আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

দিবারাত্রির নফল নামাজ

প্রশ্নঃ ২১৩২৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জনাব আমি চাশত এবং ইশরাক নামাজ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই,,আমি অনেক বয়ান শুনেছি সেখানে তারা বলে নামায শেষে ঐ জায়গায় বসে থাকতে হবে,, এখন আমার প্রশ্ন হল আমি যদি কোরআন পড়ি কিংবা কোরআন শরিফ শিখি তার জন্য জায়গা থেকে উঠতে হবে আনতে হবে কোরআন পড়ার জন্য। আবার এমন ও হতে পারে আমি মজিদের ভিতরে হাঁটা হাটি করছি সে ক্ষেত্রে আমি কি চাশত নামায বা ইশরাক সালাত আদায় করলে হবে কি না,, আর আমি দ্বীনের পথে নতুন এ ক্ষেত্রে আমাকে ইসলামিক একটি বই সাজেস্ট করবেন,, আল্লাহ হাফেজ,

২৬ মে, ২০২৪

বাঞ্ছারামপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইশরাক, চাশত, আউয়াবীন ও তাহাজ্জুদ-এর সময় ও ফজীলত প্রসঙ্গে।
: ইশরাক, চাশত, আউয়াবীন ও তাহাজ্জুদ নামায নফল পর্যায়ের। রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতের পর নফল আমলের প্রতি উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‌আলা বলেন--
‍"আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমার মাহবুব ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায় ...।" (সহীহ বুখারী, ২ : ৯৬৩)
এরূপ নফল নামাযসমূহের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামায ফজীলতের দিক দিয়ে অন্যতম। সেই সাথে ইশরাক, চাশত ও আউয়াবীন ইত্যাদি সময়সংশ্লিষ্ট নফল নামাযেরও অনেক ফজীলতের বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে।

এ ধরনের ফজীলতপূর্ণ নফল আমলের কারণে অন্যান্য নবীর উম্মতের তুলনায় এ উম্মতের বয়সসীমা কম হলেও এসব অতিরিক্ত আমলের দ্বারা ছাওয়াব বেশী হওয়ার মাধ্যমে অন্য সকল উম্মতের তুলনায় এ উম্মতের আমলের আধিক্য হবে বলে হাদীসে রয়েছে। তাই নিয়মিত ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত আমল আদায়ের পর যাদের সময়-সুযোগ হয়, তাদের এ নফল নামায এবং অন্যান্য নফল আমলে তৎপর হওয়া উত্তম নেক কাজ।
নিম্নে ইশরাক, চাশত, আউয়াবীন এবং তাহাজ্জুদ নামাযের সময় ও ফজীলত ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হলো--

ইশরাকের সময় ও তার ফজীলত
------------------------------
ফজরের নামায পড়ার পর দুনিয়ার কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত স্বীয় নামাযের জায়গায় বা (পুরুষগণ) মসজিদে অন্যকোন জায়গায় বসে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকবেন। অতঃপর সূর্যোদয়ের ১২/১৩ মিনিট পর সূর্য একটু উপরে উঠলে তখন ইশরাকের সময় হয়--ঐ সময় দুই রাক‘আত ইশরাকের নামায পড়লে এক হজ্ব ও এক উমরার সমান ছাওয়াব লাভ হবে বলে হাদীসে রয়েছে। ((জামে তিরমিযী ১ : ১৩০) এতব্যতীত আরো দুই রাক‘আতসহ মোট চার রাক‘আত পড়লে আল্লাহ তা‘আলা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার এদিনের সকল কাজের জিম্মাদার হয়ে যান বলে অপর হাদীসে উল্লেখ আছে। (জামি‌ তিরমিযী, ১ : ১০৮)
অবশ্য যদি কেউ ফজরের নামাযের পর দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত হয়ে যায় এবং সূর্য
ওঠার পর ইশরাক পড়ে, তাও জায়িয আছে। এতেও ইশরাক আদায় হবে।

চাশতের সময় ও তার ফজীলত
-----------------------------
সূর্য যখন আকাশে এক চতুর্থাংশ ওপরে উঠে এবং সূর্যের তাপ প্রখর হয়, তখন থেকে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত (৯টা থেকে ১১টার মধ্যে) চাশতের সময়। তখন দুই, চার বা আট রাক‘আত নামায পড়বেন। একে চাশতের নামায বলে।
হাদীস শরীফে আছে--চাশতের দুই রাক‘আত নামাযে শরীরের সর্বমোট ৩৬০টি
জোড়ার সদকা আদায় হয়ে যায় এবং সমুদ্রের ফেনার সমান গুনাহ (সগীরা) হলেও মাফ হয়ে যায়। অপর হাদীসে আছে--তার জন্য জান্নাতে একটি বালাখানা তৈরী করা হয়। এছাড়াও হাদীসে চাশতের নামাযের আরো অনেক ফজীলত বর্ণিত হয়েছে।

আউয়াবীনের নামাযের সময় ও তার ফজীলত
-------------------------------------------
মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাতের পর ইশার ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আউয়াবীনের নামাযের সময়। এ সময়ে নফলের নিয়তে কমপক্ষে ছয় রাক‘আত ঊর্ধ্বে বিশ রাক‘আত পর্যন্ত নামায পড়া যায়। এ নামাযকে আউয়াবীনের নামায বলে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মাগরিবের সুন্নাতের পর ছয় রাক‘আত
নফল নামায পড়বে, সে বার বছর ইবাদতের সমান ছাওয়াব লাভ করবে। (জামে তিরমিযী, ১ : ৯৮)

তাহাজ্জুদ নামাযের সময় ও তার ফজীলত
-------------------------------------------
নফল নামাযসমুহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামায। পাচওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়ার পূর্বে এ নামায ফরজ ছিলো। পরবর্তীতে তা নফল গণ্য হয়। এ নামায সম্পর্কে নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, "ফরজ নামাযের পর শ্রেষ্ঠ নামায হল--রাতের নামায (তাহাজ্জুদ)।" (জামি‌ তিরমিযী, ১ : ৯৯)
শেষ রাতে ত্রিপ্রহরের সময় (সাহরীর সময়) থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত এ নামাযের সময়।
তবে দিনের কঠোর পরিশ্রমে যাদের শেষ রাতে ওঠা অনিশ্চিত হয়, তারা ইশার পর ঘুমানোর পূর্বে তাহাজ্জুদের নিয়তে ২/৪ রাক‌আত নামায পড়ে নিতে পারেন। এরপর সম্ভব হলে আবার শেষ রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়বেন। আর তখন না ওঠতে পারলে প্রথম রাত্রির সেই নামাযের কারণে তাহাজ্জুদের ফজীলত থেকে একেবারে মাহরূম হবেন না আশাকরি।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৭৭৮৭

জিমেইল ফেসবুক আইডি বিক্রি প্রসঙ্গ


২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

গাজীপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৮৫৩৫

মুসলিম বাংলা অ্যাপে আরবি তারিখ কেন দুইটি দেখায়?


১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৮২২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৮৮২৯

তাহাজ্জুদের ফযীলত


১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Tamil Nadu ৬২৮৪০২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy