েতে আছে, তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তীব্রতায় সে কেবল ধম্রের মত দেখত। অতপর আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ তাঁর বক্তব্যের প্রমাণস্বরূপ فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّماءُ بِدُخانٍ مُبِينٍ -আয়াতখানি তিলাওয়াত করলেন। দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণ রসূলুল্লাহ্ (সা)-র কাছে আবেদন করল, আপনি আপনার মুযার গোত্রের জন্য আল্লাহর কাছে বৃষ্টির দোয়া করুন। নতুবা আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাব।রসূলুল্লাহ্ (সা) দোয়া করলে, বৃষ্টি হল। তখন إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيلًا إِنَّكُمْ عَائِدُونَ আয়াত নাযিল হল। অর্থাৎ আমি কিছু দিনের জন্য তোমাদের থেকে আযাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা বিপদমুক্ত হয়ে গেলে আবার কুফরের দিকে যাবে। বাস্তবে তা-ই হল, তারা তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। তখন আল্লাহ তা'আলা يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرَى إِنَّا مُنْتَقِمُونَ – আয়াত নাযিল করলেন। অর্থাৎ যেদিন আমি প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিনের ভয় কর। অতপর ইবনে মসউদ বললেন, এই প্রবল পাকড়াও বদর যুদ্ধে হয়ে গেছে। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর তিনি আরও বললেন, পাঁচটি বিষয় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ দুখান তথা ধূম্র, রোম, চাঁদ, পাকড়াও ও লেযাম।(ইবনে কাসীর) দুখান অর্থ মক্কার দুর্ভিক্ষ। রোম অর্থ সেই ভবিষ্যদ্বাণী যা সূরা রূমে রোমকদের বিষয় সম্পর্কে বর্ণিত আছে وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ আয়াতে ব্যস্ত হয়েছে। পাকড়াও অর্থ বদর যুদ্ধে কুরাইশ-কাফিরদের পরিণতি। লেযাম অর্থে فَسَوْفَ يَكُونُ لِزَامًا আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আলোচ্য আয়াতসমূহে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী দেখতে পাওয়া যায়- (১) আকাশে ধূম্র দেখা দেবে এবং সবাইকে আচ্ছন্ন করবে, (২) মুশরিকরা আযাবে অতিষ্ঠ হয়ে ঈমানের ওয়াদা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, (৩) তাদের ওয়াদা মিথ্যা প্রমাণিত হবে এবং পরে তারা বেঈমানী করবে, (৪) তাদের মিথ্যা ওয়াদা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে জব্দ করার উদ্দেশ্যে কিছুদিনের জন্য আমার প্রত্যাহার করবেন এবং বলে দেবেন, তোমরা ওয়াদায় কায়েম থাকবে না এবং (৫) আল্লাহ্ তা'আলা পুনরায় তাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদের তফসীর অনুযায়ী সবগুলো ভবিষ্যদ্বাণীই পূর্ণ হয়ে গেছে। প্রথমোক্ত চারটি মক্কাবাসীর উপর দুর্ভিক্ষ আপতিত হওয়া এবং তা দূর হওয়ার অন্তর্বর্তী সময়েই পূর্ণ হয়েছে এবং পঞ্চম ভবিষ্যদ্বাণীটি বদর যুদ্ধে পূর্ণতা লাভ করেছে। কিন্তু এই তফসীর কোরআনের বাহ্যিক ভাষার সাথে সঙ্গতি রাখে না। কোরআনের ভাষা থেকে বোঝা যায় যে, আকাশ প্রকাশ্য ধোঁয়া দ্বারা আচ্ছাদিত হবে এবং সমস্ত মানুষ এই ধূম্র দ্বারা প্রভাবান্বিত হবে। কিন্তু তফসীর থেকে এগুলো কিছুই প্রমাণিত হয় না। বরং জানা যায় যে, এই ধূম্র তাদের বিপদের তীব্রতার ফলশ্রুতি। এ কারণেই ইবনে কাসীর কোরআনের বাহ্যিক ভাষা দৃষ্টে এ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন যে, এ ধূম্র কিয়ামতের অন্যতম আলামত। একে অগ্রাধিকার দেওয়ার আরও কারণ এই যে, এটা রসূলুল্লাহ্ (সা)-র উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। পক্ষান্তরে ইবনে মসউদের তফসীর তাঁর নিজস্ব ধারণাপ্রসূত। কিন্তু ইবনে কাসীরের অগ্রাধিকার দেওয়া তফসীরে বাহ্যত খটকা আছে। তা এই যে, আয়াতে আছে إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيلًا إِنَّكُمْ عَائِدُونَ অথচ কিয়ামতে কাফিরদের থেকে কোন সময় আযাব প্রত্যাহার করা হবে না। সুতরাং কিছু দিনের জন্য আযাব প্রত্যাহারের বিষয়টি কিরূপে শুদ্ধ হবে? ইবনে কাসীর বলেন, এ আয়াতের দু'টি অর্থ হতে পারে—এক. উদ্দেশ্য এই যে, আমি যদি তোমাদের কথা অনুযায়ী আযাব প্রত্যাহার করি এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে দেই, তবে তোমরা পূর্ববৎ কুফরীই করতে থাকবে।

কোরআনের অন্য আয়াতে এই বিষয়বস্তু এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃوَلَوْ رَحِمْنَاهُمْ وَكَشَفْنَا مَا بِهِمْ مِنْ ضُرٍّ لَلَجُّوا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ অন্য এক আয়াতে আছে وَلَوْ رُدُّوا لَعَادُوا لِمَا نُهُوا عَنْهُ দ্বিতীয় অর্থ এই যে, كشف عذاب -এর মানে যদিও আযাবের কারণ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে এবং আযাব তোমাদের নিকটে এসে গেছে। কিন্তু কিছু দিন আমি তা পিছিয়ে দেব। ইউসুফ (আ)-এর কওমের ব্যাপারেও এমনিভাবে। فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ বলা হয়েছে। অথচ তাদের উপর আযাবের লক্ষণাদি প্রকাশ পেয়েছিল মাত্র। আযাব আসার তখনও বিলম্ব ছিল। একেই كشف عذاب বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। সারকথা এই যে, ধূম্রের ভবিষ্যদ্বাণীকে কিয়ামতের আলামত গণ্য করা হলে كَاشِفُو الْعَذَابِ আয়াত দ্বারা কোন খটকা দেখা দেয় না এবং এ তফসীর অনুযায়ী نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرَى —এর অর্থ হবে কিয়ামত দিবসের পাকড়াও। আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদের তফসীরকে বদর যুদ্ধের পাকড়াও বলা হয়েছে। এটাও স্বস্থানে শুদ্ধ। কারণ এটাও প্রবল পাকড়াও ছিল। কিন্তু এতে জরুরী হয় না যে, কিয়ামতে আরও প্রবল পাকড়াও হবে না। এটাও অবান্তর মনে হয় না যে, কোরআন পাক কাফিরদেরকে আলোচ্য আয়াতসমূহে এক ভাবী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এরপর তাদের ওপর যে-কোন আযাব এসেছে, তাকেই তাঁরা এ আয়াতের প্রতীক মনে করে আয়াতসমূহ উল্লেখ করেছেন। ফলে এটা যে কিয়ামতের আলামত, তা অস্বীকার করা যায় না। যেমন স্বয়ং ইবনে মসউদ থেকে বর্ণিত আছেঃ

هما د خا نان مضى واحد والذي بقي يملأ ما بين السماء و الارض و لا يصيب المؤمن إلا بالزكمة وأما الكافر فيشق مسامعه فيبعث الله عند ذالك الريح الجنوب من اليمن فتقبض روح كل مؤمن ويبقى شرار الناس

ধূম্র দু'টি। একটি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে (অর্থাৎ মক্কার দুর্ভিক্ষের সময়)। আর যেটি বাকি আছে, সেটি আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী শূন্যমণ্ডলকে ভরে দেবে। এতে মু'মিনের মধ্যে কেবল সর্দির অবস্থা সৃষ্টি হবে এবং কাফিরের দেহের সমস্ত রন্ধ্র ছিন্ন করে দেবে। তখন আল্লাহ্ তা'আলা ইয়ামনের দিক থেকে দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত করবেন, যা প্রত্যেক মু'মিনের প্রাণ হরণ করবে এবং কেবল দুষ্ট প্রকৃতির কাফিরকুল অবশিষ্ট থাকবে। -(রূহুল মা'আনী)
রূহুল মা'আনীর গ্রন্থকার এই রেওয়াতের সত্যতায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন,কিন্তু এটা প্রমাণিত হলেও কোরআন ও হাদীসের সাথে তাঁর অবলম্বিত তফসীরের কোন বৈপরীত্য থাকে না।

দেখুনঃ https://muslimbangla.com/sura/44/tafsir/10

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৮৩৬৫৯

কোন নামাজে কোন সূরা


৪ জানুয়ারী, ২০২৫

চাঁদপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শফিকুল ইসলাম হাটহাজারী

৯৩২৮৩

বছরের শুরু শেষ নেসাব ঠিক ছিলো, মাঝে যে সম্পদ বেড়েছে তার যাকাতের জন্য বৎসর পূর্ণ হতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

Mahini

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৮৫৩৫

মুসলিম বাংলা অ্যাপে আরবি তারিখ কেন দুইটি দেখায়?


১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৮২২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy