আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

তাওরাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে তার কুরআনে কি দলিল আছে?

প্রশ্নঃ ৩৮০৪৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, তাওরাতে মে পরিবর্তন ঘটেছে তার কুরআনে কি দলিল আছে,

২০ আগস্ট, ২০২৩

Dhaka 1230

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


জনাব, কুরআনে কারীমে বহুস্থানে ইহুদীদের আলোচনা ও তাদের অসাড় দাবীর খণ্ডনকালে তাদের নিকট আগত আসমানি কিতাব তাওরাতেও তাদের কৃত পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধনের কথা উল্লেখ হয়েছে।


{ أَفَتَطْمَعُونَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (75)} [البقرة: 75]

হে মুসলমানগণ, তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; অতঃপর বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল। সুরা বাকারাঃ ৭৫


{مِنَ الَّذِينَ هَادُوا يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ وَيَقُولُونَ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَاسْمَعْ غَيْرَ مُسْمَعٍ وَرَاعِنَا لَيًّا بِأَلْسِنَتِهِمْ وَطَعْنًا فِي الدِّينِ وَلَوْ أَنَّهُمْ قَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَاسْمَعْ وَانْظُرْنَا لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ وَأَقْوَمَ وَلَكِنْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُونَ إِلَّا قَلِيلًا} [النساء: 46]

ইয়াহুদীদের মধ্যে (কিছু লোক এমন আছে), যারা (তাওরাতের) শব্দাবলীকে তার প্রকৃত স্থান থেকে সরিয়ে দেয় এবং নিজেদের জিহ্বা বাঁকিয়ে ও দীনকে নিন্দা করে বলে, আমরা শুনেছি কিন্তু অমান্য করছি। তারা আরো বলে, শোন, না শোনার মত। মুখ বাঁকিয়ে দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের উদ্দেশে বলে, রায়েনা’ (আমাদের রাখাল)। অথচ যদি তারা বলত যে, আমরা শুনেছি ও মান্য করেছি এবং (যদি বলত, ) শোন এবং আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ, তবে তাই ছিল তাদের জন্য উত্তম আর সেটাই ছিল যথার্থ ও সঠিক। কিন্তু আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন তাদের কুফরীর দরুন। অতএব, তারা ঈমান আনছে না, কিন্তু অতি অল্পসংখ্যক। নিসাঃ ৪৬

তাফসীরঃ
এ আয়াতে ইয়াহুদীদের দু’টি দুষ্কর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি দুষ্কর্ম তো এই যে, তারা তাওরাতের শব্দাবলীকে তার প্রকৃত স্থান থেকে সরিয়ে তার মধ্যে শাব্দিক বা অর্থগত বিকৃতি সাধন করত। অর্থাৎ কখনও তার শব্দকেই অন্য কোন শব্দ দ্বারা বদলে দিত এবং কখনও শব্দের উপর ভুল অর্থ আরোপ করে মনগড়া ব্যাখ্যা দান করত। তাদের দ্বিতীয় দুষ্কর্ম ছিল এই যে, তারা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসত তখন এমন অস্পষ্ট ও কপটতাপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করত, যার বাহ্যিক অর্থ দুষণীয় হত না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তারা এমন মন্দ অর্থ বোঝাতো, যা সেই ভাষার ভেতর প্রচ্ছন্ন থাকত। কুরআনমাজীদ এ আয়াতে তার তিনটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছে। (ক) তারা বলত سمعناو عصينا (সামি‘না ওয়া ‘আসাইনা)-এর অর্থ ‘আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং অবাধ্যতা করলাম’। তারা এর ব্যাখ্যা করত যে, আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং আপনার বিরোধীদের অবাধ্যতা করলাম। প্রকৃতপক্ষে তারা বোঝাতে চাইত, আমরা আপনার কথা শুনলাম ঠিক, কিন্তু তা মানলামই না। (খ) এমনিভাবে তারা বলত, اسمع غيرمسمع (ইসমা‘ গায়রা মুসমা‘ইন)-এর শাব্দিক অর্থ হল ‘আপনি আমাদের কথা শুনুন, আল্লাহ করুন, আপনাকে যেন কোন কথা শোনানো না হয়। বাহ্যত তারা যেন এর দ্বারা দু‘আ করছে যে, আপনাকে যেন কোন অপ্রীতিকর কথা শুনতে না হয়। কিন্তু আসলে তারা বোঝাতে চাচ্ছিল, আল্লাহ করুন আপনাকে যেন প্রীতিকর কোন কথা শোনানো না হয়। (গ) তাদের তৃতীয় ব্যবহৃত শব্দ ছিল راعنا (রা‘ইনা), আরবীতে এর অর্থ ‘আমাদের প্রতি লক্ষ রাখুন’। কিন্তু হিব্রু ভাষায় এটা ছিল একটি গালি এবং তারা সেটাই বোঝাতে চাইত।

{ وَلَقَدْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَيْ عَشَرَ نَقِيبًا وَقَالَ اللَّهُ إِنِّي مَعَكُمْ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَآمَنْتُمْ بِرُسُلِي وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَلَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ فَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ (12) فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ وَنَسُوا حَظًّا مِمَّا ذُكِّرُوا بِهِ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَى خَائِنَةٍ مِنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ (13) } [المائدة: 12، 13]

আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বার জন সর্দার নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ বলে দিলেনঃ আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। যদি তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাঁদের সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋন দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গোনাহ দুর করে দিব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যান সমূহে প্রবিষ্ট করব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নিঝরিনীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।
অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে* তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছে। আপনি সর্বদা তাদের কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। মায়িদাঃ ১২-১৩

তাফসীরঃ
অর্থাৎ তারা আল্লাহর কালাম তাওরাত গ্রন্থে শাব্দিক ও অর্থগত বিকৃতি সাধন করে। কোথাও এক শব্দের পরিবর্তে অন্য শব্দ এবং এক কথার স্থলে অন্য কথা লিখে দিত এবং কোথাও শব্দগত পরিবর্তন না করে আয়াতের অপব্যাখ্যা করত। বলা বাহুল্য, আল্লাহর কালামে পরিবর্তন অপেক্ষা বড় কোন অপরাধ হতে পারে না। বনী ইসরাঈল তথা ইয়াহুদী ও নাসারা উভয় সম্প্রদায় এ অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।


এরকমভাবে আরো বহুস্থানে তাদের তাওরাত বিকৃতির উল্লেখ এসেছে।

{يَاأَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنْكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ مِنَ الَّذِينَ قَالُوا آمَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِنْ قُلُوبُهُمْ وَمِنَ الَّذِينَ هَادُوا سَمَّاعُونَ لِلْكَذِبِ سَمَّاعُونَ لِقَوْمٍ آخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ مِنْ بَعْدِ مَوَاضِعِهِ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَذَا فَخُذُوهُ وَإِنْ لَمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوا وَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ فِتْنَتَهُ فَلَنْ تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا أُولَئِكَ الَّذِينَ لَمْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (41) } [المائدة: 41]

{كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلًّا لِبَنِي إِسْرَائِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَائِيلُ عَلَى نَفْسِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ تُنَزَّلَ التَّوْرَاةُ قُلْ فَأْتُوا بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوهَا إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (93) فَمَنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (94)} [آل عمران: 93، 94]

{وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَكَفَّرْنَا عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأَدْخَلْنَاهُمْ جَنَّاتِ النَّعِيمِ (65) وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ مِنْ رَبِّهِمْ لَأَكَلُوا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ مِنْهُمْ أُمَّةٌ مُقْتَصِدَةٌ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ سَاءَ مَا يَعْمَلُونَ (66)} [المائدة: 65، 66]

{مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ} [الجمعة: 5]

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০২১৪

রজব শব্দটি মুনসারিফ নাকি গায়রে মুনসারিফ?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

৮P৩C+GV৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯৩২৮৩

বছরের শুরু শেষ নেসাব ঠিক ছিলো, মাঝে যে সম্পদ বেড়েছে তার যাকাতের জন্য বৎসর পূর্ণ হতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

Mahini

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০৫৮৩

ভিন্ন দেশ থেকে ৩০ রোযা রেখে বাংলাদেশে গেলে রোযা রাখতে হবে? রাখলে ৩১টা হয়ে যায়। করণীয় কি?


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

대한민국 경기도 파주시 월롱면 통일로৬২০번길 ৮৯-৫৩ (KR)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮১৭৯৯

অমুসলিমের সাথে বর্গা চুক্তি করলে উশর নাকি খারাজ দিবে?


২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy