আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৮৩৫০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম, আল্লাহ তাআলার এমন কয়েকটি দান বা নেয়ামতের কথা বলবেন যা আল্লাহ তাআলা শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর উম্মতের মুমিন বান্দাদের জন্য বিশেষভাবে দান করেছেন।শুধুমাত্র উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য।আশা করি দলীল প্রমাণ সহ উত্তর দিবেন।,

১৫ মে, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবেসে যেভাবে সকল নবী ও রাসুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দিয়েছেন। তারই সাথে এই উম্মতকেও আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কিছু মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছেন।

এখানে উম্মতে মুহাম্মদীর ১০টি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো—

১. শ্রেষ্ঠত্ব : উম্মতে মুহাম্মদীকে এমন কিছু সম্মাননা আল্লাহ দিয়েছেন, যা অন্য কোনো উম্মতকে দেননি। আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যত জাতির আবির্ভাব হয়েছে, তন্মধ্যে উম্মতে মুহাম্মদীই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

২. যুদ্ধলব্ধ সম্পদের বৈধতা : আগেকার নবী-রাসুলদের যুগে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ভোগ করা মুসলমানদের জন্য বৈধ ছিল না। যুদ্ধে যেসব সম্পদ অর্জিত হতো, তা একত্রিত করা হতো এবং আসমান থেকে আগুন এসে তা ভস্ম করে দিত। এটিই ছিল যুদ্ধ কবুল হওয়ার নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বৈধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করেছ, তা হালাল ও উত্তমভাবে ভোগ-ব্যবহার করো এবং আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৬৯)

৩. পুরো পৃথিবী নামাজের স্থান হিসেবে স্বীকৃতি : আগের উম্মতদের জন্য যেখানে-সেখানে নামাজ পড়ার অনুমতি ছিল না; নির্দিষ্ট উপাসনালয়েই নামাজ আদায় করতে হতো। তা ছাড়া মাটি থেকে পবিত্রতা অর্জনের কোনো বিধান সেকালে ছিল না। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য পুরো পৃথিবীকে নামাজের স্থান বানিয়ে দিয়েছেন এবং যেকোনো মাটিজাতীয় বস্তু থেকে তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করার অনুমোদন দিয়েছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘গোটা জমিন আমার জন্য নামাজ আদায় ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানেই নামাজের সময় হয় সেখানেই যেন নামাজ আদায় করে নেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৪২৫)

৪. বিধানাবলি সহজকরণ : অন্যান্য উম্মতের ওপর হারাম ছিল এমন অনেক বিষয় আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। কিসাসের বিকল্প দিয়তের আইন আগে ছিল না। বনি ইসরাইলের সময় কারো গায়ে পেশাবের ছিটা লাগলে তা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলতে হতো। কিন্তু আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এসব বিষয় সহজ করেছেন। অসাধ্য কোনো বিধান ইসলামে নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই তোমাদের মনোনীত করেছেন। দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।’ মুআজ ইবনে জাবাল ও আবু মুসা আশআরী (রা.)-কে ইয়েমেন পাঠানোর সময় রাসুল (সা.) নসিহত করে বলেন, ‘তোমরা উভয়ে মানুষের সঙ্গে সহজ আচরণ করবে। কঠোর হবে না। সুসংবাদ শোনাবে। ঘৃণা ছড়াবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৩৩)

৫. মহিমান্বিত জুমার দিনের সন্ধান লাভ : সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমাবার হলো শ্রেষ্ঠতম দিন। আগেকার উম্মত এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমরা শেষ উম্মত। তবে কিয়ামতের দিন আমরা সবার অগ্রগামী হব। কারণ আগের লোকদের কিতাব দেওয়া হয় এবং এক পবিত্র দিনে ইবাদত করা তাদের ওপর ফরজ করা হয়। কিন্তু তারা তাতে মতভেদ করে। অবশেষে আল্লাহ তাআলা আমাদের এ দিনটির সন্ধান দেন। এ ব্যাপারে সব উম্মত আমাদের অনুগামী। ইহুদিরা পরের দিন তথা শনিবার এবং খ্রিস্টানরা এর পরের দিন তথা রবিবারকে মর্যাদার দিন হিসেবে সাব্যস্ত করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৫)

৬. ভুল-ত্রুটি ও গোনাহর কল্পনাকে ক্ষমা ঘোষণা : আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, মহান আল্লাহ এই উম্মতের ভুল-ত্রুটি ও গোনাহের পরিকল্পনা ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ বান্দাদের দোয়া করতে শিখিয়ে দিয়ে বলেন, ‘পরওয়ারদেগার, আমরা যদি বিস্মৃত হই কিংবা ভুল করে ফেলি, তাহলে তুমি আমাদের পাকড়াও কোরো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের মনের অবাস্তব কল্পনা-জল্পনা ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না তারা তা মুখে বলে দেয় বা বাস্তবে রূপায়িত করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২৭)

৭. সমূলে ধ্বংস হওয়া থেকে সুরক্ষা : রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার পালনকর্তা বলেছেন, হে মুহাম্মদ, কোনো বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা আর বাতিল হয় না। আপনার উম্মতের ব্যাপারে আমি এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে তাদের আমি দুর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস করব না এবং তাদের দুনিয়া থেকে ধ্বংস করে দেয় এমন কোনো বহিরাগত শত্রু চাপিয়ে দেব না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৮৯)

৮. ভ্রষ্টতায় সবার একমত না হওয়া : রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতকে (অথবা তিনি বলেন) উম্মতে মুহাম্মদীকে কখনো ভ্রষ্টতার ওপর একত্র করবেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার উম্মতের একদল লোক সব সময় সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯২০)

৯. পৃথিবীতে আল্লাহর আদালতের রাজসাক্ষী : এই উম্মত পৃথিবীতে আল্লাহর আদালতের রাজসাক্ষী। হাদিসে এমনটিই এসেছে। এর কারণ হিসেবে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীতে তোমরা আল্লাহর সাক্ষী।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৪৯)

১০. ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা : এই উম্মতের নামাজের কাতারকে ফেরেশতাদের কাতারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এটি এই উম্মতেরই একমাত্র বৈশিষ্ট্য। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অন্যদের তুলনায় আমাদের তিনটি বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। (তন্মধ্যে একটি হলো) আমাদের নামাজের কাতারকে ফেরেশতাদের কাতারতুল্য সাব্যস্ত করা হয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫২২)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা অনুধাবন করে আল্লাহর শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করে তারি ইবাদতে নিমগ্ন থাকার তৌফিক নসিব করেন। আমীন

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৮০৪৪

তাওরাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে তার কুরআনে কি দলিল আছে?


২০ আগস্ট, ২০২৩

Dhaka 1230

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

২২৯০২

মুসা আ. এর সাথে জনৈক ব্যভিচারী নারীর কথোপকথন!


২৪ মে, ২০২৪

হরিপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

৪৫২১৫

নমরূদের ঘটনা


৯ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

২৪৮৪৫

ইসরাইলি বর্ণনা বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন


১৯ নভেম্বর, ২০২২

Bankra, Howrah, WB, India

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy