মাগরিবের আগে দুআ
প্রশ্নঃ ১৫৪৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইদানীং দেখা যাচ্ছে আমাদের মাদরাসার কিছু ছাত্র মাগরিবের আযানের ৭/৮ মিনিট আগে মসজিদে এসে দু হাত তোলে মোনাজাত করে। এর আগে কাউকে আমি এভাবে মোনাজাত করতে দেখিনি। তাদেরকে দেখে আমিও করতে শুরু করেছি। একদিন আমার এক সহপাঠী জিজ্ঞাসা করল, এ সময়ে মুনাজাত করার কথা কি তুমি কোনো কিতাবে পেয়েছ, নাকি দেখে দেখে আমল করছ? ভাবলাম, সত্যিই তো। কোনো কিতাবে তো পাইনি। তাই হুজুরের কাছে আবেদন এ ব্যাপারে দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে শায়ানে শান জাযা দান করুন। আমীন।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
দুআ স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। হাদীস শরীফে দুআকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দুআর জন্য কুরআন-হাদীসে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা নেই। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ব্যাপকভাবেই দুআ করতে নির্দেশ করেছেন। যেমন কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,
ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ
(তরজমা) তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। -সূরা গাফির : ৬০
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ (তরজমা) যখন কোনো আহ্বানকারী আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি। -সূরা বাকারা (০২) : ১৮৬
বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. বলেন, যখন
ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ
আয়াতটি নাযিল হল তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করল যে, আমরা কোন সময়টাতে দুআ করব তা যদি জানতে পারতাম তখন সূরা বাকারার এই আয়াতটি
وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ ؕ اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ.
নাযিল হয়। যাতে সুস্পষ্ট বলা আছে যে, বান্দা যখনই আল্লাহ তাআলাকে ডাকে, দুআ করে তখনই তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন এবং দুআ কবুল করে থাকেন।
তাই কোনো ব্যক্তি দিনে-রাতে যে কোনো সময় এমনকি মাগরিবের আগে বা পরে অথবা অন্য কোনো নামাযের আগে-পরে দুআ-মুনাজাত করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই এবং এ সময় দুআর জন্য ভিন্ন দলিল খোঁজ করারও প্রয়োজন নেই। কেননা দুআর ব্যাপারে উপরোক্ত ব্যাপক নির্দেশনামূলক দলিলাদি মাগরিবের পূর্বে দুআ-মুনাজাত করাকেও শামিল করে।
উপরন্তু আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়টা বিশেষভাবেও আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হওয়া,তাসবীহ-তাহলীল ও যিকির ও দুআতে মশগুল থাকার সময়। একাধিক আয়াত ও হাদীসে তা বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَهٗ.
(তরজমা) আর আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে সংলিপ্ত রাখুন যারা তাদের রবকে সকাল ও সন্ধায় তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ডাকে। -সূরা কাহফ (১৮) : ২৮
উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, অর্থাৎ যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল করে এবং তার বড়ত্ব বর্ণনা করে ও তার কাছে দুআ চায়। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/১৩১
হাদীস শরীফে আছে, আবু উমামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফযরের পর থেকে সূর্যোদোয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও তাকবীর-তাহমীদ করা আমার নিকট ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে দুই বা ততোধিক গোলাম আযাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় এবং আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত (এরূপ করাটা) ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে চারজন গোলম আযাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। -আলমুজামুল কাবীর তাবারানী, হাদীস ৮০২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২১৮৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১৩২
অবশ্য এ কথা মনে রাখা দরকার যে, মুনাজাত করা উক্ত সময়ের কোনো নির্ধারিত আমল নয়। বরং যে কোনো সময়ে যেমন মুনাজাত করার সুযোগ রয়েছে তেমনি এ সময়ও তা করা যাবে।والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন